একুশ শতক-বাংলা টাংলা ॥ বেঙ্গলিটা পড়াক না ইংলিশে by মোস্তাফা জব্বার

॥ এক ॥ শিরোনামটির প্রথম দুটি শব্দ ‘বাংলা টাংলা’ একটি বাংলা কবিতার শিরোনাম আর পরের বাক্যটা কবিতাটির শেষ বাক্যের প্রেরণা থেকে তৈরি করা। আজ সময় হয়েছে এমন একটি কবিতা পাঠ করার এবং সেটির মর্মকথা উপলব্ধি করার। আমরা যখন বলি যে দুনিয়ার একমাত্র দেশ যা ভাষা আন্দোলনের সুফল হিসেবে জন্ম নিয়েছে,


যখন আমরা বলি যে প্রতিটি বর্ণমালা প্রতিটি বাঙালীর প্রাণ, যখন আমরা মাতৃভাষা বা আমাদের বাংলা ভাষার নামে একদম ফিট হয়ে যাই, তখন বাংলা শেখার ক্ষেত্রে আমাদের এক শ্রেণীর মানুষের অবস্থাটির বাস্তব প্রতিফলন এই কবিতাটি।
খুব সাম্প্রতিক কালে মাতৃভাষা নিয়ে দুটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয় ঘটেছে আমার সাথে। প্রায় ছয় দশক বেঁচে থেকে এবং অন্তত এর চারটি দশক ধরে মাতৃভাষার গুরুত্ব ও প্রয়োজনীয়তা নিয়ে উপলব্ধি করতে গিয়ে এমন কোন প্রসঙ্গ এর আগে আর পাইনি। বিশেষ করে মাতৃভাষার সাথে তার বর্ণমালার যে সম্পর্কটা সেটি এমন গভীরভাবে উপলব্ধি করার সুযোগ আর পাইনি। কাকতালীয়ভাবে আমার সাথে সম্প্রতি ঘটা দুটি ঘটনার যোগসূত্র একই। দুটি ঘটনাকেই আমি আমার চোখ কান খুলে দেবার সহায়ক বলে মনে করছি। দুটি ঘটনাই আমাদের সকলের কাছে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয়; মাতৃভাষা ও তার লিপি নিয়ে। আমি মনে করি আমার কাছে যা গুরুত্বপূর্ণ সেটি সকলের সাথে শেয়ার করা দরকার। এই লেখাটির উদ্দেশ্য সেটিই। আসুন, আমার ঘটনা দুটি নিয়ে আলোচনা করি।
প্রথম ঘটনাটি হলো ডেনমার্কের একটি প্রতিষ্ঠানকে তাদের ডিসলেক্সিয়া (পড়তে না পারার অসুখ) আক্রান্ত শিশু রোগীদের জন্য একটি মাল্টিমিডিয়া সফটওয়্যার তৈরি করার প্রকল্পে আমার প্রতিষ্ঠান বিজয় ডিজিটাল ৩ জন প্রোগ্রামারকে বিনাশ্রমে কাজ করতে দেয়া নিয়ে। এই প্রকল্পে সহায়তা করতে যাবার আগে আমি এই প্রকল্পের সাথে যুক্ত এ্যান-এরিখ দম্পতির সাথে ডিসলেক্সিয়া রোগ নিয়ে বিস্তারিত আলোচনা করেছি। এটি আমার জন্য একেবারেই নতুন অভিজ্ঞতা। আলোচনা থেকে শুরু করে সফটওয়্যার তৈরি পর্যন্ত পুরোটাই একেবারেই নতুন বিষয়। বিশেষ করে আমাদের দেশের যে কোন মানুষের জন্য এমন একটি রোগের নামটাই নতুন। আমরা আসলে চিন্তাই করতে পারি না যে অক্ষর দেখে কেউ পড়তে পারে না। বরং আমরা পড়তে পারার দক্ষতাটিকেই বলি অক্ষরজ্ঞান অর্জন করা। আমরা আসলে কি ভাবতে পারি যে ডেনমার্কের শতকরা প্রায় ১৬ ভাগ শিশু অক্ষর দেখে পড়তে পারে না এবং দুনিয়াতে বিশেষ করে যারা লাতিন হরফ দিয়ে পাঠ করে তাদের সকলের ক্ষেত্রেই কোন না কোনভাবে পড়তে পারার এই সঙ্কটটা রয়েছে। এই রোগী আমেরিকায় আছে, ব্রিটেনে আছে, আছে ইউরোপে। এই রোগটির নামই ডিসলেক্সিয়া।
