বিজয়ের ৪০ বছরঃ বিদেশি সহযোদ্ধা, অকৃত্রিম বন্ধু আঁদ্রে মালরো by সুমন কায়সার
মহান মুক্তিযুদ্ধে যে বিশিষ্ট বিদেশিরা নিজ উদ্যোগে বাংলাদেশের সমর্থনে এগিয়ে এসেছিলেন, তাঁদের মধ্যে সম্ভবত সবচেয়ে বর্ণাঢ্য ব্যক্তিত্ব আঁদ্রে মালরো। মহান এই ফরাসি লেখক-রাজনীতিক-সৈনিক যুদ্ধবিমান ও ট্যাংক চালিয়েছেন, স্পেনের বিপ্লবীদের সহায়তায় চাঁদা তুলতে গেছেন আটলান্টিক পেরিয়ে মার্কিন দেশে। ইন্দোচীনে নিজ দেশের ঔপনিবেশিক আচরণের প্রতিবাদে প্রকাশ করেছেন শৃঙ্খলিত ইন্দোচায়নার মতো নামের সংবাদপত্র!
১৯৭১ সালে বাংলাদেশে পাকিস্তানি দখলদার বাহিনী যে বর্বর গণহত্যা চালিয়েছিল, সে ব্যাপারে বিশ্ববাসীকে অবহিত করতে জোরালো ভূমিকা রেখেছিলেন মালরো। শুধু মৌখিক প্রতিবাদ নয়, প্রস্তাব দিয়েছিলেন বাঙালিদের পাশে দাঁড়িয়ে অস্ত্র হাতে লড়বেন। ১৯৭১ সালের ১৮ সেপ্টেম্বর মালরো প্যারিসে এক সংবাদ সম্মেলনে বাংলাদেশের মুক্তিযোদ্ধাদের সঙ্গে যোগ দিয়ে লড়াই করার ইচ্ছা প্রকাশ করেন। তাঁর এ ঘোষণা বেশ আলোড়ন সৃষ্টি করে। মুক্তিযুদ্ধে সহায়তায় প্রবাসী বুদ্ধিজীবীদের নিয়ে গঠিত বাংলাদেশ লিবারেশন কাউন্সিলকে চিঠিও দিয়েছিলেন মালরো। দেড় শ ফরাসি যোদ্ধার একটি দল গড়েও শেষ পর্যন্ত শক্তিশালী প্রতিবেশী ভারত মুক্তিযুদ্ধে যুক্ত হওয়ায় ভরসা পেয়ে বাংলাদেশে আসার পরিকল্পনা ত্যাগ করেন তিনি।
বাংলাদেশের পক্ষে অস্ত্র ধারণ করা সম্ভব হয়নি আঁদ্রে মালরোর; কিন্তু তিনি যতটুকু করেছিলেন, তা-ই পরবর্তী সময়ে স্বয়ং বঙ্গবন্ধুর তাঁকে আমন্ত্রণ জানিয়ে শ্রদ্ধা জানানোর জন্য ছিল যথেষ্ট।
আক্রান্ত দুর্বলের পক্ষে লড়াই করা মালরোর জন্য নতুন হতো না, যেহেতু স্পেন ও অধিকৃত ফ্রান্সে যুদ্ধ করেছেন অতীতে। কিন্তু ৭০ বছরে পা দেওয়া মানুষটি কেন সুদূর বাংলাদেশের রণাঙ্গনে ছুটে যেতে চান, সে প্রশ্নের জবাব দিতে শব্দ হাতড়াতে হয়নি তাঁকে। আঁদ্রে মালরো বলেছিলেন, এর কারণ শুধু এই নয় যে, বাংলাদেশ এখন ‘সবচেয়ে নির্মম গণহত্যার শিকার আর সবচেয়ে হুমকির মুখে থাকা’ এক জনপদ। কারণ এটাও যে ‘আপনারা মহান ভারতীয় সভ্যতার অংশ যা কিনা তিন হাজার বছর পুরোনো আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ এক সভ্যতা।’
মালরো শুধু যুদ্ধ চলাকালে ফরাসি সরকার ও জনগণকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের দুর্গতি সম্পর্কে সচেতন করেই ক্ষান্ত হননি, স্বাধীনতার পর নবীন রাষ্ট্রটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আর উন্নয়ন-সহায়তা লাভের জন্যও কাজ করেছেন। প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গলের সরকারে দীর্ঘদিন তথ্য, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মালরোর চেষ্টা বিফল হয়নি। ফ্রান্স বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ১৯৭২ সালেই ঢাকায় রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে দেশটি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে ঢাকায় আসেন এই বাংলাদেশ-দরদি। এখানে তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্থানে ভাষণ দেন মালরো, যার ছত্রে ছত্রে ছিল সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ আর এর সাদাসিধে গণমানুষের জন্য প্রগাঢ় মমতা। বাংলাদেশের জন্য আঁদ্রে মালরোর লড়াই বিশ্বের নিপীড়িত, দুর্গত মানুষের প্রতি তাঁর অপরিসীম দরদেরই প্রমাণ। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে গিয়ে তিনি যেভাবে বেদনায় মলিন হয়েছেন, তা কেবল একান্ত আপনজনের পক্ষেই সম্ভব।
