শুরুর হতাশা ভুলিয়ে দেওয়া একটি দিন-বাংলাদেশ : ৬৮ ওভারে ২৩৪/৫ by সাইদুজ্জামান
বাংলাদেশের শুরুটা মধ্যবিত্তের। শাহরিয়ার নাফীস-সাকিব আল হাসানের ১৮০ রানের জুটিতে সেই বাংলাদেশই বিত্তবান! বিত্তবানেরও কিছু আক্ষেপ থাকে। উমর গুলের ফণা তোলা বাউন্সার যেমন মাত্র ৩ রান আগে কেড়ে নেয় শাহরিয়ার নাফীসের দ্বিতীয় টেস্ট সেঞ্চুরির স্বপ্ন। আবার পরের বিনিয়োগে আরো ধনী হয়ে ওঠার সম্ভাবনাও থাকে। যেমন ঢাকা টেস্টের প্রথম দিনই করে ফেলা দ্বিতীয় সেঞ্চুরিটাকে আজ আরো দীর্ঘ করার সুযোগ আছে সাকিবের
সামনে। সঙ্গে ৫ উইকেটে ২৩৪ রানে থেমে থাকা প্রথম ইনিংসে আছে বিপু দলীয় অনুপ্রেরণা। কে বলবে এ দলটাই চট্টগ্রামে গুটিয়ে গিয়েছিল ১৩৫ রানে! কাল সকালেই ৪৩ রানে ৪ উইকেট হারিয়ে ফেলা মনে হচ্ছে কত দিন আগের বিপর্যয়!
আকস্মিক এ উল্লম্ফনের সহজ কারণটা দিনশেষে জানিয়ে গেছেন শাহরিয়ার নাফীসই, 'আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে সবাই বলছিলেন যে আমি খুব বাজেভাবে আউট হয়ে যাচ্ছি। তাই আজ চেষ্টা ছিল যখনই আউট হই, সেটা যেন দৃষ্টিকটু মনে না হয়।' সকালের কুয়াশার চাদর সরে যাওয়ার পর মিরপুরের উইকেট যে আচরণ করেছে, তাতে বাজে আউট চোখে পড়ত আরো বেশি। কাল সে ভুল করেননি শাহরিয়ার। শর্ট অব লেন্থ থেকে উমর গুলের লাফিয়ে ওঠা যে বলটা তাঁর গ্লাভস হয়ে পাকিস্তানি উইকেটকিপারের গ্লাভসে জমা পড়ে, সেটি ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলা ব্যাটসম্যানের আত্মবিশ্বাসও টলিয়ে দিতে সক্ষম। ব্যক্তিগত বঞ্চনা নিয়ে তাই খুব বেশি আফসোস নেই শাহরিয়ারের। হতাশার মেঘ কেটে গিয়ে সম্ভাবনার আলো দেখে কুল অ্যান্ড কুল সিরিজে কালই প্রথম স্বস্তির নরম ছায়া দেখা গেল বাংলাদেশ কোচ স্টুয়ার্ট ল'র চোখেমুখে।
এর আগে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ক্রিকেটের রেকর্ড সংরক্ষকরা। যে সিরিজে দলের ইনিংসই ১০০ পেরোতে হিমশিম খায়, সেখানে ২০০ রান প্রায় ছুঁয়েই ফেলেছিল শাহরিয়ার-সাকিব জুটি! পাকিস্তানি অফস্পিনার সাঈদ আজমলকে ব্যাকফুট পাঞ্চে বাউন্ডারি দিয়ে প্রথমে এ বছরে খেলা সাত টেস্ট ইনিংসে পঞ্চমবারের মতো ৫০ পার হন সাকিব। পরের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে লং অফ দিয়ে আরেকবার বল সীমানা-ছাড়া করতেই শতরান পেরিয়ে যায় শাহরিয়ার এবং তাঁর জুটি। জানা গেল, ২০১০ সালের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ১২৬ রানের উদ্বোধনী জুটির পর গতকালই টেস্টে প্রথম কোনো জুটিতে 'সেঞ্চুরি' পেল বাংলাদেশ! পুরো একটি সেশনে উইকেট না হারানোর ধূসর স্মৃতিও কাল মনে করিয়ে দিয়েছে শাহরিয়ার-সাকিব জুটি। গতকালের আগে বাংলাদেশের উইকেটহীন সবশেষ সেশনটিও ম্যানচেস্টারের। তবে একটু রয়ে-সয়ে খেললে, উইকেট ছুড়ে দেওয়ার প্রবণতা এড়াতে পারলে যে আরো দূর গন্তব্যে পেঁৗছানো যায়, শাহরিয়ার-সাকিবের পার্টনারশিপ ছিল তারই প্রদর্শনী। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড হয়েছে তাতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটেই এটা বাংলাদেশের সেরা জুটি।
