জ্বালানি তেলের আগুনে দগ্ধ মানুষ by অলিউর রহমান ফিরোজ
দেশে যেভাবে জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি শুরু হয়েছে তাতে করে মানুষের জীবনধারণ দুর্বিষহ হয়ে উঠেছে। এক বছরেই জ্বালানি তেলের মূল্য চার দফা বৃদ্ধি করে সরকার রেকর্ড স্থাপন করেছে। জ্বালানি তেলের সঙ্গে আমাদের জীবন ব্যবস্থা ওতপ্রোতভাবে জড়িয়ে রয়েছে। তাই ঘন ঘন জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধি দেশের মানুষের জন্য হতাশাজনক। এর কারণে শুধু তেলচালিত যানবাহনের ভাড়াই বৃদ্ধি পায় না, সে সঙ্গে গ্যাসচালিত যানবাহনগুলোও অযৌক্তিকভাবে ভাড়া বৃদ্ধি পায়।
ভর্তুকি কমিয়ে আনতে সরকার এক বছরে চার দফা দাম বাড়িয়েছে। এতে প্রতিলিটার অকটেন, কেরোসিন, পেট্রোল ও ডিজেলের দাম বেড়েছে ১৭ টাকা করে। সরকার যদি তেলের বিকল্প জ্বালানি হিসেবে গ্যাস ও কয়লার উৎপাদনে একটু নজর দিত, তাহলে সরকারকে দেশের অর্থনীতি নিয়ে এ রকম করুণ দশায় উপনীত হতে হতো না। সরকার বিপিসির ওপর থেকে কর কমিয়ে আনলে অনায়াসে তেল নিয়ে দাম বৃদ্ধি ঠেকানো যেত। তেলের মূল্যবৃদ্ধির হাত ধরে এবার হুহু করে পণ্য উৎপাদন এবং পরিবহন সেক্টর ভয়াবহ ভাড়া নৈরাজ্যের কবলে পড়বে তাতে করে কারও কোনো সন্দেহ নেই। গণপরিবহনে ভাড়া এমনিতেই সরকারের কোনো নিয়ন্ত্রণ নেই। উপরন্তু বারবার জ্বালানি তেলের মূল্যবৃদ্ধির ফলে তেলের মূল্য যা বাড়ে তার কয়েকগুণ বেশি ভাড়া জনগণের পকেট থেকে কাটে পরিবহন মালিকরা।
সরকার স্বল্প খরচের চেয়ে বেশি খরচের দিকে ঝুঁকতে গিয়ে বিদ্যুতের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ করেছিল তা বছরের ছয় মাসও পার হতে পারেনি। সরকার বিদ্যুতের জোগান দিতে গিয়ে উচ্চমূল্যে জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে। জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৬ টাকা দরে এবং ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কুইক রেন্টাল থেকে ৮ টাকা দরে কিনে গ্রাহক পর্যায়ে তা চার টাকায় বিক্রি করছে। এ ভর্তুকির জন্য সরকার বাজেট বরাদ্দ করেছিল পাঁচ হাজার দুইশ' কোটি টাকা, যা বছরের ছয় মাসের মাথায়ই শেষ হয়ে যায়। বাকি টাকা যে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবে তারও কোনো পথ খোলা নেই। কারণ ইতিমধ্যে সরকার ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংক খালি করে ফেলেছে। সরকারের বারবার তেলের মূল্যবৃদ্ধির কয়েকটি কারণ উলেল্গখ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজেটে বিভিন্ন খাতে যে ভর্তুকির দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তার কয়েকগুণ বেশি প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় সরকারের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারের কাছে আর কোনো বিকল্প পথ না থাকায় তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে একের পর এক। গত অর্থবছরে (২০১০-১১) জ্বালানি তেল আমদানি করতে বিপিসির লোকসানের পরিমাণ হয়েছে আট হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। তেলের দাম আরও পাঁচ টাকা বাড়ানোর পরও এ খাতে চলতি বছরে আরও দশ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
