বিএনপি-জামায়াত সরকারের প্রথম বছর বনাম মহাজোটের প্রথম বছর by প্রফেসর রঞ্জন দেবনাথ
আজ ২০১০ -এর প্রথম দিন। সামনে আওয়ামী লীগ সরকারের এক বছর পূর্তি দিবস। এ উপল েঅনেকেরই প্রশ্ন_ সরকারের পারফরমেন্স কী? আমাকে অনেকে এ ব্যাপারে জিজ্ঞেস করেছেন। আমি উত্তর দিতে বিরত থেকেছি। বিরত থেকেছি এ কারণে নয় যে সরকার সম্পর্কে আমার কোন মূল্যায়ন নেই।
আওয়ামী লীগ সরকারকে মূল্যায়ন করার অনেক মানদণ্ড হতে পারে। এ মূল্যায়ন হতে পারে অর্থনৈতিক ও সামাজিক দিক থেকে। এ মূল্যায়ন হতে পারে রাজনৈতিক েেত্র। এ মূল্যায়ন হতে পারে আন্তর্জাতিক েেত্র। আবার আওয়ামী লীগ নির্বাচনের পূর্বে কী অঙ্গীকার করেছিল তার নিরিখেও বর্তমান সরকারের পারফরমেন্স বিবেচিত হতে পারে। পারফরমেন্স মূল্যায়নের প্রশ্নটি প্রধানত দৃষ্টিভঙ্গির ওপর নির্ভরশীল। এটা সবার সঙ্গে আমার নাও মিলতে পারে। তবে কিছু বিষয় আছে যা সার্বজনীন বা দৃষ্টিভঙ্গি নিরপে। আমি এমন একটা বিষয়ের ওপরই আলোকপাত করতে চাই এবং আমার আলোচ্য বিষয়টি পরিষ্কার করার জন্য একটি ঘটনার উল্লেখ করতে চাই।
২০০১ সালের শেষের দিক অথবা বড়জোর ২০০২ সালের জানুয়ারি মাস। সবেমাত্র জাতীয় সংসদের নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মতায় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে পরাজিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ে একদিন মতিঝিল থেকে শান্তিনগর আসছিলাম রিক্সা করে। আমি যে রিক্সাওয়ালাকে নিয়েছি, কিছু দূরে গিয়েই টের পেলাম তার পা ভাঙ্গা। এ ভাঙ্গা পা নিয়েই সে রিক্সা চালাচ্ছে ধীরে ধীরে। তার অবস্থা দেখে আমি তাকে গাল দিয়ে বললাম, মিয়া, তুমি নিজেই চলতে পারনা, আবার রিক্সা চালাচ্ছ! খেয়ে তোমার কাম নেই। তোমার বাড়ি কোথায়? ধীরে ধীরে রিক্সা চালাতে চালাতে সে বলল তার বাড়ি ব্রাহ্মষবাড়িয়া। বাধ্য হয়ে সে রিক্সা চালাচ্ছে। গ্রামের বাজারে তার ছোট একটা দোকান ছিল। এ দোকানের আয় দিয়েই তাদের চারজনের সংসার চলত। বাবা, মা এবং আরেক ভাই। বাবা-মা বয়স্ক। কিছু জমি আছে। তা তার বাবা চাষাবাদ করে। ও জমি দিয়ে তাদের চলে না। দুই ভাই মিলে তাই ছোট একটি দোকান দেয় বাজারে। ছোট ভাই দোকানে বসত বেশি। ও একটু আধটু রাজনীতি করত। করত কারণ, তার বাবা সব সময়ই মুজিব মুজিব করত। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তার বাবা বহু কষ্ট করে 'জয়বাংলার' জন্য। বাবার মুখে এসব শুনতে শুনতে সে এক সময় আওয়ামী লীগের ভক্ত হয়ে যায়। এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। গত নির্বাচনে সে দলের জন্য দিনরাত খাটে। সবার সঙ্গে মিলে সে পুরো উপজেলা চষে বেড়ায়। এসব বলতে বলতে সে বলল, এটাই তার দোষ। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিএনপি-জামায়াতের কমর্ীরা তাকে মেরে আধমরা করে। তার বাড়িঘর লুটপাট করে। তার বুড়ো বাবা-মাকে অপমান করে। তার ছোট ভাইকে মারধর করে। ঐ মারেই তার একটা পা ভেঙ্গেছে। এখন কিছুটা সুস্থ। কিন্তু গ্রামে থাকার কোন উপায় নেই। বাধ্য হয়ে সে আশ্রয় নিয়েছে ঢাকায়, সঙ্গে তার ভাই এবং তার বাবা-মা চলে গেছে তার মামার বাড়িতে। এসব শুনে তাকে আমি বলি, তুমি যে আমার কাছে এসব অত্যাচারের গল্প করছ, জান আমিও 'বিএনপি' করি। সে উত্তরে বলে, তাহলে আপনি আমাকে গ্রামে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। আমি