নতুন দিগন্ত-ছয় ভ্রূণে এক বানর!

মার্কিন বিজ্ঞানীরা বিশ্বে প্রথমবারের মতো ছয়টি পৃথক ভ্রূণ থেকে নেওয়া কোষ থেকে বানরের জন্ম দিয়েছেন। এ ঘটনাকে চিকিৎসাবিজ্ঞানের গবেষণায় বিরাট অগ্রগতি বলে মনে করা হচ্ছে। বিজ্ঞানীরা কয়েকটি রেসাস বানরের ভ্রূণ থেকে নেওয়া কোষ একত্র করে মাদি বানরের গর্ভে স্থাপন করেন। ওই বানরগুলো তিনটি সুস্থ শাবকের জন্ম দিয়েছে। বানরশাবক তিনটির নাম রাখা হয়েছে রোকু, হেক্স ও কিমেরো। একাধিক প্রাণীর নেওয়া ভিন্ন জেনেটিক বৈশিষ্ট্যের কোষ


থেকে গবেষণাগারে জন্মানো এ ধরনের প্রাণীকে বলা হয় ‘কিমেরা’ বা কাল্পনিক প্রাণী। এত দিন এ পদ্ধতিতে ইঁদুরজাতীয় প্রাণীর জন্ম দিয়েছেন বিজ্ঞানীরা। ২০ জানুয়ারি সেল সাময়িকীতে এ-সংক্রান্ত গবেষণা প্রকাশিত হবে। তবে আগেই অনলাইন সংস্করণে এ খবর প্রকাশিত হয়েছে।
ভ্রূণের বিকাশের গবেষণার জন্য কিমেরা প্রাণীর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে। তবে এত দিন এ গবেষণা ইঁদুরেই সীমাবদ্ধ ছিল।
গবেষণাপত্রের যুগ্ম লেখক পোর্টল্যান্ডের অরেগন হেলথ অ্যান্ড সায়েন্স ইউনিভার্সিটির শুখরাত মিতালিপভ বলেন, দেখা গেছে, কোষগুলো কখনোই পুরোপুরি মিলে যায় না, তবে তারা একত্রে থেকে ধীরে ধীরে টিস্যু ও অঙ্গপ্রত্যঙ্গ তৈরির কাজ করে।
বানরের মতো উন্নত পর্যায়ের স্তন্যপায়ী প্রাণী জন্ম দেওয়ার ক্ষেত্রে বিজ্ঞানীদের একই ধরনের প্রচেষ্টা এর আগে একাধিকবার ব্যর্থ হয়েছে। মিতালিপভের গবেষণাদলও বানরের ভ্রূণের সঙ্গে ‘উৎপাদিত’ (কালচার্ড) ভ্রূণের স্টেম সেল মিলিয়ে কিমেরা বানর সৃষ্টির চেষ্টা করে ব্যর্থ হন। স্টেম সেল হচ্ছে সেই ধরনের ‘মূল’ সেল বা কোষ, যা থেকে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় আরও বিশেষায়িত ধরনের কোষ সৃষ্টি হতে পারে। মিতালিপভের দল যে ভ্রূণের স্টেম সেল নিয়ে গবেষণা করে ব্যর্থ হন, সে কোষ ছিল বিকাশের ‘প্লুরিপটেনসি’ পর্যায়ে। এ পর্যায়ের অর্থ হচ্ছে কোষগুলো শরীরে যেকোনো ধরনের টিস্যু তৈরি করতে পারে, কিন্তু প্ল্যাসেন্টা (গর্ভফুল) বা পুরো প্রাণী তৈরি করতে পারে না।
এরপর ‘টোটিপটেন্ট’ অর্থাৎ খুব প্রারম্ভিক পর্যায়ের ভ্রূণকোষের মিশ্রণ করার পরই কেবল কিমেরা বানর জন্ম দিতে সফল হন অরেগনের বিজ্ঞানীরা।
মিতালিপভ বলেন, এ থেকে মনে হচ্ছে, বানরের ভ্রূণ দৃশ্যত কালচার্ড ভ্রূণ কোষকে তার সঙ্গে একীভূত হতে বাধা দেয়। ইঁদুরের ক্ষেত্রে তেমনটি হয় না। এ গবেষণায় আরও ইঙ্গিত মিলছে, অনেক সময় দীর্ঘদিন গবেষণাগারে সংরক্ষিত বানরজাতীয় প্রাণী ও মানুষের কালচার্ড ভ্রূণকোষ সম্ভবত জীবিত ভ্রূণের কোষের মতো তত শক্তিশালী নয়।
এ পর্যন্ত মানবভ্রূণের বিকাশ সম্পর্কে চিকিৎসাবিজ্ঞানীদের যে জানাশোনা তা ইঁদুরের ভ্রূণের ওপর ভিত্তি করে। কিন্তু তাঁরা মনে করেন, মানুষের জন্য ইঁদুরের তুলনায় বানর ভালো মডেল।
বিজ্ঞানীরা এইচআইভি ও এইডস, জলাতঙ্ক, জলবসন্ত ও পোলিও রোগের ওষুধ ও প্রতিষেধক তৈরি এবং ভ্রূণের স্টেম সেল নিয়ে গবেষণায় রেসাস বানর নিয়ে দীর্ঘদিন ধরে গবেষণা করছেন। এ বানর মহাকাশ গবেষণার কাজেও ব্যবহূত হয়েছে। যুক্তরাষ্ট্র ও রাশিয়ার পরীক্ষামূলক মহাকাশ উড্ডয়ন কর্মসূচিতে এ জাতের বানর পাঠানো হয়েছে। রেসাস বানরের নিবাস বাংলাদেশসহ দক্ষিণ এশিয়া, মধ্য এবং দক্ষিণ-পূর্ব এশিয়া। বিবিসি, এএফপি।

No comments

Powered by Blogger.