দেশে তেল, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন সেক্টরে শুরু হয়েছে ভয়াবহ নৈরাজ্য। এগুলো দেখভাল করার কাজে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের চরম গাফিলতির কারণে যাত্রীসাধারণের যেন আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। নিয়তির আষ্টেপৃষ্ঠে তারা এখন জড়িয়ে পড়ছেন। তাই দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে কীভাবে দুর্বল অর্থনীতি সবল করে ভর্তুকির চাপ সামাল দিয়ে গ্যাস-তেলের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে এসে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যায়, তা ভাবতে হবে।
mdferozcc@gmail.com
সরকার স্বল্প খরচের চেয়ে বেশি খরচের দিকে ঝুঁকতে গিয়ে বিদ্যুতের জন্য যে বাজেট বরাদ্দ করেছিল তা বছরের ছয় মাসও পার হতে পারেনি। সরকার বিদ্যুতের জোগান দিতে গিয়ে উচ্চমূল্যে জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্রের দিকে ঝুঁকে পড়ে। জ্বালানি তেলনির্ভর বিদ্যুৎকেন্দ্র থেকে বিদ্যুৎ উন্নয়ন বোর্ড প্রতি ইউনিট বিদ্যুৎ ১৬ টাকা দরে এবং ফার্নেস অয়েলভিত্তিক কুইক রেন্টাল থেকে ৮ টাকা দরে কিনে গ্রাহক পর্যায়ে তা চার টাকায় বিক্রি করছে। এ ভর্তুকির জন্য সরকার বাজেট বরাদ্দ করেছিল পাঁচ হাজার দুইশ' কোটি টাকা, যা বছরের ছয় মাসের মাথায়ই শেষ হয়ে যায়। বাকি টাকা যে সরকার ব্যাংক ব্যবস্থা থেকে ঋণ নেবে তারও কোনো পথ খোলা নেই। কারণ ইতিমধ্যে সরকার ব্যাংকগুলো থেকে ঋণ নিয়ে ব্যাংক খালি করে ফেলেছে। সরকারের বারবার তেলের মূল্যবৃদ্ধির কয়েকটি কারণ উলেল্গখ করা হয়েছে। এর মধ্যে বাজেটে বিভিন্ন খাতে যে ভর্তুকির দেওয়ার লক্ষ্যমাত্রা ধরা হয়েছিল তার কয়েকগুণ বেশি প্রয়োজন দেখা দেওয়ায় সরকারের আয়-ব্যয়ের ভারসাম্য রক্ষা করা কঠিন হয়ে পড়ে। সরকারের কাছে আর কোনো বিকল্প পথ না থাকায় তেলের দাম বাড়ানো হচ্ছে একের পর এক। গত অর্থবছরে (২০১০-১১) জ্বালানি তেল আমদানি করতে বিপিসির লোকসানের পরিমাণ হয়েছে আট হাজার ১৯৮ কোটি টাকা। তেলের দাম আরও পাঁচ টাকা বাড়ানোর পরও এ খাতে চলতি বছরে আরও দশ হাজার কোটি টাকা ভর্তুকি দিতে হবে।
দেশে তেল, গ্যাসের মূল্যবৃদ্ধিতে পরিবহন সেক্টরে শুরু হয়েছে ভয়াবহ নৈরাজ্য। এগুলো দেখভাল করার কাজে যারা দায়িত্বে নিয়োজিত রয়েছেন, তাদের চরম গাফিলতির কারণে যাত্রীসাধারণের যেন আর শেষ রক্ষা হচ্ছে না। নিয়তির আষ্টেপৃষ্ঠে তারা এখন জড়িয়ে পড়ছেন। তাই দেশের মানুষের কথা চিন্তা করে কীভাবে দুর্বল অর্থনীতি সবল করে ভর্তুকির চাপ সামাল দিয়ে গ্যাস-তেলের মূল্য সহনীয় পর্যায়ে নিয়ে এসে জনজীবনে স্বস্তি ফিরিয়ে আনা যায়, তা ভাবতে হবে।
mdferozcc@gmail.com
No comments