স্বীকৃতির অপেক্ষায় ৪০ বছর by প্রনীত রঞ্জন দেবনাথ
প্রভা রানী মালাকারকে এলাকার কিছু মানুষ ব্যঙ্গ করে এখনও পাঞ্জাবির বউ বলে ডাকে। মহান মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে তাকে মায়ের সামনে থেকে ধরে নিয়ে স্থানীয় রাজাকাররা তুলে দেয় পাকিস্তানি আর্মির হাতে। সে সময়ের ১৬ বছরের প্রভা রানীকে দু'বার রাজাকার ও পাঞ্জাবিদের হাতে গণধর্ষণের শিকার হতে হয়। তার বাড়ি মৌলভীবাজারের কমলগঞ্জ উপজেলার মুন্সীবাজার ইউনিয়নের মির্জানগর গ্রামে। স্বাধীনতার ৪০ বছর পরও এ হতভাগ্য নারীর ভাগ্যে
জোটেনি বীরাঙ্গনার স্বীকৃতি। পাননি কোনো সরকারি সাহায্য-সহযোগিতা। তার ছেলেকে মানুষ জারজ হিসেবে চেনে। অথচ কেউ কোনোদিন খোঁজ করেনি কেমন আছেন স্বামীহারা বীরাঙ্গনা প্রভা রানী মালাকার। ভাঙা কুঁড়েঘরে থেকে দু'বেলা দু'মুঠো ভাতের জন্য গ্রামে গ্রামে ফেরি করেন এই নারী। তার একমাত্র ছেলে কাজল মালাকার রিকশা চালান। স্থানীয় ভূমিখেকোদের কারণে দখল হয়ে যাচ্ছে স্বামীর রেখে যাওয়া শেষ ভিটামাটিও।
কমলগঞ্জের মির্জানগর গ্রামে তার বাড়ি গেলে তিনি প্রথমে কিছু বলতে রাজি হননি। পরে অবশ্য কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার করুণ কাহিনী বর্ণনা করেন। ৪০ বছর আগের সঠিক দিন-তারিখ তার মনে নেই। তারপরও অবলীলায় বললেন, বৈশাখ মাসে তার বিয়ে হয়, শ্রাবণ মাসে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তখন স্বামী কামিনী রাম মালাকার চলে যান ভারতে। প্রভা রানী চলে যান বাবার বাড়ি পাশের গ্রাম বিক্রমকলসে। দিন পনের পর বিক্রমকলস গ্রামের রাজাকার নজির মিয়া ও জহুর মিয়া একদিন গোধূলি লগ্নে প্রভা রানীকে তার মায়ের সামনে থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী বাদল মাস্টারের বাড়ি। সে রাতে বাদল মাস্টারের বাড়ি অবস্থান নেওয়া পাক আর্মিরা কেড়ে নেয় তার সম্ভ্রম। পরদিন সকালে আর্মি তাকে ছেড়ে দিলে তিনি আশ্রয় নেন তার বোনের বাড়ি জাঙ্গালহাটি গ্রামে। সেখানে ক'দিন আত্মগোপন করে থাকেন। কিন্তু ২০-২৫ দিন পর রাজাকার কাদির, রইছ, ইনতাজ ও জহুর আবার তার সন্ধান পেয়ে যায়। যেদিন রাজাকাররা জাঙ্গালহাটিতে প্রভার বোনের বাড়ি হানা দেয়, সেদিন নিজেকে রক্ষার জন্য প্রভা ধানের বীজের জমির আইলের নিচে আশ্রয় নেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রাজাকার ইনতাজ, জহুর, রইছ ও কাদির সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে আসে। এরপর প্রভা রানীকে নিয়ে আসা হয় শমশেরনগর ডাকবাংলোয়। যেখানে ছিল পাক আর্মিদের ক্যাম্প। সারারাত পাক আর্মিরা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। নিজেকে বাঁচানোর সব চেষ্টা করেও তিনি রক্ষা পাননি। প্রভা জানান, এক সময় জয় বাংলা হয় দেশে। অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হয়। তখন তার স্বামী ভারত থেকে দেশে এসে তাকে বাড়ি আনতে