সম্প্রতি আমার সাথে ঘটা দ্বিতীয় ঘটনাটি হচ্ছে ফেসবুকের। গত ৪ জুলাই ১২ ইন্টারনেটের ফেসবুকে আমার নিউজ ফিডে আমি একটি অসাধারণ কবিতা পেয়েছি। ‘বাংলা টাংলা’ নামের খুব সাদামাটাভাবে উপস্থাপিত এই কবিতাটি পাঠ করার সাথে সাথে আমি সেটি নিজের দেয়ালে শেয়ার করেছি। অপূর্ব দত্ত নামক এক ভদ্রলোকের লেখা সেই কবিতাটি আমার নিউজফিডে সংযুক্ত করেন বর্ণালি সাহা নামক একজন ফেসবুক ব্যবহারকারী। খোঁজ নিয়ে দেখেছি তিনি একজন মিডিয়া কর্মী। পরে দেখেছি শুধু বর্ণালি সাহা নন, ফেসবুকে অনেকেই এই কবিতাটির ছবি শেয়ার করেছেন। এর সাথে যেসব মন্তব্য পড়েছি সেইসবও আলোচনার কেন্দ্রে আসতে পারে। কারণ তাতে আমাদের চিন্তা ভাবনার সঠিক প্রতিফলন ঘটেছে। যাহোক সেই আলোচনায় পরে আসব। তার আগে আমি ডেনিস কানেকশনটা নিয়ে আলোচনা করতে চাই।
ডেনিস সফটওয়্যার তৈরির প্রকল্পজনিত ঘটনাটি শুরু হয়েছে জুন মাসের গোড়ার দিকে। ৪ জুন তারিখে এর সূচনা। আকস্মিকভাবেই মেহদি মাসুদ নামের এক ভদ্রলোক আমাকে ফোন করে জানতে চাইলেন, ইভান হাওসার ও এ্যান ভিয়েরো হানসেন নামক দুজন ডেনিস আমার সাথে দেখা করতে চান। আমি কারণ জানতে চাইলে মেহদি জানালেন তারা তাদের মাতৃভাষা ডেনিস শিশুদেরকে শেখানোর জন্য বাংলাদেশের কারও সহায়তা চায়। তিনি আরও জানালেন, তার বাড়ি নেত্রকোনায় এবং তার কাছে মনে হয়েছে কেবল আমিই ডেনিসদেরকে সহায়তা করতে পারব। কম্পিউটারের কোন বিষয়ে আমার সাথে আলোচনা করার দেশী-বিদেশী অনুরোধ আমি প্রায় প্রতিদিনই পাই। ব্যক্তিগত অনুরোধ পাই অনেক বেশি। তবে নীতিগত বিষয় বা আমার সাথে সংশ্লিষ্ট বিষয় না হলে আমি সেইসব আলোচনায় তেমন কোন সহায়তা করতে পারি না।
এ্যান হানসেন ও ইভান হাওসারের ডেনিস টিমটিতে সদস্য ছিল মাত্র দুজন। মাতৃভাষা এবং শিশু এই দুটি উপসর্গ যোগ করার ফলে আমি আগ্রহ বোধ করলাম। সেদিন বিকেলেই আমি তাদের বাংলাদেশ কম্পিউটার সমিতির অফিসে আসার আমন্ত্রণ জানালাম। সমিতির নেতাদের বলে এই বৈঠকটি করার অনুমতিও নিলাম। আমার সাথে ফোনে আলোচনার সূত্রপাতকারী মেহদি মাসুদ আমাদের সাথে আলোচনায় থাকার কথা ছিল। কিন্তু তিনি তা পারেননি। কারণ তার সরকারী কাজ ছিল আমাদের মিটিং-এর সময়। আমরা ছিলাম তিন জন। আমি, আমার বন্ধু মুহম্মদ জালাল এবং আমার প্রতিষ্ঠান বিজয় ডিজিটালের প্রধান নির্বাহী জেসমিন আক্তার। আমার সাথে ওরা যুক্ত হয় এজন্য যে আমরা শিশুশিক্ষা সফটওয়্যার নিয়ে কথা বলব। দুর্ভাগ্যক্রমে সেদিন বিসিএস অফিসের দুটি লিফটের একটি নষ্ট হয়ে গেল। ফলে প্রায় এক ঘণ্টা লাগল লিফটে চড়ে ১৩ তলার বিসিএস অফিসে পৌঁছাতে। আমরা মিটিং শুরু করলাম নির্ধারিত সময়ের ১ ঘণ্টা পরে। শুরুতেই লিফটের দুর্দশার জন্য ক্ষমা চেয়ে আলোচনায় প্রবেশ করে আমরা বাংলাদেশের তিনজনেই প্রায় আকাশ থেকে পড়লাম। ইভান প্রথমে তাদের উদ্দেশ্য ব্যাখ্যা করল। এক কথায় সে যা বলল তা হলো, তারা একটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠান চায় যারা তাদের কমপক্ষে ৩ জন প্রোগ্রামারকে বিনে পয়সায় তাদের জন্য কাজ করতে দেবে। তারা এটিও জানাল যে, কয়েকটি বাংলাদেশী প্রতিষ্ঠানের সাথে তারা কথা বলেছে। কিন্তু বিনে পয়সায় প্রোগ্রামার দিতে কেউ রাজি হয়নি। খুব সঙ্গতকারণেই আমাদেরও রাজি হবার কথা নয়। আমি, জেসমিন ও জালালকে প্রশ্ন করে জানতে চাইলাম, আমাদের কি করা উচিত। ওরা আমার ওপর ছেড়ে দিল সিদ্ধান্ত নেবার ভার। তখন আমার ইচ্ছা হলো বিষয়টির গভীরে যাবার। এ্যান জানালেন, তার স্বামী এরিখ হানসেন একজন ডেনিস শিক্ষক। তিনি তার সারা জীবনের সাধনায় ডেনিস ভাষা পাঠ করতে পারার একটি পদ্ধতি আবিষ্কার করেছেন। আমি অবাক হচ্ছিলাম এ্যানের কথা শুনে। ভাবছিলাম, ডেনিস ভাষা পড়ার পদ্ধতি আবার আবিষ্কারের কি আছে।
কিন্তু জানলাম, বিষয়টি খুব গুরুত্বপূর্ণ। এজন্য এরিখের আবিষ্কৃত সেই পদ্ধতিটি নিয়ে তারা বই প্রকাশ করেছেন। কিন্তু ডেনিস শিক্ষা ব্যবস্থায় এখন বইকে আই-প্যাড দিয়ে স্থলাভিষিক্ত করা হয়েছে। ছেলেমেয়েরা এখন বই পড়েনা-আই প্যাড হাতে নিয়ে ঘুরে। সেজন্য তারা তাদের পদ্ধতিটি আই-প্যাডে প্রচলন করতে চেষ্টা করছে। তারা ডেনিস সরকারের সহায়তা চেয়েছে। ডানিডা তাদের সহায়তা করতে রাজি হয়েছে। কিন্তু এজন্য তারা বাংলাদেশী কোন প্রতিষ্ঠানকে সঙ্গে নেবার শর্ত দিয়েছে। বলেছে তোমরা বাংলাদেশে এসে সফটওয়্যার তৈরি করো এবং বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানের জন্য টেকনোলজি ট্রান্সফার করো। তবে এই কাজে ডানিডা বাংলাদেশি প্রতিষ্ঠানকে কোন সহায়তা দিতে পারবে না বলেও জানিয়েছে। আবার বাংলাদেশী কোন প্রতিষ্ঠানের সংযুক্তি ছাড়া তারা তাদেরকেও সহায়তা দেবে না। এর মানে হলো আমরা যদি বিনে পয়সায় ভূতের বেগার খাটার জন্য যুক্ত না হই তবে এরিখ আর এ্যানের কাছে ডানিডার কোন সহায়তাই পৌঁছাবে না। তৈরি হবে না সফটওয়্যারটি।
এমন একটি সময়ে আমাদের সামনে রাস্তা একদম স্পষ্ট ছিল। আমি বিনে পয়সায় ডেনিস টিমের পাশে দাঁড়াব না হয় এরিখ ও এ্যান তাদের আবিষ্কারকে আলোর মুখ দেখাতে পারবে না। আমাদের কেন জানি মনে হলো; এই ডেনিস পরিবারটির সাথে আমাদের কোথায় যেন একটি মিল আছে। আমি বাংলাদেশের শিক্ষাব্যবস্থা বদলানোর জন্য সফটওয়্যার তৈরি করছি। বাণিজ্যিকভাবে অসফল একটি সফটওয়্যার তৈরির প্রচেষ্টাকে আমি সামনে নিয়ে যাচ্ছি। আমাদের মনে হলো, এরিখ স্কুল শিক্ষক হিসেবে আমার পরম শ্রদ্ধেয় মানুষ। আমি এমন মানুষকে সম্মান করি। সুতরাং তার পাশে আমার দাঁড়ানো দরকার। এরই সূত্র ধরে ৬ জুন ১২ আমরা একটি সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর করি।
