ভর্তি লটারির ড্র শুরু-সরকারি আট স্কুলে পরীক্ষা আজ by অভিজিৎ ভট্টাচার্য্য
রাজধানীর বিভিন্ন স্কুলে প্রথম শ্রেণীতে ভর্তির লটারির ড্র গতকাল শনিবার থেকে শুরু হয়েছে। প্রথম শ্রেণীর লটারিতে কোনো যন্ত্র ব্যবহার না করে অভিভাবকদের সামনে ড্র অনুষ্ঠিত হচ্ছে। প্রথম দিনে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজ ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুল অ্যান্ড কলেজে ভর্তি লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়। ভিকারুননিসার দুই শাখায় প্রথম শ্রেণীতে ৪১৪ জন ছাত্রী লটারিতে বিজয়ী হয়েছে। মতিঝিল আইডিয়ালে গতকাল ৬০ জন শিশুর ভাগ্য নির্ধারিত হয়েছে।
সকালে ভিকারুননিসার বেইলি রোডের মূল ক্যাম্পাসে ও মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলের মতিঝিল ক্যাম্পাসে লটারির ড্র চলাকালে একটি প্রবেশপত্রের বিপরীতে একজন অভিভাবক উপস্থিত থাকার সুযোগ পান। ভর্তি পরীক্ষার এ প্রক্রিয়াকে স্বাগত জানিয়ে অভিভাবকরা বলেন, নিরপেক্ষভাবে লটারি ড্র হওয়ায় তাঁরা সন্তুষ্ট। আনন্দঘন পরিবেশে প্রতিষ্ঠান দুটিতে ড্র অনুষ্ঠান শুরু হলেও কর্তৃপক্ষের অব্যবস্থাপনায় ভিকারুননিসা নূন স্কুলের লটারি-প্রক্রিয়া নিয়ে ক্ষোভ প্রকাশ করেছেন অভিভাবকরা। কড়া নিরাপত্তা নিশ্চিত করার নামে প্রতিষ্ঠানের বাড়াবাড়িতে অনেক অভিভাবককে লটারি-প্রক্রিয়ায় অংশগ্রহণ করতে দেওয়া হয়নি। এ কারণে দুপুরে অনেক অভিভাবক স্কুলের ৭ নম্বর ফটকের সামনে বিক্ষোভ করেন।
আইডিয়াল স্কুলের বিভিন্ন শাখার ভর্তির লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে টানা চার দিন। আর ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের বিভিন্ন শাখার প্রথম শ্রেণীর ভর্তির লটারি ড্র অনুষ্ঠিত হবে তিন দিন।
এদিকে আজ রবিবার থেকে রাজধানীর ২৪টি সরকারি স্কুলের দ্বিতীয় থেকে নবম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। চলবে ২০ ডিসেম্বর পর্যন্ত। আজ আটটি সরকারি স্কুলের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। রাজধানীর সরকারি মাধ্যমিক বিদ্যালয়গুলোর প্রথম শ্রেণীর লটারির ড্র আগামী ২৬ ও ২৭ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত হবে। সরকারি স্কুলগুলো প্রায় ৭০ হাজার ভর্তির আবেদন ফরম বিতরণ করেছে।
বাংলাদেশ ব্যাংক ভিকারুননিসা নূন স্কুলে এবারের লটারি কার্যক্রমে সহায়তা করছে। লটারি কার্যক্রমে স্বচ্ছতা আনার জন্য ম্যানুয়াল পদ্ধতি ব্যবহার করা হচ্ছে। এ ছাড়া সিরিয়াল নম্বরের পাশে আলাদা করে কোড নম্বর দেওয়া হয়েছে। গতকাল লটারি কার্যক্রমের উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে স্বাগত বক্তব্য দেন কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগম। অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি ছিলেন ঢাকা মাধ্যমিক ও উচ্চ মাধ্যমিক শিক্ষা বোর্ডের চেয়ারম্যান ফাহিমা খাতুন। সভাপতিত্ব করেন কলেজের এডহক কমিটির চেয়ারম্যান ও জেলা প্রশাসক মুহিবুল হক। তিনি ছাত্রী ভর্তি করানোর আশায় বাইরে কাউকে টাকা দিয়ে প্রতারিত না হওয়ার জন্য অভিভাবকদের প্রতি আহ্বান জানান।
