হায়রে পরিবেশ by সাইফুল আলম
বহুদিন পর আমার অনেক দিনের পুরনো বন্ধু কিসমিস আলীর সঙ্গে দেখা। জনগণ আর যানবাহনে গাদাগাদি জিগাতলার মোড়ে অতিকষ্টে নিজের দেহ-সম্পদটাকে রক্ষা করতে করতে সে সামনের দিকে অগ্রসর হচ্ছিল। হঠাৎ দর্শনে তাকে চিনতে আমার বেশ সময় খরচ করতে হলো। লক্ষ্য করলাম, দু'কানে দুটি তুলার বল আর নাকে-মুখে ডাক্তারি মাস্ক পরে সে যেন স্বাস্থ্য রক্ষা করার চেষ্টা করছে। আমাকে দেখেই সে ইশারায় কাছে ডাকল।
কাছে গিয়ে জিজ্ঞাসা করলাম- 'কী বিষয় দোস্ত! তোমার এ পরিচ্ছদই বা কেন?' তিনটি প্রয়োজনীয় ইন্দ্রিয় আবৃত থাকায় আমার প্রশ্নটা সে বোধহয় অনুধাবন করতে পারল না। তাই কোনো উত্তর না দিয়ে আমার হাতটা ধরে সে নিকটস্থ একটা শপিংমলে ঢুকল। তারপর দু'কানের তুলার বল দুটি আর মুখের মাস্কটা খুলে প্রশ্ন করল, 'দোস্ত, শারীরিক যন্ত্রটা ঠিকমতো চালু আছে তো?' তার এ অদ্ভুত প্রশ্নে আমি হকচকিয়ে শুধালাম, 'কেন! আমার শারীরিক অসুস্থতার কোনো দুঃসংবাদ পেয়েছ নাকি?'
_'না পাইনি। তবে পেতে কতক্ষণ।' কিসমিসের নিষ্ঠুর জবাব। আমি তার পানে চেয়ে শুধালাম, 'দোস্ত, হঠাৎ তোমার এ মর্ম উৎফুল্লের হেতুটা কী বলো তো? সারা বদনে যেন হাসির ফুলঝুরি।' কথা শুনে সে মাস্ক আর তুলার বল দুটো প্যান্টের পকেটে সযত্নে জমা রাখতে রাখতে বলল, 'দোস্ত, পরিবেশ!'
_'পরিবেশ?' আমার কণ্ঠে যেন জিজ্ঞাসার উপস্থিতি।
_'হ্যাঁ। একবার দু'নয়ন মেলে চারদিকটা দেখ। তবেই বুঝবে।' আমি কিসমিসের ইঙ্গিতটাকে বুঝতে পেরে বললাম, 'দোস্ত, পরিবেশ দূষণ নিয়ে তোমার ভাবনাটাকেও বেশ দূষিত করে ফেলেছ।' আমার মন্তব্যটাকে একটা ফলবতী বৃক্ষ মনে করে সে যেন তার গোড়ায় জল ফেলে বলল, 'দোস্ত, বেশ খাসা বলেছ। তা আমার সাজসজ্জা অবলোকন করেই তো বুঝতে পারছ আমরা কী ভয়ানক পরিবেশ দূষণের মাঝে মুড়িভাজা হচ্ছি।'
_'হ্যাঁ। সমস্যাটা দিন দিন পাগলা ঘোড়ার মতোই প্রকট হচ্ছে।'
_'মহানগরীতে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, খাদ্যদূষণ_ এসব যেন মহামারীতে রূপ নিয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ দুটো যেন দূষণমুক্ত।'
_'কিন্তু তারা তো অপরাধীদের মাঝেমধ্যে সতর্ক আর জরিমানায় ভূষিত করছে শুনি।'
'তা শোনো। কিন্তু তাতেই কি সব?' কিসমিস যেন প্রশ্নমাখা নয়ন দুটো আমার পানে তুলে ধরল। বললাম, 'তা অবশ্য মানতে পারি না। মহানগরীর অঙ্গে অঙ্গে রাসায়নিক বর্জ্য আর ময়লা-আবর্জনার মাখামাখি। এতে মানুষের কর্মক্ষমতা লোপ পাচ্ছে আর শিশুদের সুস্থ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'
