শুল্ক সুবিধার অপব্যবহার, ক্ষতির মুখে দেশীয় শিল্প-দেশি কাগজ উদ্বৃত্ত, তবু আমদানি অবারিত
দেশের কাগজকলগুলোয় বর্তমানে তৈরি হচ্ছে বেশ উন্নতমানের কাগজ। অভ্যন্তরীণ চাহিদা মিটিয়ে এসব কাগজ এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। এর পরও আমদানি করা হচ্ছে বিপুল পরিমাণ নিম্নমানের কাগজ। তাও আবার শুল্ক ফাঁকি দিয়ে। ফলে দেশীয় কাগজ শিল্প পড়ছে বিরাট হুমকির মুখে। বাংলাদেশ পেপার মিলস অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমএ) দেওয়া তথ্য অনুযায়ী দেশে সরকারি ও বেসরকারি মালিকানাধীন কাগজকল রয়েছে ৬১টি।
এগুলোর মধ্যে ৫৮টির মতো কারখানা বর্তমানে চালু রয়েছে এবং এসব কারখানায় প্রায় সব ধরনের কাগজই তৈরি হচ্ছে। বিপিএমএর এক গবেষণায় দেখা গেছে, দেশের চালু কাগজকলগুলোর বর্তমান উৎপাদন বছরে ৯ লাখ ১৮ হাজার ৩০০ মেট্রিক টন। অন্যদিকে দেশে সব ধরনের কাগজের মোট চাহিদা পাঁচ থেকে ছয় লাখ টন। সে হিসাবে দেশে বছরে প্রায় চার লাখ টনের মতো কাগজ উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে।
বিপিএমএর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নওশেরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্পসহ নানা ধরনের শিল্পের প্যাকেজিংয়ের সুবিধার্থে কাগজ আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দিয়েছে সরকার। এ সুযোগের অপব্যবহার করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কাগজ আমদানি করছেন এবং অতিরিক্ত কাগজ দেশীয় বাজারে কম দামে ছেড়ে দিচ্ছেন। অথচ অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে দেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কাগজ। তিনি আরো বলেন, দেশে আমদানিকৃত কাগজ ও কাগজজাত পণ্যের পরিমাণ প্রায় তিন লাখ টন। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাগজ উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও এই বিপুল পরিমাণ কাগজ কেন আমদানি হচ্ছে, সরকার তা খতিয়ে দেখছে না। এর ফলে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় কাগজ শিল্পের উদ্যোক্তারা বাজার হারাচ্ছেন।
জানা গেছে, ব্যাক টু ব্যাক সুবিধার আড়ালে একটি অসাধু চক্র লেখার কাগজ, টয়লেট টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু ও আর্ট পেপারসহ বিভিন্ন ধরনের কাগজ আমদানি করছে। ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্ক কর্মকর্তার হাতে ধরা পড়ে পাঁচ কনটেইনার ভর্তি আর্ট পেপারের এমন একটি চালান। শুল্ক কর্মকর্তাদের ধারণা, এ চালানটি ধরা না পড়লে সরকার ৪০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব হারাত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ধরা পড়ে মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ, বেশির ভাগই আমদানিকারক ও কিছু শুল্ক কর্মকর্তার পরস্পর যোগসাজশে খালাস হয়ে যায়।