এর পরই শুরু হয় প্রকল্পটি নিয়ে আমাদের অনুসন্ধান। পুরো জুন মাসে আমরা ইন্টারনেটে অনুসন্ধান করে এই না পড়তে পারার রোগটি নিয়ে পশ্চিমা বিশ্বের উদ্বেগের বিষয়টি জানার চেষ্টা করলাম। আমরা জানলাম যে প্রধানত লাতিন হরফ ব্যবহারকারী যেসব ভাষা শিশুরা পড়তে যায় তারা ভাষা ও লিপি নিয়ে সমস্যায় পড়ে। লাতিন হরফের সমস্যা হলো এই হরফ দিয়ে এমনকি ইংরেজী ভাষার উচ্চারণকে প্রতিফলিত করতে পারে না। এইসব ক্ষেত্রে মুখে যা উচ্চারণ করা হয় হরফ দিয়ে সেটি লেখা হয় না। জুলাই-এর প্রথম দিনেই এ্যান, ইভান ও এরিখ বাংলাদেশে আসেন। তাদের সাথে থাকে ৪ জন ডেনিস প্রোগ্রামার। ২ জুলাই তাদের সাথে আমাদের প্রথম আলোচনা হয়। সেই আলোচনায় এরিখ রীতিমতো একটি বোমা ফাটান। এরিখ জানালেন, ডেনিসরা হাজার বছর আগে নিজেদের হরফ দিয়েই তাদের ভাষা লিখত। কিন্তু পরে লাতিন হরফ বস্তুত পুরো ইউরোপ দখল করে। ডেনিসরা তখন থেকেই ভাষা নিয়ে বিপদে পড়ে। এরিখ জানালেন, ডেনিস ভাষার শতকরা মাত্র তিন ভাগ শব্দ অক্ষরের উচ্চারণের সাথে সঙ্গতিপূর্ণ। এজন্য ডেনিস ভাষা পাঠ করা কঠিন। ডেনিসরা যা অক্ষরের রূপে দেখে সেটি সঠিক উচ্চারণ হিসেবে আন্দাজ করতে হয়। এমনকি কোন নিয়ম নীতি নিয়ে উচ্চারণ হয় না। এরিখ খুব মুগ্ধ হয়ে আমাদের কাছ থেকে বাংলা ভাষার কথা শুনলেন। জেসমিন তাকে বাংলা হরফ ও তার উচ্চারণ শোনাল। সে জানতে চাইল, অক্ষরের নাম আর উচ্চারণ বিষয়ে। জেসমিন তাকে অত্যন্ত সুন্দরভাবে প্রতিটি বাংলা হরফ লিখে তার উচ্চারণ দেখাল। তাকে স্বরবর্ণ, স্বরচিহ্ন, ব্যঞ্জনবর্ণ দেখানো হলোÑউচ্চারণ করে শোনানো হলো। দেখানো হলো স্বরবর্ণ, ব্যঞ্জনবর্ণ, স্বরচিহ্ন ও যুক্তাক্ষর। আমাদের সকলকে বিস্মিত করে এরিখ বরং প্রশংসা করল যুক্তাক্ষরের। তার মতে যুক্তাক্ষর বরং যে কাউকে সঠিক উচ্চারণ করতে সহায়তা করে। কারণ তাতে মূল অক্ষরটি অবস্থান করে। যদি কোন অক্ষর দিয়ে উচ্চারণটি দেখিয়ে দেয়া হয় তবে সেই উচ্চারণ করা যে সহজ সেটি আমি বলে আসছি অনেক আগে থেকে। বাংলা ভাষার বহুলাংশ যে চমৎকারভাবে বিজ্ঞানসম্মত, এর লিপি ও হরফ উভয়ই যে অসাধারণ সেটিও বলে আসছি। এরিখ শুধু বলল, তোমরা ডেনিসদের চাইতে অনেক ভাগ্যবান। আমার তখন একদল বাংলা ভাষাভাষীর কথা মনে হচ্ছিল যারা বাংলা ভাষা রোমান হরফে লিখতে চান বা বাংলা হরফ থেকে যুক্তাক্ষর বাদ দিতে চান।
আগামীতে আমরা বাংলা ভাষার শ্রেষ্ঠত্ব ছাড়াও অপূর্ব দত্তের কবিতাটি ও তার প্রেক্ষিতে আমাদের করণীয় নিয়ে আলোচনা করব। বিশেষ করে বাংলা ভাষার নামে স্বাধীন হওয়া দেশে বাংলা ভাষাবিষয়ক প্রকল্পগুলো কেমন করে আতুর ঘরেই পড়ে আছে সেই বিষয়গুলো জাতির সামনে উত্থাপন করা জরুরী। (চলবে)

ঢাকা, ০৬ জুলাই ২০১২ ॥ লেখক তথ্যপ্রযুক্তিবিদ, কলামিস্ট, দেশের প্রথম ডিজিটাল নিউজ সার্ভিস আবাস-এর চেয়ারম্যান-সাংবাদিক, বিজয় কীবোর্ড ও সফটওয়্যার এবং ডিজিটাল বাংলাদেশ-এর প্রণেতা ॥ ই-মেইল : mustafajabbar@gmail.com, ওয়েবপেজ: www.bijoyekushe.net

No comments

Powered by Blogger.