_'হ্যাঁ। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুমণ্ডলে যেখানে প্রতি ঘনমিটারে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম দূষণকণা গ্রহণযোগ্য, সেখানে এই মহানগরীতে তিন হাজার মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে গেছে।'
_'তাছাড়া পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মহানগরীর বাতাসে প্রতি বছর ৫০ টনেরও বেশি সিসা মিশে যাচ্ছে।'
আমার কথাটায় ফুলস্টপ দেওয়ার পরপরই কিসমিস তার দৃষ্টিটাকে একবার এদিক-ওদিক পরিচালনা করে বলল, 'ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের কালো ধোঁয়া, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক পদার্থ জনবহুল এ মহানগরীকে তিলে তিলে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে।' কিসমিসের কথাটা শেষ হতে না হতেই সামনের রাজপথ দিয়ে কর্ণ বিদীর্ণ করা মাইকের আওয়াজ শোনা গেল। প্রচারকারীর কর্কশ কণ্ঠের অর্থ তেমন বোঝা না গেলেও আমাদের মনে হলো, কোনো রাজনৈতিক দলের ঐতিহাসিক মহাসম্মেলনের প্রচারাভিযান চলছে। তার পরপরই শুনতে পেলাম, জনৈক চিকিৎসক হকারের সুরেলা কণ্ঠে সর্বরোগ নিবারণকারী ওষুধের রমরমা প্রচার। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে কিসমিস তার পকেটের লকার থেকে তুলার বান্ডিল দুটো বের করতে উদ্যত হতেই আমি তার ডান হাতটা চেপে ধরে বললাম, 'দোস্ত, আপাতত ক্ষান্ত দাও। কানে তুলার বাঁধ দিলে আমাদের আলাপচারিতার স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হবে যে।'
আমার অনুরোধে সে তার কর্মকাণ্ডে নিবৃত্ত হয়ে বলল, 'দোস্ত, চারদিকের গোলমাল আর অসহনীয় শব্দ শুনে আমার মনে একটা গল্প উঁকি দিচ্ছে।' আমি এবার উৎসাহকে সাথী করে বললাম, 'তা বলেই ফেল না তোমার মনের কোণের গল্পটা।' কিসমিস এবার সামনের করিডোরে রাখা বেঞ্চটাতে আমাকে সঙ্গে নিয়ে বসতে বসতে বলল, 'দোস্ত, শোনো তবে।'
আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। ও বলতে লাগল, 'এক ভদ্রলোক তার ভাতিজাকে নিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় বেড়াতে এলেন। ভাতিজার বয়স ১৩ কি ১৪ বছর। ঢাকায় পেঁৗছে বাস থেকে নেমে রাস্তায় পা রেখেই ভাতিজা বিরক্ত হয়ে চাচাকে বলল, 'চাচা, এত দিন থাকতে তুমি হাটের দিন কেন আমাকে ঢাকায় নিয়ে এলে?'
আমি কিসমিসের গল্পের অর্থ বুঝেও নিরুত্তর রইলাম। আমার নীরবতাকে উস্কে দেওয়ার জন্য আমার পানে ও জিজ্ঞাসার দৃষ্টি ফেলতেই ত্বরিত গতিতে আমি বললাম, 'উচ্চশব্দে উচ্চ রক্তচাপ, পেটের পীড়া, হৃদরোগ, বধিরতাসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলে ডাক্তার সাহেবরা সাবধান করেছেন।'