দেশীয় শিল্প সংরক্ষণে সরকারের উদাসীন ভূমিকায় দুঃখ প্রকাশ করে বিপিএমএর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নওশেরুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় উদ্যোক্তারা কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে বিএসটিআইয়ের প্রত্যয়নপত্র দাখিলের বিধান করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তা ছাড়া কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য আমদানির সময় সব ধরনের পরীক্ষা ও এইচএস কোড যাচাই করে পণ্য খালাসেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। বরং স্থানীয় কাগজকলগুলোর জন্য বিএসটিআইয়ের সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দেশে সরকারি মালিকানাধীন তিনটি কাগজ ও একটি মণ্ড তৈরির কারখানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কেবল কর্ণফুলী কাগজ কলটি চালু রয়েছে। এ কাগজকলে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে ১০০ টন কাগজ। বাকি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। এগুলো হচ্ছে নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেড (পাকশী), খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল লিমিটেড ও সিলেট পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড (ছাতক)। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোই কাগজের চাহিদার বড় অংশ জোগান দিচ্ছে। তবে বিদেশি কাগজের অবৈধ আমদানি বন্ধ করে দেশের বন্ধ কাগজকলগুলো ফের চালু করার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
দেশে বেসরকারি খাতে কাগজ উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটির কাগজ তৈরির মিল রয়েছে ১০টি। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি দেশের কাগজ শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করতে বাজারে আনে কার্বনলেস পেপার, আর্ট পেপার ও এ-ফোর পেপার। এসব কাগজ আগে ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। এর আগে দেশে এ ধরনের পরিবেশবান্ধব কাগজের উৎপাদন ছিল না। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আরো বেশ কয়েক ধরনের কাগজ উৎপাদন করছে, যা আগে ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। এতে একদিকে যেমন বিদেশি কাগজের ওপর নির্ভরতা কমেছে, তেমনি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হচ্ছে। দেশে কাগজ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে টি কে পেপার প্রডাকশন লিমিটেড। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাগজ উৎপাদন করছে সোনালি পেপার মিলস লিমিটেড, ইউনুস পেপার মিলস লিমিটেড ও ক্যাপিটাল বোর্ড মিলস লিমিটেডসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
সর্ববৃহৎ কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের কাগজ কারখানাগুলোয় আধুনিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে সব ধরনের উন্নতমানের কাগজ ও কাগজজাত পণ্য। এসবের মধ্যে রয়েছে ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন পেপার, কিচেন টাওয়েল, ক্লিনিক্যাল বেডশিট, হোয়াইট প্রিন্টিং ও রাইটিং পেপার, লাইনার ও মিডিয়া পেপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বিড়ি ও সিগারেট পেপার, এমজি পোস্টার পেপার, অফসেট পেপার, নিউজপ্রিন্ট পেপার, এ-ফোর পেপার, স্টিফেনার, অ্যালু-ফয়েল পেপার, কার্বনলেস পেপার, আর্ট পেপার, কোটেড ও আনকোটেড বোর্ডসহ অনেক ধরনের কাগজ।
বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমানে দেশের কাগজকলে উৎপাদিত কাগজ দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব কাগজ এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে কাগজ রপ্তানিতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নগদ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
