মেলার দখলে মাঠ by তৌফিকুল ইসলাম বাবর
মহানগরে এখন চলছে মেলা আর মেলা। মেলার দখলে রয়েছে নগরীর প্রায় সবক'টি বড় মাঠ। আবার মাঠ না পেয়ে বিজয় উৎসব চলছে সড়ক দখল করেও! বিজয়ের মাস ডিসেম্বর আসার সঙ্গে সঙ্গেই নগরীর বিভিন্ন এলকায় বসতে শুরু করে একের পর এক মেলা। নগর আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপ এবারও পৃথকভাবে আয়োজন করে বিজয় মেলা। ১০ ডিসেম্বর থেকে চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে মেলার আয়োজন করে নগর আওয়ামী লীগ সভাপতি ও সাবেক সিটি
মেয়র এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরীর নেতৃত্বাধীন গ্রুপ। এর আগে ১ ডিসেম্বর থেকে লালদীঘির মাঠে মেলার আয়োজন করে সাংসদ নুরুল ইসলামের নেতৃত্বে নগর আওয়ামী লীগের অন্য গ্রুপ। আয়োজনে পিছিয়ে নেই বিএনপিও। তবে মাঠে নয়, তারা বিজয় উৎসবের আয়োজন করেছে নগরীর নাছিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে। তাদের সাংস্কৃতিক আয়োজনের সময় সড়কজুড়ে লোকজন থাকায় যান চলাচলে বিঘ্ন সৃষ্টি হয়। ১৩ ডিসেম্বর থেকে শুরু হওয়া বিএনপির বিজয় উৎসব শেষ হচ্ছে আজ।
এদিকে অনেক আগে থেকেই নগরীর বিশাল পলোগ্রাউন্ডে চলছে চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আন্তর্জাতিক এসএমই মেলা। গত ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা শেষ হয়েছে গতকাল। তবে এ মেলা শেষ না হতেই চলছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মেলার তোড়জোড়।
সূত্র জানায়, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়েছে বিজয় মেলা। নগরবাসীকে বিনোদন দিতে কমবেশি আয়োজন রয়েছে সব মেলায়। তবে মেলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো আর জমজমাট রূপ নিচ্ছে না মেলাগুলো। তা ছাড়া ডিসেম্বরে স্কুলপড়ূয়া শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার আগমুহূর্তে এত মেলার আয়োজনও ভালোভাবে দেখছেন না সচেতন অভিভাবকরা।
বিজয় মেলার গোড়াপত্তন
১৯৮৯ সালে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে প্রথম বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। ফারুক ই আজম বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধা, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ মেলার আয়োজন করেন। পরে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্যোগে এ মেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর আলাদাভাবে আরেকটি মেলার আয়োজন করেন সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি। সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে নগর আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে দু'গ্রুপে বিভক্ত। এ দু'গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম বিএসসি পৃথকভাবে মেলা আয়োজন করে আসছেন।
৭ বছর লালদীঘির মাঠে
নির্বাসনে বিজয় মেলা
১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে এলেও মাঝে সাত বছর এ মেলাকে নির্বাসন দেওয়া হয় লালদীঘির মাঠে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের ওই সাত বছর আউটার স্টেডিয়ামে মেলার আয়োজন করার সুযোগ পায়নি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ। তাই বাধ্য হয়ে তারা মেলা নিয়ে যায় লালদীঘির মাঠে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে ফের মেলা আউটার স্টেডিয়ামে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে আগের স্থানেও মেলার আয়োজন চলে।
মেলায় মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাস ও বিনোদন