বলি আমি তা পারব না। উল্টো তাকে বলি, এলাকা ছাড়লে কেন? তোমার নেতারাসহ তোমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে না? আমার কথাবার্তা শুনে ওর ধারণা হলো যে আমি আসলে বিএনপি সমর্থক নই। আশ্বস্ত হয়ে সে বলল, স্যার আমরা কী কোনদিন আর মতায় যাব না? ওপরওয়ালা যদি আগামী বার মতায় নেয়, শেখ হাসিনা যদি সরকারে আসে তাহলে প্রতিটি মারের প্রতিশোধ নেব স্যার। যেভাবে আমাদের কমর্ীদের, সমর্থকদের এবং নেতাদের বিএনপির কমর্ী-সমর্থকরা পিটিয়েছে তার বদলা নেব। বাড়িঘর পোড়ানো, পঙ্গুকরণ ইত্যাদির বদলা নেব।
আজ ২০০৯ সাল গত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার মতায় এক বছর। বিপুল ভোটাধিক্যে এ সরকার মতায় এসেছে। কোথাও কী কেউ প্রতিশোধ নিয়েছে? সারা বাংলাদেশে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ কমর্ী-সমর্থকদের ওপর কী নির্যাতন হয়েছে তার সাী তৎকালীন খবরের কাগজ। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর প্রায় এক বছর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সারা দেশে অত্যাচারের স্টীমরোলার চালায়। এর ল্য ছিল দুটো জনগোষ্ঠী। আওয়ামী লীগ সমর্থক ও কমর্ী এবং অপরদিকে ধমর্ীয় সংখ্যালঘু। সারা বাংলাদেশে এই দুই শ্রেণীর নাগরিকদের ল্য করে চলে লুটপাট, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, সম্পত্তি দখল, খুন জখম। এর উদাহরণ হিসাবে একটি দৈনিকের একটি সম্পাদকীয় এখানে উল্লেখ করছি।
সম্পাদকীয়টির শিরোনাম ছিল_ 'নির্বাচনের পর ভোলা : সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে'। এটি প্রকাশিত হয় ১৭ নবেম্বর ২০০১ সালে। সম্পাদকীয়টিতে লেখা হচ্ছে: "নির্বাচনের পর ভোলা শিরোনামে আমাদের পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে যেসব ঘটনার সরেজমিন প্রতিবেদন ছাপা হলো, সেই অমানবিকতাকে কি অতিরঞ্জন বলে পাশ কাটানো সম্ভব ? ২ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসীরা ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার অন্নদাপ্রসাদ গ্রামটির ওপর যে নারকীয় হামলা চালায় তা থেকে রা পায়নি গ্রামের ৪০০ হিন্দু বাড়ির কোনটিই। লুটপাট যেমন হয়েছে তেমন ঘটেছে নারীদের সমভ্রমহানি। এখানে ধর্ষিত হয়েছে ১০ বছরের শিশু থেকে ৩৬ বছর বয়সী পঙ্গু নারী। আর লাঞ্ছনা থেকে বাদ যাননি ৬৫ বছরের বৃদ্ধাও। আমাদের রিপোর্টে আমরা একজন প্রাণকৃষ্ণের বক্তব্য ছেপেছি; ছেপেছি তার ওপর নির্যাতনের কাহিনী, তার দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা কিংবা পঙ্গু শেফালী রানীর। 'নাকফুল কেড়ে নেওয়া' তথা তার ধর্ষিত হওয়ার কাহিনী অথবা সন্তান প্রসরের সময় জাহাজমারা গ্রামে অষ্টাদশী গৃহবধূ জয়ন্তীর ওপর হামলা ও তার পালিয়ে আত্মরার করুণ কাহিনী। বাকি আর সবার কথা আমরা জনে জনে তথ্য সংগ্রহ করতে না পেরে ছাপতে পারিনি। কিন্তু সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিভীষিকা বুঝতে আমাদের নিশ্চয়ই কষ্ট হওয়ার কথা নয়"। সম্পাদকীয়টিতে নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরে প্রশ্ন করা হচ্ছে 'কিন্তু এ ঘটনার পর কী ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার ও প্রশাসন? চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?'