বসুন্ধরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশে কাগজের মোট চাহিদা পূরণে বসুন্ধরা পেপার মিলস উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে এর বার্ষিক উৎপাদন এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন এবং ভবিষ্যতে এর উৎপাদন আরো বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে বসুন্ধরার কাগজ প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।' তবে রপ্তানির এ ধারা অব্যাহত রাখতে এ খাতে নগদ সহায়তার দাবি জানান তিনি।
দেশীয় কাগজের বর্তমান সংকট সম্পর্কে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে বিদেশ থেকে একটি চক্র প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ কাগজ আমদানি করছে। হার্ড টিস্যু নামে আমদানি করছে নানা ধরনের ন্যাপকিন, ফেসিয়াল টিস্যু ও টয়লেট টিস্যু। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে কাগজ উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তা ছাড়া একই শুল্কে মিশ্র বোর্ড আমদানির ফলে স্থানীয় মিলগুলো বাজারে টিকতে পারছে না।' যেকোনো ধরনের কাগজ আমদানিতে বন্ডেড সুবিধা রহিত করার জোর দাবি জানান তিনি।
কাগজ শিল্পের বর্তমান সংকট সম্পর্কে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের কাগজকলগুলো। বিশ্ব বাজারে অসম প্রতিযোগিতা এবং দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাব থাকা সত্ত্বেও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন থেমে নেই। তবে সরকারের সঠিক নজরদারির অভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে দেশীয় কাগজকলগুলো। উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে লাখ লাখ টন কাগজ। এ কারণে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমএ) সভাপতি আকরাম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে অনেক ধরনের কাগজ দেশে তৈরি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে কাগজ আমদানি করে দেশের বাজারে বিক্রি করা বন্ধ করতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশে উৎপাদিত কাগজের মূল্য নির্ধারণেও সরকারের একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। নইলে দেশের কাগজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
বিপিএমএর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নওশেরুল আলম কালের কণ্ঠকে বলেন, তৈরি পোশাক ও ওষুধ শিল্পসহ নানা ধরনের শিল্পের প্যাকেজিংয়ের সুবিধার্থে কাগজ আমদানিতে শুল্ক সুবিধা দিয়েছে সরকার। এ সুযোগের অপব্যবহার করে একশ্রেণীর অসাধু ব্যবসায়ী প্রয়োজনের তুলনায় অনেক বেশি কাগজ আমদানি করছেন এবং অতিরিক্ত কাগজ দেশীয় বাজারে কম দামে ছেড়ে দিচ্ছেন। অথচ অব্যবহৃত থেকে যাচ্ছে দেশে উৎপাদিত বিপুল পরিমাণ কাগজ। তিনি আরো বলেন, দেশে আমদানিকৃত কাগজ ও কাগজজাত পণ্যের পরিমাণ প্রায় তিন লাখ টন। দেশে পর্যাপ্ত পরিমাণ কাগজ উৎপাদন হওয়া সত্ত্বেও এই বিপুল পরিমাণ কাগজ কেন আমদানি হচ্ছে, সরকার তা খতিয়ে দেখছে না। এর ফলে প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ বৈদেশিক মুদ্রা বিদেশে চলে যাচ্ছে, অন্যদিকে স্থানীয় কাগজ শিল্পের উদ্যোক্তারা বাজার হারাচ্ছেন।
