পুনরাবৃত্তির স্বপ্ন নিয়ে চট্টগ্রামে
চট্টগ্রামে ম্যাচ-পূর্ব একটি আলোচনা অবধারিত। এত দিন সে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে ছিলেন ঘরের ছেলেরা। সাবেক অধিনায়ক আকরাম খানের ওপর থেকে সে ফোকাসটা আফতাব আহমেদ হয়ে তামিম ইকবালের ওপর। সাবেক সহ-অধিনায়ক এবারের আলোচনাতেও থাকবেন। তবে ২০১১ বিশ্বকাপের পর থেকে চট্টগ্রাম যেন পুরো বাংলাদেশ ক্রিকেটেরই বর! তাই গতকাল বিকেলে ঢাকা থেকে মুশফিকুর রহিমদের চট্টগ্রামের উদ্দেশে উড়াল দেওয়ার সঙ্গে সঙ্গে ডানা মেলেছে সেই আলোচনাও_এবারও পারবে তো বাংলাদেশ?
এ আলোচনার সূত্র সবারই জানা। ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে ৫৮ রানের ক্লেদ ধুয়েছিল জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে অবিশ্বাস্য জয়ে। অক্টোবরে ঢাকায় ওয়েস্ট ইন্ডিজের কাছে সিরিজ হারলেও সান্ত্বনার জয় টাইগারদের এবার ভাগ্যের চাকা ঘুরবে তো? তবে টোয়েন্টি টোয়েন্টি এবং প্রথম দুই ওয়ানডেতে যা যা ঘটেছে, তাতে এ সম্ভাবনা আপাতত কাকতালীয় ব্যাপারের বেশি মর্যাদা পাচ্ছে না। কারণ দলটা উপমহাদেশের কন্ডিশনের সঙ্গে অনভ্যস্ত ইংল্যান্ড কিংবা ওয়েস্ট ইন্ডিজ নয়, পাকিস্তান। যাদের কাছে এখানকার জল-হাওয়া শুধু পরিচিতই নয়, একইসঙ্গে 'আনপ্রেডিক্টেবল' অপবাদের চাদর সরিয়ে ফর্মের তুঙ্গে থাকা পাকিস্তান। অন্যদিকে প্রতিপক্ষ বাংলাদেশি ক্রিকেটাররা যেন গভীর সমুদ্রে দিকভ্রান্ত একদল নাবিক। 'এসওএস' বার্তায় উদ্ধারকারী কোনো জাহাজ এসে না পেঁৗছালে যাঁদের জীবন সংকটাপন্ন। সে নাসির হোসেন যতই সেঞ্চুরির 'টনিক' দিন না কেন দলকে।
হ্যাঁ, পাকিস্তানের বিপক্ষে এতটাই বিপন্ন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ডিসেম্বরের এ সিরিজটা শেষ হলেই যেন বাঁচেন মুশফিকরা! তবে ক্রিকেটে অতীতচারণটা খুব বেশি হয়। আবার অশান্তির শহর ছেড়ে শান্তির ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার প্রভাবও আছে। যেমন, ২০১১ বিশ্বকাপে ৫৮ কাণ্ডে বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে চট্টগ্রামগামী বিমানে দেখে মনে হচ্ছিল সদ্যই মুক্ত বাতাস নেওয়া একদল তরুণ। রাতে নতুন শহরের বিমানবন্দরে নেমে অভাবিত সংবর্ধনা অনুপ্রেরণার কাজ করেও থাকতে পারে। ধীরগতির উইকেট আর শিশির হয়ে নেমে আসা প্রকৃতির আশীর্বাদের সঙ্গে ইংল্যান্ডকে সফল 'অ্যাম্বুশ' করার পেছনে সে অনুপ্রেরণা কাজ না করেই পারে না। এমন উদাহরণ তো একটি-ই নয়। অক্টোবরে ঢাকায় হেরে যাওয়া সিরিজের শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামে ক্যারিবীয়দের মাত্র ৬১ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। নিজ দলের ৮ উইকেটে জয়ের আগে স্পিনের জালে মারলন স্যামুয়েলসদের নাচানাচিও ছিল দারুণ আকর্ষণীয়।