সময়ের স্রোতে মুক্তিযদ্ধের বিজয় মেলা পরিণত হয়েছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকজ মেলায়। প্রতিবছর মেলায় থাকে বিনোদনের নানা আয়োজন। মেলায় স্থাপিত বিজয় মঞ্চে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে থাকেন একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর সৈনিকরা। তারা উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরেন একাত্তরের সেই উত্তাল দিনের কথা। তুলে ধরেন বাঙালির বীরত্বের কাহিনী। দর্শকদের আনন্দ দিতে আলোচনা সভার পাশাপাশি আয়োজন করা হয় রণসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গানসহ কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য। চলে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র প্রদর্শনও। এতে শিশু-কিশোর-যুবকরা একদিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারছে, অন্যদিকে বিনোদনেরও সুযোগ পাচ্ছে।
দ্বিখণ্ডিত আওয়ামী লীগের বিজয় মেলা
নগর আওয়ামী লীগের বিরোধের জের ধরেই চট্টগ্রামে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। গত বছর থেকে আলাদাভাবে মেলার আয়োজন করছে আওয়ামী লীগের বিভিক্ত দুটি গ্রুপ। এ ব্যাপারে আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য মেলা কমিটির মহাসচিব ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম সমকালকে বলেন, 'আউটার স্টেডিয়ামের বিজয় মেলা শুধু আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যই নয়, এটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ঐতিহ্যেও পরিণত হয়েছে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা এ মেলার আয়োজন করে আসছি।' তিনি বলেন, লালদীঘির মাঠে সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি যে মেলার আয়োজন করেছেন সেটিকে আমরা ওনার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন থানা পর্যায়ের একটি মেলা বলে মনে করি।'
অন্যদিকে লালদীঘির বিজয় মেলা কমিটির মহাসচিব রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আউটার স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে সংস্কৃতিবিবর্জিত কর্মকাণ্ড চালানোর কারণেই নুরুল ইসলাম বিএসসি লালদীঘির মাঠে পৃথকভাবে মেলার আয়োজন করেন। ২০১০ সালে আউটার স্টেডিয়ামের মেলার আয়োজকরা মেলাটি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল। কিন্তু চট্টলার ঐতিহ্য নিয়ে আমরা তো বাণিজ্য করতে দিতে পারি না। তাই ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিশাল পরিসরে লালদীঘি মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।' সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে যাতে অশ্লীল নাচ-গান না হয় সে জন্য মেলায় ভ্যারাইটি শো'র অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির বিজয় উৎসব
আউটার স্টেডিয়ামের অদূরে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কঘেঁষা চত্বরে ছয়দিন দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের আয়োজন করে বিএনপি। উৎসবে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে নগর বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা আউটার স্টেডিয়াম থেকে মহিউদ্দিনপন্থীদের সরিয়ে নিজেরাই কয়েক বছর মেলার আয়োজন করে। ১৯৯৬ সালে বিরোধী দলে থাকার সময় বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় উৎসব করে। সর্বশেষ গত বছর থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ উৎসবের আয়োজন করছে।
পলোগ্রাউন্ডে ও ডিসি হিলেও চলছে মেলা
খালি নেই নগরীর ডিসি হিল কিংবা পলোগ্রাউন্ডও। নগরীর ডিসি হিলে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী স্মৃতি '৭১ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এ মেলায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বীর সৈনিকরা। পাশাপাশি চলে আবৃত্তি, নৃত্য ও গানের অনুষ্ঠান। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রও পরিবেশন করা হয় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে। অপরদিকে গত ১০ নভেম্বর থেকে পলোগ্রাউন্ডে শুরু হয় চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড আয়োজিত আন্তর্জাতিক এসএমই মেলা। গতকাল এ মেলা শেষ হওয়ার পরপরই চলছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মেলার তোড়জোড়।
মেলা ঘিরে উত্তেজনা যানজট