ওপরে দুটো ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম। এর মধ্যে একটি হচ্ছে একজন পা ভাঙ্গা রিক্সাওয়ালার কথা যে বাধ্য হয়ে রিক্সা চালাচ্ছে, প্রাণভয়ে ঢাকায় এসেছে নির্যাতনের হাত থেকে আত্মরার জন্য। দ্বিতীয়টি হচ্ছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কাহিনী। এ দুটো ঘটনা কী বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা? নিশ্চয়ই নয়। বিএনপি-জামায়াত সরকারের পাঁচ বছরে বিশেষ করে প্রথম বছরে এ ছিল একটা সাধারণ ব্যাপার। সারাদেশে এ সরকার আওয়ামী সমর্থক-কমর্ী এবং সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতনের স্টীমরোলার চালায়। পূর্ণিমা সীলের কাহিনী, প্রিন্সিপাল মুহুরীর হত্যাকাণ্ডের কথা কার না জানা ? হাজার হাজার হিন্দু পরিবার বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। বর্ডার ক্রস করতে গিয়ে একটি নিরীহ সংখ্যালঘু শিশুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার কাহিনী তখন মিডিয়ায় ঝড় তোলে। এসব ঘটনার নিরিখে ২০০৯ সাল অর্থাৎ আওয়ামী সরকারের প্রথম বছরকে কী মনে হয় ? আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অথবা আওয়ামী লীগ সরকার কী বিরোধীদলীয় নেতাকমর্ীদের ওপর চড়াও হয়েছে? বিএনপির নেতাকমর্ীরা কী বাড়িঘরছাড়া হয়েছে, তারা কী দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে? বিএনপি-জামায়াত কমর্ীদের সহায় সম্পত্তি কী লুণ্ঠিত হয়েছে? তাদের পুকুর কী মৎস্যহীন হয়েছে? তাদের বাড়িঘর কী আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে? তাদের সমর্থক নারীকে কী গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে? তাদের কোন পঙ্গু নারী সমর্থককে কী ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে? আমি জানি নিশ্চিত ভাবেই এসব প্রশ্নের উত্তর নেতিবাচক। মিডিয়ায় এসব খবর গত বছরে চোখে পড়েনি। না প্রিন্ট মিডিয়ায়, না নন প্রিন্ট মিডিয়ায়। বিএনপি-জামায়াত মিটিং মিছিল করতে পারে না এমন খবরও নেই। এসব বিবেচনাম নিয়ে কী বলা চলে না যে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় পারফরমেন্স হচ্ছে সহনশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ। এ সরকারের পারফরমেন্স হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর কোন নির্যাতন নেই। বিরোধী দলের কমর্ী সমর্থকরা বাড়িছাড়া নয়, দেশ ছাড়া নয়। রাজনৈতিক সহনশীলতার এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে? আমি মনে করি এটি বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় পারফরমেন্স। বিএনপি- জামায়াতের কমর্ী-সমর্থকরা বলতে পারবে না যে তারা আওয়ামী লীগের কমর্ী-সমর্থকদের নির্যাতনের শিকার। অথচ এটি হওয়ার