_'কিন্তু কঠিন পদক্ষেপের অভাবে সব সাবধানবাণী শুধু লিপিবদ্ধ হয়েই থাকছে।'
_'তা যথার্থ বলেছ। গবেষণায় দেখা গেছে, গাড়ির উচ্চমাত্রার হর্ন শব্দদূষণের প্রধান আসামি। তা ছাড়া যত্রতত্র মাইকিং, কলকারখানার শব্দ, লোডশেডিংয়ে জেনারেটরের তীব্র আওয়াজ ইত্যাদি তো রয়েছেই। শব্দদূষণে অবুঝ শিশুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি।'
_'হ্যাঁ। তাই তো পরিবেশ বিজ্ঞানীরা শব্দদূষণকে নীরব ঘাতক বলে আখ্যা দিয়েছেন।' কিসমিসের দীর্ঘশ্বাসমাখা কণ্ঠ যেন হতাশার ধূসরতায় অবগাহন করছিল। বললাম, 'দোস্ত, পরিবেশ দূষণ নিয়ে আমরা যেন হতাশার এভারেস্টে আরোহণ করতে চলেছি।'
_'হ্যাঁ। নগরীতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, নির্মাণ সামগ্রীর নিরাপদ অবস্থান, ফুটপাতের ধারের ভ্রাম্যমাণ হোটেলের উচ্ছিষ্ট, আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা পরিবেশ দূষণের রঙ্গমঞ্চে যেন খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।' আমি কিসমিসের রম্য উদাহরণে চমকিত হয়ে বললাম, 'তা এ নিয়ে সমাধানের ভাবনা রচনা করেছ নাকি?' কিসমিস অধরযুগলকে আমার কর্ণকুহরের কিঞ্চিৎ নিকটে এনে বলল, 'দোস্ত, তুমি তো অনেক উন্নত দেশে ভ্রমণ করেছ।'
'হ্যাঁ, তা করেছি।'
_'কিন্তু হাতের পরিত্যক্ত সামান্য টিস্যু পেপারটাকে কি কখনও কাউকে রাস্তায় ফেলতে দেখেছ?' নীরবতা পালনই সমীচীন মনে করলাম। দিনের কিছুটা সময় অস্তাচলের দিকে ঠেলে দিয়ে কিছুক্ষণ পর কিসমিস বলল, 'জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের কঠোর অবস্থান অনেক সমস্যার সমাধান করে।'
_'কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তো অনেক সময় জনবলের অভাবকে পুঁজি করে পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।'
_'আন্তরিকতা আর আইনের প্রয়োগ কোনো অজুহাত যে মানে না, তা নিশ্চয়ই বোঝ।' আমার বন্ধুটির সংলাপে আমি যেন দৃঢ়তার গন্ধ পেলাম। এবার প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম, 'দোস্ত, কোথায় যাচ্ছিলে এ অসময়ে?'
_'নিউমার্কেটে সামান্য কাজ আছে। আচ্ছা, খোদা হাফেজ' বলেই কিসমিস দাঁড়িয়ে তুলার বল দুটো আর মাস্কটা যথাস্থানে পরিধান করে শপিংমল থেকে বের হতে উদ্যত হলো।
ডা. সাইফুল আলম : ডেন্টাল সার্জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
_'না পাইনি। তবে পেতে কতক্ষণ।' কিসমিসের নিষ্ঠুর জবাব। আমি তার পানে চেয়ে শুধালাম, 'দোস্ত, হঠাৎ তোমার এ মর্ম উৎফুল্লের হেতুটা কী বলো তো? সারা বদনে যেন হাসির ফুলঝুরি।' কথা শুনে সে মাস্ক আর তুলার বল দুটো প্যান্টের পকেটে সযত্নে জমা রাখতে রাখতে বলল, 'দোস্ত, পরিবেশ!'