নগরে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে মেলা নিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক অসন্তোষ ও উত্তেজনা। আর বিএনপির বিজয় উৎসবের কারণে অনেক সময় সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এদিকে আউটার স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের বিজয় মেলা এবং এর পাশে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির বিজয় উৎসব হওয়ায় যে কোনো সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শঙ্কা করা হয়। এ অবস্থায় বাড়তি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে সিএমপিকে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আউটার স্টেডিয়াম ও বিএনপি কার্যালয়ের মাঝে প্রতিদিন গড়ে অর্ধশতাধিক পুলিশ নিয়োজিত রাখা হচ্ছে। স্থানীয় পথচারীদের অভিযোগ, দুটি স্থানে একই সময়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়ায় মাইকের শব্দে পথ চলা দায়। বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের।
এদিকে অনেক আগে থেকেই নগরীর বিশাল পলোগ্রাউন্ডে চলছে চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আন্তর্জাতিক এসএমই মেলা। গত ১০ নভেম্বর থেকে শুরু হওয়া এ মেলা শেষ হয়েছে গতকাল। তবে এ মেলা শেষ না হতেই চলছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মেলার তোড়জোড়।
সূত্র জানায়, বিজয় দিবসকে কেন্দ্র করে নগরীর বিভিন্ন স্থানে আয়োজন করা হয়েছে বিজয় মেলা। নগরবাসীকে বিনোদন দিতে কমবেশি আয়োজন রয়েছে সব মেলায়। তবে মেলার সংখ্যা বেড়ে যাওয়ায় আগের মতো আর জমজমাট রূপ নিচ্ছে না মেলাগুলো। তা ছাড়া ডিসেম্বরে স্কুলপড়ূয়া শিক্ষার্থীদের বার্ষিক পরীক্ষার আগমুহূর্তে এত মেলার আয়োজনও ভালোভাবে দেখছেন না সচেতন অভিভাবকরা।
বিজয় মেলার গোড়াপত্তন
১৯৮৯ সালে নগরীর আউটার স্টেডিয়ামে প্রথম বিজয় মেলার আয়োজন করা হয়। ফারুক ই আজম বীরপ্রতীকের নেতৃত্বে সর্বস্তরের মুক্তিযোদ্ধা, প্রগতিশীল রাজনৈতিক দলের নেতৃবৃন্দ ও বিভিন্ন সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠনের নেতাকর্মীরা এ মেলার আয়োজন করেন। পরে সাবেক মেয়র মহিউদ্দিন চৌধুরীর উদ্যোগে এ মেলা নিয়মিত অনুষ্ঠিত হয়ে আসছিল। কিন্তু আওয়ামী লীগ ক্ষমতায় যাওয়ার পর আলাদাভাবে আরেকটি মেলার আয়োজন করেন সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি। সূত্র জানায়, অভ্যন্তরীণ কোন্দলের জের ধরে নগর আওয়ামী লীগ দীর্ঘদিন ধরে দু'গ্রুপে বিভক্ত। এ দু'গ্রুপের নেতৃত্বে থাকা এবিএম মহিউদ্দিন চৌধুরী ও নুরুল ইসলাম বিএসসি পৃথকভাবে মেলা আয়োজন করে আসছেন।
৭ বছর লালদীঘির মাঠে
নির্বাসনে বিজয় মেলা
১৯৮৯ সাল থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা চট্টগ্রাম আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিত হয়ে এলেও মাঝে সাত বছর এ মেলাকে নির্বাসন দেওয়া হয় লালদীঘির মাঠে। বিএনপি নেতৃত্বাধীন চারদলীয় জোট সরকার ও তত্ত্বাবধায়ক সরকার আমলের ওই সাত বছর আউটার স্টেডিয়ামে মেলার আয়োজন করার সুযোগ পায়নি মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা পরিষদ। তাই বাধ্য হয়ে তারা মেলা নিয়ে যায় লালদীঘির মাঠে। আওয়ামী লীগ নেতৃত্বাধীন মহাজোট সরকার ক্ষমতায় আসার পর ২০০৯ সাল থেকে ফের মেলা আউটার স্টেডিয়ামে ফিরিয়ে আনা হয়। তবে আগের স্থানেও মেলার আয়োজন চলে।
মেলায় মুক্তিযুদ্ধের
ইতিহাস ও বিনোদন
সময়ের স্রোতে মুক্তিযদ্ধের বিজয় মেলা পরিণত হয়েছে আবহমান বাংলার ঐতিহ্যবাহী লোকজ মেলায়। প্রতিবছর মেলায় থাকে বিনোদনের নানা আয়োজন। মেলায় স্থাপিত বিজয় মঞ্চে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণমূলক আলোচনা সভার আয়োজন করা হয়। এতে অতিথি হিসেবে থাকেন একাত্তরের রণাঙ্গনের বীর সৈনিকরা। তারা উপস্থিত শ্রোতাদের সামনে তুলে ধরেন একাত্তরের সেই উত্তাল দিনের কথা। তুলে ধরেন বাঙালির বীরত্বের কাহিনী। দর্শকদের আনন্দ দিতে আলোচনা সভার পাশাপাশি আয়োজন করা হয় রণসঙ্গীত, দেশাত্মবোধক গানসহ কবিতা আবৃত্তি ও নৃত্য। চলে মুক্তিযুদ্ধের চলচ্চিত্র প্রদর্শনও। এতে শিশু-কিশোর-যুবকরা একদিকে মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানতে পারছে, অন্যদিকে বিনোদনেরও সুযোগ পাচ্ছে।
