ফার্নিচার শিল্পের প্রসার ঘটিয়ে বিপুল কর্মসংস্থান সম্ভব by অনিমেষ কুন্ডু
বাংলাদেশের ফার্নিচার শিল্পকে বর্তমানে অন্যতম সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে ভাবা হচ্ছে। বাংলাদেশী আসবাব দেশের বাজারের সীমানা ছাড়িয়ে বিদেশের বাজারেও নিজেদের অবস্থান ধীরে ধীরে তৈরি করে নিচ্ছে। ১৯৯৭ সাল থেকে আসবাব বিদেশে রফতানি হচ্ছে । এক্ষেত্রে নেতৃত্ব দিচ্ছে দেশের স্বনামধন্য নির্মাতা প্রতিষ্ঠানগুলো।
অটবি এর মধ্যে অন্যতম একটি প্রতিষ্ঠান। এবারের বাজেট ফার্নিচার শিল্পের জন্য কতোটা সহায়ক, এই শিল্প আমাদের অর্থনীতিতে কেমন ভূমিকা রাখতে সক্ষম হচ্ছে, ফার্নিচার শিল্পের উন্নয়নের জন্য কোন্ ধরনের পদক্ষেপ নেয়া প্রয়োজন ইত্যাদি বিষয় নিয়েই জনকণ্ঠের প্রতিনিধির মুখোমুখি হলেন অটবি লিমিটেডের ম্যানেজিং ডিরেক্টর অনিমেষ কু-ু।
হ ফার্নিচার শিল্পে অটবি একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিককার কিছু কথা বলুন।
য়১৯৭৫ সালে অটবি যাত্রা শুরু করে। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা আমার বাবা নিতুন কুন্ডু একজন শিল্পী, ভাস্কর এবং ডিজাইনার ছিলেন। তিনি যখন এই ফার্নিচার ডিজাইনের এর সাথে যুক্ত হন তার আগে কয়েক যুগ পর্যন্ত প্রচলিত ডিজাইনই অনুস্রিত হত। আমার বাবা বিভিন্ন নতুন ও আর্কষণীয় ডিজাইনের আর্বিভাব ঘটান। বাংলাদেশে তিনিই এই ফার্নিচার শিল্পে প্রথম মানুষের আয়,রুচি ও চাহিদা বিবেচনা করে নিত্যনতুন ডিজাইন সৃষ্টি করেন । সেখান থেকেই ধীরে ধীরে অটবি একটি ফার্নিচার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য বিশাল সেট আপের প্রয়োজন ছিল যা বাবার একার পক্ষে করা অনেক কঠিন ছিল তথাপি তিনি নিজের চিন্তা-চেতনা ও বই পড়ে পড়ে পুরো একটি সেট আপ দাঁড় করিয়েছেন। প্রতিটি জিনিসই তিনি নিজের হাতে তৈরি করেছেন। এমনকি মেশিন পর্যন্ত তিনি নিজে তৈরি করেছেন।তাঁর নিজস্ব স্বকীয় চিন্তা-চেতনার কারণেই অটবি আজ এই পর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়েছে। ফার্নিচার একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
হ বর্তমান বাজেট ফার্নিচার শিল্পের বিস্তারে কেমন ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
য়সরকার ফার্নিচার শিল্পের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে যার প্রমাণ বর্তমান বাজেট। সরকারকে প্রস্তাবিত রপ্তানিকর রেয়াত করার জন্য সাধুবাদ জানাই। এছাড়া পার্টিকেল বোর্ড যা ফার্নিচার শিল্পের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ন উপাদান তা দিয়ে ফার্নিচার রপ্তানির জন্য শুল্ক কমিয়ে সরকার এই ফার্নিচার শিল্পের জন্য বিরাট সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এরফলে ফার্নিচার শিল্পের উদ্যোক্তারা বেশি পরিমান ফার্নিচার রপ্তানি করার সুযোগ পাবে যা আমাদের অর্থনীতিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গত কয়েক বছর ধরেই সরকার এই শিল্পকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই বাজেটে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তা ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
হ আমাদের জিডিপি ও কর্মসংস্থানে ফার্নিচার শিল্প কেমন অবদান রাখছে?