গতকাল সকাল ১০টায় মতিঝিল আইডিয়াল স্কুলে লটারি অনুষ্ঠানের উদ্বোধন করেন স্থানীয় সংসদ সদস্য ও পরিচালনা পরিষদের সভাপতি রাশেদ খান মেনন। অনুষ্ঠানে সভাপতিত্ব করেন প্রতিষ্ঠানের অধ্যক্ষ ড. শাহান আরা বেগম। বিশেষ অতিথি ছিলেন প্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পরিষদের সদস্য ও মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার। স্কুলটিতে প্রথমবারের মতো লটারি পদ্ধতিতে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হচ্ছে।
প্রথম দিন আইডিয়াল স্কুলের মূল ক্যাম্পাসে বালিকা গ্রুপে ভর্তীচ্ছু শিশুদের লটারির ড্র হয়েছে। এ শাখায় মোট ১০০ শিশুকে ভর্তি করা হবে। এর মধ্যে ৪০ ভাগ মতিঝিল কলোনি কোটার এবং ৬০ ভাগ উন্মুক্ত। সকালে একে একে ৬০ শিশুর ভাগ্য নির্ধারণ করেন তাদের অভিভাবকরা। ফলে লটারি প্রক্রিয়া নিয়ে কেউ সন্দেহ ও ক্ষোভ প্রকাশ করেননি। যারা লটারিতে বিজয়ী হয়েছে তাদের নাম তাৎক্ষণিকভাবে কয়েকটি বড় পর্দায় প্রদর্শন করা হয়। বিকেলে পুরো তালিকা স্কুলের দেয়ালে টানিয়ে দেওয়া হয়। ৬০ জনের পাশাপাশি ১০ জনের অপেক্ষমাণ তালিকাও টানানো হয়।
আইডিয়াল স্কুলে ভর্তির লটারিতে বিজয়ী সুমাইয়া খুরশীদ হীরার (রোল ৪৯৭২) বাবা খুরশীদ আলম তাৎক্ষণিক প্রতিক্রিয়ায় লটারি কার্যক্রমে সন্তোষ প্রকাশ করে বলেন, 'লটারি পদ্ধতি খুবই ভালো ও স্বচ্ছ হয়েছে।' প্রকাশ্যে লটারি অনুষ্ঠিত হওয়ায় যারা বিজয়ী হয়নি তাদের অভিভাবকরাও সন্তোষ প্রকাশ করেছেন। লটারিতে বিজয়ী না হওয়া এক অভিভাবক (ধানমণ্ডির) সামিনা ইসলাম বলেন, 'আমার মেয়ে লটারিতে ভর্তির সুযোগ পায়নি। কিন্তু প্রক্রিয়া স্বচ্ছ হওয়ায় আমার কোনো ক্ষোভ বা দুঃখ নেই।'
ম্যানুয়ালি ও প্রকাশ্যে লটারি আয়োজনের বিষয়ে মতিঝিল থানা আওয়ামী লীগের সভাপতি গোলাম আশরাফ তালুকদার বলেন, মানুষ যেটা চোখে দেখতে পায় না, সেটা নিয়ে সন্দেহ পোষণ করে। কিন্তু যেটা দেখতে পায় সেটা সম্পর্কে ভালো ও স্বচ্ছ ধারণা পোষণ করে। এ জন্যই লটারির আয়োজন।
আজ রবিবার সকাল ১০টায় মতিঝিল আইডিয়ালের মূল শাখায় বালক, দুপুর ২টায় ইংলিশ ভার্সন বালক এবং সাড়ে ৪টায় কলোনি বালক কোটা গ্রুপের লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে। আগামীকাল সোমবার ১০টায় বনশ্রী শাখার বালিকা এবং দুপুর ২টায় একই শাখার বালকদের লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে। আর মঙ্গলবার একই সময়ে যথাক্রমে মুগদা শাখার বালক ও বালিকাদের লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হবে। অন্যান্য শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে ২৩ ও ২৪ ডিসেম্বর।
