ঢাকা ভাঙার বিড়ম্বনা by রোহিত হাসান কিছলু
ঢাকা সিটি দু'ভাগে ভাগ হওয়ার খবর শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনসুর সাহেব খুশিতে একটা লাফ দিয়ে উঠলেন। না, তিনি সরকারি দলের কেউ নন, আবার ঢাকার দুই ভাগের কোনো মেয়রের আত্মীয়ও নন। তিনি এ দেশের খেটে খাওয়া সাধারণ আশাবাদী একজন মানুষ! তাই খবরটা শোনার সঙ্গে সঙ্গে মনসুর সাহেব আশায় বুক বাঁধলেন। এবার ঢাকা শহরের একটা উন্নতি হবেই! ঢাকা দুই ভাগে ভাগ হয়ে গেছে, এখন ঢাকায় দু'জন মেয়র থাকবেন।
কাজেই এখন থেকে ঢাকা একটা বাড়তি যত্নে থাকবে! ব্যাপারটা দশের লাঠি একের বোঝার মতো ব্যাপার! মনসুর সাহেবের মনে এই খবরে এতই আশা এসে বাসা বাঁধলো যে, তিনি আরামে ঘুমিয়ে পড়লেন।
মনসুর সাহেবের ঘুম ভাঙল তার স্ত্রীর ডাকে। 'অ্যাই, তুমি এখনও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছো! বাসার সামনে গিয়ে দেখ সর্বনাশ হয়ে গেছে!' মনসুর সাহেব লাফ মেরে ঘুম থেকে থেকে উঠে বললেন, 'কোন নাশ হইছে কইলা?' মনসুর সাহেবের স্ত্রী চেঁচিয়ে বললেন, কোন নাশ আবার! সর্বনাশ! মনসুর সাহেব একছুটে বাসার বাইরে বের হয়ে এলেন। তারপর স্ত্রীর উদ্দেশে চেঁচিয়ে বললেন, 'কোথায় সর্বনাশ! আমি তো আমার বাসার সামনে রাস্তা দেখছি! কোথাও তো সর্বনাশ দেখছি না!' এবার তার স্ত্রী আগের থেকেও উত্তেজিত হয়ে বললেন, রাজনৈতিক নেতাদের মতো চোখের মাথা খেয়েছো নাকি! রাস্তার পাশে ওটা কী? এবারে মনসুর সাহেব ভালো করে দেখলেন, তার বাসার সামনে একটা ডাস্টবিন বসানো হয়েছে! আর সবাই তাতে ময়লা ফেলছে! দেখার সঙ্গে সঙ্গে মনসুর সাহেব একটা বিটকেলে গন্ধও পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তার পেটের ভেতরটাও একটা গোতলান দিয়ে উঠল!
মনসুর সাহেব প্রতিবাদ করতেই শুনলেন ঢাকা উত্তরের সিটি করপোরেশন এ ডাস্টবিনটা বসিয়ে গেছেন! কাজেই যা বলার ওখানে গিয়েই বলতে হবে! এখানে চোটপাট করে লাভ নেই! মনসুর সাহেব বাসায় মন খারাপ করে ফিরা মাত্রই তার স্ত্রী চেঁচিয়ে বললেন, 'কী ব্যাপার তুমি ডাস্টবিন না সরিয়ে ফিরে এলে কেন?' মনসুর সাহেব কাচুমাচু মুখে বললেন, ডাস্টবিন সরিয়ে জেল খাটব নাকি! এটা ঢাকা উত্তরের সিটি করপোরেশন বসিয়ে গেছে! কাজেই এটা সরাতে হলে ওদের অনুমতি লাগবে। আমি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অফিসে যাচ্ছি! আমি বললেই ওরা সরিয়ে দেবে! মনসুর সাহেব বুকভরা আশা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দিকে রওনা হলেন। বাইরে বের হয়েই মনসুর সাহেব একটা টাশকি খেলেন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগে ভাগ হয়েছে ঠিকই; কিন্তু নতুন কিছুই তো চোখে পড়ছে না! বরং চোখে পড়ছে সেই যানজট, মানুষের ভিড়, ঢাকনা খোলা ম্যানহোল আর ময়লা ভরা রাস্তাঘাট! মনসুর সাহেব মনে মনে কিঞ্চিত আহত হলেও আশা ছাড়লেন না!