কথা ছিল। শত হোক মানুষ মানুষই। প্রতিহিংসা মানুষের থাকে। যে লোক মার খেয়েছে সে লোক সুযোগ পেলে মার দেয় না এ নজির কম। বর্তমান সরকারের কমর্ী-সমর্থকরা এ সহনশীলতার নজিরটা স্থাপন করেছে। সরকারপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কমর্ীদের আত্মসংযমে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন। এটি কী বড় পারফরমেন্স নয়? এর জন্য সরকারকে ও সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
রাজনৈতিক েেত্রর পাশাপাশি আমি আজকের নিবন্ধে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করব যে েেত্র বর্তমান সরকারের পারফরমেন্স দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। পারফরমেন্সের এ ত্রেটি হচ্ছে কৃষি খাত। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী হয়। অবৈধ কেয়ারটেকার সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয় যখন মানুষ বাঁচাও বাঁচাও বলতে শুরু করে। চালের দাম ওঠে কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকায়। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, গরিব মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, দিন মজুর ত্রাহি ত্রাহি শুরু করে। আজকের অবস্থা কী ? আজকের অবস্থা নিশ্চিতভাবেই স্বস্তির। চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। গরিব মানুষ, শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ খেয়ে পরে আছে। কৃষকরা সার পাচ্ছে অর্ধেক দামে, বীজ, পানি পাচ্ছে অর্ধেক দামে। বিদু্যৎ পাচ্ছে ভতর্ুকিতে। এক কথায় বলা যায় কৃষি খাত এক অভূতপূর্ব সাফল্য দেখাচ্ছে। কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ছে। রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়েছে গত দুই মৌসুমে। বোরো হয়েছে বাম্পার। চলমান আমনের ফলনও হবে বাম্পার। সামনে আছে বোরো উৎপাদন। তার প্রস্তুতিও ভাল। খেটে খাওয়া মানুষ এখন চালের দামের ব্যাপারে প্রশ্ন করে না। শাকসবজি, তরিতরকারি, মাছ-মাংসের দামও মোটামুটি সহনশীল। খাদ্যের মওজুদ বর্তমান সবের্াচ্চ। সরকারের হাতে রয়েছে আটলাখ টন চাল মজুদ। কৃষি খাতের এই পারফরমেন্স বর্তমান সরকারের প্রধানতম পারফরমেন্স। এ জন্য সরকারপ্রধান এবং কৃষিমন্ত্রী দুজনই ধন্যবাদের পাত্র। অতীতে কোন সরকার কৃষিকে এত গুরুত্ব দেয়নি। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই মতায় এসেছে তখনই কৃষি খাত অগ্রাধিকার পেয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। ফলে কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। কৃষির প্রতি বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়টি আরও কয়েকটি কারণে সুস্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সবচেয়ে বড় কৃষি ঋণের বাজেট নিয়ে সরকার এগোচ্ছে। এেেত্রও সরকারের পারফরমেন্স আমি বলব আউট স্ট্যান্ডিং।
