শিক্ষকদের পদোন্নতি-যথাসময়েই মূল্যায়ন হোক

কজন চাকরিজীবীর মেধা ও সৃজনশীলতাকে কাজে লাগানোর সবচেয়ে ভালো উপায় কী? ভালো প্রতিষ্ঠানের পরিচালকরা কর্মীদের প্রণোদনার জন্য আধুনিক ও যুগোপযোগী অনেক উপায় অবলম্বন করেন। চৌকস ও মেধাবী কর্মীদের জন্য বাড়তি আর্থিক সুবিধা বরাদ্দের ব্যবস্থা তো থাকেই, ভালো কাজ আদায়ের জন্য কর্তাদের সার্বক্ষণিক উৎসাহ-উদ্দীপনার ব্যবস্থাও থাকে। তবে, এসব ব্যবস্থার মধ্যে পদোন্নতিই সবচেয়ে উৎসাহব্যঞ্জক উদ্যোগ।


যোগ্য ব্যক্তির চাকরির সময়, কাজের দক্ষতা ও যোগ্যতা বিবেচনা করে পদোন্নতি দেওয়া শুধু প্রতিষ্ঠানের স্বার্থেই জরুরি নয়, চাকরিজীবীর প্রাপ্যও। ব্যক্তিমালিকানাধীন বেসরকারি প্রতিষ্ঠানগুলো কর্মীদের মূল্যায়ন-পুনর্মূল্যায়নের ক্ষেত্রে এখন অনেক তৎপর। প্রতিযোগিতামূলক বাজারে কাজের বাজারও বড়। তাই এ প্রক্রিয়া ছাড়া কর্মীদের ধরে রাখা মুশকিল। কিন্তু সরকারি প্রতিষ্ঠানগুলোতে মূল্যায়নের প্রক্রিয়া এখনও সন্তোষজনক নয়। শুধু মূল্যায়ন কেন, একজন কর্মীর কাছ থেকে ভালো কাজ আদায়ের পদ্ধতি সেখানে কতটা কার্যকর_ তা নিয়েও প্রশ্ন তোলা যায়। বেতন-ভাতার বাইরে কর্মীদের প্রণোদনা দেওয়ার কর্তৃপক্ষ কি আসলেই কাজ করে? ফলে, অনেক সরকারি প্রতিষ্ঠানই সন্তোষজনক ফল দেখাতে পারে না। এ প্রসঙ্গে দেশের সরকারি কলেজগুলোর উল্লেখ বেশ প্রাসঙ্গিক। সাধারণত মেধাবী শিক্ষার্থীরাই তীব্র প্রতিযোগিতামূলক পরীক্ষা দিয়ে বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারে যোগ দিতে পারেন। অন্য চাকরি না করে শিক্ষকতার পেশা বেছে নেওয়া ব্যক্তিটির মধ্যে দেশসেবার মহৎ উদ্দেশ্যও কাজ করে। তারা নিজেদের মেধা ও সৃজনশীলতা দিয়ে শিক্ষাকার্যে অংশগ্রহণ করেন। কিন্তু একবার কলেজে যোগদানের পর মেধা ও যোগ্যতার ভিত্তিতে তাদের মূল্যায়ন কি যথাসময়ে ঘটে? যথাসময়ে মূল্যায়নের প্রশ্ন তুলে রেখে যদি এ প্রশ্ন করা হয়, শিক্ষকদের মূল্যায়নের যথার্থ উপায় কি আছে? কোন শিক্ষক ক্লাসের পাঠদানে ভালো, কোন শিক্ষক গবেষণাকর্মে উৎসাহী, আর কার সাংগঠনিক যোগ্যতা আছে_ সে খবর রাখার কোনো ব্যবস্থা কি প্রত্যাশিত মাত্রায় কাজ করে? এসব বিবেচনার বাইরে শুধু সময়কাল বিবেচনায় যারা পদোন্নতি পেতে পারেন তাদের মূল্যায়নও যথাসময়ে হচ্ছে না বলেই খবর মিলছে। বিসিএস শিক্ষা ক্যাডারের প্রায় সাড়ে চার হাজার শিক্ষক এখন পদোন্নতির অপেক্ষায়। দীর্ঘদিন ধরে অনেকে পদোন্নতি থেকে বঞ্চিত। নানা ঠুনকো আমলাতান্ত্রিক যুক্তিতে পদোন্নতি আটকে রাখা হচ্ছে। ফলে, পদোন্নতি-বঞ্চিত একটি ব্যাচের পেছনে আরেকটি ব্যাচ এসে যুক্ত হচ্ছে। ধীরে ধীরে সেই জট দীর্ঘ হচ্ছে। শিক্ষার মতো গুরুত্বপূর্ণ একটি সেক্টরে এমন পরিস্থিতি কিছুতেই কাম্য নয়। দেশের সিংহভাগ শিক্ষার্থীর উচ্চশিক্ষার গতিপথ যারা নির্মাণ করেন তাদের বঞ্চিত রেখে ভালো পাঠদান আশা করা কঠিন। বর্তমানে উন্নত ও যুগোপযোগী নতুন শিক্ষানীতি বাস্তবায়নে সরকারের নানা তৎপরতা ক্রিয়াশীল। এই কর্মকাণ্ডের মধ্যে শিক্ষকদের বেতন-ভাতা, পদোন্নতিসহ বিভিন্ন সুযোগ-সুবিধাও আলোচিত হওয়া উচিত। শিক্ষকদের দিনের পর দিন বঞ্চিত করে শিক্ষামানের উন্নয়ন আশা করা যায় না। পদোন্নতি যাদের প্রাপ্য, তাদের যথাসময়েই তা দেওয়ার রীতি চালু করতে হবে। শিক্ষকদের প্রণোদনার জন্য আর্থিক সুবিধাই শুধু নয়, মানসিকভাবেও তাদের উৎসাহিত করার ব্যবস্থা থাকতে হবে। এ বিষয়ে যেসব প্রশাসনিক ও আইনগত সমস্যা আছে তা দ্রুত মিটিয়ে শিক্ষকদের পদোন্নতির প্রক্রিয়া শুরু হওয়া উচিত।

No comments

Powered by Blogger.