প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলেই চট্টগ্রামকে ঘিরে এবার স্বপ্নের জালটা ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইংল্যান্ড এবং ক্যারিবীয়-বধের অব্যর্থ 'ওষুধ' স্পিন যে পাকিস্তান সিরিজে উল্টো বুমেরাং হয়ে বাংলাদেশের বুকে আঘাত করছে! ঢাকার স্পিনসহায়ক উইকেটে সফরকারী ব্যাটসম্যানদেরও টুকটাক সমস্যা হচ্ছে। তবে পাকিস্তানি স্পিনারদের বিপক্ষে সে সমস্যা বহুগুণ বেশি হচ্ছে তামিম ইকবালদের। সাকিব আল হাসান কি আর একা পেরে ওঠেন শহীদ আফ্রিদি-সাঈদ আজমলদের বিরুদ্ধে! আবার ব্যাটিং সামর্থ্যেও স্বাগতিকদের চেয়ে পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে সফরকারীরা। সে ক্ষেত্রে ক্যারিবীয়দের জন্য তৈরি অপ্রস্তুত উইকেটে পাকিস্তানকে ফেলে দিলেই তো হয়। যে উইকেটে বোলাররা কোনোরকমে একটা জায়গা খুঁজে বলটা ফেললেই হয়। সে বলের গতিপথ খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাবেন ব্যাটসম্যান। আবারও একটি লো স্কোরিং ম্যাচের ফাঁকতালে চট্টগ্রামে জয়োৎসব করবে বাংলাদেশ।
এ 'চক্রান্তে'ও বিপত্তি আছে। অপ্রস্তুত উইকেটে বাংলাদেশকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর বিস্তর উপাদান আছে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে। মনোসংযোগ দিয়ে এ প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। সমস্যা হলো, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ব্যাটিং করার ব্যাপারেও দুই দলের ব্যবধানটা বোলিংয়ের মতোই। টোয়েন্টিতে টোয়েন্টিতে ৭ উইকেটে ১৩৫ রান তুলেই পাকিস্তানের সন্তুষ্ট থাকাটাই বুঝিয়ে দিয়েছিল কন্ডিশন দিয়ে অতিথি এ দলকে বশে আনা যাবে না। উল্টো উইকেটের এ আপাত ভুল দাওয়াইয়ে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বিষক্রিয়ার শিকার বাংলাদেশই! পরের ম্যাচের উইকেটটা তাই চরিত্র পাল্টে ফেলে ব্যাটিংসহায়ক। যে পরিবর্তনের সুবিধা নিয়ে ২৬২ রান করে পাকিস্তান। আর যার জবাব দিতে নেমে মাত্র ১৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিজেদের শুরুর দিনগুলো মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশ। টপাটপ উইকেট পড়ে ম্যাচের অলিখিত ভাগ্য সবাই জেনে যাওয়ার পর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সম্মানজনক একটা স্কোর দাঁড় করানো। মিরপুরে শনিবার সে অতীতই ফিরে এসেছিল। তবে ব্যতিক্রম একটাই। ম্যাচের একমাত্র সেঞ্চুরিটা বাংলাদেশ দলেরই একজনের। নাসির হোসেন নিজেই যে সেঞ্চুরির আনন্দ প্রাণপণে আড়াল করতে ব্যস্ত।