এক বছর সরকারের জন্য খুব বেশি সময় নয়। মাস ছয়েক তো থাকে সরকারের মধুচন্দ্রিমা পিরিয়ড হিসাবে। এরপর মাত্র ছয় মাস গিয়েছে। পূর্ববতর্ী অর্থবছরের শেষ ছয়মাস বর্তমান সরকারের আমলে পড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের বারো মাসের মধ্যে মাত্র ছয়মাস অতিবাহিত হয়েছে। যদিও সরকারের বয়স এক বছর তবু অর্থ বছরের মাত্র ছয়মাস তারা পেয়েছে। আগামী জুন মাসে তাদের পূর্ণ এক অর্থবছর শেষ হবে। গত অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বমন্দার প্রেেিত ঐ পারফরমেন্স মন্দা ছিল তা কোনভাবেই বলা যাবে না। ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির টার্গেট ছয় শতাংশ। এ ল্যমাত্রা নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি খাত সেবা খাত ভালই করছে। শিল্প খাতে কিছু সমস্যা চলছে। এখাতে স্থবিরতার কারণ হচ্ছে বিদু্যত ও গ্যাসের সঙ্কট। যদি এ দুটো সমস্যার সমাধান আগামী ছয় মাসে আংশিকভাবেও হয় তাহলে সরকারের অনেক সমস্যার সমাধান হবে। তাহলে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন মোটেই কষ্টকর হবে না। অতএব অর্থনৈতিকভাবেও বলা যায় সরকারের পারফরমেন্স ভাল। রেমিটেন্স প্রবাহ আশাতিরিক্ত। রফতানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত। আমদানি কিছুটা কম। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ। সবদিক বিবেচনা করে বলা যায় সরকারের ইকোনমিক পারফরমেন্স সার্বিকভাবে ভাল। আজকের আলোচনায় অন্য বিষয়ে আর গেলাম না। আমার বিবেচনায় আলোচ্য দুটো সূচকেই আওয়ামী লীগ সরকার পাস। পাস বলব কেন, কৃতিত্বের সঙ্গেই পাস।
২০০১ সালের শেষের দিক অথবা বড়জোর ২০০২ সালের জানুয়ারি মাস। সবেমাত্র জাতীয় সংসদের নির্বাচন সমাপ্ত হয়েছে। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার মতায় এসেছে। মুক্তিযুদ্ধের শক্তিকে পরাজিত ঘোষণা করা হয়েছে। এ সময়ে একদিন মতিঝিল থেকে শান্তিনগর আসছিলাম রিক্সা করে। আমি যে রিক্সাওয়ালাকে নিয়েছি, কিছু দূরে গিয়েই টের পেলাম তার পা ভাঙ্গা। এ ভাঙ্গা পা নিয়েই সে রিক্সা চালাচ্ছে ধীরে ধীরে। তার অবস্থা দেখে আমি তাকে গাল দিয়ে বললাম, মিয়া, তুমি নিজেই চলতে পারনা, আবার রিক্সা চালাচ্ছ! খেয়ে তোমার কাম নেই। তোমার বাড়ি কোথায়? ধীরে ধীরে রিক্সা চালাতে চালাতে সে বলল তার বাড়ি ব্রাহ্মষবাড়িয়া। বাধ্য হয়ে সে রিক্সা চালাচ্ছে। গ্রামের বাজারে তার ছোট একটা দোকান ছিল। এ দোকানের আয় দিয়েই তাদের চারজনের সংসার চলত। বাবা, মা এবং আরেক ভাই। বাবা-মা বয়স্ক। কিছু জমি আছে। তা তার বাবা চাষাবাদ করে। ও জমি দিয়ে তাদের চলে না। দুই ভাই মিলে