৬৪ জেলা প্রশাসকের চোখে ৪৬৬ সমস্যা by আশরাফুল হক রাজীব

টিআর-কাবিখার কার্যক্রম সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে বাস্তবায়ন, বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠান পরিচালনায় দুর্নীতি, সীমান্তে নজরদারি শিথিল হওয়ায় রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বৃদ্ধি, পুলিশের অসহযোগিতায় নির্বাহী ম্যাজিস্ট্রেটদের আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে জটিলতা এবং মাদকের বিস্তারসহ সুনির্দিষ্ট ৪৬৬ সমস্যার কারণে বিভিন্ন জেলার


সার্বিক কার্যক্রম সুষ্ঠুভাবে সম্পন্ন করা সম্ভব হচ্ছে না বলে মনে করছেন দেশের জেলা প্রশাসকরা (ডিসি)।
আগামী মঙ্গলবার থেকে অনুষ্ঠেয় তিন দিনব্যাপী জেলা প্রশাসক সম্মেলন সামনে রেখে এই ৪৬৬ সমস্যা চিহ্নিত করেছেন ডিসিরা। পাশাপাশি বিদ্যমান সমস্যা নিরসনে প্রয়োজনীয় সুপারিশও করেছেন তাঁরা। রীতি অনুযায়ী, সম্মেলনের আগেই এসব সমস্যা ও সমাধানের সম্ভাব্য উপায় মন্ত্রিপরিষদ বিভাগে জমা দিয়েছেন ৬৪ জেলা প্রশাসক। ডিসি সম্মেলন উদ্বোধন করবেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা। সে সময় দিনবদলের সনদ বাস্তবায়ন করতে প্রধানমন্ত্রী সরাসরি ডিসিদের নির্দেশনা দেবেন। পাশাপাশি ডিসিদের কাছ থেকেও সরাসরি শুনবেন নানা সমস্যার কথা। বিভিন্ন মন্ত্রণালয় ও বিভাগের মাধ্যমে ডিসিদের উত্থাপিত সমস্যা নিরসনের নির্দেশ দেবেন তিনি। সম্মেলনে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়সহ ৩৯টি মন্ত্রণালয় ও বিভাগ সম্পর্কিত মোট ২৪টি কার্য অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। জেলা প্রশাসক ছাড়াও সম্মেলনে সব বিভাগীয় কমিশনার অংশ নেবেন।
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে জানা গেছে, সম্মেলন সামনে রেখে জেলা প্রশাসকদের পাঠানো প্রস্তাবনায় ভূমি ব্যবস্থাপনায় অনিয়ম, জনসংখ্যা নিয়ন্ত্রণ, সড়ক দুর্ঘটনাসহ বিভিন্ন সমস্যা ও এর সমাধানের কথা উঠে এসেছে। জেলা প্রশাসকরা অভিযোগ করেছেন, মাঠপর্যায়ে টিআর ও কাবিখার কার্যক্রম সংসদ সদস্যদের মাধ্যমে বাস্তবায়িত হয়। কিন্তু এ নিয়ে বিভিন্ন সময় সমস্যার মুখোমুখি হতে হয় জেলা প্রশাসকদের। রাজশাহীর বিভাগীয় কমিশনার জেলা প্রশাসকের অধীনে এ কার্যক্রমের কোনো বরাদ্দ না থাকায় বিভিন্ন সমস্যার কথা বিশেষভাবে উল্লেখ করেছেন।
এ ছাড়া বেসরকারি শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের পরিচালনা পর্ষদের প্রধান হিসেবে বেসরকারি ব্যক্তিকে মনোনীত করায় দুর্নীতি বাড়ছে বলে ডিসিরা অভিযোগ করেছেন। এসব পর্ষদে সভাপতি মনোনয়ন বা নির্বাচনে সর্বনিম্ন কোনো শিক্ষাগত যোগ্যতা না থাকায় মানসম্মত শিক্ষা বিঘি্নত হচ্ছে বলেও তাঁরা জানিয়েছেন। পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপনে কোনো নীতিমালা না থাকায় তদবিরের মাধ্যমে শিক্ষা বোর্ডগুলো কেন্দ্র স্থাপন করছে বলে অভিযোগ তাঁদের। সাধারণত ক্ষমতাসীন দলের এমপিরা ভোটের কথা চিন্তা করে বিভিন্ন পাবলিক পরীক্ষার কেন্দ্র স্থাপনে প্রভাব বিস্তার করেন। বিভিন্ন শিক্ষাপ্রতিষ্ঠানের গভর্নিং বডির প্রধান হিসেবেও দলীয় নেতা-কর্মীরা মনোনয়ন পাচ্ছেন।