টেস্ট ব্যাটিং প্রদর্শনীর শুরুটা শাহরিয়ারের ব্যাটে। অযথা বাইরের বল তাড়া করার ঝুঁকি কাল নেননি বাঁহাতি এ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। এমন ব্যাটিং উইকেটে একসময় বোলাররা ক্লান্ত হবেনই। শুধু সে সময়টার জন্য ওত পেতে থাকার ধৈর্যটা চাই। সময়ের সে দাবি মেনে বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তুলেছেন শাহরিয়ার ও সাকিব। এর সঙ্গে নিজেদের আত্মবিশ্বাসটা বাড়িয়ে নিয়ে সাঈদ আজমল কিংবা আবদুল রেহমানের নির্বিষ স্পিনের ফায়দাও নিয়েছেন তাঁরা। যে গুলকে খেলতে সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছিল বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের, সেই মিডিয়াম ফাস্ট বোলারের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি মেরে শাহরিয়ারের ফিফটি। আগস্টে টেস্ট প্রত্যাবর্তনের পর এটা তাঁর তৃতীয় এবং ক্যারিয়ারে সপ্তম। গুলেরই একটা বল বেমক্কা লাফিয়ে না উঠলে হয়তো ২০০৬ সালে ফতুল্লার পর মিরপুরেও দেখা যেত শাহরিয়ারের সেঞ্চুরি উদ্যাপনের দৃশ্য।
ব্যক্তিগত কিংবা দলীয় প্রাপ্তিতে কখনোই খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখান না সাকিব। কালও যেমন উমর গুলকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর উদ্যাপনটা বেঁধে রাখেন সামান্য ব্যাট তোলাতেই। হতে পারে ৫০ পেরিয়েই আউট হয়ে যাওয়ার অপবাদটা আরো বড় কিছু দিয়ে ঘোচাতে চান সাকিব। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটানো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সংখ্যাটা কম নয়। তবে সেঞ্চুরির স্বস্তি নিয়ে হোটেলে ফেরা দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিবের মনে অন্তত সে চাপ নেই। প্রথমজন মোহাম্মদ রফিক। ২০০৪ সালে সেন্ট লুসিয়ায় অপরাজিত ১০৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিলেন এ বাঁহাতি।
এদিকে স্বস্তির সঙ্গে উদ্বেগের ছায়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের শীর্ষ কর্তার চোখেমুখে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ পাশের চেয়ারে বসে ঘটা করে জানিয়েছেন, 'অক্টোবরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালকে আইসিসির সহসভাপতি পদে নমিনি করেছে পিসিবি।' এ কথা শোনার পরও বিসিবি সভাপতির মৃদু দীর্ঘশ্বাস, 'একটা সেঞ্চুরি হয়েছে। আরেকটা হলো না!' দুর্মুখেরা নিচু স্বরে বলাবলি করছেন, পাকিস্তানের সম্মতি মিলেছে। কিন্তু ঘরের সমর্থনটা এখনো পাওয়া হয়নি বিসিবি সভাপতির। শাহরিয়ারের জন্য আফসোসটা আসলে ঘরের সমর্থন পাওয়া নিয়ে তাঁর উদ্বেগের প্রতীকী প্রকাশ!