য়লোকাল মার্কেট ও রপ্তানি বানিজ্যের মাধ্যমে ফার্নিচার শিল্প আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে আমি মনে করি । তাছাড়া এই শিল্পে সরাসরি ২৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে যা আমাদের অর্থনীতির সূচকের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সস্তা শ্রমের কারণে অনেক বেশি ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা সম্ভব। এগুলো তৈরি করা গেলে আরো অনেক লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে। এই শিল্পের যত প্রসার ঘটবে তত জনবল প্রয়োজন হবে যা বেশি পরিমান কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং চীন ও মালয়েশিয়ার মত বাংলাদেশও বিশ্ববাজারে রপ্তানি বাজার দখল করতে পারবে। এই শিল্পের বর্তমান প্রবৃদ্ধি রয়েছে ২০ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২ টি দেশে সরাসরি ফার্নিচার রপ্তানি করছে। যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,অস্ট্রেলিয়া,জার্মানী,ভারতসহ মধ্যেপ্রাচ্যর বিভিন্ন দেশে ফার্নিচার রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু ব্শ্বি বাজারের তুলনায় রপ্তানির পরিমান অত্যন্ত কম। বর্তমান বিশ্বে আসবাবপত্র শিল্পের বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করছে মাত্র আড়াই কোটি ডলারের আসবাবপত্র। কিন্তু প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের ফার্নিচার রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। একই সাথে এই শিল্প অভ্যন্তরীণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বাজারের চাহিদা পূরণ করছে। এই শিল্পকে যদি পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তবে রপ্তানি আরো কয়েকশগুন বেশি করা সম্ভব। এরফলে গার্মেন্টেস এর মত ফার্নিচার শিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প হিসাবে গড়ে উঠবে।
হ অটবি ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেমন ভূমিকা রাখছে?
য়অটবি জন্মলগ্ন থেকেই সবসময় দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করে আসছে। এই দক্ষ জনবলই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য ফার্নিচার প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অটবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক শ্রমিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সফলতার সাথে কাজ করে চলছে। শ্রমিকদেরকে টুলস এর ব্যবহার খুব বেশি জায়গায় শেখানো হয় না। আমরাই এই ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছি। তাছাড়া নিত্যনতুন ডিজাইন তৈরি করে এই শিল্পে বৈচিত্র্য নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অটবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
হ ফার্নিচার শিল্পের কাচাঁমাল আমদানী বাবদ প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। আমাদের দেশে এই শিল্পের কাঁচামাল তৈরি বাবদ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কী?
য়এই শিল্পের কাঁচামাল কিছু দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয় আবার কিছু বিদেশ থেকেও আমদানী করতে হয়। আমাদের দেশে গাছের যোগান কম তাই বিদেশ থেকে পার্টিকেল বোর্ড, এম ডি এফ, প্লাইউড আমদানি করতে আমাদের উৎসাহিত করা হয়। আমি বলব বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হলেও এটা বনজ সম্পদ রক্ষা করার জন্য একটি ইতিবাচক দিক। এই পার্টিকেল বোড, এম ডি এফ, প্লাইউড অমদানী করা না হলে আমাদের প্রতিবছর কয়েক কোটি গাছ কাটতে হতো। এই শিল্পকে সার্পোট করার জন্য অনেক ছোট ছোট ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন রয়েছে। যদি এগুলোকে ক্লাস্টার ফরমেশনে আনা যায় তবে সার্পোটিং মেটেরিয়্যালগুলো আমদানীর উপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমে যাবে যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটাবে। আশা করব সরকার এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে।
হ এই শিল্পের দক্ষ শ্রমিক তৈরি করার জন্য কেমন ব্যবস্থা রয়েছে ?