মনসুর সাহেব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অফিসে বসে আছেন! এখনও মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি! তার সামনে এক পিয়ন বসে আছে। তাকে মনসুর সাহেব না হলেও ২০ বারের বেশি বলেছেন, আমি মেয়রের সঙ্গে দেখা করব! একটা ইমার্জেন্সি ব্যাপার আছে! কিন্তু সেই কথা তার কানে ঢোকেনি! সে আপন মনে পান চিবিয়ে চলেছে! যেন এ মুহূর্তে তার কাছে পান চিবানোটাই ইমার্জেন্সি! কোনো উপায় না দেখে মনসুর সাহেব তার পকেট থেকে একশ' টাকার একটা নোট বের করতেই পিয়নের পান চিবানো বন্ধ হলো! খুশিতে পাবলিক টয়লেটের কমোডের মতো লাল হয়ে যাওয়া দাঁতগুলো বের করে বলল, মেয়র সাবের লগে দেখা করবেন আর এইটা আগে বলবেন না! আসেন আমার লগে!
মনসুর সাহেবের সব কথা শুনে মেয়র বললেন, বেশ সমস্যার কথা! কিন্তু আমাদের এখানে কিছুই করার নেই! আপনার বাড়ির নাম আমাদের লিস্টে নেই! ওটা দক্ষিণ ঢাকার লিস্টে পড়ছে! তাই আমরা এখানে কিছুই করতে পারব না! আপনি দক্ষিণ ঢাকার অফিসে যোগাযোগ করেন! মনসুর সাহেব মন খারাপ করে মেয়রের রুম থেকে বের হয়ে এলেও মনে মনে আশা রাখলেন যে দক্ষিণ ঢাকার মেয়রের কাছে গেলেই কাজ হয়ে যাবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মনসুর সাহেব আর সেই পুরনো ভুলটা করলেন না! এবারে ঢুকেই পিয়নের হাতে একটা একশ' টাকার নোট দিয়ে বললেন, মেয়র সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে চাই! পিয়ন একশ' মাইল গতিতে দেখা করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিল! মনসুর সাহেব বুঝতে পারলেন টাকার আসলেই অনেক শক্তি।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সব শুনে বললেন, বলেন কী আপনি! এ খবর আমাদের আগে জানাবেন না! উত্তর ঢাকা এ কাজ করেছে! ওদের আমরা বুঝিয়ে দেব যে আমরাও কম না! আমরা আজকেই আপনার বাসার পাশে ওদের চেয়ে সুন্দর একটা ডাস্টবিন বসিয়ে দিব! সেই সুন্দর ডাস্টবিন দেখে উত্তর ঢাকার লোকেরা বলবে, বাহ! দক্ষিণ ঢাকার কাজ কারবার তো উত্তর ঢাকার চাইতেও সুন্দর! জনাব এই আপনাকেই আমরা খুঁজছিলাম! আপনার বাড়িটা একদম দুই ঢাকার মাঝখানে পড়েছে! কাজেই আপনার বাড়িকে ঘিরেই চলবে আমাদের যত আয়োজন! কুয়াকাটা বিচ থেকে যেমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়! তেমনি আপনার বাড়ি থেকে এখন দুই ঢাকার কারিশমা দেখতে পাবেন! আপনি কোনো চিন্তা না করে বাসায় গিয়ে আরাম করে ঘুমান!
