ভারতীয় ভিসা জটিলতা-এই ভোগান্তি দূর করুন
ভারত আমাদের বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশ। অভিন্ন ঐতিহ্যের অধিকারী হওয়ায় আমাদের দেশ দুটির মধ্যে মাটির টান বা নাড়ির টান অনেক বেশি। এক দেশে অপর দেশের নাগরিকদের বহু আত্মীয়-স্বজন রয়েছে। তীর্থ বা ধর্মীয় যোগাযোগ রয়েছে। চিকিৎসা, ব্যবসা-বাণিজ্য, পর্যটনসহ নানা উপলক্ষেই বহু মানুষকে দুটি দেশের মধ্যে আসা-যাওয়া করতে হয়। কিন্তু অতিসম্প্রতি ভারতীয় ভিসা নিয়ে যে ধরনের জটিলতা সৃষ্টি হয়েছে, তাতে ভিসাপ্রত্যাশীদের ভোগান্তি
চরমে পেঁৗছেছে। বর্তমানে অনলাইনে ভারতীয় ভিসার জন্য আবেদন করতে হয়। এ জন্য অনলাইনে প্রথমে ভিসার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তারিখ নিতে হয় এবং রাত সাড়ে ১২টার পর থেকে প্রতিদিনের এই প্রক্রিয়া শুরু হয়। গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠে প্রকাশিত প্রতিবেদন থেকে জানা যায়, অনেকের অনেক জরুরি প্রয়োজন থাকার পরও তাঁরা অনলাইনে ভিসার আবেদনপত্র জমা দেওয়ার তারিখই পান না। দেখা যায়, অল্প সময়ের মধ্যেই দিনের নির্ধারিত কোটা শেষ হয়ে যায়। আবার যাঁরা পরিবার নিয়ে যেতে চান, তাঁদের বিপত্তি আরো বেশি। দেখা যায়, তাঁদের একজন তারিখ পেলেও অন্য জন তারিখ পান না। অনেকে তখন বাধ্য হয়ে দালালের আশ্রয় নেন এবং অনেক বেশি অর্থ খরচ করে ভিসা সংগ্রহ করেন। অভিযোগ আছে, দালালদের সঙ্গে ভারতীয় হাইকমিশনের একশ্রেণীর কর্মকর্তা ও কর্মচারীর সখ্য রয়েছে, তাঁরাই তারিখ পেতে সহায়তা করে থাকেন।
ভারত শুধু বৃহত্তম প্রতিবেশী দেশই নয়, সার্কভুক্ত একটি দেশও। যেখানে সার্কভুক্ত দেশগুলোর নাগরিকদের অন্যতম দাবি হচ্ছে, সার্কভুক্ত দেশগুলোতে অবাধে চলাচলের অধিকার প্রতিষ্ঠা, সেখানে ভারতীয় ভিসাপ্রাপ্তিতে এ ধরনের জটিলতা বৃদ্ধি পাওয়া সত্যিই দুর্ভাগ্যজনক। শুধু সার্কের বিভিন্ন ফোরামেই নয়, দুই দেশের সর্বোচ্চ পর্যায়ের বিভিন্ন বৈঠকেও ভিসা পদ্ধতি সহজ করার বিষয়টি বহুবার আলোচিত হয়েছে। ভারত একাধিকবার ভিসা পদ্ধতি আরো সহজ করার আশ্বাসও দিয়েছে। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে উল্টোটা। এটি কোনোভাবেই কাম্য নয়।
১৯৪৭ সালে দেশ বিভাগের আগ পর্যন্ত দুটি ভূখণ্ড একই রাষ্ট্রীয় সীমারেখায় ছিল। ফলে দুটি ভূখণ্ডেই দীর্ঘকাল ধরে সৃষ্টি হয়েছে একটি অভিন্ন ঐতিহ্য, এটিকে কোনোভাবেই অস্বীকার করা যাবে না। যে মাটিতে জন্ম সেই মাটির টানে কিংবা স্বজনদের টানে যেমন চলে দুই দেশের নাগরিকদের এই আসা-যাওয়া, তেমনি লাঙ্গলবন্দের স্নান, সুন্দরবনের রাস-পূর্ণিমা, চন্দ্রকান্তের মন্দির পরিদর্শন, আজমির শরিফ জিয়ারতসহ ধর্মীয় কারণেও চলে এই আসা-যাওয়া। অন্যদিকে ভারতের চিকিৎসাব্যবস্থা অপেক্ষাকৃত উন্নত হওয়ায় অনেকে অতীতে ভারতে চিকিৎসা নিতে গিয়েছেন। বর্তমানে চিকিৎসার ফলো-আপের জন্যও অনেকে বাধ্য হন ভারতে যেতে। আর প্রাকৃতিক, ঐতিহাসিক ও অন্যান্য দর্শনীয় স্থান ভ্রমণ করা তো বর্তমান বিশ্বে মানুষের একটি মৌলিক অধিকার হিসেবেই গণ্য। ভারতীয় কর্তৃপক্ষের বাংলাদেশের মানুষের এই অধিকারকে গুরুত্ব না দেওয়াটা খুবই দুর্ভাগ্যজনক। ইউরোপীয় ইউনিয়ন বা আসিয়ানভুক্ত দেশগুলোর মধ্যে ভ্রমণের ক্ষেত্রে এ রকম অনাকাঙ্ক্ষিত ভিসা-জটিলতা নেই। আমাদের এবং ভারতের ভিসা পদ্ধতি যদি দিন দিন জটিলই হয়, তাহলে সার্ক নিয়ে এত আশা, এত আলোচনার কোনো অর্থ থাকে কি?
No comments