চলো না ঘুরে আসি অজানাতে... by ইমদাদ হক

'চলো না ঘুরে আসি অজানাতে, যেখানে নদী এসে থেমে গেছে ...' সঙ্গীতটি মনে বারবার অনুরণিত হলেও রাজধানীর বাইরে ঘুরে বেড়ানো সহজ নয় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের। বিশ্বমানচিত্রের সবুজ দেশটির প্রাকৃতিক সৌন্দর্য দেখার অনিঃশেষ দুঃখ রয়েই যায়। এরই পরিপ্রেক্ষিতে অজানাকে জানা, অদেখাকে দেখা আর পুঁথিগত বিদ্যাকে বাস্ততার সঙ্গে সমন্বয় ঘটানোর প্রত্যয়ে নানা প্রকার ট্যুর আয়োজনের উদ্দেশ্যকে সামনে রেখে গঠিত হয় ঢাকা


ইউনিভার্সিটি ট্যুরিস্ট সোসাইটি।ট্যুরিস্ট সোসাইটির প্রেসিডেন্ট আরিফুল ইসলাম জানালেন সংগঠনটি প্রতিষ্ঠার প্রেক্ষাপট। 'পর্যটন শিল্প বিকাশে চাই সামাজিক আন্দোলন' প্রতিপাদ্য নিয়ে ১৯৯৬ সালে প্রতিষ্ঠিত হয় এ সোসাইটি। শুরুর দিকে সদস্য সংখ্যা মাত্র ২০-২৫ জন থাকলেও বর্তমানে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২ হাজারে। আয়োজনগুলো সফলভাবে সম্পন্ন করার জন্য প্রতি বছর পরিবর্তিত হয় এর কার্যনির্বাহী কমিটি। সভাপতি, সাধারণ সম্পাদক, কার্যকরী পরিষদ আর সদস্যদের নিয়ে পরিচালিত হয় অ্যাডভেঞ্চার প্রিয়দের সংগঠন ট্যুরিস্ট সোসাইটি। প্রতি বছর নির্বাচনের মাধ্যমে নির্বাচিত হয় কার্যনির্বাহী কমিটি। সদস্যদের আন্তরিকতা আর পারস্পারিক ভালোবাসাই সংগঠনের কর্মসূচি বাস্তবায়নে সহায়তা করে। রয়েছে বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষের সহযোগিতা আর স্পন্সর। এ সংগঠনের অন্যতম বৈশিষ্ট্য বিভিন্ন ট্যুরের ক্ষেত্রে শিক্ষার্থীদের কাছ থেকে শুধু মূল খরচটাই নেওয়া হয়। ব্যবসায়িক উদ্দেশ্য না থাকায় সাধারণ 'শিক্ষার্থীরাও মুখিয়ে থাকেন সংগঠনের দিকে, নতুন কোনো পর্যটন স্পট পরিদর্শনের জন্য'_ জানালেন ভাইস প্রেসিডেন্ট ইলোরা তাসনিম রহমান।
পর্যটন স্পট ঘোরার পাশাপাশি সদস্যদের সৃষ্টিশীলতা বৃদ্ধির জন্য নেওয়া হয় পদক্ষেপ। কার্যক্রম সম্পর্কে বলছিলেন সোসাইটির সাধারণ সম্পাদক মোজাহেরুল হক রানা। প্রতি বছর সোসাইটির পক্ষ থেকে বার্ষিক পর্যটন স্যুভেনির বের করা হয়। উদ্যোগ নেওয়া হয়েছে ত্রৈমাসিক ভ্রমণ ম্যাগিজন বের করার। নিয়মিত আড্ডা ও মিটিংয়ের পাশাপাশি সারা বছরই ব্যস্ত থাকেন সোসাইটির সদস্যরা নতুন কোনো আয়োজনে। বিভিন্ন আকর্ষণীয় পর্যটন স্পটে ট্যুর আয়োজন, বিশ্ব পর্যটন দিবস উপলক্ষে বিশেষ ট্যুর, রচনা প্রতিযোগিতা, পর্যটনবিষয়ক সভা-সেমিনার আয়োজন, গুণীজন সম্মাননা, পর্যটন নিয়ে মেলা আয়োজন, ফ্রি শিক্ষার্থীদের ভ্রমণবিষয়ক পরামর্শ সেন্টার স্থাপন, পাখিমেলা আয়োজন, আলোকচিত্র প্রদর্শনী, ফটোগ্রাফি কর্মশালা, পিঠা উৎসব, পৌষমেলা, আদিবাসী উৎসবসহ নানা আয়োজনে উৎফুল্ল থাকে উদ্যোমী ও ভ্রমণপিপাসু সদস্যরা। তবে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সংগঠন হলেও বিভিন্ন ট্যুরের ক্ষেত্রে অংশগ্রহণের সুযোগ থাকে সবার জন্য উন্মুক্ত। পাশাপাশি অ্যাডভেঞ্চারের ক্ষেত্রে দেশের সেরা ব্যক্তিত্বদের সঙ্গে থাকে মতবিনিময়ের বিশেষ প্রোগ্রাম। অ্যাডভেঞ্জার তারকাদের কাছ থেকে সরাসরি অভিজ্ঞতা ও চ্যালেঞ্জিং ট্যুরের কথা শোনার মাধ্যমে উৎসাহিত হন সোসাইটির তারুণ্যদীপ্ত সদস্যরা।
ফয়েজ আহমেদ আর সাদিয়া মুবাশ্বারা জান্নাত শোনালেন রঙিন আরও কিছু স্বপ্নের কথা। পরিকল্পনা রয়েছে পর্বতে আরোহণের। এরই মধ্যে ট্যুরিস্ট সোসাইটির সদস্যরা কেওক্রাডং এবং জাদিপাই ট্রেইল করে এসেছেন। সামনে জানুয়ারিতে পরিকল্পনা রয়েছে নাফাখুম এবং তাজিংডং হাইকিং ট্রেইলের। শিক্ষার্থীদের জন্য শিগগিরই একটি ট্যুর ট্রেনিং প্রোগ্রামের ব্যবস্থা করা হবে।
এতে শিক্ষার্থীরা পড়াশোনার পাশাপাশি ট্যুর গাইড হিসেবে কাজ করার সুযোগ পাবেন। এ ছাড়া সব বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষার্থীদের নিয়ে ট্যুরবিষয়ক একটি স্পেশাল প্রোগ্রামের ভাবনার কথাও বললেন তারা।
ট্যুরিস্ট সোসাইটির উপদেষ্টা ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের সমাজবিজ্ঞান বিভাগের অধ্যাপক ড. মাসুদা এম রশিদ চৌধুরী সংগঠন সম্পর্কে বলেন, তাত্তি্বক জ্ঞানের সঙ্গে বাস্তবতা মিলিয়ে নেওয়ার জন্য বিভিন্ন পর্যটন স্পট ভ্রমণ করা শিক্ষার্থীদের মেধার পরিপূর্ণ বিকাশে সহায়ক। এ জন্য ট্যুরিস্ট সোসাইটির কার্যক্রমের প্রশংসা করেন তিনি।

No comments

Powered by Blogger.