এই শীতে... by আশিক মুস্তাফা

রা পাতা গান গায়। শীতের কুয়াশা সে গানের সুরে তাল মিলিয়ে এগোতে থাকে। সঙ্গী লাউয়ের ডগা। সঙ্গী সরষে ফুল। শীত এলে কেন যেন মাচা ছেড়ে বিশ্বজয়ের মিছিলে নামে লাউয়ের ডগা, কুমড়ো লতা। তারা ঝরা পাতার গান শুনতে শুনতে দিগন্তে ছুটে চলে। কুয়াশা তাদের কানে হালের এফএম রেডিওর নস্টালজিক গান হয়ে বাজতে থাকে। গ্রামের খেটে খাওয়া মানুষের ঘরেও ধুম পড়ে পিঠা-পুলির। আমাদের নগরজীবনও পিঠার দৌড়ে পিছিয়ে কোথায়!


জিভে জল এনে দেয় শীতের ধূমায়িত পিঠা। চায়ের স্বাদটাও যেন কয়েকগুণ বেড়ে যায় এই শীতে। গাছিরা ভোরের কুয়াশা মাড়িয়ে নামিয়ে আনে খেজুর গাছ থেকে রসের কলস। তাতে ভাসে দু'একটা মৌমাছি। যারা খেজুর রসে বুঁদ হয়ে একাকার! মেঠোপথ বেয়ে বাড়তে থাকে বেলা। খেজুর গাছকে আকাশে ওঠার সিঁড়ি বানিয়ে দস্যি ছেলেরা তর তর করে উপরে উঠতে থাকে। বাঁশের নলে জিভ লাগিয়ে দেয়। ফোঁটা ফোঁটা রস তখনও থেকে থেকে বেরিয়ে আসে গাছ থেকে। রাজ্যের সুখ মেশানো সে রসের কী যে ক্ষমতা তা ভাবনার খেরোখাতা না ঘাঁটলে বোঝাটা দায় হয়েই দাঁড়ায়। শীতের রোদের ব্যাপক ক্ষমতা। ব্যাপক দরদ। দরদ দিয়ে রোদ শুধু আমাদের কাছে টানে। পিঠে হাত রেখে তার দরদি ক্ষমতা বোঝাতে চায়। তখন সূর্যটাও আপন হয়ে ওঠে। জোছনা আর চাঁদের উদাহরণ ছাড়া সূর্যের উদাহরণ যায় না মাদার মেরির সঙ্গে। কিন্তু আমাদের শীত-সূর্যের উদাহরণ অবশ্যই যায়! এমন কোমল সূর্য পৃথিবীর আর কোথাও উঠে বলে মনে হয় না! এমন আবেগ মেশানো রোদ পৃথিবীর আর কোথাও বিলায় না সূর্য!
এক সময় শীত ছিল হাড় কাঁপানো। এখন আর দেশের সব জায়গায় শীত হাড় কাঁপিয়ে আসে না। আগে শীতের সুনির্দিষ্ট কিছু নিয়মনীতি ছিল, এখন কেন যেন বারবার সে নিয়ম ফসকে যায়। যথাসময়ে শীত না এসে মাঝে মাঝে কালবোশেখীর মতো হানা দেয়। কখনও আগে আবার কখনও সময়ের অনেক পরে শীত মায়া লাগাতে আসে। ফলে উল্টে যায় আমাদের ভাবনার ধারাপাত। সামলানো যায় না চলার গতি। ব্যাকরণ না-মানা শীত আবার দশ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচেও নেমে যায় অসময়ে! তবু আমরা শীত ভালোবাসি। শীতের কাঁচা সবুজ সবজিগুলো আমাদের ভুলিয়ে দেয় সব গ্গ্নানি। সরষের হলুদ রঙ আমাদের চোখে রাজ্যের সব রঙকে ঘোড়ার নাদী বানিয়ে দেয়। আমরা খোলস ছাড়া সাপের মতো শীত এলে নতুন রঙ নিয়ে বের হই পৃথিবী জয়ের নেশায়। বুঁদ হয়ে যাই দল বেঁধে খড় পোড়ানো আগুন ফুলে!

No comments

Powered by Blogger.