নতুন রাজনীতির ইঙ্গিত! by সাইফুল ইসলাম
বাংলাদেশের বর্তমান রাজনীতিতে উল্লেখযোগ্য ঘটনা নারায়ণগঞ্জ সিটি করপোরেশন (নাসিক) এবং কুমিল্লা সিটি করপোরেশন (কুসিক) নির্বাচন। অথচ সেখানে সাংগঠনিকভাবে অংশগ্রহণ করেনি কোনো রাজনৈতিক দল। প্রার্থীদের পক্ষে-বিপক্ষে অবশ্য রাজনৈতিক কর্মীরাই ছিল, বিজয়ের কলাকৌশল হয়তো রচনা করেছে তারাই, তবে তারা এসেছিল তাদের দলীয় রাজনীতিকে স্থগিত রেখে। এ ছাড়া তারা কখনোই জনতার ঊধর্ে্ব উঠে নেতা হতে চায়নি।
বরং জনতাকে পথ তৈরি করে দিয়েছে এগিয়ে চলার, বিজয়ী হওয়ার। জনতাকেই করতে চেয়েছে মহানায়ক। তাই তো নাসিক ও কুসিক নির্বাচন হয়ে উঠেছে সাম্প্রতিককালের মধ্যে অনুষ্ঠিত নির্বাচনগুলোর মধ্যে অনন্য, আগামী দিনের রাজনীতির জন্য শিক্ষণীয়ও বটে।
আমরা জানি যে, রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে_ ধ্বনি, স্লোগান। স্লোগান হচ্ছে আপনজনকে খুঁজে পাওয়ার আর শত্রুর অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেওয়ার চিৎকার। স্লোগান মানুষকে উজ্জীবিত করে, পরস্পরকে একই সূত্রে গেঁথে ফেলতে সহায়তা করে। গড়ে ওঠে সংগঠন। মহান রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল রুটি, শান্তি, জমি_ এই তিনটি স্লোগানের ওপর, যা কাঁপিয়ে দিয়েছিল সারাবিশ্বকে। এ দেশের স্বাধিকার-স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাঙালি পরস্পরকে কাছে পেয়েছিল_ 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'বাঁশের লাঠি তৈরি করো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো', 'জয় বাংলা' ইত্যাদি কয়েকটি স্লোগান দিয়ে। এসব স্লোগান এক সময় পশ্চিমা শাসকদের তাড়িয়ে দিয়ে স্বাধীন করে বাংলাদেশ। নাসিক ও কুসিক নির্বাচনেও সেখানকার বাসিন্দারা দুটি স্লোগান তুলেছে। স্লোগান দুটি হচ্ছে_ 'দুর্নীতিবাজ হটাও', 'সন্ত্রাসী হটাও'। তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ দেশের মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে, সেই গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শত্রু এই দুর্নীতি ও সন্ত্রাস। তারা কালো টাকা বিনিয়োগ করে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে সঠিক নেতা নির্বাচনে বাধা দেয়। নির্বাচিত করে তাদের দোসরদের। এভাবেই তাদের নিজের লোক ক্ষমতায় পাঠিয়ে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। তারপর রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেদের করায়ত্ত করে নেয়। বঞ্চিত করে জনগণকে। ফলে রাষ্ট্র হয়ে পড়ে দুর্নীতিগ্রস্ত। রাষ্ট্রের সেবার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে গণতন্ত্রকামী নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাবাসীর কাছে এ দুটি স্লোগান হয়ে উঠেছে নিজেদের কথা। স্লোগান দুটি পেয়ে তারা হয়েছে দ্রুত সংগঠিত। বিজয়ী করেছে নাগরিক পরিষদের প্রার্থীদের। চুপসে গেছে দুর্নীতি-সন্ত্রাসের ক্ষমতার ফাঁপা বেলুন। তারা দেশের মানুষকে অবাক করে দিয়ে উপড়ে দিয়েছে ক্ষমতার মহীরুহকে।
