ফখরুদ্দীন ও মইনের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার সুপারিশ-সংসদীয় কমিটির খসড়া প্রতিবেদন by সজল জাহিদ

ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ২০০৭ সালের ছাত্র-সেনা সংঘর্ষের মতো পরিস্থিতি এড়াতে পরবর্তী কোনো অবস্থায় বিশ্ববিদ্যালয় ক্যাম্পাসে সেনা ক্যাম্প না বসানোর সুপারিশ করছে সংসদীয় উপ-কমিটি কমিটি। তা ছাড়া তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকারের প্রধান উপদেষ্টা ড. ফখরুদ্দীন আহমদ এবং সেনাপ্রধান মইন উ আহমেদের বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ারও সুপারিশ করা হচ্ছে। তবে তাদের দু'জনের ক্ষেত্রে কোনো শাস্তির সুপারিশ করা হবে, নাকি শুধু 'তিরস্কার'


করা হবে তা এখনও চূড়ান্ত হয়নি। বৃহস্পতিবার সংসদীয় উপ-কমিটির বৈঠকে বিষয়টি ঠিক হবে। সংসদীয় উপ-কমিটির আহ্বায়ক রাশেদ খান মেনন গতকাল টেলিফোনে সমকালকে জানান, বেশ কয়েকটি সুপারিশ তৈরি করেছেন তারা। সব মিলিয়ে তাদের প্রতিবেদন কয়েক হাজার পৃষ্ঠার হতে পারে। এর মধ্যে মূল প্রতিবেদনই হবে অন্তত এক হাজার পৃষ্ঠার। বৃহস্পতিবার সাব-কমিটির বৈঠকে প্রতিবেদন চূড়ান্ত হলে পরে শিক্ষা মন্ত্রণালয় সম্পর্কিত সংসদীয় স্থায়ী কমিটির বৈঠকে এটি উত্থাপিত হবে। সেক্ষেত্রে সংসদের পরবর্তী অধিবেশনের কোনো এক কার্যদিবসে প্রতিবেদন উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি। মেনন জানান, বেশ কিছু সুপারিশের বিষয়ে উপ-কমিটির সদস্যরা ঐকমত্য হয়েছেন। এর মধ্যে স্বায়ত্তশাসিত বিশ্ববিদ্যালয়ের ক্যাম্পাসে সেনা ক্যাম্প না বসানো অন্যতম। এ বিষয়ে একান্ত প্রয়োজন হলে সরকার ও রাষ্ট্রপ্রধানের অনুমোদন প্রয়োজন হবে। তবে সাবেক তত্ত্বাবধায়ক সরকারপ্রধান এবং সেনাপ্রধানের ক্ষেত্রে কী সুপারিশ করা যায় সে বিষয়ে এখনও সিদ্ধান্তে আসতে পারেননি তারা। মেনন জানান, বেশ কয়েকটি বিকল্প তাদের কাছে রয়েছে।
সেক্ষেত্রে আইনগত দিকগুলোও পর্যালোচনা করতে হচ্ছে। তবে উপ-কমিটির সদস্য বীরেন শিকদার জানান, দু'জনকেই বিচারের মুখোমুখি করার চাপ তাদের ওপর রয়েছে। শেষ পর্যন্ত এমন প্রস্তাব করা হলেও অবাক হওয়ার কিছু থাকবে না বলে জানান তিনি।
মেনন বলেন, কোনো বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র-শিক্ষকরা যেন কখনও এমন পরিস্থিতির মুখোমুখি না হন, সে জন্য তাদের বেশ কিছু পর্যাবেক্ষণও রয়েছে। প্রতিবেদনে সব সাক্ষী এবং অভিযুক্তদের বক্তব্যও সংযুক্ত করা হচ্ছে। সে কারণে প্রতিবেদনের কলেবর অনেক বড় হয়েছে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সংসদীয় উপ-কমিটি ঘটনায় সেনাবাহিনীর হাতে নির্যাতিতদের চিকিৎসার দায়িত্ব নেওয়া ও ক্ষতিপূরণ দেওয়া, যাদের নামে এখনও মামলা রয়েছে সেগুলো তুলে নেওয়ার প্রস্তাব করা হচ্ছে। একই সঙ্গে সব বিশ্ববিদ্যালয়ের ছাত্র সংসদ নির্বাচন দেওয়ার কথাও বলা হয়েছে এতে। সূত্র বলছে, উপ-কমিটির পর্যবেক্ষণ হিসেবেও বেশ কিছু কথা থাকবে। উপ-কমিটির সদস্য শাহ আলম সমকালকে বলেন, মূলত ওই ঘটনাকে কেন্দ্র করে সামরিক শাসন জারির পরিকল্পনা নিয়ে এগোচ্ছিল তৎকালীন তত্ত্বাবধায়ক সরকার_ এতে কোনো সন্দেহ নেই। এসব বক্তব্য তাদের দিক থেকে প্রতিবেদনে উপস্থাপন করা হবে বলেও জানান তিনি।
জানা গেছে, ২০০৭ সালের আগস্ট মাসের ঘটনার শতাধিক প্রমাণ প্রতিবেদনের সঙ্গে যুক্ত করা হবে। প্রমাণ হিসেবে বিভিন্ন টেলিভিশনের ভিডিও ফুটেজ এবং সংবাদপত্রের কাটিংকে প্রধান্য দেওয়া হয়েছে। এ ছাড়া সরকারের দায়িত্বশীল কর্মকর্তা, সাবেক উপদেষ্টা, বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক, সেনা কর্মকর্তা, ছাত্রদের বক্তব্য লিখিত এবং অডিও হিসেবে সংযোজিত থাকবে। তবে প্রতিবেদনের শুরুতেই ঘটনার বিস্তারিত বিবরণ দেওয়া থাকবে।
গত পাঁচ মাস ধরে সংসদীয় সংশ্লিষ্ট শাখা এ সংক্রান্ত প্রতিবেদন তৈরি করছে। জুলাইয়ের প্রথম সপ্তাহ থেকে প্রতিবেদন তৈরির কাজ শুরু করে ইতিমধ্যে খসড়া প্রণয়ন শেষে হয়েছে। খসড়া প্রতিবেদন এখন শিক্ষা মন্ত্রণালয় সংক্রান্ত সংসদীয় কমিটির সভাপতি এবং উপ-কমিটির আহ্বায়ক রাশেদ খান মেননের কাছে রয়েছে। তিনি বিস্তারিত পড়ে ৭ ডিসেম্বর সংশোধনের জন্য আবার সংশ্লিষ্ট শাখায় পাঠাবেন। পরে ৮ ডিসেম্বর সাব-কমিটির বৈঠকে তা উপস্থাপিত হবে।
২০০৭ সালের আগস্টে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের খেলার মাঠের ঘটনাকে কেন্দ্র করে ছাত্র ও শিক্ষকদের সঙ্গে সেনা সদস্যদের সংঘর্ষ হয়। ওই সংঘর্ষ পরবর্তী সময়ে অন্যান্য বিশ্ববিদ্যালয়েও ছড়িয়ে পড়ে। এ সময় শত শত ছাত্র ও শিক্ষক সেনা সদস্যদের হাতে নির্যাতিত হন।

No comments

Powered by Blogger.