অবশ্য সুদিনে সমালোচকদের বিশেষ সুবিধা নেই। যদিও সকালে সমালোচনার নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা। টস সৌভাগ্য দিয়ে অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ার শুরু করা মুশফিকুর রহিম পরের সিরিজে এসে টসই জিতছেন না! ঘন কুয়াশার কারণে ৭৫ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে যে টসটা আবার মহাগুরুত্বপূর্ণও। এমন পরিবেশে টসজয়ী দল চোখ বুজে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলে দেবে, সাধারণ এ মতের বিরুদ্ধে হাঁটেননি পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ উল হক। প্রণোদনা হিসেবে কন্ডিশন ছাড়াও মিসবাহদের জন্য ছিল আত্মবিশ্বাস চুরমার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। তবে টসের পর সবার আগে পাকিস্তানকে 'পুরস্কৃত' করেছেন ভারতীয় আম্পায়ার সাবির তারাপোরে। আইজাজ চিমার বল অফস্টাম্পের বাইরে থেকে অনেকটা ভেতরে ঢুকে আঘাত হানে নাজিমউদ্দিনের প্যাডে। বল অনেকটা বাঁক খেয়ে ঢুকলেও উচ্চতা বেশি হয়ে যাওয়ার হতাশার অভিব্যক্তি শেষ না হতেই চিমা দেখেন তারাপোরের আঙুল আকাশে! দিনশেষে নিজের ৩ উইকেটের প্রথমটির ব্যাপারে পাকিস্তানি এ পেসারের কূটনীতি, 'সিদ্ধান্তটা দিয়েছেন আম্পায়ার।'
তবে পরের দুটি উইকেট নিজ যোগ্যতাবলেই তুলে নিয়েছেন চিমা। তাঁর ভেতরে ঢোকা আরেকটি বলে বোল্ড হন চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা মাহমুদ উল্লাহ। এর আগে উমর গুলের বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে চিমার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম। ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থতার পর ৯, ১৫ ও ১৪ রানেই শেষ বাঁহাতি এ ওপেনারের তিন টেস্ট ইনিংস। শাহরিয়ার ও সাকিবের চওড়া ব্যাটও যে উদ্বেগকে আড়াল দিতে পারছে না! দলীয় উদ্বেগও আছে। সাকিব-মুশফিক থাকা সত্ত্বেও কেন পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করবেন তরুণ নাসির হোসেন? আর চার নম্বর নিয়ে তো গবেষণা যেন থামছেই না! কাল মাহমুদ উল্লাহর পরিণতির পর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট নতুন কিছু ভাবে কি না, সেটা আজ মুশফিকদের সম্ভাব্য অগ্রযাত্রার চেয়ে কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়!
আকস্মিক এ উল্লম্ফনের সহজ কারণটা দিনশেষে জানিয়ে গেছেন শাহরিয়ার নাফীসই, 'আত্মীয়স্বজন থেকে শুরু করে সবাই বলছিলেন যে আমি খুব বাজেভাবে আউট হয়ে যাচ্ছি। তাই আজ চেষ্টা ছিল যখনই আউট হই, সেটা যেন দৃষ্টিকটু মনে না হয়।' সকালের কুয়াশার চাদর সরে যাওয়ার পর মিরপুরের উইকেট যে আচরণ করেছে, তাতে বাজে আউট চোখে পড়ত আরো বেশি। কাল সে ভুল করেননি শাহরিয়ার। শর্ট অব লেন্থ থেকে উমর গুলের লাফিয়ে ওঠা যে বলটা তাঁর গ্লাভস হয়ে পাকিস্তানি উইকেটকিপারের গ্লাভসে জমা পড়ে, সেটি ডাবল সেঞ্চুরি করে ফেলা ব্যাটসম্যানের আত্মবিশ্বাসও টলিয়ে দিতে সক্ষম। ব্যক্তিগত বঞ্চনা নিয়ে তাই খুব বেশি আফসোস নেই শাহরিয়ারের। হতাশার মেঘ কেটে গিয়ে সম্ভাবনার আলো দেখে কুল অ্যান্ড কুল সিরিজে কালই প্রথম স্বস্তির নরম ছায়া দেখা গেল বাংলাদেশ কোচ স্টুয়ার্ট ল'র চোখেমুখে।