মনসুর সাহেবের বাসার পাশে দুই ঢাকার দুইটা ডাস্টবিন! সবাই তাতে ময়লা ফেলছে! মনসুর সাহেব নাকে রুমাল চেপে বুকে আশা নিয়ে বসে আছেন! একদিন তিনি এ ডাস্টবিন সরাতে পারবেনই! তবে মনসুর সাহেবের সংসারও এখন দুই ভাগে বিভক্ত! তার স্ত্রী আর ছেলেমেয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেছে! মনসুর সাহেবের স্ত্রীর কথা হলো, আমি এ ডাস্টবিনে থাকতে পারব না! আমি চলে গেলাম! মনসুর সাহেবের আশা একদিন তার স্ত্রী ফিরে আসবে! তার বাসার সামনে থেকে ডাস্টবিনও সরিয়ে ফেলা হবে! তিনি তাই নাকে-মুখে রুমাল চেপে আশায় বুক বেঁধে বসে আছেন! প্রিয় পাঠক আমাদের সবার অবস্থা এ মনসুর সাহেবের মতোই! আমাদের কিছু করার শক্তি নেই! আছে শুধু আশায় বুক বেঁধে বসে থাকা! তাই আসুন, যা-ই ঘটছে, আমরা তা দেখে নাকে-মুখে রুমাল চেপে একরাশ আশায় বুক বেঁধে বসে থাকি যে, একদিন আমাদের দেশটাও উন্নয়নে বদলে যাবে। হবে একটা সোনার বাংলাদেশ! হ
মনসুর সাহেবের ঘুম ভাঙল তার স্ত্রীর ডাকে। 'অ্যাই, তুমি এখনও নাক ডেকে ঘুমাচ্ছো! বাসার সামনে গিয়ে দেখ সর্বনাশ হয়ে গেছে!' মনসুর সাহেব লাফ মেরে ঘুম থেকে থেকে উঠে বললেন, 'কোন নাশ হইছে কইলা?' মনসুর সাহেবের স্ত্রী চেঁচিয়ে বললেন, কোন নাশ আবার! সর্বনাশ! মনসুর সাহেব একছুটে বাসার বাইরে বের হয়ে এলেন। তারপর স্ত্রীর উদ্দেশে চেঁচিয়ে বললেন, 'কোথায় সর্বনাশ! আমি তো আমার বাসার সামনে রাস্তা দেখছি! কোথাও তো সর্বনাশ দেখছি না!' এবার তার স্ত্রী আগের থেকেও উত্তেজিত হয়ে বললেন, রাজনৈতিক নেতাদের মতো চোখের মাথা খেয়েছো নাকি! রাস্তার পাশে ওটা কী? এবারে মনসুর সাহেব ভালো করে দেখলেন, তার বাসার সামনে একটা ডাস্টবিন বসানো হয়েছে! আর সবাই তাতে ময়লা ফেলছে! দেখার সঙ্গে সঙ্গে মনসুর সাহেব একটা বিটকেলে গন্ধও পেলেন। সঙ্গে সঙ্গে তার পেটের ভেতরটাও একটা গোতলান দিয়ে উঠল!
মনসুর সাহেব প্রতিবাদ করতেই শুনলেন ঢাকা উত্তরের সিটি করপোরেশন এ ডাস্টবিনটা বসিয়ে গেছেন! কাজেই যা বলার ওখানে গিয়েই বলতে হবে! এখানে চোটপাট করে লাভ নেই! মনসুর সাহেব বাসায় মন খারাপ করে ফিরা মাত্রই তার স্ত্রী চেঁচিয়ে বললেন, 'কী ব্যাপার তুমি ডাস্টবিন না সরিয়ে ফিরে এলে কেন?' মনসুর সাহেব কাচুমাচু মুখে বললেন, ডাস্টবিন সরিয়ে জেল খাটব নাকি! এটা ঢাকা উত্তরের সিটি করপোরেশন বসিয়ে গেছে! কাজেই এটা সরাতে হলে ওদের অনুমতি লাগবে। আমি ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অফিসে যাচ্ছি! আমি বললেই ওরা সরিয়ে দেবে! মনসুর সাহেব বুকভরা আশা নিয়ে ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের দিকে রওনা হলেন। বাইরে বের হয়েই মনসুর সাহেব একটা টাশকি খেলেন। ঢাকা সিটি কর্পোরেশন দুই ভাগে ভাগ হয়েছে ঠিকই; কিন্তু নতুন কিছুই তো চোখে পড়ছে না! বরং চোখে পড়ছে সেই যানজট, মানুষের ভিড়, ঢাকনা খোলা ম্যানহোল আর ময়লা ভরা রাস্তাঘাট! মনসুর সাহেব মনে মনে কিঞ্চিত আহত হলেও আশা ছাড়লেন না!
মনসুর সাহেব ঢাকা উত্তর সিটি করপোরেশনের অফিসে বসে আছেন! এখনও মেয়রের সঙ্গে দেখা করতে পারেননি! তার সামনে এক পিয়ন বসে আছে। তাকে মনসুর সাহেব না হলেও ২০ বারের বেশি বলেছেন, আমি মেয়রের সঙ্গে দেখা করব! একটা ইমার্জেন্সি ব্যাপার আছে! কিন্তু সেই কথা তার কানে ঢোকেনি! সে আপন মনে পান চিবিয়ে চলেছে! যেন এ মুহূর্তে তার কাছে পান চিবানোটাই ইমার্জেন্সি! কোনো উপায় না দেখে মনসুর সাহেব তার পকেট থেকে একশ' টাকার একটা নোট বের করতেই পিয়নের পান চিবানো বন্ধ হলো! খুশিতে পাবলিক টয়লেটের কমোডের মতো লাল হয়ে যাওয়া দাঁতগুলো বের করে বলল, মেয়র সাবের লগে দেখা করবেন আর এইটা আগে বলবেন না! আসেন আমার লগে!