_'পরিবেশ?' আমার কণ্ঠে যেন জিজ্ঞাসার উপস্থিতি।
_'হ্যাঁ। একবার দু'নয়ন মেলে চারদিকটা দেখ। তবেই বুঝবে।' আমি কিসমিসের ইঙ্গিতটাকে বুঝতে পেরে বললাম, 'দোস্ত, পরিবেশ দূষণ নিয়ে তোমার ভাবনাটাকেও বেশ দূষিত করে ফেলেছ।' আমার মন্তব্যটাকে একটা ফলবতী বৃক্ষ মনে করে সে যেন তার গোড়ায় জল ফেলে বলল, 'দোস্ত, বেশ খাসা বলেছ। তা আমার সাজসজ্জা অবলোকন করেই তো বুঝতে পারছ আমরা কী ভয়ানক পরিবেশ দূষণের মাঝে মুড়িভাজা হচ্ছি।'
_'হ্যাঁ। সমস্যাটা দিন দিন পাগলা ঘোড়ার মতোই প্রকট হচ্ছে।'
_'মহানগরীতে বায়ুদূষণ, পানিদূষণ, খাদ্যদূষণ_ এসব যেন মহামারীতে রূপ নিয়েছে। অথচ সংশ্লিষ্ট কর্তৃপক্ষের চোখ দুটো যেন দূষণমুক্ত।'
_'কিন্তু তারা তো অপরাধীদের মাঝেমধ্যে সতর্ক আর জরিমানায় ভূষিত করছে শুনি।'
'তা শোনো। কিন্তু তাতেই কি সব?' কিসমিস যেন প্রশ্নমাখা নয়ন দুটো আমার পানে তুলে ধরল। বললাম, 'তা অবশ্য মানতে পারি না। মহানগরীর অঙ্গে অঙ্গে রাসায়নিক বর্জ্য আর ময়লা-আবর্জনার মাখামাখি। এতে মানুষের কর্মক্ষমতা লোপ পাচ্ছে আর শিশুদের সুস্থ বিকাশ বাধাগ্রস্ত হচ্ছে।'
_'হ্যাঁ। এক প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বায়ুমণ্ডলে যেখানে প্রতি ঘনমিটারে ৪০০ মাইক্রোগ্রাম দূষণকণা গ্রহণযোগ্য, সেখানে এই মহানগরীতে তিন হাজার মাইক্রোগ্রাম ছাড়িয়ে গেছে।'
_'তাছাড়া পরিবেশ বিশেষজ্ঞরা বলেছেন, মহানগরীর বাতাসে প্রতি বছর ৫০ টনেরও বেশি সিসা মিশে যাচ্ছে।'
আমার কথাটায় ফুলস্টপ দেওয়ার পরপরই কিসমিস তার দৃষ্টিটাকে একবার এদিক-ওদিক পরিচালনা করে বলল, 'ত্রুটিপূর্ণ যানবাহনের কালো ধোঁয়া, বিভিন্ন শিল্প প্রতিষ্ঠানের রাসায়নিক পদার্থ জনবহুল এ মহানগরীকে তিলে তিলে বসবাসের অযোগ্য করে তুলছে।' কিসমিসের কথাটা শেষ হতে না হতেই সামনের রাজপথ দিয়ে কর্ণ বিদীর্ণ করা মাইকের আওয়াজ শোনা গেল। প্রচারকারীর কর্কশ কণ্ঠের অর্থ তেমন বোঝা না গেলেও আমাদের মনে হলো, কোনো রাজনৈতিক দলের ঐতিহাসিক মহাসম্মেলনের প্রচারাভিযান চলছে। তার পরপরই শুনতে পেলাম, জনৈক চিকিৎসক হকারের সুরেলা কণ্ঠে সর্বরোগ নিবারণকারী ওষুধের রমরমা প্রচার। এ পরিস্থিতি থেকে পরিত্রাণ পেতে কিসমিস তার পকেটের লকার থেকে তুলার বান্ডিল দুটো বের করতে উদ্যত হতেই আমি তার ডান হাতটা চেপে ধরে বললাম, 'দোস্ত, আপাতত ক্ষান্ত দাও। কানে তুলার বাঁধ দিলে আমাদের আলাপচারিতার স্রোত বাধাপ্রাপ্ত হবে যে।'
আমার অনুরোধে সে তার কর্মকাণ্ডে নিবৃত্ত হয়ে বলল, 'দোস্ত, চারদিকের গোলমাল আর অসহনীয় শব্দ শুনে আমার মনে একটা গল্প উঁকি দিচ্ছে।' আমি এবার উৎসাহকে সাথী করে বললাম, 'তা বলেই ফেল না তোমার মনের কোণের গল্পটা।' কিসমিস এবার সামনের করিডোরে রাখা বেঞ্চটাতে আমাকে সঙ্গে নিয়ে বসতে বসতে বলল, 'দোস্ত, শোনো তবে।'
আমি একটু নড়েচড়ে বসলাম। ও বলতে লাগল, 'এক ভদ্রলোক তার ভাতিজাকে নিয়ে গ্রাম থেকে ঢাকায় বেড়াতে এলেন। ভাতিজার বয়স ১৩ কি ১৪ বছর। ঢাকায় পেঁৗছে বাস থেকে নেমে রাস্তায় পা রেখেই ভাতিজা বিরক্ত হয়ে চাচাকে বলল, 'চাচা, এত দিন থাকতে তুমি হাটের দিন কেন আমাকে ঢাকায় নিয়ে এলে?'