তবু তো সেঞ্চুরি। ছয় নম্বরে নেমে কেউ পারলে ইনিংসের প্রথম বল থেকে খেলার সুযোগ পাওয়া তামিম ইকবাল কেন পারবেন না? প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির পর সে যুক্তিই তুলে ধরেছিলেন নাসির, 'আমি পারলে উনারা কেন পারবেন না?' চট্টগ্রামে এ প্রশ্নের সূত্র ধরে অবধারিতভাবে এসে যাচ্ছে তামিমের নাম। ঘরের ছেলের কাছে দাবিটা বহু দিনের। তবে এবার ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে এ সিরিজে তামিমের ব্যাটিং ব্যর্থতায়। শেষ মুহূর্তে ইনজুরির কথা বলে টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচ থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানো নিয়ে বিস্তর গুঞ্জন আছে। এরপর দুই ওয়ানডেতে বিস্ফোরক এ ওপেনারের ব্যাটে রান যথাক্রমে ০ ও ৪। তাই আগামীকালের চট্টগ্রাম ম্যাচ তামিমের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ।
ধ্বংসস্তূপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জটাই সবার আগে। যা পুরো বাংলাদেশ দলের।
হ্যাঁ, পাকিস্তানের বিপক্ষে এতটাই বিপন্ন বাংলাদেশ ক্রিকেট দল। ডিসেম্বরের এ সিরিজটা শেষ হলেই যেন বাঁচেন মুশফিকরা! তবে ক্রিকেটে অতীতচারণটা খুব বেশি হয়। আবার অশান্তির শহর ছেড়ে শান্তির ঠিকানা খুঁজে পাওয়ার প্রভাবও আছে। যেমন, ২০১১ বিশ্বকাপে ৫৮ কাণ্ডে বিপর্যস্ত বাংলাদেশকে চট্টগ্রামগামী বিমানে দেখে মনে হচ্ছিল সদ্যই মুক্ত বাতাস নেওয়া একদল তরুণ। রাতে নতুন শহরের বিমানবন্দরে নেমে অভাবিত সংবর্ধনা অনুপ্রেরণার কাজ করেও থাকতে পারে। ধীরগতির উইকেট আর শিশির হয়ে নেমে আসা প্রকৃতির আশীর্বাদের সঙ্গে ইংল্যান্ডকে সফল 'অ্যাম্বুশ' করার পেছনে সে অনুপ্রেরণা কাজ না করেই পারে না। এমন উদাহরণ তো একটি-ই নয়। অক্টোবরে ঢাকায় হেরে যাওয়া সিরিজের শেষ ম্যাচে চট্টগ্রামে ক্যারিবীয়দের মাত্র ৬১ রানে গুটিয়ে দেয় বাংলাদেশ। নিজ দলের ৮ উইকেটে জয়ের আগে স্পিনের জালে মারলন স্যামুয়েলসদের নাচানাচিও ছিল দারুণ আকর্ষণীয়।
প্রতিপক্ষ পাকিস্তান বলেই চট্টগ্রামকে ঘিরে এবার স্বপ্নের জালটা ছড়িয়ে দেওয়া যাচ্ছে না। ইংল্যান্ড এবং ক্যারিবীয়-বধের অব্যর্থ 'ওষুধ' স্পিন যে পাকিস্তান সিরিজে উল্টো বুমেরাং হয়ে বাংলাদেশের বুকে আঘাত করছে! ঢাকার স্পিনসহায়ক উইকেটে সফরকারী ব্যাটসম্যানদেরও টুকটাক সমস্যা হচ্ছে। তবে পাকিস্তানি স্পিনারদের বিপক্ষে সে সমস্যা বহুগুণ বেশি হচ্ছে তামিম ইকবালদের। সাকিব আল হাসান কি আর একা পেরে ওঠেন শহীদ আফ্রিদি-সাঈদ আজমলদের বিরুদ্ধে! আবার ব্যাটিং সামর্থ্যেও স্বাগতিকদের চেয়ে পরিষ্কার ব্যবধানে এগিয়ে সফরকারীরা। সে ক্ষেত্রে ক্যারিবীয়দের জন্য তৈরি অপ্রস্তুত উইকেটে পাকিস্তানকে ফেলে দিলেই তো হয়। যে উইকেটে বোলাররা কোনোরকমে একটা জায়গা খুঁজে বলটা ফেললেই হয়। সে বলের গতিপথ খুঁজতে গিয়ে হিমশিম খাবেন ব্যাটসম্যান। আবারও একটি লো স্কোরিং ম্যাচের ফাঁকতালে চট্টগ্রামে জয়োৎসব করবে বাংলাদেশ।
এ 'চক্রান্তে'ও বিপত্তি আছে। অপ্রস্তুত উইকেটে বাংলাদেশকে নাকানিচুবানি খাওয়ানোর বিস্তর উপাদান আছে পাকিস্তানের বোলিং আক্রমণে। মনোসংযোগ দিয়ে এ প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে লড়াই করা যায়। সমস্যা হলো, পরিস্থিতির সঙ্গে মানিয়ে নিয়ে ব্যাটিং করার ব্যাপারেও দুই দলের ব্যবধানটা বোলিংয়ের মতোই। টোয়েন্টিতে টোয়েন্টিতে ৭ উইকেটে ১৩৫ রান তুলেই পাকিস্তানের সন্তুষ্ট থাকাটাই বুঝিয়ে দিয়েছিল কন্ডিশন দিয়ে অতিথি এ দলকে বশে আনা যাবে না। উল্টো উইকেটের এ আপাত ভুল দাওয়াইয়ে সিরিজের প্রথম ওয়ানডেতে বিষক্রিয়ার শিকার বাংলাদেশই! পরের ম্যাচের উইকেটটা তাই চরিত্র পাল্টে ফেলে ব্যাটিংসহায়ক। যে পরিবর্তনের সুবিধা নিয়ে ২৬২ রান করে পাকিস্তান। আর যার জবাব দিতে নেমে মাত্র ১৯ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে আন্তর্জাতিক ক্রিকেটের নিজেদের শুরুর দিনগুলো মনে করিয়ে দেয় বাংলাদেশ। টপাটপ উইকেট পড়ে ম্যাচের অলিখিত ভাগ্য সবাই জেনে যাওয়ার পর খুঁড়িয়ে খুঁড়িয়ে সম্মানজনক একটা স্কোর দাঁড় করানো। মিরপুরে শনিবার সে অতীতই ফিরে এসেছিল। তবে ব্যতিক্রম একটাই। ম্যাচের একমাত্র সেঞ্চুরিটা বাংলাদেশ দলেরই একজনের। নাসির হোসেন নিজেই যে সেঞ্চুরির আনন্দ প্রাণপণে আড়াল করতে ব্যস্ত।
তবু তো সেঞ্চুরি। ছয় নম্বরে নেমে কেউ পারলে ইনিংসের প্রথম বল থেকে খেলার সুযোগ পাওয়া তামিম ইকবাল কেন পারবেন না? প্রথম আন্তর্জাতিক সেঞ্চুরির পর সে যুক্তিই তুলে ধরেছিলেন নাসির, 'আমি পারলে উনারা কেন পারবেন না?' চট্টগ্রামে এ প্রশ্নের সূত্র ধরে অবধারিতভাবে এসে যাচ্ছে তামিমের নাম। ঘরের ছেলের কাছে দাবিটা বহু দিনের। তবে এবার ভিন্ন মাত্রা পেয়েছে এ সিরিজে তামিমের ব্যাটিং ব্যর্থতায়। শেষ মুহূর্তে ইনজুরির কথা বলে টোয়েন্টি টোয়েন্টি ম্যাচ থেকে তাঁর সরে দাঁড়ানো নিয়ে বিস্তর গুঞ্জন আছে। এরপর দুই ওয়ানডেতে বিস্ফোরক এ ওপেনারের ব্যাটে রান যথাক্রমে ০ ও ৪। তাই আগামীকালের চট্টগ্রাম ম্যাচ তামিমের জন্য আরো বড় চ্যালেঞ্জ।
ধ্বংসস্তূপ থেকে মাথা তুলে দাঁড়ানোর চ্যালেঞ্জটাই সবার আগে। যা পুরো বাংলাদেশ দলের।
No comments