মনসুর সাহেবের সব কথা শুনে মেয়র বললেন, বেশ সমস্যার কথা! কিন্তু আমাদের এখানে কিছুই করার নেই! আপনার বাড়ির নাম আমাদের লিস্টে নেই! ওটা দক্ষিণ ঢাকার লিস্টে পড়ছে! তাই আমরা এখানে কিছুই করতে পারব না! আপনি দক্ষিণ ঢাকার অফিসে যোগাযোগ করেন! মনসুর সাহেব মন খারাপ করে মেয়রের রুম থেকে বের হয়ে এলেও মনে মনে আশা রাখলেন যে দক্ষিণ ঢাকার মেয়রের কাছে গেলেই কাজ হয়ে যাবে। ঢাকা দক্ষিণ সিটি করপোরেশনে মনসুর সাহেব আর সেই পুরনো ভুলটা করলেন না! এবারে ঢুকেই পিয়নের হাতে একটা একশ' টাকার নোট দিয়ে বললেন, মেয়র সাহেবের সঙ্গে দেখা করতে চাই! পিয়ন একশ' মাইল গতিতে দেখা করিয়ে দেওয়ার ব্যবস্থা করে দিল! মনসুর সাহেব বুঝতে পারলেন টাকার আসলেই অনেক শক্তি।
ঢাকা দক্ষিণের মেয়র সব শুনে বললেন, বলেন কী আপনি! এ খবর আমাদের আগে জানাবেন না! উত্তর ঢাকা এ কাজ করেছে! ওদের আমরা বুঝিয়ে দেব যে আমরাও কম না! আমরা আজকেই আপনার বাসার পাশে ওদের চেয়ে সুন্দর একটা ডাস্টবিন বসিয়ে দিব! সেই সুন্দর ডাস্টবিন দেখে উত্তর ঢাকার লোকেরা বলবে, বাহ! দক্ষিণ ঢাকার কাজ কারবার তো উত্তর ঢাকার চাইতেও সুন্দর! জনাব এই আপনাকেই আমরা খুঁজছিলাম! আপনার বাড়িটা একদম দুই ঢাকার মাঝখানে পড়েছে! কাজেই আপনার বাড়িকে ঘিরেই চলবে আমাদের যত আয়োজন! কুয়াকাটা বিচ থেকে যেমন এক জায়গায় দাঁড়িয়ে সূর্যোদয় আর সূর্যাস্ত দেখা যায়! তেমনি আপনার বাড়ি থেকে এখন দুই ঢাকার কারিশমা দেখতে পাবেন! আপনি কোনো চিন্তা না করে বাসায় গিয়ে আরাম করে ঘুমান!
মনসুর সাহেবের বাসার পাশে দুই ঢাকার দুইটা ডাস্টবিন! সবাই তাতে ময়লা ফেলছে! মনসুর সাহেব নাকে রুমাল চেপে বুকে আশা নিয়ে বসে আছেন! একদিন তিনি এ ডাস্টবিন সরাতে পারবেনই! তবে মনসুর সাহেবের সংসারও এখন দুই ভাগে বিভক্ত! তার স্ত্রী আর ছেলেমেয়ে তাকে ছেড়ে চলে গেছে! মনসুর সাহেবের স্ত্রীর কথা হলো, আমি এ ডাস্টবিনে থাকতে পারব না! আমি চলে গেলাম! মনসুর সাহেবের আশা একদিন তার স্ত্রী ফিরে আসবে! তার বাসার সামনে থেকে ডাস্টবিনও সরিয়ে ফেলা হবে! তিনি তাই নাকে-মুখে রুমাল চেপে আশায় বুক বেঁধে বসে আছেন! প্রিয় পাঠক আমাদের সবার অবস্থা এ মনসুর সাহেবের মতোই! আমাদের কিছু করার শক্তি নেই! আছে শুধু আশায় বুক বেঁধে বসে থাকা! তাই আসুন, যা-ই ঘটছে, আমরা তা দেখে নাকে-মুখে রুমাল চেপে একরাশ আশায় বুক বেঁধে বসে থাকি যে, একদিন আমাদের দেশটাও উন্নয়নে বদলে যাবে। হবে একটা সোনার বাংলাদেশ! হ
No comments