তাই ছোট একটি দোকান দেয় বাজারে। ছোট ভাই দোকানে বসত বেশি। ও একটু আধটু রাজনীতি করত। করত কারণ, তার বাবা সব সময়ই মুজিব মুজিব করত। স্বাধীনতা সংগ্রামের সময় তার বাবা বহু কষ্ট করে 'জয়বাংলার' জন্য। বাবার মুখে এসব শুনতে শুনতে সে এক সময় আওয়ামী লীগের ভক্ত হয়ে যায়। এবং স্থানীয় আওয়ামী লীগের সঙ্গে জড়িত হয়ে পড়ে। গত নির্বাচনে সে দলের জন্য দিনরাত খাটে। সবার সঙ্গে মিলে সে পুরো উপজেলা চষে বেড়ায়। এসব বলতে বলতে সে বলল, এটাই তার দোষ। নির্বাচনের ফল ঘোষণার পর বিএনপি-জামায়াতের কমর্ীরা তাকে মেরে আধমরা করে। তার বাড়িঘর লুটপাট করে। তার বুড়ো বাবা-মাকে অপমান করে। তার ছোট ভাইকে মারধর করে। ঐ মারেই তার একটা পা ভেঙ্গেছে। এখন কিছুটা সুস্থ। কিন্তু গ্রামে থাকার কোন উপায় নেই। বাধ্য হয়ে সে আশ্রয় নিয়েছে ঢাকায়, সঙ্গে তার ভাই এবং তার বাবা-মা চলে গেছে তার মামার বাড়িতে। এসব শুনে তাকে আমি বলি, তুমি যে আমার কাছে এসব অত্যাচারের গল্প করছ, জান আমিও 'বিএনপি' করি। সে উত্তরে বলে, তাহলে আপনি আমাকে গ্রামে যাওয়ার ব্যবস্থা করে দিন। আমি বলি আমি তা পারব না। উল্টো তাকে বলি, এলাকা ছাড়লে কেন? তোমার নেতারাসহ তোমরা প্রতিরোধ গড়ে তুলতে পারলে না? আমার কথাবার্তা শুনে ওর ধারণা হলো যে আমি আসলে বিএনপি সমর্থক নই। আশ্বস্ত হয়ে সে বলল, স্যার আমরা কী কোনদিন আর মতায় যাব না? ওপরওয়ালা যদি আগামী বার মতায় নেয়, শেখ হাসিনা যদি সরকারে আসে তাহলে প্রতিটি মারের প্রতিশোধ নেব স্যার। যেভাবে আমাদের কমর্ীদের, সমর্থকদের এবং নেতাদের বিএনপির কমর্ী-সমর্থকরা পিটিয়েছে তার বদলা নেব। বাড়িঘর পোড়ানো, পঙ্গুকরণ ইত্যাদির বদলা নেব।
আজ ২০০৯ সাল গত হচ্ছে। আওয়ামী লীগ সরকার মতায় এক বছর। বিপুল ভোটাধিক্যে এ সরকার মতায় এসেছে। কোথাও কী কেউ প্রতিশোধ নিয়েছে? সারা বাংলাদেশে ২০০১ সালের নির্বাচনের পর আওয়ামী লীগ কমর্ী-সমর্থকদের ওপর কী নির্যাতন হয়েছে তার সাী তৎকালীন খবরের কাগজ। ২০০১ সালের অক্টোবরে অনুষ্ঠিত নির্বাচনের পর প্রায় এক বছর বিএনপি-জামায়াত জোট সরকার সারা দেশে অত্যাচারের স্টীমরোলার চালায়। এর ল্য ছিল দুটো জনগোষ্ঠী। আওয়ামী লীগ সমর্থক ও কমর্ী এবং অপরদিকে ধমর্ীয় সংখ্যালঘু। সারা বাংলাদেশে এই দুই শ্রেণীর নাগরিকদের ল্য করে চলে লুটপাট, ধর্ষণ, অগি্নসংযোগ, সম্পত্তি দখল, খুন জখম। এর উদাহরণ হিসাবে একটি দৈনিকের একটি সম্পাদকীয় এখানে উল্লেখ করছি।