য়বিএফআইডিসিতে এই শিল্পের দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করার জন্য কিছু ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এখানে আরও অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া কিছু কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় । কিন্তু এর জন্য বিশেষায়িত কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এই শিল্পের প্রসারের জন্য সরকারকে এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বুয়েটে এই বিশেষায়িত শিক্ষার ডিপার্টমেন্ট খোলা যেতে পারে।
হ ফার্নিচার শিল্পের জন্য শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার কথা শুনেছিলাম। এর বর্তমান অবস্থা কী?
য়রপ্তানি করার সুযোগ পাবে যা আমাদের অর্থনীতিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গত কয়েক বছর ধরেই সরকার এই শিল্পকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই বাজেটে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তা ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
হআমাদের জিডিপি ও কর্মসংস্থানে ফার্নিচার শিল্প কেমন অবদান রাখছে?
য়লোকাল মার্কেট ও রপ্তানি বানিজ্যের মাধ্যমে ফার্নিচার শিল্প আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে আমি মনে করি । তাছাড়া এই শিল্পে সরাসরি ২৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে যা আমাদের অর্থনীতির সূচকের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সস্তা শ্রমের কারণে অনেক বেশি ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা সম্ভব। এগুলো তৈরি করা গেলে আরো অনেক লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে। এই শিল্পের যত প্রসার ঘটবে তত জনবল প্রয়োজন হবে যা বেশি পরিমান কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং চীন ও মালয়েশিয়ার মত বাংলাদেশও বিশ্ববাজারে রপ্তানি বাজার দখল করতে পারবে। এই শিল্পের বর্তমান প্রবৃদ্ধি রয়েছে ২০ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২ টি দেশে সরাসরি ফার্নিচার রপ্তানি করছে। যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,অস্ট্রেলিয়া,জার্মানী,ভারতসহ মধ্যেপ্রাচ্যর বিভিন্ন দেশে ফার্নিচার রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু ব্শ্বি বাজারের তুলনায় রপ্তানির পরিমান অত্যন্ত কম। বর্তমান বিশ্বে আসবাবপত্র শিল্পের বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করছে মাত্র আড়াই কোটি ডলারের আসবাবপত্র। কিন্তু প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের ফার্নিচার রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। একই সাথে এই শিল্প অভ্যন্তরীণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বাজারের চাহিদা পূরণ করছে। এই শিল্পকে যদি পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তবে রপ্তানি আরো কয়েকশগুন বেশি করা সম্ভব। এরফলে গার্মেন্টেস এর মত ফার্নিচার শিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প হিসাবে গড়ে উঠবে।
হ অটবি ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেমন ভূমিকা রাখছে?
য়আমরাও শুনেছি সরকারের নীতিনির্ধারকরা এই ব্যাপারে কাজ করছেন। আমরা আশা করছি তারা শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার জন্য সবিশেষ চেষ্টা করবেন। চীনে ফার্নিচার শিল্প নগরী আছে যেখানে ফার্নিচারের সাথে সার্পোটিং শিল্প কারখানা ও রয়েছে যারফলে পণ্যে উৎপাদন অনেক সহজ হয়ে যায়। আমরা আশা করছি সরকারও এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই ব্যাপারে সরকার চাইলে ফার্নিচার এসোসিয়েশনের সাথে আলোচনা করতে পারে । এর জন্য যদি আমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে আমরা তা করতে পারি।
হ অটবির একজন কর্ণধার হিসেবে এই শিল্পের বিকাশে আপনাকে কী কী সমস্যার মুখোমুখী হতে হচ্ছে?
