মহাসড়কে চাঁদাবাজি খুন ডাকাতি ভয়াবহ রূপ নিয়েছে-বেপরোয়া একশ্রেণীর হাইওয়ে পুলিশ॥ বন্ধের দাবিতে ধর্মঘটের ডাক by শংকর কুমার দে

দেশের মহাসড়কগুলোতে চাঁদাবাজি, খুন, ছিনতাই, ডাকাতি ভয়াবহ রূপ ধারণ করেছে। বেপরোয়া হয়ে উঠেছে হাইওয়ে পুলিশের দুর্নীতিবাজরা। চাঁদা দিতে অস্বীকৃতি জানালে মহাসড়কগুলোতে চলাচলকারী পণ্য পরিবহনের বিরুদ্ধে বিভিন্ন ধারায় মামলা দিয়ে জরিমানা আদায়সহ হয়রানি করা হচ্ছে।


রমজান মাস সামনে চলে আসায় পরিস্থিতি আরও ভয়াবহ আকার ধারণের আশঙ্কা করা হচ্ছে। এই অবস্থায় আগামী ১১ জুলাই শ্রমিক ঐক্য পরিষদ হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজি বন্ধসহ ১৪ দফা দাবিতে পণ্য পরিবহনে ধর্মঘট ডেকেছেন। এ খবর সংশ্লিষ্ট সূত্রের।
নামেই হাইওয়ে পুলিশ। হাইওয়ে পুলিশের কাজ করে জেলা পুলিশ। দেশের মহাসড়কগুলোর মাত্র ৪০ ভাগ এলাকায় দায়িত্ব পালন করে হাইওয়ে পুলিশ। আর ৬০ ভাগ এলাকায় দায়িত্ব পালন করে জেলা পুলিশ। এসব অভিযোগ উঠেছে হাইওয়েতে দায়িত্ব পালনরত পুলিশের বিরুদ্ধেই।
দেশের বিভিন্ন সড়ক-মহাসড়কে হাইওয়ে পুলিশের চাঁদাবাজির ঘটনা বেপরোয়া রূপ ধারণ করেছে। দফায় দফায় প্রশাসনের সঙ্গে বৈঠক করার পরও এ অবস্থার কোন উন্নতি হয়নি। অসহনীয় পর্যায়ে পৌঁছেছে মালবাহী ট্রাক-কাভার্ডভ্যানে চাঁদাবাজি। এর সঙ্গে যুক্ত হয়েছে মহাসড়কে ডাকাতি, ছিনতাই ও খুনের ঘটনা। পুলিশের হাইওয়ে বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, গত এক মাসে ৩০টি রডবাহী ট্রাকসহ ৫০টি গাড়ি ও ৬০টি বিভিন্ন পণ্যবাহী ট্রাক ছিনতাই হয়েছে। এসব ঘটনায় থানায় মামলা হলেও তদন্তে কোন অগ্রগতি নেই। পুলিশের প্রত্যক্ষ ও পরোক্ষ মদদে অপরাধীরা বেপরোয়া হয়ে উঠেছে বলে হাইওয়ে চলাচলকারী পরিবহন মালিকদের অভিযোগ। এসব অভিযোগের পর প্রশাসনের সঙ্গে একাধিকবার বৈঠক হয়েছে। আশ্বাসও মিলেছে। কিন্তু ওই পর্যন্তই। এই পরিস্থিতিতে ধর্মঘটে যাচ্ছে পণ্য পরিবহনের মালিকরা।
বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ ১৪ দফা দাবি আদায়ে ১১ জুলাই সকাল ৬টা থেকে পণ্য পরিবহন ধর্মঘট ডেকেছে। ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদ এক সাংবাদ সম্মেলন করে পণ্য পরিবহনের ধর্মঘট ডেকেছে।
