দোহাজারী-ঘুমধুম রেললাইন-নতুন সকালের অপেক্ষায়

বাংলাদেশের পক্ষ থেকে 'লুক ইস্ট' পররাষ্ট্রনীতির কথা বিভিন্ন সময়ে জোরেশোরে শোনা গেলেও বাস্তবে কতটা কাজ হয়েছে_ মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের যোগাযোগ ব্যবস্থা তার একটি সূচক হতে পারে। আকাশ, সড়ক, রেল, নৌ_ চার পথই ব্যাপক সম্ভাবনাময় হওয়া সত্ত্বেও সবেধন নীলমণি দ্বিতীয় প্রতিবেশীটি আমাদের কাছে আরশীনগরের পড়শিই রয়ে গেছে। ওই পথে ট্রান্সএশিয়ান রেলওয়ে, এশিয়ান হাইওয়ের মাধ্যমে চীনসহ দক্ষিণ-পূর্ব ও পূর্ব এশিয়ায়


যাওয়ার মতো আকর্ষণীয় সংকল্প ব্যক্ত হয় বটে; এখনও ঢাকা-রেঙ্গুন সরাসরি বিমান যোগাযোগই পুনঃস্থাপন করা সম্ভব হয়নি। যারা মনে করেন, বাণিজ্যিক ও কৌশলগত কারণে মিয়ানমারের সঙ্গে আমাদের ঘনিষ্ঠতা বাড়ানো দরকার; দুই দেশের মধ্যে অবকাঠামোগত যোগাযোগ ব্যবস্থা তাদের কাছে নিদারুণ পরিহাস। কেবল মিয়ানমার নয়, এর মাধ্যমে চীনের সঙ্গে যোগাযোগ বৃদ্ধির সম্ভাবনাময় দিকটিও উপেক্ষা করা হয়েছে। সেদিক থেকে চট্টগ্রামের দোহাজারী থেকে বাংলাদেশ-মিয়ানমার সীমান্তের ঘুমধুম পর্যন্ত রেল সম্প্রসারণের কাজ এগিয়ে চলার খবর উৎসাহব্যঞ্জকই মনে হচ্ছে। আমরা আশান্বিত যে, এ বছর এপ্রিলে সূচিত রেললাইন সম্প্রসারণ কাজ 'মৈত্রী সড়ক' প্রকল্পের মতো ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপনে আটকে নেই। আমাদের মনে আছে, ছয় বছর আগে ঘুমধুমের জিরো পয়েন্টে বাংলাদেশ ও মিয়ানমারের যোগাযোগ ও পররাষ্ট্রমন্ত্রী ৪৩ কিলোমিটার দীর্ঘ ওই হাইওয়ের ভিত্তিপ্রস্তর স্থাপন করেছিলেন। পরবর্তীকালে তা ৪৩ ইঞ্চিও অগ্রসর হয়নি। আমরা চাই, রেলপথের পাশাপাশি সড়কপথের কাজও এগিয়ে চলুক। চট্টগ্রাম-রেঙ্গুনের প্রাচীন নৌপথটিই বা কেন প্রায় পরিত্যক্ত, তা বোধগম্য নয়। এটি চালু করার ক্ষেত্রে সড়ক বা রেলপথের মতো বাড়তি বিনিয়োগেরও প্রয়োজন নেই। প্রকৃতির দান এভাবে পায়ে ঠেলা আর যাই হোক, কোনো দেশের জন্যই কল্যাণকর হতে পারে না। আর ঢাকা-রেঙ্গুন বিমান যোগাযোগে কেবল সদিচ্ছাই যে যথেষ্ট, এ কথা আমরা বারবার বলে এসেছি। বস্তুত বাংলাদেশ-মিয়ানমার যোগাযোগ বৃদ্ধির ব্যাপারে কথাবার্তা অনেক হয়েছে। এখন কাজের সময়। প্রতিবেশী দেশটির প্রতি পিঠ ফিরিয়ে অনেক রাত পার করার পর এখন ভোরের আলো দেখার অপেক্ষায় আমরা। দোহাজারী-ঘুমধুম রেল যোগাযোগ নির্বিঘ্ন হওয়ার মধ্য দিয়েই বহুল কাঙ্ক্ষিত নতুন সকাল শুরু হোক।

No comments

Powered by Blogger.