য়ফার্নিচার শিল্পকে এখনও অনেকক্ষেত্রে প্রোপার ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে ভাবা হয় না। রাজস্ববোর্ড এটিকে সেবা খাত হিসেবে বিবেচনা করে যার ফলে মূল্যায়নে সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়। তাছাড়া ভ্যাট প্রদানেও সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়। যতবার প্রোডাক্ট ট্রান্সফার করব ততবারেই ভ্যাট দিতে হয় যা আমাদের খরচ বাড়িয়ে দেয়। এটা এই শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বাঁধা বলে আমি মনে করি।
হ বাংলাদেশের এই ফার্নিচার শিল্পকে দেশের অন্যতম শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপনি সরকারের কাছ থেকে কী ধরণের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
য়অনেক শিল্প থেকে এই শিল্পের ভ্যালু এডিশন আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বেশি। তাই রপ্তানির জন্য বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা আমরা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করছি। যত দ্রুত শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করা যায় তত দ্রুত এই শিল্পের প্রসার ঘটবে তাই এই বিষয়ে সরকার যাতে দ্রুত কাজ করে তাই সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা।
হ ফার্নিচার শিল্পে অটবি একটি অন্যতম প্রতিষ্ঠান। এই প্রতিষ্ঠানের শুরুর দিককার কিছু কথা বলুন।
য়১৯৭৫ সালে অটবি যাত্রা শুরু করে। এই কোম্পানির প্রতিষ্ঠাতা আমার বাবা নিতুন কুন্ডু একজন শিল্পী, ভাস্কর এবং ডিজাইনার ছিলেন। তিনি যখন এই ফার্নিচার ডিজাইনের এর সাথে যুক্ত হন তার আগে কয়েক যুগ পর্যন্ত প্রচলিত ডিজাইনই অনুস্রিত হত। আমার বাবা বিভিন্ন নতুন ও আর্কষণীয় ডিজাইনের আর্বিভাব ঘটান। বাংলাদেশে তিনিই এই ফার্নিচার শিল্পে প্রথম মানুষের আয়,রুচি ও চাহিদা বিবেচনা করে নিত্যনতুন ডিজাইন সৃষ্টি করেন । সেখান থেকেই ধীরে ধীরে অটবি একটি ফার্নিচার প্রতিষ্ঠান হিসেবে গড়ে উঠতে থাকে। ম্যানুফ্যাকচারিং এর জন্য বিশাল সেট আপের প্রয়োজন ছিল যা বাবার একার পক্ষে করা অনেক কঠিন ছিল তথাপি তিনি নিজের চিন্তা-চেতনা ও বই পড়ে পড়ে পুরো একটি সেট আপ দাঁড় করিয়েছেন। প্রতিটি জিনিসই তিনি নিজের হাতে তৈরি করেছেন। এমনকি মেশিন পর্যন্ত তিনি নিজে তৈরি করেছেন।তাঁর নিজস্ব স্বকীয় চিন্তা-চেতনার কারণেই অটবি আজ এই পর্যন্ত আসতে সক্ষম হয়েছে। ফার্নিচার একটি সম্ভাবনাময় শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার ক্ষেত্রে তাঁর অবদান অনস্বীকার্য।
হ বর্তমান বাজেট ফার্নিচার শিল্পের বিস্তারে কেমন ভূমিকা রাখবে বলে আপনি মনে করেন?
য়সরকার ফার্নিচার শিল্পের প্রতি ইতিবাচক দৃষ্টিভঙ্গি পোষণ করে যার প্রমাণ বর্তমান বাজেট। সরকারকে প্রস্তাবিত রপ্তানিকর রেয়াত করার জন্য সাধুবাদ জানাই। এছাড়া পার্টিকেল বোর্ড যা ফার্নিচার শিল্পের জন্য একটি অতি গুরুত্বপূর্ন উপাদান তা দিয়ে ফার্নিচার রপ্তানির জন্য শুল্ক কমিয়ে সরকার এই ফার্নিচার শিল্পের জন্য বিরাট সম্ভাবনার দ্বার খুলে দিয়েছে। এরফলে ফার্নিচার শিল্পের উদ্যোক্তারা বেশি পরিমান ফার্নিচার রপ্তানি করার সুযোগ পাবে যা আমাদের অর্থনীতিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গত কয়েক বছর ধরেই সরকার এই শিল্পকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই বাজেটে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তা ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
হ আমাদের জিডিপি ও কর্মসংস্থানে ফার্নিচার শিল্প কেমন অবদান রাখছে?