গেলে তিনি আসতে রাজি হননি। সবকিছু খুলে বলেন স্বামীর কাছে। উত্তরে স্বামী বলেছিলেন, 'তোমার মতো হাজার হাজার নারী সম্ভ্রম দিয়েছে দেশের জন্য। তুমি তাদের একজন। আমার কোনো দুঃখ নেই।' । দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছর পর তার ছেলের জন্ম হয়। কিন্তু সে ছেলেকে আজ এক ধরনের নরপশুরা পাঞ্জাবির ছেলে বলে ডাকে। আক্ষেপ করে প্রভা বলেন, এলাকায় মুখ দেখানো যায় না। তার ছেলে কাজল মালাকার পেশায় একজন রিকশাচালক। তাকে কটাক্ষ করে লোকে । ৪০ বছরে েেকউ খোঁজ নেয়নি। বীরাঙ্গনার স্বীকৃতিও মেলেনি আজও। উল্টো নানা হয়রানি ও কটূক্তি সহ্য করে চলেছেন।
কমলগঞ্জের মির্জানগর গ্রামে তার বাড়ি গেলে তিনি প্রথমে কিছু বলতে রাজি হননি। পরে অবশ্য কান্নাজড়িত কণ্ঠে তার করুণ কাহিনী বর্ণনা করেন। ৪০ বছর আগের সঠিক দিন-তারিখ তার মনে নেই। তারপরও অবলীলায় বললেন, বৈশাখ মাসে তার বিয়ে হয়, শ্রাবণ মাসে শুরু হয় মুক্তিযুদ্ধ। তখন স্বামী কামিনী রাম মালাকার চলে যান ভারতে। প্রভা রানী চলে যান বাবার বাড়ি পাশের গ্রাম বিক্রমকলসে। দিন পনের পর বিক্রমকলস গ্রামের রাজাকার নজির মিয়া ও জহুর মিয়া একদিন গোধূলি লগ্নে প্রভা রানীকে তার মায়ের সামনে থেকে জোর করে তুলে নিয়ে যায় পার্শ্ববর্তী বাদল মাস্টারের বাড়ি। সে রাতে বাদল মাস্টারের বাড়ি অবস্থান নেওয়া পাক আর্মিরা কেড়ে নেয় তার সম্ভ্রম। পরদিন সকালে আর্মি তাকে ছেড়ে দিলে তিনি আশ্রয় নেন তার বোনের বাড়ি জাঙ্গালহাটি গ্রামে। সেখানে ক'দিন আত্মগোপন করে থাকেন। কিন্তু ২০-২৫ দিন পর রাজাকার কাদির, রইছ, ইনতাজ ও জহুর আবার তার সন্ধান পেয়ে যায়। যেদিন রাজাকাররা জাঙ্গালহাটিতে প্রভার বোনের বাড়ি হানা দেয়, সেদিন নিজেকে রক্ষার জন্য প্রভা ধানের বীজের জমির আইলের নিচে আশ্রয় নেন। কিন্তু শেষ রক্ষা হয়নি। রাজাকার ইনতাজ, জহুর, রইছ ও কাদির সেখান থেকে তাকে ধরে নিয়ে আসে। এরপর প্রভা রানীকে নিয়ে আসা হয় শমশেরনগর ডাকবাংলোয়। যেখানে ছিল পাক আর্মিদের ক্যাম্প। সারারাত পাক আর্মিরা তাকে পালাক্রমে ধর্ষণ করে। নিজেকে বাঁচানোর সব চেষ্টা করেও তিনি রক্ষা পাননি। প্রভা জানান, এক সময় জয় বাংলা হয় দেশে। অর্থাৎ দেশ স্বাধীন হয়। তখন তার স্বামী ভারত থেকে দেশে এসে তাকে বাড়ি আনতে গেলে তিনি আসতে রাজি হননি। সবকিছু খুলে বলেন স্বামীর কাছে। উত্তরে স্বামী বলেছিলেন, 'তোমার মতো হাজার হাজার নারী সম্ভ্রম দিয়েছে দেশের জন্য। তুমি তাদের একজন। আমার কোনো দুঃখ নেই।' । দেশ স্বাধীন হওয়ার এক বছর পর তার ছেলের জন্ম হয়। কিন্তু সে ছেলেকে আজ এক ধরনের নরপশুরা পাঞ্জাবির ছেলে বলে ডাকে। আক্ষেপ করে প্রভা বলেন, এলাকায় মুখ দেখানো যায় না। তার ছেলে কাজল মালাকার পেশায় একজন রিকশাচালক। তাকে কটাক্ষ করে লোকে । ৪০ বছরে েেকউ খোঁজ নেয়নি। বীরাঙ্গনার স্বীকৃতিও মেলেনি আজও। উল্টো নানা হয়রানি ও কটূক্তি সহ্য করে চলেছেন।
No comments