অভিবাসী দিবস-কমছে প্রবাসে যাওয়ার প্রবণতা

জ ১৮ ডিসেম্বর 'বিশ্ব অভিবাসী দিবস'। ১৯৯০ সালের ১৮ ডিসেম্বর জাতিসংঘের সাধারণ অধিবেশনে বিশ্বের সব অভিবাসী শ্রমিক ও তাদের পরিবারের অধিকার সংরক্ষণের একটি সনদ অনুমোদিত হয়। এরপর ২০০৮ সালের ১৮ ডিসেম্বর থেকে দিনটি সারা বিশ্বে নানা আয়োজনের মধ্য দিয়ে পালিত হয়ে আসছে। দিবসটি উপলক্ষে বাংলাদেশেও বিভিন্ন অনুষ্ঠানমালার আয়োজন করা হয়। পৃথক পৃথক বাণী দিয়ে থাকেন রাষ্ট্রপতি, প্রধানমন্ত্রীসহ সংশ্লিষ্ট মন্ত্রী।


গত বছর অভিবাসী দিবসের এক অনুষ্ঠানে সংশ্লিষ্ট এক মন্ত্রী বলেছিলেন, 'অভিবাসন ব্যয় কমাতে আইনের কথাও ভাবা হচ্ছে।' কিন্তু গত এক বছরেও এর কোনো সুফল দেখা যায়নি। অভিবাসন ব্যয়বৃদ্ধিসহ অনেক কারণেই এখন প্রবাসে যাওয়ার প্রবণতা কমে গেছে। প্রতারণার শিকার হয়ে প্রবাসে গিয়ে খালি হাতে ফেরার ঘটনা এখন ঘটছে অহরহ। যারা থাকছে, তাদেরও বেতন-ভাতা খুব একটা সুবিধার নয়। অনেককে ফিরতে হচ্ছে লাশ হয়ে। বিশেষ করে দক্ষিণ আফ্রিকায় সেখানকার সন্ত্রাসীদের হাতে একের পর এক প্রাণ যাচ্ছে বাংলাদেশির। প্রবাসীরা এখন আর ভালো পাত্রও নয়! একটা সময় ছিল, যখন প্রবাসী পাত্রের জন্য হন্যে হয়ে ঘুরতেন পাত্রীর স্বজনরা। এখন প্রবাসী পাত্র মানেই যেন একটা অজানা দুশ্চিন্তা। আগে প্রবাসজীবন মানেই একটা সুখের সংসারের কথা ভাবা হতো। প্রবাসে গিয়ে রোজগার করে জন্মভিটায় নিজের জন্য একটা ভালো বাড়ি করার স্বপ্ন দেখতেন সবাই। এখন যেন দুমুঠো ভাত জোগানোই দায়। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর হিসাব মতে, ১৯৭৬ সাল থেকে ২০১০ সাল পর্যন্ত বিশ্বের ১৩২টি দেশে বাংলাদেশের মোট ৭১ লাখ ১৪ হাজার ৪১০ জন প্রবাসে গেছে। এর মধ্যে নারীর সংখ্যা এক লাখ ৪৯ হাজার ১১১। মোট রেমিট্যান্স আয় হয়েছে ৪৬১৭১৩.৫৬ কোটি টাকা; যা বৈদেশিক মুদ্রার সিংহভাগ অর্জন। সবচেয়ে বেশি জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে সৌদি আরবে (কেএসএ)। উলি্লখিত সময়ে মোট ২৫ লাখ ৮০ হাজার ১৯৮ জন সৌদি আরবে গেছে, যা রপ্তানির ৩৭ শতাংশ। বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি আমদানিতে দ্বিতীয় দুবাই (ইউএই)। ২৬ শতাংশ রপ্তানি হিসেবে গত ৩৪ বছরে দুবাইয়ে গেছে মোট ১৭ লাখ ৯০ হাজার ৭৯১ জন। কুমিল্লা জেলা থেকেই সবচেয়ে বেশি জনশক্তি রপ্তানি হয়েছে। এ জেলা থেকে গত ৩৪ বছরে মোট তিন লাখ ৪২ হাজার ৪৩১ জন প্রবাসে পাড়ি জমায়। দ্বিতীয় স্থানে থাকা চট্টগ্রাম জেলা থেকে মোট তিন লাখ দুই হাজার ৪২৩ জন প্রবাসে গেছে। সবচেয়ে কম গেছে মেহেরপুর জেলা থেকে (২১ হাজার ৫৯০ জন)। তবে দিন দিন প্রবাসে যাওয়ার প্রবণতা কমে যাচ্ছে। জনশক্তি কর্মসংস্থান ও প্রশিক্ষণ ব্যুরোর তথ্য মতে, ২০০৭ সালে আট লাখ ৩২ হাজার ৬০৮ জন, ২০০৭ সালে আট লাখ ৭৫ হাজার ৫৫ জন, ২০০৯ সালে চার লাখ ৭৫ হাজার ২৭৮ জন, ২০১০ সালে তিন লাখ ৯০ হাজার ৭০২ জন প্রবাসে গেছে। অর্থাৎ ২০০৭ সালের পর ২০১০ সালে বাংলাদেশ থেকে জনশক্তি রপ্তানি অর্ধেক কমে গেছে।
সরকারি হিসাব মতে, ২০০১ থেকে ২০০৮ সাল পর্যন্ত প্রবাস থেকে ১২ হাজার ৩০৭ জনের লাশ আসে। ২০০৯ সালের অক্টোবর পর্যন্ত আসে দুই হাজার ৬৪০ জনের লাশ। প্রবাসে কর্মরত শ্রমিকদের মতে, কূটনৈতিক তৎপরতার দুর্বলতার কারণেই প্রবাসে শ্রমিকদের এ হাল। দুবাই, সোদি আরব, মালয়েশিয়াসহ বিভিন্ন রাষ্ট্রে অন্য দেশের শ্রমিকদের তুলনায় বাংলাদেশি শ্রমিকদের মজুরি অনেক কম। এ ছাড়া বাংলাদেশিদের দিকে অবহেলার চোখে তাকায় সেখানকার কম্পানি মালিকরা। এর আগে বাংলাদেশ থেকে প্রবাসে যেতেও নানা ঝক্কি পোহাতে হয়। বিশেষ করে জনশক্তি রপ্তানিতে কঠোর কোনো আইন না থাকায় সাধারণ মানুষকে হয়রানির মধ্যে পড়তে হচ্ছে।
বিশ্বজিৎ পাল বাবু


No comments

Powered by Blogger.