গতকাল ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ধানমণ্ডি প্রভাতী শাখায় ভর্তীচ্ছু শিশুদের লটারির মধ্য দিয়ে তিন দিনব্যাপী কার্যক্রম শুরু হয়েছে। গতকাল সকাল ৮টা থেকে ১১টা পর্যন্ত ধানমণ্ডি প্রভাতী, সাড়ে ১১টা থেকে দেড়টা পর্যন্ত ধানমণ্ডি দিবা, দুপুর ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত আজিমপুর প্রভাতী, সাড়ে ৪টা থেকে সাড়ে ৬টা নাগাদ আজিপুর দিবা শাখার লটারির ড্র অনুষ্ঠিত হয়।
গতকাল সকাল থেকে দুপুর পর্যন্ত ভিকারুননিসা নূন স্কুলের ৭ নম্বর ফটকের সামনে অসংখ্য অভিভাবক ভিড় করে ছিলেন। লটারির ড্র অনুষ্ঠান স্থলে প্রায় এক হাজার অভিভাবকের বসার চেয়ার রাখা হলেও মাত্র শতাধিক শিক্ষক ও অভিভাবককে বসে থাকতে দেখা গেছে। লটারি অনুষ্ঠানে অংশগ্রহণ করতে না পারা অভিভাবক আবদুর রহিম ক্ষোভ প্রকাশ করে বলেন, 'আমার মেয়েকে ভর্তির জন্য ৬০০ টাকা দিয়ে লটারির ফরম কিনেছি। অথচ আমাকে ক্যাম্পাসে ঢুকতে দেওয়া হচ্ছে না।'
লটারিতে বিজয়ীদের সুর ছিল অন্যরকম। ধানমণ্ডি শাখার ছাত্রীদের বোনের কোটার লটারির নাম ঘোষণার সময় মাত্র একজন অভিভাবক (মঈনউদ্দিন আহমেদ) অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন। লটারি বিজয়ী ছাত্রী মায়িশা নাহিয়ান ইসলামের (কোড নং-০৫) বাবা মঈনউদ্দিন আহমেদ বলেন, 'আমি লটারি প্রক্রিয়ায় খুশি। কারণ আমার এক মেয়ে এ স্কুলে সপ্তম শ্রেণীতে পড়ে। এখন আরেক মেয়ে ভর্তির সুযোগ পেয়েছে।' লটারিতে এ কোটার মোট সাতজন বিজয়ীর নাম ঘোষণা করা হয়। এ স্কুলে ধানমণ্ডি শাখায় প্রভাতীতে ৭৮ জন ও দিবায় ৭৭ জন বিজয়ী হয়েছে। আজিমপুর শাখায় প্রভাতীতে ১৩০ ও দিবায় ১২৯ জন বিজয়ী হয়েছে।
স্কুলের কয়েকজন শিক্ষিকা জানান, 'যারা লটারিতে অংশ নিতে ভর্তির ফরম আনেনি কিংবা ফটোকপি এনেছে নিরাপত্তার স্বার্থে তাদের স্কুল ক্যাম্পাসে প্রবেশ করতে দেওয়া হচ্ছে না।'
দ্বিতীয়বারের মতো লটারি আয়োজনের বিষয়ে জানতে চাইলে ভিকারুননিসা নূন স্কুল অ্যান্ড কলেজের অধ্যক্ষ মঞ্জু আরা বেগম বলেন, অত্যন্ত সুন্দর ও স্বচ্ছ প্রক্রিয়ায় লটারি অনুষ্ঠিত হচ্ছে। লটারি নিয়ে কেউ কোনো আপত্তি করেননি। তিনি জানান, এবার মোট এক হাজার ৪৯৪ আসনে শিক্ষার্থী ভর্তি করা হবে। সকালের দিকে কিছু অভিভাবক প্রক্রিয়াটি সম্পর্কে না জেনে হৈচৈ করেছিলেন। পরে বেলা বাড়ার সঙ্গে সঙ্গে বিষয়টি সম্পর্কে ধারণা পাওয়ায় তাঁরা আর হৈচৈ করেননি।
ভিকারুননিসা নূন স্কুলে আজ রবিবার মূল ক্যাম্পাসেই ৮টা থেকে ১১টা বসুন্ধরা শাখার প্রভাতী, সাড়ে ১১টা থেকে ২টা পর্যন্ত বসুন্ধরা শাখার দিবা, ৩টা থেকে সাড়ে ৫টা পর্যন্ত ইংলিশ ভার্সন; আগামীকাল সোমবার সকাল ৮টা থেকে ১২টা মূল শাখার প্রভাতী এবং ১টা থেকে ৫টা পর্যন্ত মূল শাখার দিবার লটারি ড্র অনুষ্ঠিত হবে।