দ্বিখণ্ডিত আওয়ামী লীগের বিজয় মেলা
নগর আওয়ামী লীগের বিরোধের জের ধরেই চট্টগ্রামে দ্বিখণ্ডিত হয়েছে মুক্তিযুদ্ধের বিজয় মেলা। গত বছর থেকে আলাদাভাবে মেলার আয়োজন করছে আওয়ামী লীগের বিভিক্ত দুটি গ্রুপ। এ ব্যাপারে আউটার স্টেডিয়ামে অনুষ্ঠিতব্য মেলা কমিটির মহাসচিব ও নগর আওয়ামী লীগের সাংগঠনিক সম্পাদক বদিউল আলম সমকালকে বলেন, 'আউটার স্টেডিয়ামের বিজয় মেলা শুধু আওয়ামী লীগের ঐতিহ্যই নয়, এটি বন্দর নগরী চট্টগ্রামের ঐতিহ্যেও পরিণত হয়েছে। অনেক চড়াই-উৎরাই পেরিয়ে আমরা এ মেলার আয়োজন করে আসছি।' তিনি বলেন, লালদীঘির মাঠে সাংসদ নুরুল ইসলাম বিএসসি যে মেলার আয়োজন করেছেন সেটিকে আমরা ওনার নির্বাচনী এলাকার আওতাধীন থানা পর্যায়ের একটি মেলা বলে মনে করি।'
অন্যদিকে লালদীঘির বিজয় মেলা কমিটির মহাসচিব রেজাউল করিম চৌধুরী বলেন, আউটার স্টেডিয়ামে সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে সংস্কৃতিবিবর্জিত কর্মকাণ্ড চালানোর কারণেই নুরুল ইসলাম বিএসসি লালদীঘির মাঠে পৃথকভাবে মেলার আয়োজন করেন। ২০১০ সালে আউটার স্টেডিয়ামের মেলার আয়োজকরা মেলাটি ৩৫ লাখ টাকায় বিক্রি করে দিয়েছিল। কিন্তু চট্টলার ঐতিহ্য নিয়ে আমরা তো বাণিজ্য করতে দিতে পারি না। তাই ঐতিহ্য ধরে রাখতে বিশাল পরিসরে লালদীঘি মাঠে মেলার আয়োজন করা হয়েছে।' সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের নামে যাতে অশ্লীল নাচ-গান না হয় সে জন্য মেলায় ভ্যারাইটি শো'র অনুমতি দেওয়া হয়নি বলে তিনি উল্লেখ করেন।
বিএনপির বিজয় উৎসব
আউটার স্টেডিয়ামের অদূরে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে সড়কঘেঁষা চত্বরে ছয়দিন দিনব্যাপী বিজয় উৎসবের আয়োজন করে বিএনপি। উৎসবে প্রতিদিন মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণ ছাড়াও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করা হয়। এর আগে চারদলীয় জোট ক্ষমতায় থাকাকালে নগর বিএনপির একাংশের নেতাকর্মীরা আউটার স্টেডিয়াম থেকে মহিউদ্দিনপন্থীদের সরিয়ে নিজেরাই কয়েক বছর মেলার আয়োজন করে। ১৯৯৬ সালে বিরোধী দলে থাকার সময় বিএনপি দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিজয় উৎসব করে। সর্বশেষ গত বছর থেকে দলীয় কার্যালয়ের সামনে এ উৎসবের আয়োজন করছে।
পলোগ্রাউন্ডে ও ডিসি হিলেও চলছে মেলা
খালি নেই নগরীর ডিসি হিল কিংবা পলোগ্রাউন্ডও। নগরীর ডিসি হিলে গত ১০ ডিসেম্বর থেকে শুরু হয় সপ্তাহব্যাপী স্মৃতি '৭১ শীর্ষক মুক্তিযুদ্ধের বইমেলা। প্রতিদিন সন্ধ্যায় এ মেলায় আলোচক হিসেবে উপস্থিত থাকেন দেশের বিভিন্ন প্রান্তের বীর সৈনিকরা। পাশাপাশি চলে আবৃত্তি, নৃত্য ও গানের অনুষ্ঠান। এছাড়া মুক্তিযুদ্ধ বিষয়ক চলচ্চিত্রও পরিবেশন করা হয় অনুষ্ঠান প্রাঙ্গণে। অপরদিকে গত ১০ নভেম্বর থেকে পলোগ্রাউন্ডে শুরু হয় চিটাগাং উইমেন চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড আয়োজিত আন্তর্জাতিক এসএমই মেলা। গতকাল এ মেলা শেষ হওয়ার পরপরই চলছে চিটাগাং চেম্বার অব কমার্স অ্যান্ড ইন্ডাস্ট্রির আয়োজনে মাসব্যাপী আন্তর্জাতিক বাণিজ্যিক মেলার তোড়জোড়।
মেলা ঘিরে উত্তেজনা যানজট
নগরে আওয়ামী লীগের দুটি গ্রুপের মধ্যে মেলা নিয়ে রয়েছে রাজনৈতিক অসন্তোষ ও উত্তেজনা। আর বিএনপির বিজয় উৎসবের কারণে অনেক সময় সড়কে সৃষ্টি হচ্ছে যানজট। এদিকে আউটার স্টেডিয়ামে আওয়ামী লীগের বিজয় মেলা এবং এর পাশে নাসিমন ভবনের দলীয় কার্যালয়ের সামনে বিএনপির বিজয় উৎসব হওয়ায় যে কোনো সময় অপ্রীতিকর পরিস্থিতির শঙ্কা করা হয়। এ অবস্থায় বাড়তি ব্যবস্থা নিতে হয়েছে সিএমপিকে। অপ্রীতিকর ঘটনা এড়াতে আউটার স্টেডিয়াম ও বিএনপি কার্যালয়ের মাঝে প্রতিদিন গড়ে অর্ধশতাধিক পুলিশ নিয়োজিত রাখা হচ্ছে। স্থানীয় পথচারীদের অভিযোগ, দুটি স্থানে একই সময়ে আলোচনা ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠান হওয়ায় মাইকের শব্দে পথ চলা দায়। বেশি দুর্ভোগ পোহাতে হচ্ছে স্থানীয় বাসিন্দা ও ব্যবসায়ীদের।
No comments