কুমিল্লা সিটি করপোরেশন-গণতন্ত্র ও নতুন প্রযুক্তির জয়
আকারে সবচেয়ে ছোট হলেও কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচন তাৎপর্যের দিক থেকে অনেক বড় হয়ে দেখা দিয়েছে। কেননা, বাংলাদেশের ইতিহাসে এবারই প্রথম পুরো নির্বাচন প্রক্রিয়া ইলেকট্রনিক ভোটিং মেশিনের (ইভিএম) মাধ্যমে সম্পন্ন হয়েছে। নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থী, পর্যবেক্ষক, নির্বাচন কমিশনসহ সব পক্ষ মত দিয়েছেন, ভোট সুষ্ঠু ও অবাধ হয়েছে। সামান্য যান্ত্রিক ত্রুটি ছাড়া ইভিএম কোনো জটিলতা তৈরি করেনি। ইভিএমের মাধ্যমে ভোটাররা দ্রুততম সময়ে
এবং স্বস্তির সঙ্গে ভোট দিতে পেরেছেন। দ্রুততার সঙ্গে ভোটের ফলও মিলেছে। মাত্র পাঁচ ঘণ্টায় দেশবাসী ভোটের ফল জানতে পেরেছেন। ইভিএম নিয়ে নির্বাচন কমিশন অনেক আগে থেকেই রাজনৈতিক দলগুলোর সঙ্গে আলোচনা চালিয়ে যাচ্ছে। কিন্তু এখন পর্যন্ত বিরোধী দল ইলেকট্রনিক ভোটিং সিস্টেমে আস্থা দেখায়নি। বিরোধী দলের এই অনাস্থার মধ্যে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন নির্বাচনে একটি ওয়ার্ডে ইভিএম সিস্টেম প্রযুক্ত হয়েছিল। এবার পুরো নির্বাচনী প্রক্রিয়াতেই ইভিএম ব্যবহৃত হলো। এটি নির্বাচন কমিশন ও ভোটারদের বড় সাফল্য। সাফল্য নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী দলগুলোরও। আশা করা যায়, কুমিল্লায় ইভিএম ব্যবস্থার সাফল্যের পর রাজনৈতিক দলগুলো নির্বাচনী প্রক্রিয়ায় নতুন প্রযুক্তিকে স্বাগত জানাতে প্রস্তুত হবে। তবে এ কথা সত্য, ইভিএমই রাজনীতির একমাত্র সমস্যা নয়। বর্তমান সরকারের অধীনে পরিচালিত নির্বাচন নিয়ে বিরোধীদের মধ্যে আস্থাহীনতা কাজ করছে। নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশনের পর তারা কুমিল্লার নির্বাচনও বর্জন করেছে। যদিও বর্তমান সরকারের অধীনে অনুষ্ঠিত স্থানীয় সরকার নির্বাচনগুলো সুষ্ঠু হয়েছে। শুধু তা-ই নয়, অধিকাংশ নির্বাচনে আওয়ামী লীগ প্রার্থীরাই হেরেছেন। চট্টগ্রাম ও নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন নির্বাচনে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীরা পরাজিত হয়েছেন। কুমিল্লাতেও একই ঘটনা ঘটল। এবার বিএনপি থেকে বেরিয়ে আসা প্রার্থী মনিরুল হক কুমিল্লা সিটি করপোরেশনের প্রথম মেয়র হিসেবে নির্বাচিত হয়েছেন। তাকে আনুষ্ঠানিকভাবে বিএনপি সমর্থিত প্রার্থী বলার সুযোগ নেই। তবে আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থীর বিরুদ্ধে দাঁড়িয়ে তিনি বিরোধী অধিকাংশ ভোট আকৃষ্ট করতে পেরেছেন। শুধু মেয়র পদেই নয়, অধিকাংশ কাউন্সিলর পদেও সরকারবিরোধীদের জয় হয়েছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশনে জনমতের স্পষ্ট প্রতিফলন ঘটেছে বলেই অনেকে মনে করছেন। বিশ্লেষকরা মনে করেন, আওয়ামী লীগের উচিত জনমতের এই উল্টোগতির কারণ খুঁজে বের করা এবং আত্মসমালোচনা ও সংশোধনের সুযোগ নেওয়া। শান্তিপূর্ণ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানের ক্ষেত্রে সরকার যে দায়িত্বশীল ভূমিকা নিয়েছে এবং নির্বাচন কমিশন যেভাবে সুচারুরূপে নির্বাচন সম্পন্ন করেছে, তা প্রশংসনীয়। ভবিষ্যতেও এ ধারা অব্যাহত থাকুক। আশাপ্রদ ব্যাপার হলো, নির্বাচনে অংশগ্রহণকারী প্রার্থীরা সংযম ও দায়িত্বশীলতার পরিচয় দিয়েছেন। বিশেষ অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটেনি। ভোটের ফল ঘোষণার পর পরাজিত প্রার্থীরা সহজভাবে পরাজয় মেনে নিয়েছেন এবং বিজয়ীকে অভিনন্দিত করেছেন। দোষারোপের রাজনীতি না করে বাস্তবতাকে মেনে নেওয়ার এই প্রবণতাও প্রশংসনীয়। বরাবরের মতো নির্বাচনকেন্দ্রিক সংবাদ প্রচারে গণমাধ্যম, বিশেষ করে ইলেকট্রনিক মাধ্যম বিশেষ ভূমিকা পালন করেছে। অনেকেই মনে করেন, সহিংসতা ও সংঘাত কমাতে ইলেকট্রনিক মাধ্যমের বিশেষ ভূমিকা আছে। কুমিল্লা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের ইতিবাচক দিকগুলো আমাদের জাতীয় রাজনীতিতে প্রভাব রাখলে সেটি হবে সবচেয়ে আশার কথা। আমরা চাই, এ নির্বাচনে গণতন্ত্র ও নতুন প্রযুক্তির জয়ের ধারা ভবিষ্যতেও অব্যাহত থাকুক।
No comments