নাসিক ও কুসিক নির্বাচন আরও একটি ইঙ্গিত দিয়ে গেছে, তা হলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের জন্য সাংগঠনিক রূপরেখা। এই নির্বাচনে যে কাঠামোটি জনতাকে বিজয়ী করেছে তার নাম 'নাগরিক পরিষদ'। বলা হয়েছে, এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন যে ঘটনা দীর্ঘদিনেও ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে তাই করে দেখিয়েছে এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি। হতে পারে দীর্ঘদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশবাসীর সামনে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া তাদের ইমেজও জনতার কাছে ইতিবাচক নয়। এখন দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, যারা রাজনীতি করে তারা প্রধানত টাউট শ্রেণীর মানুষ। নিজের ব্যক্তিস্বার্থ ছাড়া জনগণের জন্য তারা কিছুই করে না। তারা ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা নিয়ে দল চালায়, এ কারণে তাদের স্বার্থ দেখা ছাড়া জনগণের স্বার্থ দেখে না। হয়তো এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারে-কাছে ভিড়তে চাইছে না সাধারণ মানুষ। তাই নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার বাসিন্দারা নাগরিক পরিষদ নামে সংগঠন গড়েছে যা তারা সহজেই ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে। তাছাড়া এখানে নেই রাজনৈতিক কুতর্ক, বিতর্কও। আছে শুধু স্লোগান_ 'দুর্নীতি হটাও', 'সন্ত্রাস হটাও' এবং এ স্লোগান দুটিকেই তারা ধারণ করেছে দৃঢ়ভাবে।
দেশবাসীকেও দেখিয়ে দিয়েছে যে, এ দুটি স্লোগান দিয়েই প্রতিটি জেলা-উপজেলায় গড়ে উঠতে পারে নাগরিক পরিষদ। যে স্লোগান দিয়ে এখন থেকেই কোণঠাসা করে ফেলা যেতে পারে বিভিন্ন অঞ্চলের দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসীদের। যাতে তারা কোনো প্রভাবই ফেলতে না পারে আগামী নির্বাচনে। নির্বাচিত করা যেতে পারে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অরাজনৈতিক সংগঠন নাগরিক পরিষদ যখন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে শুরু করবে, তখন একটি জাতীয় কনভেনশনের মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটতে পারে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির।
ম ছড়াকার ও সাংবাদিক
আমরা জানি যে, রাজনীতিতে গুরুত্বপূর্ণ বিষয় হচ্ছে_ ধ্বনি, স্লোগান। স্লোগান হচ্ছে আপনজনকে খুঁজে পাওয়ার আর শত্রুর অন্তরাত্মা কাঁপিয়ে দেওয়ার চিৎকার। স্লোগান মানুষকে উজ্জীবিত করে, পরস্পরকে একই সূত্রে গেঁথে ফেলতে সহায়তা করে। গড়ে ওঠে সংগঠন। মহান রুশ বিপ্লব সংঘটিত হয়েছিল রুটি, শান্তি, জমি_ এই তিনটি স্লোগানের ওপর, যা কাঁপিয়ে দিয়েছিল সারাবিশ্বকে। এ দেশের স্বাধিকার-স্বাধীনতার লড়াইয়ে বাঙালি পরস্পরকে কাছে পেয়েছিল_ 'তোমার আমার ঠিকানা, পদ্মা মেঘনা যমুনা', 'পিন্ডি না ঢাকা, ঢাকা ঢাকা', 'বাঁশের লাঠি তৈরি করো, বাংলাদেশ স্বাধীন করো', 'জয় বাংলা' ইত্যাদি কয়েকটি স্লোগান দিয়ে। এসব স্লোগান এক সময় পশ্চিমা শাসকদের