জেলা প্রশাসকদের মতে, ভূমি ব্যবহারের আইন না থাকায় কৃষিজমিতে অন্যান্য স্থাপনা গড়ে ওঠার ফলে দিন দিন কৃষিজমি কমে যাচ্ছে। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতা রয়েছে। অবৈধভাবে বিট তৈরির ফলে সীমান্ত এলাকায় মানবাধিকার পরিস্থিতির অবনতি হচ্ছে। এসব সমস্যার কারণে মারাত্মকভাবে ব্যাহত হচ্ছে জেলা প্রশাসনের অধীনে পরিচালিত সার্বিক কাজের স্বাভাবিক গতি। বছরের পর বছর বিদ্যমান বিভিন্ন জেলার এসব সমস্যা জরুরি ও অগ্রাধিকার ভিত্তিতে সমাধান করা না হলে ২০২১ সাল নাগাদ বাংলাদেশকে মধ্যম আয়ের দেশে উন্নীত করা ও সরকারের ডিজিটাল বাংলাদেশ বাস্তবায়ন অনিশ্চিত হয়ে পড়বে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন দেশের বেশির ভাগ জেলা প্রশাসক।
ডিসি সম্মেলনের বিষয়ে জানতে চাইলে মন্ত্রিপরিষদ সচিব মোশাররাফ হোসাইন ভূইঞা গতকাল শনিবার কালের কণ্ঠকে বলেন, 'আগামী মঙ্গলবার থেকে এই সম্মেলন শুরু হবে। সম্মেলনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। সম্মেলন সংক্রান্ত বিভিন্ন বিষয় আগামীকাল (আজ রবিবার) সংবাদ সম্মেলনের মাধ্যমে জানানো হবে।'
মন্ত্রিপরিষদ বিভাগ সূত্রে আরো জানা গেছে, সম্মেলনের সব প্রস্তুতি শেষ হয়েছে। জেলা প্রশাসকরা এরই মধ্যে নিজ নিজ জেলার বিভিন্ন সমস্যা লিখিতভাবে জানিয়েছেন। বিভিন্ন মন্ত্রণালয়ের সঙ্গে সংশ্লিষ্ট এসব সমস্যা নিয়ে আলাদা অধিবেশন অনুষ্ঠিত হবে। প্রতিটি অধিবেশনে মন্ত্রীরা উপস্থিত থেকে সমস্যার কথা শুনবেন এবং প্রয়োজনীয় সিদ্ধান্ত দেবেন। উপস্থিত থাকবেন সচিবরাও।
জানা গেছে, রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ ও চোরাচালান বেড়ে যাওয়ার কথা জানিয়েছেন চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার ও বান্দরবানের জেলা প্রশাসক। তাঁদের মতে, ভারত ও মিয়ানমারের সঙ্গে বাংলাদেশের সীমান্তে প্রয়োজনীয় সীমান্ত চৌকি না থাকায় চোরাচালান বাড়ছে। একই সঙ্গে রোহিঙ্গা অনুপ্রবেশ বন্ধ করা যাচ্ছে না। মিয়ানমারের সঙ্গে ১৮০ কিলোমিটার এবং ভারতের মিজোরামের সঙ্গে বান্দরবানের রুমা ও থানচি সীমান্ত এলাকায় প্রতি পাঁচ কিলোমিটার পরপর একটি করে বিওপি স্থাপনের পরামর্শ দেন জেলা প্রশাসক। চট্টগ্রামের বিভাগীয় কমিশনার জানিয়েছেন, প্রতিনিয়ত বিপুলসংখ্যক লোক মিয়ানমার থেকে টেকনাফ সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করছে। তারা কৌশলে এ দেশের নাগরিকদের সঙ্গে বিয়ের সম্পর্ক গড়ছে। ভুয়া জন্মনিবন্ধন সনদ, নাগরিক সনদ ও জাতীয় পরিচয়পত্রও