শৈত্যপ্রবাহ-দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে হবে

কারো পৌষ মাস, কারো সর্বনাশ। পৌষ পড়তেই শুরু হয়েছে হাড়কাঁপানো শীত। ষড়ঋতুর দেশ বাংলাদেশ। কিন্তু জলবায়ুর পরিবর্তনজনিত কারণে এ দেশের ঋতুবৈচিত্র্যের গায়ে আঁচড় পড়েছে। প্রাকৃতিক বিপর্যয় যখন-তখন প্রকৃতির নিয়ম উপেক্ষা করে মানুষের ওপর ছোবল মারছে। ফলে শুধু যে মানুষই আক্রান্ত হচ্ছে তা-ই নয়, অনেক কিছুর পরিবর্তনও ঘটছে অত্যন্ত নির্দয়ভাবে। শীত মৌসুম শুরু হওয়ার আগে থেকে এ দেশে শীত শুরু হয়ে যায়, আবার এর


উল্টোটাও ঘটে। শীত পড়ছিল না, হঠাৎ একেবারে কাঁপানো শীত পড়ে গেল। কয়েক বছর ধরেই এমনটি পরিলক্ষিত হচ্ছে। আবহাওয়া কোনো স্বাভাবিক নিয়ম মানছে না এবং এই নিয়ম না মানার কুফল বহন করতে হচ্ছে বিশেষ করে দরিদ্র মানুষজনকে।
পত্রপত্রিকায় প্রকাশ, ইতিমধ্যে দেশে মাঝারি শৈত্যপ্রবাহ শুরু হয়েছে এবং ক্রমেই তা প্রকট হয়ে উঠতে পারে। পৌষের শুরুতেই হিমশীতল বাতাস এবং ঘন কুয়াশার চাদরে চারপাশ মুড়ে যাওয়ার এমন চিত্র অনেকটাই স্বাভাবিক হলেও এর মধ্যে আকস্মিকতা রয়েছে এবং মানুষ অপ্রস্তুত অবস্থার সম্মুখীন হয়েছে। দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে শীতের দাপটে এ পর্যন্ত তিনজনের প্রাণহানি ঘটেছে, যাঁরা সবাই নিম্নবিত্তের মানুষ। আমাদের অতীত অভিজ্ঞতা সুখকর নয়। গত বছরও শীতের দাপটে কিছু মানুষের প্রাণহানি ঘটেছিল এবং তাঁরাও প্রায় সবাই ছিলেন নিম্নবিত্তের। ১ পৌষ, ১৪১৮ তারিখে বয়ে যাওয়া মৃদু শৈত্যপ্রবাহ এক দিনের ব্যবধানে পরদিন মাঝারি শৈত্যপ্রবাহে রূপ নিয়েছে। শীতকালে কয়েক বছর ধরে মাত্রাতিরিক্ত শীতের প্রভাবে ডায়রিয়া, নিউমোনিয়াসহ নানা ধরনের রোগ দেখা দিচ্ছে এবং কখনো কখনো তা প্রকট রূপ নিচ্ছে। এবার এখন পর্যন্ত এর রূপ চরম হয়ে ওঠেনি; কিন্তু প্রকৃতির আলামত ভালো ঠেকছে না। শনিবার দেশের বিভিন্ন অঞ্চলে তাপমাত্রা ৯ থেকে ছয় ডিগ্রি সেলসিয়াসে নেমে এসেছিল। বিশেষজ্ঞদের অভিমত, এ মাত্রা আরো নেমে যেতে পারে। বাড়তে পারে নানা রকম ব্যাধি। শিশু ও বয়স্করাই এসব ব্যাধিতে বেশি আক্রান্ত হচ্ছেন। এ দেশের সিংহভাগ মানুষের বসবাস এখনো দারিদ্র্যসীমার অনেক নিচে। দরিদ্র জনগোষ্ঠীর পক্ষে উপযুক্ত শীতবস্ত্র জোগাড় করা যেমন কষ্টসাধ্য, তেমনি যথাযথ চিকিৎসাসেবা পাওয়াও দুরূহ।
দেশের চিকিৎসাসেবা এখনো সিংহভাগ মানুষের কাছেই সহজলভ্য নয়। এ অবস্থায় সার্বিক পরিস্থিতি আমলে রেখে সরকারের তরফ থেকে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি। একই সঙ্গে দরিদ্রদের পাশে দাঁড়াতে হবে সরকারসহ সমাজের বিত্তবান শ্রেণীকে। 'মানুষ মানুষের জন্য'_এই বাক্যের মর্মবাণী উপলব্ধি করে মানবতাবোধে উজ্জীবিত হয়ে সমাজের সামর্থ্যবানরা যদি সরকারের সঙ্গে বিপন্নদের পাশে দাঁড়ান, তাহলে তাদের পক্ষে পরিত্রাণের পথ সন্ধান অনেকটাই সহজ হবে। এ দৃষ্টান্তও অজস্র আছে_এ দেশে যেকোনো প্রাকৃতিক দুর্যোগ-দুর্বিপাকে মানুষ মানুষের পাশে দাঁড়িয়েছে দ্বিধাহীনভাবে, যার যেটুকু সাধ্য আছে তা-ই নিয়ে। আর এর ফলে আক্রান্তরা উপকার লাভে সমর্থ হয়েছে। আশা করা যায়, এবারও এমনটির ব্যত্যয় ঘটবে না এবং শীতে আক্রান্ত দরিদ্র মানুষরা সবার সহযোগিতায় অমানবিকতা কাটিয়ে উঠতে সক্ষম হবে।

No comments

Powered by Blogger.