জানা গেছে, ব্যাক টু ব্যাক সুবিধার আড়ালে একটি অসাধু চক্র লেখার কাগজ, টয়লেট টিস্যু, ফেসিয়াল টিস্যু ও আর্ট পেপারসহ বিভিন্ন ধরনের কাগজ আমদানি করছে। ফলে কোটি কোটি টাকা রাজস্ব হারাচ্ছে সরকার। গত সেপ্টেম্বর মাসের শেষ সপ্তাহে চট্টগ্রাম বন্দরে শুল্ক কর্মকর্তার হাতে ধরা পড়ে পাঁচ কনটেইনার ভর্তি আর্ট পেপারের এমন একটি চালান। শুল্ক কর্মকর্তাদের ধারণা, এ চালানটি ধরা না পড়লে সরকার ৪০ লাখ টাকারও বেশি রাজস্ব হারাত। সংশ্লিষ্ট ব্যক্তিরা বলছেন, ধরা পড়ে মাত্র এক থেকে দুই শতাংশ, বেশির ভাগই আমদানিকারক ও কিছু শুল্ক কর্মকর্তার পরস্পর যোগসাজশে খালাস হয়ে যায়।
দেশীয় শিল্প সংরক্ষণে সরকারের উদাসীন ভূমিকায় দুঃখ প্রকাশ করে বিপিএমএর ভারপ্রাপ্ত সেক্রেটারি নওশেরুল আলম বলেন, দীর্ঘদিন ধরে দেশীয় উদ্যোক্তারা কাগজ আমদানির ক্ষেত্রে শুল্ক কর্তৃপক্ষের কাছে বিএসটিআইয়ের প্রত্যয়নপত্র দাখিলের বিধান করার দাবি জানিয়ে আসছেন। তা ছাড়া কাগজ ও কাগজজাতীয় পণ্য আমদানির সময় সব ধরনের পরীক্ষা ও এইচএস কোড যাচাই করে পণ্য খালাসেরও অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু এ ব্যাপারে সরকারের কোনো ভ্রূক্ষেপ নেই। বরং স্থানীয় কাগজকলগুলোর জন্য বিএসটিআইয়ের সনদ গ্রহণ বাধ্যতামূলক করা হয়েছে।
দেশে সরকারি মালিকানাধীন তিনটি কাগজ ও একটি মণ্ড তৈরির কারখানা রয়েছে। এগুলোর মধ্যে কেবল কর্ণফুলী কাগজ কলটি চালু রয়েছে। এ কাগজকলে প্রতিদিন উৎপাদিত হচ্ছে ১০০ টন কাগজ। বাকি প্রতিষ্ঠান দীর্ঘদিন ধরে বন্ধ আছে। এগুলো হচ্ছে নর্থ বেঙ্গল পেপার মিলস লিমিটেড (পাকশী), খুলনা নিউজপ্রিন্ট মিল লিমিটেড ও সিলেট পাল্প অ্যান্ড পেপার মিলস লিমিটেড (ছাতক)। সংকটময় এ পরিস্থিতিতে বেসরকারি খাতের প্রতিষ্ঠানগুলোই কাগজের চাহিদার বড় অংশ জোগান দিচ্ছে। তবে বিদেশি কাগজের অবৈধ আমদানি বন্ধ করে দেশের বন্ধ কাগজকলগুলো ফের চালু করার বিষয়ে জোর দিচ্ছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা।
দেশে বেসরকারি খাতে কাগজ উৎপাদনে এগিয়ে রয়েছে বসুন্ধরা গ্রুপ। বর্তমানে এ প্রতিষ্ঠানটির কাগজ তৈরির মিল রয়েছে ১০টি। ১৯৯৫ সাল থেকে প্রতিষ্ঠানটি দেশের কাগজ শিল্পে নতুন মাত্রা যোগ করতে বাজারে আনে কার্বনলেস পেপার, আর্ট পেপার ও এ-ফোর পেপার। এসব কাগজ আগে ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। এর আগে দেশে এ ধরনের পরিবেশবান্ধব কাগজের উৎপাদন ছিল না। বর্তমানে প্রতিষ্ঠানটি আরো বেশ কয়েক ধরনের কাগজ উৎপাদন করছে, যা আগে ছিল পুরোপুরি আমদানিনির্ভর। এতে একদিকে যেমন বিদেশি কাগজের ওপর নির্ভরতা কমেছে, তেমনি প্রচুর বৈদেশিক মুদ্রাও সাশ্রয় হচ্ছে। দেশে কাগজ উৎপাদনে দ্বিতীয় স্থানে রয়েছে টি কে পেপার প্রডাকশন লিমিটেড। এ ছাড়া উল্লেখযোগ্য পরিমাণ কাগজ উৎপাদন করছে সোনালি পেপার মিলস লিমিটেড, ইউনুস পেপার মিলস লিমিটেড ও ক্যাপিটাল বোর্ড মিলস লিমিটেডসহ আরো বেশ কয়েকটি প্রতিষ্ঠান।