১৯২০-এর দশকে ইন্দোচীন সফরকালে স্থানীয় জাতীয়তাবাদীদের পক্ষ নিয়ে নিজ দেশের ঔপনিবেশিক নীতির সমালোচনা করেছিলেন এই মালরো। এ সময় তিনি স্থানীয় তরুণদের জন্য জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘ইয়ং আনাম লিগ’ গঠনে সহায়তা করেন। দেশে ফিরে প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম উপন্যাস দ্য টেম্পটেশন অব দ্য ওয়েস্ট। স্পেনের গৃহযুদ্ধে ফ্যাসিস্টবিরোধী পপুলার ফ্রন্ট সরকারেরও জোরালো সমর্থক ছিলেন তিনি। একদল ফরাসি বৈমানিককে সংগঠিত করেছিলেন রিপাবলিকের পক্ষে যুদ্ধবিমান চালাতে। নিজেও অংশ নিয়েছেন তাতে। দখলদার নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও। এমনই বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এ মানবতাবাদী সাহিত্যিকের জীবন।
আক্রান্ত দুর্বলের পক্ষে লড়াই করা মালরোর জন্য নতুন হতো না, যেহেতু স্পেন ও অধিকৃত ফ্রান্সে যুদ্ধ করেছেন অতীতে। কিন্তু ৭০ বছরে পা দেওয়া মানুষটি কেন সুদূর বাংলাদেশের রণাঙ্গনে ছুটে যেতে চান, সে প্রশ্নের জবাব দিতে শব্দ হাতড়াতে হয়নি তাঁকে। আঁদ্রে মালরো বলেছিলেন, এর কারণ শুধু এই নয় যে, বাংলাদেশ এখন ‘সবচেয়ে নির্মম গণহত্যার শিকার আর সবচেয়ে হুমকির মুখে থাকা’ এক জনপদ। কারণ এটাও যে ‘আপনারা মহান ভারতীয় সভ্যতার অংশ যা কিনা তিন হাজার বছর পুরোনো আধ্যাত্মিকতায় সমৃদ্ধ এক সভ্যতা।’
মালরো শুধু যুদ্ধ চলাকালে ফরাসি সরকার ও জনগণকে পূর্ব পাকিস্তানের বাঙালিদের দুর্গতি সম্পর্কে সচেতন করেই ক্ষান্ত হননি, স্বাধীনতার পর নবীন রাষ্ট্রটির আন্তর্জাতিক স্বীকৃতি আর উন্নয়ন-সহায়তা লাভের জন্যও কাজ করেছেন। প্রেসিডেন্ট শার্ল দ্য গলের সরকারে দীর্ঘদিন তথ্য, সংস্কৃতিসহ বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের দায়িত্বে থাকা মালরোর চেষ্টা বিফল হয়নি। ফ্রান্স বিশ্বের প্রথম দেশগুলোর একটি হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছিল বাংলাদেশকে। ১৯৭২ সালেই ঢাকায় রাষ্ট্রদূত নিয়োগ করে দেশটি।
বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের আমন্ত্রণে ১৯৭৩ সালের এপ্রিলে ঢাকায় আসেন এই বাংলাদেশ-দরদি। এখানে তাঁকে প্রাণঢালা সংবর্ধনা দেওয়া হয়। সংক্ষিপ্ত সফরে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়সহ কয়েকটি স্থানে ভাষণ দেন মালরো, যার ছত্রে ছত্রে ছিল সদ্য স্বাধীন যুদ্ধবিধ্বস্ত বাংলাদেশ আর এর সাদাসিধে গণমানুষের জন্য প্রগাঢ় মমতা। বাংলাদেশের জন্য আঁদ্রে মালরোর লড়াই বিশ্বের নিপীড়িত, দুর্গত মানুষের প্রতি তাঁর অপরিসীম দরদেরই প্রমাণ। প্রত্যক্ষদর্শীরা বলেছেন, সোহ্রাওয়ার্দী হাসপাতালে আহত মুক্তিযোদ্ধাদের দেখতে গিয়ে তিনি যেভাবে বেদনায় মলিন হয়েছেন, তা কেবল একান্ত আপনজনের পক্ষেই সম্ভব।
১৯২০-এর দশকে ইন্দোচীন সফরকালে স্থানীয় জাতীয়তাবাদীদের পক্ষ নিয়ে নিজ দেশের ঔপনিবেশিক নীতির সমালোচনা করেছিলেন এই মালরো। এ সময় তিনি স্থানীয় তরুণদের জন্য জাতীয়তাবাদী সংগঠন ‘ইয়ং আনাম লিগ’ গঠনে সহায়তা করেন। দেশে ফিরে প্রকাশ করেন তাঁর প্রথম উপন্যাস দ্য টেম্পটেশন অব দ্য ওয়েস্ট। স্পেনের গৃহযুদ্ধে ফ্যাসিস্টবিরোধী পপুলার ফ্রন্ট সরকারেরও জোরালো সমর্থক ছিলেন তিনি। একদল ফরাসি বৈমানিককে সংগঠিত করেছিলেন রিপাবলিকের পক্ষে যুদ্ধবিমান চালাতে। নিজেও অংশ নিয়েছেন তাতে। দখলদার নাৎসি বাহিনীর বিরুদ্ধে লড়েছেন দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধেও। এমনই বিচিত্র অভিজ্ঞতায় সমৃদ্ধ বিংশ শতাব্দীর অন্যতম শ্রেষ্ঠ এ মানবতাবাদী সাহিত্যিকের জীবন।
No comments