হাইওয়ে পুলিশের একটি সূত্র বলেছে, মহাসড়কের সব এলাকায় দায়িত্ব পালন করে না হাইওয়ে পুলিশ। মহাসড়কের ৬০ ভাগই জেলা পুলিশ দেখভাল করে। বাকি ৪০ ভাগ করে হাইওয়ে পুলিশ। তাই হাইওয়ে পুলিশকে চাঁদাবাজির ব্যাপারে ঢালাওভাবে অভিযুক্ত করা ঠিক হবে না। হাইওয়ে পুলিশ কোথায় কোথায় চাঁদাবাজি করছে তার সুনির্দিষ্ট অভিযোগ প্রদানের জন্য পণ্য পরিবহনের সঙ্গে সংশ্লিষ্টদের অনুরোধ জানানো হয়েছে। কিন্তু তাদের কাছ থেকে এখনও পর্যন্ত আশানুরূপ সাড়া পাওয়া যায়নি।
বাংলাদেশ ট্রাক, কাভার্ডভ্যান, ট্রান্সপোর্ট এজেন্সি মালিক-শ্রমিক ঐক্য পরিষদের এক কর্মকর্তা বলেছেন, হাইওয়েতে পণ্য পরিবহন নির্বিঘœ করতে বার বার তাগিদ দেয়ার পরও পরিস্থি’তির উন্নতি হয়নি। এ কারণেই আমরা ১৪ দফা দিয়ে ৪৮ ঘণ্টার ধর্মঘট ডাকতে বাধ্য হয়েছি।
বাংলাদেশ ট্রাক কাভার্ডভ্যান ড্রাইভার ইউনিয়নের এক কর্মকর্তা দাবি করেছেন,
মহাসড়কের বিভিন্ন স্থানে হাইওয়ে পুলিশ নানা অজুহাতে চালকদের কাছ থেকে চাঁদা আদায় করছে। আর টাকা দিতে অস্বীকার করলে তারা মনগড়া অজুহাত দেখিয়ে বিভিন্ন ধারায় মামলা দিয়ে জরিমানা আদায় করছে। এমন পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। ট্রাফিক সার্জেন্টরা গাড়ির কাগজপত্র চেকিংয়ের নামে হয়রানি করে থাকে। যে সব স্পটে চালকরা বেশি হয়রানির শিকার হয় তা হলো-আমিন বাজার, যাত্রাবাড়ী, টঙ্গীব্রিজ, কেরানীগঞ্জ, বছিলা ব্রিজ এলাকায়। ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ৯০ ভাগ ডাকাতি হয় মেঘনা এলাকায়। ™ি^তীয় অবস্থানে সাভারের আশুলিয়া। সম্প্রতি ঢাকার ধামরাই ও রাজধানীর আগারগাঁও এলাকায় ছিনতাইকারীদের হাতে নিহত হন রডবাহী ট্রাকের দুই চালক। আহত হন আরও চারজন।
ট্রাক, কাভার্ডভ্যান ট্রান্সপোর্ট মালিক সমিতির এক কর্মকর্তা জানান, পণ্যবাহী ট্রাক বা কাভার্ডভ্যানের চুরি বা ডাকাতি হলে পুলিশ সহজে মামলা নেয় না। এ ব্যাপারে পুলিশ মহাপরিদর্শকের সঙ্গে বৈঠকে কার্যকর ব্যবস্থা গ্রহণের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হলেও তা বাস্তবায়িত হয়নি।
হাইওয়ে পুলিশের এক কর্মকর্তা বলেছেন, দেশের বিভিন্ন মহাসড়কের নানা ধরনের অপরাধ ঘটছে এটা ঠিক। তবে হাইওয়ে পুলিশের জন্য এখনও পর্যাপ্ত লজিস্টিক সাপোর্ট ও জনবল দেয়া হয়নি। ফলে অনেক সময়েই অভিযোগের প্রতিকার করা সম্ভবপর হয় না। তবে পুলিশের বিরুদ্ধে ঢালাও অভিযোগ সঠিক নয়।

No comments

Powered by Blogger.