সংগ্রহ করছে। কেউ কেউ ভুয়া পাসপোর্ট ও ভিসা সংগ্রহ করে বিদেশেও পাড়ি জমাচ্ছে। আবার সে দেশে গিয়ে নানা অপকর্মে লিপ্ত হচ্ছে, যার দায় নিতে হচ্ছে বাংলাদেশকে। উল্লেখ্য, কক্সবাজারে দুটি শরণার্থী ক্যাম্পে রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গার সংখ্যা ২৫ হাজার ৪৫। তাদের সঙ্গে সংযুক্ত আছে আরো চার হাজার। এ ছাড়া আন-রেজিস্টার্ড রোহিঙ্গা দুই লাখের বেশি।
পঞ্চগড় জেলার সঙ্গে ভারতের ২৮৪ কিলোমিটার সীমান্ত এলাকা দিয়ে মাদক আসার কথা জানিয়েছেন জেলা প্রশাসক। এ মাদক প্রতিরোধের জন্য নেই মাদকদ্রব্য নিয়ন্ত্রণ অধিদপ্তরের কোনো কার্যালয় বা জনবল। তাই মাদকের ছোবল থেকে রক্ষার জন্য তাদের কিছু করার নেই। বৈধ পথে ভারত থেকে গরু আনার কোনো ব্যবস্থা না থাকায় সীমান্ত এলাকার স্থানে স্থানে অবৈধ বিট তৈরি করা হচ্ছে। এ বিট থেকে একশ্রেণীর লোক প্রচুর টাকা আয় করছে। এসব বিটের নিয়ন্ত্রণ নিয়ে একদিকে এলাকায় রক্তক্ষয়ী সংঘর্ষ হচ্ছে, অন্যদিকে ভারতীয় সীমান্তরক্ষীদের হাতে বাংলাদেশিরা নির্যাতিত হচ্ছে। জেনারেল সার্টিফিকেট মামলা নিষ্পত্তিতে ইস্যু করা ওয়ারেন্ট কার্যক্রম ফৌজদারি মামলার ওয়ারেন্টের মতো কার্যকর না হওয়ার সমস্যার কথা জানিয়েছেন নরসিংদীর জেলা প্রশাসক।
ডিসিদের পাঠানো সমস্যার তালিকা থেকে আরো জানা গেছে, উপবৃত্তি প্রকল্পের বাইরের শিক্ষার্থীদের টিউশন ফি থাকায় তারা স্কুলের প্রতি অনীহা দেখায়। দেশের শিক্ষাব্যবস্থায় সংস্কার আনার স্বার্থে টাঙ্গাইলের জেলা প্রশাসক উপবৃত্তির বাইরে থাকা সব শিক্ষার্থীর টিউশন ফি মওকুফের সুপারিশ করেছেন। পাবলিক পরীক্ষার ভেন্যু বা কেন্দ্রের ব্যাপারে নীতিমালা না থাকার সমস্যার কথা জানিয়েছেন প্রায় সব জেলা প্রশাসক। চাঁদপুর, সিলেট ও কুমিল্লার জেলা প্রশাসক মন্ত্রিপরিষদ বিভাগকে জানিয়েছেন, শিক্ষকদের কাজে অনুপস্থিত থেকে বেতন গ্রহণসহ শিক্ষা সংক্রান্ত বিভিন্ন অভিযোগ আসে ডিসি অফিসে। অনেক সময় সেগুলোর সত্যতাও পাওয়া যায়। এ বিষয়ে কোনো কার্যকর ব্যবস্থা নেওয়ার ক্ষমতা জেলা প্রশাসকদের নেই। তাঁদের নেওয়া বিভিন্ন পদক্ষেপ আদালতের নির্দেশে স্থগিত হয়ে যায়।
বিদ্যুৎ সঞ্চালন লাইন নির্মাণের জন্য জেলা ম্যাজিস্ট্রেটরা বিনা ক্ষতিপূরণে ব্যক্তি মালিকানাধীন জমি অধিগ্রহণ করতে পারেন। কিন্তু এ কারণে সাধারণ মানুষের অসন্তোষ বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কার কথা জানিয়েছেন নারায়ণগঞ্জের জেলা প্রশাসক।