সর্ববৃহৎ কাগজ উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠান বসুন্ধরা গ্রুপের কাগজ কারখানাগুলোয় আধুনিক মেশিনে তৈরি হচ্ছে সব ধরনের উন্নতমানের কাগজ ও কাগজজাত পণ্য। এসবের মধ্যে রয়েছে ফেসিয়াল টিস্যু, পকেট টিস্যু, টয়লেট টিস্যু, ন্যাপকিন পেপার, কিচেন টাওয়েল, ক্লিনিক্যাল বেডশিট, হোয়াইট প্রিন্টিং ও রাইটিং পেপার, লাইনার ও মিডিয়া পেপার, স্যানিটারি ন্যাপকিন, বিড়ি ও সিগারেট পেপার, এমজি পোস্টার পেপার, অফসেট পেপার, নিউজপ্রিন্ট পেপার, এ-ফোর পেপার, স্টিফেনার, অ্যালু-ফয়েল পেপার, কার্বনলেস পেপার, আর্ট পেপার, কোটেড ও আনকোটেড বোর্ডসহ অনেক ধরনের কাগজ।
বেসরকারি খাতের উদ্যোক্তারা জানান, বর্তমানে দেশের কাগজকলে উৎপাদিত কাগজ দিয়ে স্থানীয় চাহিদা পুরোপুরি পূরণ করা সম্ভব। দেশের চাহিদা মিটিয়ে এসব কাগজ এখন বিদেশেও রপ্তানি হচ্ছে। তবে বিশ্ব বাজারে প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে হলে কাগজ রপ্তানিতে দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোকে নগদ সহায়তা দেওয়া প্রয়োজন বলে মনে করছেন উদ্যোক্তারা।
বসুন্ধরা গ্রুপের উপব্যবস্থাপনা পরিচালক মোহাম্মদ মোস্তাফিজুর রহমান কালের কণ্ঠকে বলেন, 'দেশে কাগজের মোট চাহিদা পূরণে বসুন্ধরা পেপার মিলস উল্লেখযোগ্য ভূমিকা পালন করছে। বর্তমানে এর বার্ষিক উৎপাদন এক লাখ ২০ হাজার মেট্রিক টন এবং ভবিষ্যতে এর উৎপাদন আরো বাড়ানোর চিন্তা-ভাবনা রয়েছে। এরই মধ্যে বসুন্ধরার কাগজ প্রতিবেশী ভারতসহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে রপ্তানি হচ্ছে।' তবে রপ্তানির এ ধারা অব্যাহত রাখতে এ খাতে নগদ সহায়তার দাবি জানান তিনি।
দেশীয় কাগজের বর্তমান সংকট সম্পর্কে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে বিদেশ থেকে একটি চক্র প্রতিবছরই বিপুল পরিমাণ কাগজ আমদানি করছে। হার্ড টিস্যু নামে আমদানি করছে নানা ধরনের ন্যাপকিন, ফেসিয়াল টিস্যু ও টয়লেট টিস্যু। এতে সরকার যেমন রাজস্ব হারাচ্ছে, তেমনি দেশের অভ্যন্তরীণ বাজারে প্রতিযোগিতার মুখে পড়েছে কাগজ উৎপাদনকারী দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলো। তা ছাড়া একই শুল্কে মিশ্র বোর্ড আমদানির ফলে স্থানীয় মিলগুলো বাজারে টিকতে পারছে না।' যেকোনো ধরনের কাগজ আমদানিতে বন্ডেড সুবিধা রহিত করার জোর দাবি জানান তিনি।
কাগজ শিল্পের বর্তমান সংকট সম্পর্কে মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, নানা প্রতিকূলতার মধ্যে এগিয়ে যাচ্ছে দেশের কাগজকলগুলো। বিশ্ব বাজারে অসম প্রতিযোগিতা এবং দেশে পর্যাপ্ত কাঁচামালের অভাব থাকা সত্ত্বেও দেশীয় প্রতিষ্ঠানগুলোর উৎপাদন থেমে নেই। তবে সরকারের সঠিক নজরদারির অভাবে কোণঠাসা হয়ে পড়ছে দেশীয় কাগজকলগুলো। উদ্বৃত্ত থেকে যাচ্ছে লাখ লাখ টন কাগজ। এ কারণে বড় ধরনের ক্ষতির আশঙ্কা করছেন এ খাতের উদ্যোক্তারা। এ বিষয়ে সরকারের এখনই পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন বলে তিনি মন্তব্য করেন।
বাংলাদেশ পেপার মার্চেন্ট অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিএমএ) সভাপতি আকরাম হোসেন কালের কণ্ঠকে বলেন, বর্তমানে অনেক ধরনের কাগজ দেশে তৈরি হচ্ছে। তিনি আরো বলেন, আমদানির ক্ষেত্রে বন্ডেড ওয়্যারহাউসের মাধ্যমে কাগজ আমদানি করে দেশের বাজারে বিক্রি করা বন্ধ করতে সরকারের দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। একই সঙ্গে দেশে উৎপাদিত কাগজের মূল্য নির্ধারণেও সরকারের একটি নীতিমালা তৈরি করতে হবে। নইলে দেশের কাগজের বাজারে অস্থিরতা দেখা দিতে পারে।
No comments