এর আগে ব্যস্ত সময় কাটিয়েছেন ক্রিকেটের রেকর্ড সংরক্ষকরা। যে সিরিজে দলের ইনিংসই ১০০ পেরোতে হিমশিম খায়, সেখানে ২০০ রান প্রায় ছুঁয়েই ফেলেছিল শাহরিয়ার-সাকিব জুটি! পাকিস্তানি অফস্পিনার সাঈদ আজমলকে ব্যাকফুট পাঞ্চে বাউন্ডারি দিয়ে প্রথমে এ বছরে খেলা সাত টেস্ট ইনিংসে পঞ্চমবারের মতো ৫০ পার হন সাকিব। পরের বলে ডাউন দ্য উইকেটে এসে লং অফ দিয়ে আরেকবার বল সীমানা-ছাড়া করতেই শতরান পেরিয়ে যায় শাহরিয়ার এবং তাঁর জুটি। জানা গেল, ২০১০ সালের জুলাইয়ে ম্যানচেস্টারে ইংল্যান্ডের বিপক্ষে তামিম ইকবাল ও ইমরুল কায়েসের ১২৬ রানের উদ্বোধনী জুটির পর গতকালই টেস্টে প্রথম কোনো জুটিতে 'সেঞ্চুরি' পেল বাংলাদেশ! পুরো একটি সেশনে উইকেট না হারানোর ধূসর স্মৃতিও কাল মনে করিয়ে দিয়েছে শাহরিয়ার-সাকিব জুটি। গতকালের আগে বাংলাদেশের উইকেটহীন সবশেষ সেশনটিও ম্যানচেস্টারের। তবে একটু রয়ে-সয়ে খেললে, উইকেট ছুড়ে দেওয়ার প্রবণতা এড়াতে পারলে যে আরো দূর গন্তব্যে পেঁৗছানো যায়, শাহরিয়ার-সাকিবের পার্টনারশিপ ছিল তারই প্রদর্শনী। পঞ্চম উইকেটে বাংলাদেশের নতুন রেকর্ড হয়েছে তাতে। পাকিস্তানের বিপক্ষে যেকোনো উইকেটেই এটা বাংলাদেশের সেরা জুটি।
টেস্ট ব্যাটিং প্রদর্শনীর শুরুটা শাহরিয়ারের ব্যাটে। অযথা বাইরের বল তাড়া করার ঝুঁকি কাল নেননি বাঁহাতি এ টপ অর্ডার ব্যাটসম্যান। এমন ব্যাটিং উইকেটে একসময় বোলাররা ক্লান্ত হবেনই। শুধু সে সময়টার জন্য ওত পেতে থাকার ধৈর্যটা চাই। সময়ের সে দাবি মেনে বিপর্যয় থেকে দলকে টেনে তুলেছেন শাহরিয়ার ও সাকিব। এর সঙ্গে নিজেদের আত্মবিশ্বাসটা বাড়িয়ে নিয়ে সাঈদ আজমল কিংবা আবদুল রেহমানের নির্বিষ স্পিনের ফায়দাও নিয়েছেন তাঁরা। যে গুলকে খেলতে সন্ত্রস্ত দেখাচ্ছিল বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানদের, সেই মিডিয়াম ফাস্ট বোলারের দ্বিতীয় স্পেলের প্রথম ওভারেই বাউন্ডারি মেরে শাহরিয়ারের ফিফটি। আগস্টে টেস্ট প্রত্যাবর্তনের পর এটা তাঁর তৃতীয় এবং ক্যারিয়ারে সপ্তম। গুলেরই একটা বল বেমক্কা লাফিয়ে না উঠলে হয়তো ২০০৬ সালে ফতুল্লার পর মিরপুরেও দেখা যেত শাহরিয়ারের সেঞ্চুরি উদ্যাপনের দৃশ্য।
ব্যক্তিগত কিংবা দলীয় প্রাপ্তিতে কখনোই খুব বেশি প্রতিক্রিয়া দেখান না সাকিব। কালও যেমন উমর গুলকে ব্যাকওয়ার্ড পয়েন্টে ঠেলে দিয়ে সেঞ্চুরি পূর্ণ করার পর উদ্যাপনটা বেঁধে রাখেন সামান্য ব্যাট তোলাতেই। হতে পারে ৫০ পেরিয়েই আউট হয়ে যাওয়ার অপবাদটা আরো বড় কিছু দিয়ে ঘোচাতে চান সাকিব। সেঞ্চুরির সম্ভাবনা নিয়ে নির্ঘুম রাত কাটানো বাংলাদেশি ব্যাটসম্যানের সংখ্যাটা কম নয়। তবে সেঞ্চুরির স্বস্তি নিয়ে হোটেলে ফেরা দ্বিতীয় বাংলাদেশি ক্রিকেটার সাকিবের মনে অন্তত সে চাপ নেই। প্রথমজন মোহাম্মদ রফিক। ২০০৪ সালে সেন্ট লুসিয়ায় অপরাজিত ১০৩ রান নিয়ে দ্বিতীয় দিন শেষ করেছিলেন এ বাঁহাতি।
এদিকে স্বস্তির সঙ্গে উদ্বেগের ছায়া বাংলাদেশ ক্রিকেটের শীর্ষ কর্তার চোখেমুখে। পাকিস্তান ক্রিকেট বোর্ড চেয়ারম্যান জাকা আশরাফ পাশের চেয়ারে বসে ঘটা করে জানিয়েছেন, 'অক্টোবরেই বাংলাদেশ ক্রিকেট বোর্ডের সভাপতি আ হ ম মোস্তফা কামালকে আইসিসির সহসভাপতি পদে নমিনি করেছে পিসিবি।' এ কথা শোনার পরও বিসিবি সভাপতির মৃদু দীর্ঘশ্বাস, 'একটা সেঞ্চুরি হয়েছে। আরেকটা হলো না!' দুর্মুখেরা নিচু স্বরে বলাবলি করছেন, পাকিস্তানের সম্মতি মিলেছে। কিন্তু ঘরের সমর্থনটা এখনো পাওয়া হয়নি বিসিবি সভাপতির। শাহরিয়ারের জন্য আফসোসটা আসলে ঘরের সমর্থন পাওয়া নিয়ে তাঁর উদ্বেগের প্রতীকী প্রকাশ!
