নদ-নদীর ড্রেজিং-পানিতে আর কত অর্থ
পানিতে অর্থ ঢালা কিংবা সরকারি মাল দরিয়ায় ঢাল_ এ ধরনের আরও কিছু প্রবাদ রয়েছে বাংলা ভাষায়, যা কীভাবে সৃষ্টি হয়েছে তা হয়তো অজ্ঞাত। কিন্তু নদ-নদীর ড্রেজিংয়ের নামে বছরের পর বছর ধরে যেভাবে অর্থের অপচয় ঘটছে তাতে এ ধারণা হতেই পারে যে, পানিসম্পদ মন্ত্রণালয় ও অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষকে লক্ষ্য করেই এ ধরনের বাক্য তৈরি হয়েছে। রোববার সমকালে 'ড্রেজিংয়ের শত শত কোটি টাকা নদীতে' শিরোনামের খবর থেকেও এ
অভিমত আরও জোরালো হবে। খাল পুনঃখনন ও সংস্কারের নামেও এমন অপচয়ের ঘটনা ঘটে চলেছে। নদ-নদী প্রকৃতির সৃষ্টি। সড়ক ও রেলপথের মতো তা তৈরি করায় বিনিয়োগের প্রয়োজন পড়ে না। আমাদের কাজ কেবল নদ-নদী রক্ষণাবেক্ষণ ও সংস্কার। দুর্ভাগ্যজনকভাবে, সরকারি বাজেটে প্রয়োজনীয় বরাদ্দ না রেখে এ কাজে দারুণ অবহেলা করা হয়েছে। পাশাপাশি সীমিত যে বরাদ্দ রাখা হয়েছে, তার উল্লেখযোগ্য অংশে হয়েছে অনিয়ম, ড্র্রেজিংয়ের নামে প্রকৃত অর্থেই ঢালা হয়েছে পানিতে অর্থ। যারা এ কাজের ঠিকাদারি পায় এবং যাদের ওপর এর তদারকির ভার, উভয়ের জন্যই নদ-নদীর সংস্কার অপরিসীম আয়ের উৎস। সমকালের প্রতিবেদনে বলা হয়, অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ মাদারীপুর-টেকেরহাট-গোপালগঞ্জ নৌপথে ড্রেজিং কাজ পরিচালনা করছে। তাদের দাবি, ইতিমধ্যে প্রায় ২ লাখ ঘনমিটার ড্রেজিং শেষ হয়েছে। কিন্তু এ কাজের ফলে নৌযান চলাচল সহজ হয়েছে কিংবা সেচ সুবিধা সম্প্রসারিত হয়েছে, এমন দাবি করা চলে না। বরিশালের হোসনাবাদ-টরকি পথেও ড্রেজিং করে লঞ্চ চলাচল পরিস্থিতির উন্নতি ঘটানো যায়নি। পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং মাওয়া-চরজানাজাত ফেরিপথেও বছরের পর বছর ধরে ড্রেজার সক্রিয় দেখা যায়। কিন্তু এর প্রকৃত সুফল মিলছে কি? নাকি ঠিকাদার ও অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষের সংশ্লিষ্ট কিছু ব্যক্তির পকেট ভারী করার জন্যই এ ধরনের প্রকল্প গ্রহণ করা হয়? ড্রেজিং থেকে কাঙ্ক্ষিত ফল লাভ না করার জন্য সংশ্লিষ্ট সরকারি কর্মকর্তারা নানা যুক্তি দেবেন। তারা বলবেন, বাজেট বরাদ্দ কম, ড্রেজার বহর সীমিত। সর্বোপরি বলা হবে, প্রতি বছর বিপুল পরিমাণ পলি উজান থেকে নেমে আসায় কাজে তেমন ফল মিলছে না। এসব বক্তব্য উড়িয়ে দেওয়ার উপায় নেই। সরকারকে অবশ্যই পরিকল্পিত ড্রেজিং কাজ নিয়মিত চালিয়ে যাওয়ার জন্য লজিস্টিক সমর্থন দিয়ে যেতে হবে। দাতাগোষ্ঠীর আরও সহায়তা কাম্য। আমরা দাতাদের পরামর্শে নৌপথকে কম গুরুত্ব দিয়ে এবং যোগাযোগ ব্যবস্থায় সড়কপথকে প্রাধান্য দিয়েছি। প্রকৃতির অপার দানকে এভাবে উপেক্ষা করার পরিণতি শুভ হয়নি। আমাদের অনেক নদ-নদী শুকিয়ে গেছে বা যাচ্ছে। ফলে স্বল্প ব্যয়ের নৌপথ ক্রমে সংকুচিত হচ্ছে, সেচ কাজ ও মাছের চাষে সমস্যা ক্রমে প্রকট হচ্ছে। পরিবেশে পড়ছে ক্ষতিকর প্রভাব। সম্প্রতি সরকার ড্রেজিং কাজ ব্যাপকভিত্তিক করার কথা বলছে। কিন্তু নদীতে অর্থ ঢালা বন্ধ না হলে বরাদ্দ করা অর্থ থেকে আদৌ প্রত্যাশিত ফল মিলবে না। অভ্যন্তরীণ নৌ-পরিবহন কর্তৃপক্ষ দাবি করছে, ড্রেজিং কাজে অনিয়মের সুযোগ নেই। প্রকল্প স্টিয়ারিং কমিটি ও মনিটরিং কমিটি সার্বিক কাজ দেখভাল করে। এমন আদর্শ পরিস্থিতি একান্তভাবে কাম্য। কিন্তু ড্রেজিংয়ের পর নদীতে কত জল, সেটার সঠিক পরিমাপ করে এমন কথা বলা হচ্ছে তো?
No comments