উল্লেখ্য, প্রথম বছর (২০১০ সালে) বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের বিশেষজ্ঞরা কম্পিউটারের মাধ্যমে এ প্রক্রিয়া সম্পন্ন করেন। এবার ম্যানুয়াল পদ্ধতিতে লটারি হচ্ছে।
সরকারি স্কুলের ভর্তি : আজ রবিবার থেকে রাজধানীর ২৪টি সরকারি স্কুলের দ্বিতীয়-নবম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা শুরু হচ্ছে। এবার ভর্তি পরীক্ষায় প্রায় ৭০ হাজার আবেদন ফরম বিতরণ করা হয়েছে। সরকারি স্কুলের ভর্তি পরীক্ষার জন্য ২৪টি স্কুলকে 'ক', 'খ' ও 'গ'_এই তিনটি গ্রুপে ভাগ করা হয়। আজ 'ক' গ্রুপের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। সকাল ১০টা থেকে ২টা পর্যন্ত দ্বিতীয় থেকে চতুর্থ শ্রেণীর এবং বেলা ২টা থেকে ৪টা পর্যন্ত পঞ্চম থেকে নবম শ্রেণীর ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে। মাধ্যমিক ও উচ্চ শিক্ষা অধিদপ্তরের (মাউশি) উপপরিচালক ড. সাধন কুমার বিশ্বাস গতকাল শনিবার সন্ধ্যায় কালের কণ্ঠকে এসব তথ্য জানান। তিনি বলেন, ১৯ ডিসেম্বর 'খ' এবং ২০ ডিসেম্বর 'গ' গ্রুপের ভর্তি পরীক্ষা অনুষ্ঠিত হবে।
মাউশির তথ্য মতে, 'ক' গ্রুপের স্কুলগুলোর মধ্যে রয়েছে গভর্নমেন্ট ল্যাবরেটরি হাইস্কুল, তেজগাঁও সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, খিলগাঁও বালক সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নবাবপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, নিউ গভর্নমেন্ট গার্লস হাই স্কুল, ইসলামিয়া সরকারি উচ্চ বিদ্যালয় ও ধানমণ্ডি কামরুননেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
'খ' গ্রুপের তালিকায় রয়েছে গভর্নমেন্ট মুসলিম হাইস্কুল, বাংলাবাজার সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, মতিঝিল সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, নারিন্দা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শেরে বাংলানগর সরকারি বালক উচ্চ বিদ্যালয়, সরকারি বিজ্ঞান কলেজ সংযুক্ত হাইস্কুল, ধানমণ্ডি সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও মোহাম্মদপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়।
'গ' গ্রুপের আটটি স্কুল হলো গণভবন সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, মিরপুর সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, ঢাকা কলেজিয়েট স্কুল, তেজগাঁও সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়, ধানমণ্ডি গভর্নমেন্ট বয়েজ হাই স্কুল, আরমানিটোলা সরকারি উচ্চ বিদ্যালয়, শেরেবাংলানগর সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয় ও টিকাটুলী কামরুনন্নেসা সরকারি বালিকা উচ্চ বিদ্যালয়।
No comments