প্রতিপক্ষকে ফাঁসাতে গিয়ে...

প্রতিপক্ষের জমিতে অস্ত্র রেখে ফাঁসাতে গিয়ে নিজেরাই ফেঁসে গেলেন রাঙ্গুনিয়া উপজেলার পারুয়া ইউনিয়নের সৈয়দনগর গ্রামের তিন ব্যক্তি। এঁরা হলেন—মৃত জলিল বক্সের ছেলে মো. নুরুন্নবী (৪২), ছৈয়দ আহমেদের ছেলে মো. জসিম উদ্দিন (২৫) ও আবদুল মালেকের ছেলে মো. করিম (২৪)।


চট্টগ্রাম র‌্যাব-৭-এর সদস্যরা তাঁদের আটক করে ৪ জুলাই বুধবার ভোরে রাঙ্গুনিয়া থানায় সোপর্দ করে।
পুলিশ জানায়, র‌্যাব-৭-এর ১০-১২ জন সদস্য ৩ জুলাই মধ্যরাতে রাঙ্গুনিয়ার লালানগর ইউনিয়নের পূর্ব খীলমোগল গ্রামের মোল্লাবাড়ির বাসিন্দা জয়নাব বেগমের বসতঘরের পাশ থেকে একটি দোনলা বন্দুক ও ৪ রাউন্ড গুলি উদ্ধার করে। বন্দুক রাখার সঙ্গে জড়িত সন্দেহে র‌্যাবের সদস্যরা ওই তিনজনকে আটক করে।
র‌্যাব-৭ সূত্র জানায়, গ্রেপ্তার হওয়া নুরুন্নবী ও তাঁর সহযোগীরা মুঠোফোনে লালানগর ইউনিয়নের পূর্ব খীলমোগল গ্রামের মোল্লাবাড়ির জয়নাব বেগমের বসতঘরের পাশে বন্দুক থাকার খবর দেয়। এমনকি বন্দুক না পেলে ৫০ হাজার টাকা দেওয়ার চ্যালেঞ্জও করেন তাঁরা।
এরপর ৩ জুলাই মঙ্গলবার দিবাগত রাত দেড়টায় তাঁদের দেখিয়ে দেওয়া স্থান থেকে বন্দুকটি উদ্ধার করে র‌্যাব। এ ব্যাপারে জয়নাব বেগম ও তাঁর স্বামী আলী আকবরকে জিজ্ঞাসাবাদ করা হয়। জিজ্ঞাসাবাদে বন্দুক রাখার সঙ্গে তাঁদের জড়িত থাকার বিষয়টি মিথ্যা বলে প্রমাণিত হয়। পরে গ্রেপ্তার নুরুন্নবী বন্দুক পুঁতে রাখার ঘটনাটি সাজানো বলে স্বীকার করেন। নুরুন্নবী বলেন, ‘জয়নাব বেগমের স্বামী আলী আকবরকে ফাঁসানোর জন্য প্রতিপক্ষ আবদুল খালেক ৫০ হাজার টাকায় আমার সঙ্গে চুক্তি করেন। পরিকল্পনা অনুযায়ী বন্দুকটি জয়নাব বেগমের বসতঘরের পাশে রাখা হয়।’
এ প্রসঙ্গে আলী আকবর বলেন, ‘আমি দিনমজুর। স্ত্রী পৈতৃক সূত্রে কিছু জমি পেয়েছিলেন। এই জমি নিয়ে এলাকার প্রভাবশালী মোহাম্মদ আলী, আবদুল খালেক ও সিরাজুল ইসলামের সঙ্গে বিরোধ সৃষ্টি হয়। এরা বারবার আমাকে ঘর থেকে উচ্ছেদ করতে চেয়েছেন। কিন্তু পারেননি। সর্বশেষ গত ১৫ মে তাঁরা আমার ঘর ভেঙে দেওয়ার হুমকি দিয়েছিলেন। এ নিয়ে প্রথম আলোতে প্রতিবেদন প্রকাশিত হলে প্রভাবশালী ব্যক্তিরা তখন আর ঘর ভাঙতে পারেননি। এতে তাঁরা ক্ষিপ্ত হয়ে আমার বাড়ির পাশে বন্দুক পুঁতে রেখে আমাকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করেন।’
এ ব্যাপারে মুঠোফোনে যোগাযোগ করা হলে আবদুল খালেক বলেন, ‘জমি নিয়ে আলী আকবরের সঙ্গে আমাদের বিরোধ আছে ঠিকই, কিন্তু জমিতে বন্দুক পুঁতে রাখার প্রশ্নই আসে না। আমি টাকার অভাবে বাড়ি নির্মাণের কাজ অসমাপ্ত অবস্থায় ফেলে রেখেছি। এ অবস্থায় টাকা দিয়ে বন্দুক রেখে আলী আকবরকে ফাঁসাতে যাব কেন? নুরুন্নবী পুলিশ ও র‌্যাবের কাছে আমাকে জড়িয়ে মিথ্যা কথা বলেছেন।’ এক প্রশ্নের জবাবে তিনি বলেন, ‘নুরুন্নবী রাঙ্গুনিয়া থানার দালাল হিসেবে পরিচিত। তাঁর সঙ্গে আমার বন্ধুত্ব যেমন নেই, তেমনি কোনো শত্রুতাও নেই।’ রাঙ্গুনিয়া থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) এম এম মোর্শেদ এ প্রসঙ্গে প্রথম আলোকে বলেন, ঘটনাটি নিয়ে তদন্ত করা হয়েছে। জমিসংক্রান্ত বিরোধের জের ধরেই আবদুল খালেক ও তাঁর সহযোগীরা বন্দুক রেখে জয়নাব বেগমের স্বামী আলী আকবরকে ফাঁসানোর চক্রান্ত করেছেন। র‌্যাব সদস্যদের বিচক্ষণতার কারণে এ চক্রান্ত ফাঁস হয়ে যায়। এ ব্যাপারে থানায় অস্ত্র মামলা দায়ের করে গ্রেপ্তার ব্যক্তিদের জেলহাজতে পাঠানো হয়েছে। ঘটনায় জড়িত অন্যদেরও খুঁজে বের করে গ্রেপ্তার করা হবে বলে জানান তিনি।
প্রসঙ্গত, গত ১৪ মে প্রথম আলোর বিশাল বাংলায়, ‘ঘরটি গুঁড়িয়ে দেওয়া হবে কাল!’ এই শিরোনামে একটি সচিত্র প্রতিবেদন প্রকাশিত হয়। এই প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়, দিনমজুর আলী আকবরের বাড়ি ১৫ মে ভেঙে ফেলার হুমকি দেয় প্রভাবশালী ব্যক্তিরা। প্রতিবেদনটি প্রকাশের পর স্থানীয় প্রশাসনের হস্তক্ষেপের কারণে রক্ষা পান আলী আকবর।

No comments

Powered by Blogger.