য়লোকাল মার্কেট ও রপ্তানি বানিজ্যের মাধ্যমে ফার্নিচার শিল্প আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে আমি মনে করি । তাছাড়া এই শিল্পে সরাসরি ২৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে যা আমাদের অর্থনীতির সূচকের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সস্তা শ্রমের কারণে অনেক বেশি ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা সম্ভব। এগুলো তৈরি করা গেলে আরো অনেক লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে। এই শিল্পের যত প্রসার ঘটবে তত জনবল প্রয়োজন হবে যা বেশি পরিমান কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং চীন ও মালয়েশিয়ার মত বাংলাদেশও বিশ্ববাজারে রপ্তানি বাজার দখল করতে পারবে। এই শিল্পের বর্তমান প্রবৃদ্ধি রয়েছে ২০ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২ টি দেশে সরাসরি ফার্নিচার রপ্তানি করছে। যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,অস্ট্রেলিয়া,জার্মানী,ভারতসহ মধ্যেপ্রাচ্যর বিভিন্ন দেশে ফার্নিচার রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু ব্শ্বি বাজারের তুলনায় রপ্তানির পরিমান অত্যন্ত কম। বর্তমান বিশ্বে আসবাবপত্র শিল্পের বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করছে মাত্র আড়াই কোটি ডলারের আসবাবপত্র। কিন্তু প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের ফার্নিচার রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। একই সাথে এই শিল্প অভ্যন্তরীণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বাজারের চাহিদা পূরণ করছে। এই শিল্পকে যদি পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তবে রপ্তানি আরো কয়েকশগুন বেশি করা সম্ভব। এরফলে গার্মেন্টেস এর মত ফার্নিচার শিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প হিসাবে গড়ে উঠবে।
হ অটবি ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেমন ভূমিকা রাখছে?
য়অটবি জন্মলগ্ন থেকেই সবসময় দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করে আসছে। এই দক্ষ জনবলই বিভিন্ন ক্ষেত্রে অসংখ্য ফার্নিচার প্রতিষ্ঠানে বাংলাদেশকে নেতৃত্ব দিচ্ছে। অটবি থেকে প্রশিক্ষণ নিয়ে অনেক শ্রমিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে সফলতার সাথে কাজ করে চলছে। শ্রমিকদেরকে টুলস এর ব্যবহার খুব বেশি জায়গায় শেখানো হয় না। আমরাই এই ক্ষেত্রে এগিয়ে রয়েছি। তাছাড়া নিত্যনতুন ডিজাইন তৈরি করে এই শিল্পে বৈচিত্র্য নিয়ে আসার ক্ষেত্রে অটবি অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখছে।
হ ফার্নিচার শিল্পের কাচাঁমাল আমদানী বাবদ প্রচুর টাকা ব্যয় হয়। আমাদের দেশে এই শিল্পের কাঁচামাল তৈরি বাবদ কোন ব্যবস্থা গ্রহণ করা হচ্ছে কী?
য়এই শিল্পের কাঁচামাল কিছু দেশ থেকে সংগ্রহ করা হয় আবার কিছু বিদেশ থেকেও আমদানী করতে হয়। আমাদের দেশে গাছের যোগান কম তাই বিদেশ থেকে পার্টিকেল বোর্ড, এম ডি এফ, প্লাইউড আমদানি করতে আমাদের উৎসাহিত করা হয়। আমি বলব বৈদেশিক মুদ্রা ব্যয় হলেও এটা বনজ সম্পদ রক্ষা করার জন্য একটি ইতিবাচক দিক। এই পার্টিকেল বোড, এম ডি এফ, প্লাইউড অমদানী করা না হলে আমাদের প্রতিবছর কয়েক কোটি গাছ কাটতে হতো। এই শিল্পকে সার্পোট করার জন্য অনেক ছোট ছোট ইন্ডাস্ট্রির প্রয়োজন রয়েছে। যদি এগুলোকে ক্লাস্টার ফরমেশনে আনা যায় তবে সার্পোটিং মেটেরিয়্যালগুলো আমদানীর উপর আমাদের নির্ভরশীলতা কমে যাবে যা আমাদের বৈদেশিক মুদ্রার সাশ্রয় ঘটাবে। আশা করব সরকার এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেবে।
হ এই শিল্পের দক্ষ শ্রমিক তৈরি করার জন্য কেমন ব্যবস্থা রয়েছে ?
য়বিএফআইডিসিতে এই শিল্পের দক্ষ জনসম্পদ তৈরি করার জন্য কিছু ব্যবস্থা আছে। কিন্তু এখানে আরও অনেক উন্নতি করার সুযোগ রয়েছে। তাছাড়া কিছু কারিগরি শিক্ষা প্রতিষ্ঠানে এর প্রশিক্ষণ দেয়া হয় । কিন্তু এর জন্য বিশেষায়িত কোন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান নেই। এই শিল্পের প্রসারের জন্য সরকারকে এই ব্যাপারে উদ্যোগ নেয়া প্রয়োজন। এক্ষেত্রে বুয়েটে এই বিশেষায়িত শিক্ষার ডিপার্টমেন্ট খোলা যেতে পারে।
হ ফার্নিচার শিল্পের জন্য শিল্প নগরী প্রতিষ্ঠার প্রক্রিয়ার কথা শুনেছিলাম। এর বর্তমান অবস্থা কী?
য়রপ্তানি করার সুযোগ পাবে যা আমাদের অর্থনীতিতেই গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করবে। গত কয়েক বছর ধরেই সরকার এই শিল্পকে সম্ভাবনাময় খাত হিসেবে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই বাজেটে যেসব অবকাঠামোগত উন্নয়নের প্রতি গুরুত্ব আরোপ করা হয়েছে তা ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে বলে আমি মনে করি।
হআমাদের জিডিপি ও কর্মসংস্থানে ফার্নিচার শিল্প কেমন অবদান রাখছে?
য়লোকাল মার্কেট ও রপ্তানি বানিজ্যের মাধ্যমে ফার্নিচার শিল্প আমাদের জিডিপির প্রবৃদ্ধিতে গুরুত্বপূর্ণ অবদান রাখছে বলে আমি মনে করি । তাছাড়া এই শিল্পে সরাসরি ২৩ লাখ লোকের কর্মসংস্থান হচ্ছে যা আমাদের অর্থনীতির সূচকের জন্য অনেক গুরুত্বপূর্ণ। বাংলাদেশে সস্তা শ্রমের কারণে অনেক বেশি ফার্নিচার ইন্ডাস্ট্রি তৈরি করা সম্ভব। এগুলো তৈরি করা গেলে আরো অনেক লোকের কর্মসংস্থান করা সম্ভব হবে। এই শিল্পের যত প্রসার ঘটবে তত জনবল প্রয়োজন হবে যা বেশি পরিমান কর্মসংস্থান সৃষ্টি করবে এবং চীন ও মালয়েশিয়ার মত বাংলাদেশও বিশ্ববাজারে রপ্তানি বাজার দখল করতে পারবে। এই শিল্পের বর্তমান প্রবৃদ্ধি রয়েছে ২০ শতাংশ। বর্তমানে বাংলাদেশ বিশ্বের ১২ টি দেশে সরাসরি ফার্নিচার রপ্তানি করছে। যুক্তরাষ্ট্র,যুক্তরাজ্য,অস্ট্রেলিয়া,জার্মানী,ভারতসহ মধ্যেপ্রাচ্যর বিভিন্ন দেশে ফার্নিচার রপ্তানি করা হচ্ছে। কিন্তু ব্শ্বি বাজারের তুলনায় রপ্তানির পরিমান অত্যন্ত কম। বর্তমান বিশ্বে আসবাবপত্র শিল্পের বাজার প্রায় ৩০ হাজার কোটি ডলারের। এর মধ্যে বাংলাদেশ রপ্তানি করছে মাত্র আড়াই কোটি ডলারের আসবাবপত্র। কিন্তু প্রায় এক হাজার কোটি ডলারের ফার্নিচার রপ্তানির সুযোগ রয়েছে। একই সাথে এই শিল্প অভ্যন্তরীণ পাঁচ হাজার কোটি টাকার বাজারের চাহিদা পূরণ করছে। এই শিল্পকে যদি পরিকল্পনামাফিক এগিয়ে নিয়ে যাওয়া যায় তবে রপ্তানি আরো কয়েকশগুন বেশি করা সম্ভব। এরফলে গার্মেন্টেস এর মত ফার্নিচার শিল্প বাংলাদেশের দ্বিতীয় বৃহত্তম বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনকারী শিল্প হিসাবে গড়ে উঠবে।
হ অটবি ফার্নিচার শিল্পকে এগিয়ে নিয়ে যাওয়ার জন্য কেমন ভূমিকা রাখছে?
য়আমরাও শুনেছি সরকারের নীতিনির্ধারকরা এই ব্যাপারে কাজ করছেন। আমরা আশা করছি তারা শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠার জন্য সবিশেষ চেষ্টা করবেন। চীনে ফার্নিচার শিল্প নগরী আছে যেখানে ফার্নিচারের সাথে সার্পোটিং শিল্প কারখানা ও রয়েছে যারফলে পণ্যে উৎপাদন অনেক সহজ হয়ে যায়। আমরা আশা করছি সরকারও এই বিষয়টিকে গুরুত্ব দিচ্ছে। এই ব্যাপারে সরকার চাইলে ফার্নিচার এসোসিয়েশনের সাথে আলোচনা করতে পারে । এর জন্য যদি আমাদের সহযোগিতার প্রয়োজন পড়ে আমরা তা করতে পারি।
হ অটবির একজন কর্ণধার হিসেবে এই শিল্পের বিকাশে আপনাকে কী কী সমস্যার মুখোমুখী হতে হচ্ছে?
য়ফার্নিচার শিল্পকে এখনও অনেকক্ষেত্রে প্রোপার ইন্ডাস্ট্রি হিসেবে ভাবা হয় না। রাজস্ববোর্ড এটিকে সেবা খাত হিসেবে বিবেচনা করে যার ফলে মূল্যায়নে সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়। তাছাড়া ভ্যাট প্রদানেও সমস্যার মুখোমুখী হতে হয়। যতবার প্রোডাক্ট ট্রান্সফার করব ততবারেই ভ্যাট দিতে হয় যা আমাদের খরচ বাড়িয়ে দেয়। এটা এই শিল্পের বিকাশের ক্ষেত্রে অন্যতম একটি বাঁধা বলে আমি মনে করি।
হ বাংলাদেশের এই ফার্নিচার শিল্পকে দেশের অন্যতম শিল্প হিসেবে প্রতিষ্ঠা করার জন্য আপনি সরকারের কাছ থেকে কী ধরণের সহযোগিতা প্রত্যাশা করেন।
য়অনেক শিল্প থেকে এই শিল্পের ভ্যালু এডিশন আমাদের অর্থনীতিতে অনেক বেশি। তাই রপ্তানির জন্য বন্ডেড ওয়্যার হাউস সুবিধা আমরা সরকারের কাছে প্রত্যাশা করছি। যত দ্রুত শিল্পনগরী প্রতিষ্ঠা করা যায় তত দ্রুত এই শিল্পের প্রসার ঘটবে তাই এই বিষয়ে সরকার যাতে দ্রুত কাজ করে তাই সরকারের কাছে আমার প্রত্যাশা।
No comments