আমি কিসমিসের গল্পের অর্থ বুঝেও নিরুত্তর রইলাম। আমার নীরবতাকে উস্কে দেওয়ার জন্য আমার পানে ও জিজ্ঞাসার দৃষ্টি ফেলতেই ত্বরিত গতিতে আমি বললাম, 'উচ্চশব্দে উচ্চ রক্তচাপ, পেটের পীড়া, হৃদরোগ, বধিরতাসহ নানা রোগের ঝুঁকি বাড়ছে বলে ডাক্তার সাহেবরা সাবধান করেছেন।'
_'কিন্তু কঠিন পদক্ষেপের অভাবে সব সাবধানবাণী শুধু লিপিবদ্ধ হয়েই থাকছে।'
_'তা যথার্থ বলেছ। গবেষণায় দেখা গেছে, গাড়ির উচ্চমাত্রার হর্ন শব্দদূষণের প্রধান আসামি। তা ছাড়া যত্রতত্র মাইকিং, কলকারখানার শব্দ, লোডশেডিংয়ে জেনারেটরের তীব্র আওয়াজ ইত্যাদি তো রয়েছেই। শব্দদূষণে অবুঝ শিশুরাই ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে বেশি।'
_'হ্যাঁ। তাই তো পরিবেশ বিজ্ঞানীরা শব্দদূষণকে নীরব ঘাতক বলে আখ্যা দিয়েছেন।' কিসমিসের দীর্ঘশ্বাসমাখা কণ্ঠ যেন হতাশার ধূসরতায় অবগাহন করছিল। বললাম, 'দোস্ত, পরিবেশ দূষণ নিয়ে আমরা যেন হতাশার এভারেস্টে আরোহণ করতে চলেছি।'
_'হ্যাঁ। নগরীতে যত্রতত্র ময়লা-আবর্জনার স্তূপ, নির্মাণ সামগ্রীর নিরাপদ অবস্থান, ফুটপাতের ধারের ভ্রাম্যমাণ হোটেলের উচ্ছিষ্ট, আবাসিক এলাকায় কেমিক্যাল কারখানা পরিবেশ দূষণের রঙ্গমঞ্চে যেন খলনায়কের ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছে।' আমি কিসমিসের রম্য উদাহরণে চমকিত হয়ে বললাম, 'তা এ নিয়ে সমাধানের ভাবনা রচনা করেছ নাকি?' কিসমিস অধরযুগলকে আমার কর্ণকুহরের কিঞ্চিৎ নিকটে এনে বলল, 'দোস্ত, তুমি তো অনেক উন্নত দেশে ভ্রমণ করেছ।'
'হ্যাঁ, তা করেছি।'
_'কিন্তু হাতের পরিত্যক্ত সামান্য টিস্যু পেপারটাকে কি কখনও কাউকে রাস্তায় ফেলতে দেখেছ?' নীরবতা পালনই সমীচীন মনে করলাম। দিনের কিছুটা সময় অস্তাচলের দিকে ঠেলে দিয়ে কিছুক্ষণ পর কিসমিস বলল, 'জনগণের সচেতনতার পাশাপাশি সংশ্লিষ্টদের কঠোর অবস্থান অনেক সমস্যার সমাধান করে।'
_'কিন্তু সংশ্লিষ্টরা তো অনেক সময় জনবলের অভাবকে পুঁজি করে পার পেয়ে যাওয়ার চেষ্টা করে।'
_'আন্তরিকতা আর আইনের প্রয়োগ কোনো অজুহাত যে মানে না, তা নিশ্চয়ই বোঝ।' আমার বন্ধুটির সংলাপে আমি যেন দৃঢ়তার গন্ধ পেলাম। এবার প্রসঙ্গ পাল্টে বললাম, 'দোস্ত, কোথায় যাচ্ছিলে এ অসময়ে?'
_'নিউমার্কেটে সামান্য কাজ আছে। আচ্ছা, খোদা হাফেজ' বলেই কিসমিস দাঁড়িয়ে তুলার বল দুটো আর মাস্কটা যথাস্থানে পরিধান করে শপিংমল থেকে বের হতে উদ্যত হলো।
ডা. সাইফুল আলম : ডেন্টাল সার্জন, উত্তরা আধুনিক মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল
No comments