তিন পার্বত্য জেলায় জরুরি ভিত্তিতে ভূমি জরিপ কাজ শুরু করার পরামর্শ দিয়ে ডিসিরা বলেছেন, জরিপ না হওয়ায় ভূমি প্রশাসনে নানা জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। সারা দেশে বিভিন্ন সময়ে ভূমি জরিপ হলেও পার্বত্য জেলায় কোনো জরিপ হয়নি। রাঙামাটি জেলায় ভূমি জরিপ শুরু হলেও শেষ হয়নি। এসব জেলার বিভিন্ন মৌজার কোনো ম্যাপ ও খতিয়ান নেই। সমস্যাটি সমাধানের পরামর্শ দিয়েছেন পার্বত্য চট্টগ্রামের জেলা প্রশাসকরা। জরিপ বিভাগের মাঠ পর্যায়ের কর্মচারীদের বিরুদ্ধে সরকারি ও সাধারণ মানুষের জমি অন্যের নামে তুলে দেওয়ার অভিযোগ পাওয়া যায়। এসব অভিযোগ জরিপ বিভাগেরই কর্মকর্তাদের দিয়ে তদন্ত হওয়ায় তা সুষ্ঠু হয় না। সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার এ ধরনের অভিযোগ জেলা প্রশাসকের কার্যালয়ের মাধ্যমে তদন্ত করার প্রস্তাব দিয়েছেন।
যানবাহন নিয়ন্ত্রণ ও লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বৈত প্রশাসন সৃষ্টির বিষয়টিও তুলে ধরেছেন দেশের প্রায় সব জেলা প্রশাসক। তাঁদের মতে, ব্যাটারিচালিত অটোবাইকের লাইসেন্স দেওয়া বর্তমানে বন্ধ রয়েছে। রাস্তায় থাকা অটোবাইকের কারণে যানজটের সৃষ্টি হচ্ছে এবং দুর্ঘটনা ঘটছে। লাইসেন্স না থাকায় তাদের বিরুদ্ধে কোনো ব্যবস্থা নেওয়া যাচ্ছে না। এসব ইজিবাইক মোটরযান কি না এ সম্পর্কে সরকারের কোনো সিদ্ধান্ত নেই। বিআরটিএর নিয়ন্ত্রণের বাইরে এগুলো চলাচল করছে। সিটি করপোরেশন বা পৌরসভা এসবের লাইসেন্স দিচ্ছে। ফলে লাইসেন্স দেওয়ার ক্ষেত্রে দ্বৈত প্রশাসনের সৃষ্টি হচ্ছে। এ ছাড়া সড়ক দুর্ঘটনা ও যানজটের সমস্যার কথা তুলে ধরেছেন প্রায় সব বিভাগীয় কমিশনার।
জনসংখ্যা বিস্ফোরণ রোধে 'এক সন্তান নীতি' অনুসরণের প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরেছেন ঢাকা, নোয়াখালী ও গোপালগঞ্জের জেলা প্রশাসক। সচিবালয়ের কর্মকর্তাদের মাঠ পর্যায়ে এবং মাঠ পর্যায়ের কর্মকর্তাদের সচিবালয়ে পাঠানোর কথা বলেছেন রংপুরের বিভাগীয় কমিশনার। তথ্য অধিকার আইন প্রণয়ন এবং কমিশন কর্তৃক দায়িত্বপ্রাপ্ত কর্মকর্তা নিয়োগ ব্যতীত কোনো আনুষ্ঠানিক কর্মসূচি না থাকার কথা জানিয়েছেন খাগড়াছড়ির জেলা প্রশাসক। দেশের একমাত্র কোরাল দ্বীপ সেন্টমার্টিনের জীববৈচিত্র্য নষ্ট হওয়ার কথা জানিয়ে সেখানে ট্যুরিস্টদের রাত্রিযাপন নিষিদ্ধের সুপারিশ করেছেন কক্সবাজারের জেলা প্রশাসক।
পার্বত্য জেলা পরিষদের নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ পার্বত্য চট্টগ্রামবিষয়ক মন্ত্রণালয়। অন্যদিকে উপজেলা পরিষদ, পৌরসভা ও ইউনিয়ন পরিষদগুলোর নিয়ন্ত্রণকারী কর্তৃপক্ষ হচ্ছে স্থানীয় সরকার, পল্লী উন্নয়ন ও সমবায় মন্ত্রণালয়ের স্থানীয় সরকার বিভাগ। এ দুই মন্ত্রণালয়ের মধ্যে সমন্বয়হীনতার কথা জানিয়েছেন রাঙামাটি জেলা প্রশাসক।
বিশ্বের বরেণ্য রাজনীতিবিদ, চলচ্চিত্র অভিনেতা, রাষ্ট্রপতি ও বিশিষ্ট ব্যক্তিদের মোমের মূর্তি লন্ডনের মাদাম তুসো জাদুঘরে শোভা পেলেও সেখানে নেই বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের প্রতিকৃতি। সেখানে বঙ্গবন্ধুর প্রতিকৃতি স্থাপনের ব্যবস্থা নেওয়ার তাগিদ দিয়েছেন সিলেটের বিভাগীয় কমিশনার।

No comments

Powered by Blogger.