জটিল আবর্তে পদ্মা সেতু-সরকার ও বিশ্বব্যাংক কি মুখোমুখি অবস্থানে!

দুর্নীতির অভিযোগ তুলে পদ্মা সেতুর অর্থায়ন স্থগিত রেখেছে বিশ্বব্যাংক। এ নিয়ে কয়েক মাস ধরেই সরকার ও বিশ্বব্যাংকের মধ্যে আলোচনা ও চিঠি চালাচালি চলছে। গণমাধ্যমে বিভিন্ন সময়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও আলোচনা থেকে এমন ইঙ্গিতই পাওয়া যায়, বিশ্বব্যাংক চাইছে, বর্তমান যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেনকে যোগাযোগ মন্ত্রণালয় থেকে সরিয়ে দেওয়া হোক। অন্যদিকে কানাডীয় কম্পানি এসএনসি লাভালিনকে পদ্মা সেতু প্রকল্পের


পরামর্শক নিয়োগের ক্ষেত্রে উৎকোচ গ্রহণ ও প্রদানের যে অভিযোগ উঠেছে, সে বিষয়টি বাংলাদেশে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) এবং কানাডায় সে দেশের পুলিশ তদন্ত করে দেখছে। কিন্তু কোনো তদন্তই এখনো শেষ হয়নি এবং কবে শেষ হবে, তাও সুনিশ্চিত নয়। তাই পদ্মা সেতু প্রকল্পটিও অনিশ্চিতভাবে ঝুলে আছে। অথচ দেশের দক্ষিণাঞ্চলে বিশাল জনগোষ্ঠীর জন্য এই সেতু নির্মিত হওয়াটা অত্যন্ত জরুরি।
গতকাল রবিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, সরকারি দল আওয়ামী লীগের কার্যনির্বাহী সংসদের বৈঠকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা ইঙ্গিত দিয়েছেন, পদ্মা সেতুর ব্যাপারে সরকার আর বিশ্বব্যাংকের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে চায় না। সরকার সেতু নির্মাণের দায়িত্ব বেসরকারি খাতে দিয়ে দিতে চায়। তিনি জানিয়েছেন, ইতিমধ্যেই বেসরকারি খাতের কিছু উদ্যোক্তা এ ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। বেসরকারি খাতে দেওয়ার চিন্তাটা মোটেও খারাপ নয়, বরং এই খাতের সরকারি অর্থ অন্যান্য খাতের উন্নয়নে ব্যয় করা যাবে। কিন্তু তা যদি বিশ্বব্যাংকের সিদ্ধান্তকে চ্যালেঞ্জ করার জন্য কিংবা বিশ্বব্যাংককে দেখিয়ে দেওয়ার জন্য হয়, তাহলে তার আগে সরকারকে বিষয়টি আরো গভীরভাবে চিন্তা করতে হবে। কারণ বিশ্বব্যাংক শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্পে নয়, অন্য বহু খাতের উন্নয়নেই অর্থায়ন করছে। এ ক্ষেত্রে মুখোমুখি অবস্থান নিতে গেলে দেশের সামগ্রিক উন্নয়নই বাধাগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দেবে। সে রকম পরিস্থিতি মোকাবিলা করার জন্য সরকারের যথেষ্ট প্রস্তুতি আছে কি না, তাও বিবেচনা করে দেখতে হবে।
অন্যদিকে পদ্মা সেতু প্রকল্প নিয়ে বিশ্বব্যাংকের যে অবস্থান আমরা দেখতে পাচ্ছি, তাকেও আমরা যথেষ্ট যৌক্তিক বলতে পারছি না। কানাডীয় কম্পানিকে নিয়োগের ব্যাপারে যে অভিযোগ উঠেছে তা দুটি দেশেই তদন্ত করা হচ্ছে। দুর্নীতি হয়ে থাকলে তদন্তের ফলাফলে তা নিশ্চয়ই উঠে আসবে। বাংলাদেশের তদন্তের ওপর তাদের আস্থা নাও থাকতে পারে, কিন্তু কানাডার তদন্তের ওপর তো তাদের আস্থা থাকা প্রয়োজন। তার আগেই অভিযুক্তের বিরুদ্ধে এ ব্যাপারে ব্যবস্থা নেওয়ার জন্য বাংলাদেশ সরকারের ওপর চাপ সৃষ্টি কিংবা 'ডিক্টেট' করাটা একটি সার্বভৌম দেশের নাগরিক হিসেবে আমাদের কাছে খুব একটা শোভনীয় মনে হচ্ছে না। আমরা কী বলব, যোগাযোগমন্ত্রীকে অপসারণ করলেই যদি সমস্যার সমাধান হয়, বিশ্বব্যাংক যদি অর্থ ছাড় করে, তাহলে তা-ই করা হোক! তবে বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের দুর্নীতি প্রতিরোধে সুনির্দিষ্ট পদক্ষেপ নেওয়ার এবং তাতে কারিগরি সহযোগিতা দেওয়ার যে প্রস্তাব দিয়েছে, সেটি মেনে না নেওয়ার যুক্তিসংগত কোনো কারণ নেই। শুধু বিশ্বব্যাংক নয়, দেশের মানুষও চায় প্রকল্পটি সম্পূর্ণভাবে দুর্নীতিমুক্ত হোক। দেশকে দুর্নীতিমুক্ত করার প্রতিশ্রুতি দিয়েই বর্তমান সরকার ক্ষমতায় এসেছিল। কাজেই এ ক্ষেত্রে সরকারেরই এগিয়ে আসা উচিত বলে আমরা মনে করি। আর দুর্নীতির অভিযোগ তদন্তে দুদক যেকোনো ধরনের চাপ অগ্রাহ্য করে স্বচ্ছতার সঙ্গে দ্রুত কাজ করুক এবং দ্রুত একটি সিদ্ধান্তে উপনীত হোক_সেটাই আমরা চাই।

No comments

Powered by Blogger.