তাড়িয়ে দিয়ে স্বাধীন করে বাংলাদেশ। নাসিক ও কুসিক নির্বাচনেও সেখানকার বাসিন্দারা দুটি স্লোগান তুলেছে। স্লোগান দুটি হচ্ছে_ 'দুর্নীতিবাজ হটাও', 'সন্ত্রাসী হটাও'। তারা নিশ্চয়ই বুঝতে পেরেছে যে, বর্তমান প্রেক্ষাপটে এ দেশের মানুষ যে গণতান্ত্রিক আকাঙ্ক্ষা পোষণ করে, সেই গণতন্ত্রের অন্যতম প্রধান শত্রু এই দুর্নীতি ও সন্ত্রাস। তারা কালো টাকা বিনিয়োগ করে অস্ত্রের মহড়া দিয়ে সঠিক নেতা নির্বাচনে বাধা দেয়। নির্বাচিত করে তাদের দোসরদের। এভাবেই তাদের নিজের লোক ক্ষমতায় পাঠিয়ে রাষ্ট্রকে নিয়ন্ত্রণ করে। তারপর রাষ্ট্রকে ব্যবহার করে বিভিন্ন ব্যবসা-বাণিজ্যে নিজেদের করায়ত্ত করে নেয়। বঞ্চিত করে জনগণকে। ফলে রাষ্ট্র হয়ে পড়ে দুর্নীতিগ্রস্ত। রাষ্ট্রের সেবার ক্ষমতা নষ্ট হয়ে যায়। এ কারণে গণতন্ত্রকামী নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লাবাসীর কাছে এ দুটি স্লোগান হয়ে উঠেছে নিজেদের কথা। স্লোগান দুটি পেয়ে তারা হয়েছে দ্রুত সংগঠিত। বিজয়ী করেছে নাগরিক পরিষদের প্রার্থীদের। চুপসে গেছে দুর্নীতি-সন্ত্রাসের ক্ষমতার ফাঁপা বেলুন। তারা দেশের মানুষকে অবাক করে দিয়ে উপড়ে দিয়েছে ক্ষমতার মহীরুহকে।
নাসিক ও কুসিক নির্বাচন আরও একটি ইঙ্গিত দিয়ে গেছে, তা হলো বর্তমান প্রেক্ষাপটে আন্দোলনের জন্য সাংগঠনিক রূপরেখা। এই নির্বাচনে যে কাঠামোটি জনতাকে বিজয়ী করেছে তার নাম 'নাগরিক পরিষদ'। বলা হয়েছে, এটি একটি অরাজনৈতিক সংগঠন। দেশে বিদ্যমান বিভিন্ন রাজনৈতিক সংগঠন যে ঘটনা দীর্ঘদিনেও ঘটাতে ব্যর্থ হয়েছে তাই করে দেখিয়েছে এই অরাজনৈতিক সংগঠনটি। হতে পারে দীর্ঘদিন বিভিন্ন রাজনৈতিক দল দেশবাসীর সামনে কোনো ইতিবাচক ভূমিকা রাখতে ব্যর্থ হয়েছে। এ ছাড়া তাদের ইমেজও জনতার কাছে ইতিবাচক নয়। এখন দেশের বেশিরভাগ মানুষ মনে করে, যারা রাজনীতি করে তারা প্রধানত টাউট শ্রেণীর মানুষ। নিজের ব্যক্তিস্বার্থ ছাড়া জনগণের জন্য তারা কিছুই করে না। তারা ব্যবসায়ীদের কাছে টাকা নিয়ে দল চালায়, এ কারণে তাদের স্বার্থ দেখা ছাড়া জনগণের স্বার্থ দেখে না। হয়তো এ কারণে রাজনৈতিক দলগুলোর ধারে-কাছে ভিড়তে চাইছে না সাধারণ মানুষ। তাই নারায়ণগঞ্জ ও কুমিল্লার বাসিন্দারা নাগরিক পরিষদ নামে সংগঠন গড়েছে যা তারা সহজেই ভেঙে দেওয়ার ক্ষমতাও রাখে। তাছাড়া এখানে নেই রাজনৈতিক কুতর্ক, বিতর্কও। আছে শুধু স্লোগান_ 'দুর্নীতি হটাও', 'সন্ত্রাস হটাও' এবং এ স্লোগান দুটিকেই তারা ধারণ করেছে দৃঢ়ভাবে।
দেশবাসীকেও দেখিয়ে দিয়েছে যে, এ দুটি স্লোগান দিয়েই প্রতিটি জেলা-উপজেলায় গড়ে উঠতে পারে নাগরিক পরিষদ। যে স্লোগান দিয়ে এখন থেকেই কোণঠাসা করে ফেলা যেতে পারে বিভিন্ন অঞ্চলের দুর্নীতিবাজ সন্ত্রাসীদের। যাতে তারা কোনো প্রভাবই ফেলতে না পারে আগামী নির্বাচনে। নির্বাচিত করা যেতে পারে সৎ ও যোগ্য নেতৃত্ব। বিভিন্ন জেলা-উপজেলায় অরাজনৈতিক সংগঠন নাগরিক পরিষদ যখন কার্যকরী ভূমিকা রাখতে শুরু করবে, তখন একটি জাতীয় কনভেনশনের মধ্য দিয়ে উত্থান ঘটতে পারে বিকল্প রাজনৈতিক শক্তির।
ম ছড়াকার ও সাংবাদিক
No comments