অবশ্য সুদিনে সমালোচকদের বিশেষ সুবিধা নেই। যদিও সকালে সমালোচনার নতুন দিগন্ত খুলে দিচ্ছিল বাংলাদেশের ব্যাটিং ব্যর্থতা। টস সৌভাগ্য দিয়ে অধিনায়কত্বের ক্যারিয়ার শুরু করা মুশফিকুর রহিম পরের সিরিজে এসে টসই জিতছেন না! ঘন কুয়াশার কারণে ৭৫ মিনিট দেরিতে শুরু হওয়া ম্যাচে যে টসটা আবার মহাগুরুত্বপূর্ণও। এমন পরিবেশে টসজয়ী দল চোখ বুজে প্রতিপক্ষ ব্যাটসম্যানদের পরীক্ষায় ফেলে দেবে, সাধারণ এ মতের বিরুদ্ধে হাঁটেননি পাকিস্তান অধিনায়ক মিসবাহ উল হক। প্রণোদনা হিসেবে কন্ডিশন ছাড়াও মিসবাহদের জন্য ছিল আত্মবিশ্বাস চুরমার হয়ে যাওয়া বাংলাদেশের ব্যাটিং অর্ডার। তবে টসের পর সবার আগে পাকিস্তানকে 'পুরস্কৃত' করেছেন ভারতীয় আম্পায়ার সাবির তারাপোরে। আইজাজ চিমার বল অফস্টাম্পের বাইরে থেকে অনেকটা ভেতরে ঢুকে আঘাত হানে নাজিমউদ্দিনের প্যাডে। বল অনেকটা বাঁক খেয়ে ঢুকলেও উচ্চতা বেশি হয়ে যাওয়ার হতাশার অভিব্যক্তি শেষ না হতেই চিমা দেখেন তারাপোরের আঙুল আকাশে! দিনশেষে নিজের ৩ উইকেটের প্রথমটির ব্যাপারে পাকিস্তানি এ পেসারের কূটনীতি, 'সিদ্ধান্তটা দিয়েছেন আম্পায়ার।'
তবে পরের দুটি উইকেট নিজ যোগ্যতাবলেই তুলে নিয়েছেন চিমা। তাঁর ভেতরে ঢোকা আরেকটি বলে বোল্ড হন চার নম্বরে ব্যাট করতে নামা মাহমুদ উল্লাহ। এর আগে উমর গুলের বাউন্সারে হুক করতে গিয়ে চিমার হাতে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন তামিম। ওয়ানডে সিরিজে ব্যর্থতার পর ৯, ১৫ ও ১৪ রানেই শেষ বাঁহাতি এ ওপেনারের তিন টেস্ট ইনিংস। শাহরিয়ার ও সাকিবের চওড়া ব্যাটও যে উদ্বেগকে আড়াল দিতে পারছে না! দলীয় উদ্বেগও আছে। সাকিব-মুশফিক থাকা সত্ত্বেও কেন পাঁচ নম্বরে ব্যাটিং করবেন তরুণ নাসির হোসেন? আর চার নম্বর নিয়ে তো গবেষণা যেন থামছেই না! কাল মাহমুদ উল্লাহর পরিণতির পর দ্বিতীয় ইনিংসে বাংলাদেশ টিম ম্যানেজমেন্ট নতুন কিছু ভাবে কি না, সেটা আজ মুশফিকদের সম্ভাব্য অগ্রযাত্রার চেয়ে কম কৌতূহলোদ্দীপক নয়!
No comments