টিউশনি-কোচিং নেই, তাই মানবিকে ভর্তিতে অনীহা!-সরকারি স্কুলে ভর্তির ফরম আজ থেকে by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য

রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোতে আজ সোমবার থেকে ভর্তির ফরম বিতরণ শুরু হবে। প্রথম, দ্বিতীয়, ষষ্ঠ এবং নবম শ্রেণীতে ভর্তির ফরম বিতরণ চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। এ ছাড়া আসন ফাঁকা থাকলে অন্যান্য শ্রেণীর জন্যও কিছু ফরম বিতরণ করা হবে। প্রথম শ্রেণীতে লটারির মাধ্যমে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। তবে ভর্তির জন্য চলতি বছরের নীতিমালা এখনো প্রণয়ন করা হয়নি।


সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, রাজধানীর ২৪টি সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের নবম শ্রেণীতে শুধু বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য ফরম বিতরণ করা হয়। এ শ্রেণীর মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয় না। তাঁদের মতে, শিক্ষকরা নিজেদের আর্থিকভাবে লাভবান হওয়ার কথা চিন্তা করেই শিক্ষার্থীদের মানবিক বিভাগে পড়ার আকাঙ্ক্ষাকে গুরুত্ব দেন না।
মাধ্যমিক ও উচ্চশিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) কর্মকর্তারা বলছেন, নবম শ্রেণীতে মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির আদেশ দেওয়া থাকলেও শিক্ষকরা শিক্ষার্থীদের ভর্তি করান না। কারণ মানবিকের শিক্ষার্থীদের প্রাইভেট ও কোচিং পড়া লাগে না। শুধু এই একটি কারণে তাঁরা মানবিকে শিক্ষার্থী ভর্তি করেন না। অথচ বিজ্ঞান ও বাণিজ্য বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তিতে ওই শিক্ষকরাই প্রতিযোগিতার সৃষ্টি করেন। কারণ এ দুই বিভাগের অন্তত ১২টি বিষয়ে টিউশনি ও কোচিং ব্যবসা করতে পারেন শিক্ষকরা। এতে তাঁরা ব্যাপকভাবে আর্থিক লাভবান হন।
জানতে চাইলে মাউশির পরিচালক (মাধ্যমিক) অধ্যাপক মো. শফিকুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, নবম শ্রেণীতে মানবিক শাখায় ভর্তির নিয়ম চালু থাকলেও এত দিন তা কঠোরভাবে অনুসরণ করা হয়নি। এবার বিজ্ঞান ও বাণিজ্যের সমান গুরুত্ব দিয়ে মানবিক শাখায় শিক্ষার্থী ভর্তি করার বিধান দেওয়া হবে। ভর্তির নীতিমালার বিষয়ে তিনি বলেন, নীতিমালার খসড়া শিক্ষা মন্ত্রণালয়ে জমা দেওয়া হয়েছে। মন্ত্রণালয় এখন এ নীতিমালাকে চূড়ান্ত করলেই হয়।
অভিযোগের ব্যাপারে কথা হয় সরকারি স্কুলের বেশ কিছু শিক্ষকের সঙ্গে। তাঁরা অভিযোগ অস্বীকার করে বলেছেন, মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থীদের পড়াশোনার প্রতি অনাগ্রহ থাকার কারণেই মানবিকে তাদের ভর্তি করা হয় না। যথারীতি ভর্তির জন্য নোটিশ দেওয়া থাকে। তবে কেউ কেউ আবার কালের কণ্ঠের কাছে স্বীকার করে বলেছেন, মানবিকে অলিখিতভাবে শিক্ষার্থী ভর্তি বন্ধ।
শিক্ষকদের এ বক্তব্যের সঙ্গে দ্বিমত প্রকাশ করেন অভিভাবক ঐক্য ফোরামের সভাপতি মুক্তিযোদ্ধা জিয়াউল কবীর দুলু। তিনি কালের কণ্ঠকে বলেছেন, 'বেসরকারি বিদ্যালয়ে ঠিকই তো মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থীরা ভর্তি হয়। তাহলে সরকারি বিদ্যালয়ে ভর্তি হবে না কেন?' তিনি বলেন, কোচিং-টিউশন ব্যবসা করার জন্যই শিক্ষকরা সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ে এ ধারার সৃষ্টি করেছেন। তিনি বলেন, শিক্ষকদের এমন মন-মানসিকতার পরিবর্তন হওয়া দরকার।

গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি স্কুলের প্রধান শিক্ষক মো. আবু সাঈদ ভূঁইয়া কালের কণ্ঠকে বলেন, ওই বিদ্যালয়ে মানবিকে ভর্তির জন্য আসন রয়েছে। কিন্তু এর আগে কখনো এ বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হয়নি। তিনি বলেন, এবার নবম শ্রেণীর মানবিক বিভাগে শিক্ষার্থী ভর্তির জন্য নোটিশ দেওয়া হবে। একই কথা বলেছেন মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়ের প্রধান শিক্ষক সৈয়দ হাফিজুল ইসলাম। তবে তাঁরা কেউই টিউশনি ও কোচিং ব্যবসার জন্য মানবিকে শিক্ষার্থী বন্ধের বিষয়টি স্বীকার করেননি। শিক্ষার্থীদের এ বিভাগে না পড়ার অনাগ্রহের কথাই বলেছেন।
এদিকে আজ থেকে শুরু হচ্ছে রাজধানীর ২৪টিসহ সারা দেশের সব সরকারি বিদ্যালয়ে নতুন শিক্ষাবর্ষের ভর্তি কার্যক্রম। রাজধানীর স্কুলগুলোতে ফরম বিক্রির মধ্য দিয়ে এ প্রক্রিয়া শুরু হচ্ছে। তবে রাজধানীর বাইরের সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়ের ফরম বিক্রি, লটারি ও পরীক্ষা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে নিতে পারবে জেলা ও উপজেলা ভর্তি কমিটি। প্রথম শ্রেণীর ভর্তি এবারও হবে লটারির মাধ্যমে। দ্বিতীয় শ্রেণী থেকে নবম শ্রেণীতে আগের নিয়মেই হবে ভর্তি পরীক্ষা। আছে মুক্তিযোদ্ধার সন্তান কোটাসহ অন্য সব সুবিধা। এর মধ্যে প্রথম থেকে নবম শ্রেণী পর্যন্ত ভর্তিতে মুক্তিযোদ্ধার সন্তানদের জন্য বরাদ্দ থাকবে ৫ শতাংশ আসন। এ ছাড়া প্রতিবন্ধী ২ শতাংশ, ষষ্ঠ শ্রেণীতে স্বতন্ত্র সরকারি প্রাথমিক বিদ্যালয় থেকে আসা শিক্ষার্থীদের জন্য ১০ শতাংশ এবং শিক্ষা মন্ত্রণালয় ও সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানের শিক্ষক-কর্মকর্তা-কর্মচারীদের সন্তানদের জন্য ২ শতাংশ কোটা বরাদ্দ থাকবে।
মাউশির মহাপরিচালক অধ্যাপক মো. নোমান-উর-রশিদ কালের কণ্ঠকে জানান, রাজধানীর বিদ্যালয়ে ফরম বিক্রি, লটারি ও পরীক্ষার সময়সূচি ইতিমধ্যে সংশ্লিষ্ট সবাইকে জানানো হয়েছে। আজ থেকে ফরম বিক্রি শুরু হয়ে চলবে ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত। ১৩ ডিসেম্বর পর্যন্ত ১০০ টাকা মূল্যে ফরম কেনা যাবে সকাল ৯টা থেকে বিকেল ৩টা পর্যন্ত। আর ১৩ ডিসেম্বর ফরম বিক্রি হবে ৯টা থেকে বিকেল ৫টা পর্যন্ত। লটারির ড্র ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর। দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা হবে ১৮, ১৯ ও ২০ ডিসেম্বর। ফল প্রকাশিত হবে ২৯ ডিসেম্বর। রাজধানীর ২৪টি বিদ্যালয়কে 'ক', 'খ' ও 'গ' গ্রুপে ভাগ করে লটারি, ভর্তি পরীক্ষাসহ এ-সংক্রান্ত কার্যক্রম চালানো হচ্ছে। এক শিক্ষার্থী একটি গ্রুপ থেকে কেবল একটি ফরম তুলতে পারবে। তিনি জানান, রাজধানীর বাইরের বিদ্যালয়ে ফরম বিক্রি, লটারি ও পরীক্ষা নিজেদের সুবিধামতো সময়ে নেবে জেলা ও উপজেলা ভর্তি কমিটি।

No comments

Powered by Blogger.