সম্পাদকীয়টির শিরোনাম ছিল_ 'নির্বাচনের পর ভোলা : সংখ্যালঘুদের নিরাপত্তা নিশ্চিত করতে হবে'। এটি প্রকাশিত হয় ১৭ নবেম্বর ২০০১ সালে। সম্পাদকীয়টিতে লেখা হচ্ছে: "নির্বাচনের পর ভোলা শিরোনামে আমাদের পত্রিকায় ধারাবাহিকভাবে যেসব ঘটনার সরেজমিন প্রতিবেদন ছাপা হলো, সেই অমানবিকতাকে কি অতিরঞ্জন বলে পাশ কাটানো সম্ভব ? ২ অক্টোবর রাতে সন্ত্রাসীরা ভোলা জেলার লালমোহন উপজেলার অন্নদাপ্রসাদ গ্রামটির ওপর যে নারকীয় হামলা চালায় তা থেকে রা পায়নি গ্রামের ৪০০ হিন্দু বাড়ির কোনটিই। লুটপাট যেমন হয়েছে তেমন ঘটেছে নারীদের সমভ্রমহানি। এখানে ধর্ষিত হয়েছে ১০ বছরের শিশু থেকে ৩৬ বছর বয়সী পঙ্গু নারী। আর লাঞ্ছনা থেকে বাদ যাননি ৬৫ বছরের বৃদ্ধাও। আমাদের রিপোর্টে আমরা একজন প্রাণকৃষ্ণের বক্তব্য ছেপেছি; ছেপেছি তার ওপর নির্যাতনের কাহিনী, তার দেশ ছেড়ে যাওয়ার সিদ্ধান্তের কথা কিংবা পঙ্গু শেফালী রানীর। 'নাকফুল কেড়ে নেওয়া' তথা তার ধর্ষিত হওয়ার কাহিনী অথবা সন্তান প্রসরের সময় জাহাজমারা গ্রামে অষ্টাদশী গৃহবধূ জয়ন্তীর ওপর হামলা ও তার পালিয়ে আত্মরার করুণ কাহিনী। বাকি আর সবার কথা আমরা জনে জনে তথ্য সংগ্রহ করতে না পেরে ছাপতে পারিনি। কিন্তু সংখ্যালঘুদের নির্যাতনের বিভীষিকা বুঝতে আমাদের নিশ্চয়ই কষ্ট হওয়ার কথা নয়"। সম্পাদকীয়টিতে নির্যাতনের কাহিনী তুলে ধরে প্রশ্ন করা হচ্ছে 'কিন্তু এ ঘটনার পর কী ব্যবস্থা নিয়েছে সরকার ও প্রশাসন? চিহ্নিত সন্ত্রাসীরা এখনো ঘুরে বেড়াচ্ছে প্রকাশ্যে, তাদের বিরুদ্ধে কোন ব্যবস্থা নেওয়া হচ্ছে না কেন?'
ওপরে দুটো ঘটনার কথা উল্লেখ করলাম। এর মধ্যে একটি হচ্ছে একজন পা ভাঙ্গা রিক্সাওয়ালার কথা যে বাধ্য হয়ে রিক্সা চালাচ্ছে, প্রাণভয়ে ঢাকায় এসেছে নির্যাতনের হাত থেকে আত্মরার জন্য। দ্বিতীয়টি হচ্ছে সংখ্যালঘু নির্যাতনের কাহিনী। এ দুটো ঘটনা কী বিচ্ছিন্ন কোন ঘটনা? নিশ্চয়ই নয়। বিএনপি-জামায়াত সরকারের পাঁচ বছরে বিশেষ করে প্রথম বছরে এ ছিল একটা সাধারণ ব্যাপার। সারাদেশে এ সরকার আওয়ামী সমর্থক-কমর্ী এবং সংখ্যালঘুর ওপর নির্যাতনের স্টীমরোলার চালায়। পূর্ণিমা সীলের কাহিনী, প্রিন্সিপাল মুহুরীর হত্যাকাণ্ডের কথা কার না জানা ? হাজার হাজার হিন্দু পরিবার বিএনপি-জামায়াত সরকারের আমলে দেশ ত্যাগে বাধ্য হয়। বর্ডার ক্রস করতে গিয়ে একটি নিরীহ সংখ্যালঘু শিশুর গুলিবিদ্ধ হওয়ার কাহিনী তখন মিডিয়ায় ঝড় তোলে। এসব ঘটনার নিরিখে ২০০৯ সাল অর্থাৎ আওয়ামী সরকারের প্রথম বছরকে কী মনে হয় ? আওয়ামী লীগ সমর্থকরা অথবা আওয়ামী লীগ সরকার কী বিরোধীদলীয় নেতাকমর্ীদের ওপর চড়াও হয়েছে? বিএনপির নেতাকমর্ীরা কী বাড়িঘরছাড়া হয়েছে, তারা কী দেশ ছেড়ে প্রতিবেশী দেশে আশ্রয় নিয়েছে? বিএনপি-জামায়াত কমর্ীদের সহায় সম্পত্তি কী লুণ্ঠিত হয়েছে? তাদের পুকুর কী মৎস্যহীন হয়েছে? তাদের বাড়িঘর কী আগুন দিয়ে পোড়ানো হয়েছে? তাদের সমর্থক নারীকে কী গণধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে? তাদের কোন পঙ্গু নারী সমর্থককে কী ধর্ষণের শিকার হতে হয়েছে? আমি জানি নিশ্চিত ভাবেই এসব প্রশ্নের উত্তর নেতিবাচক। মিডিয়ায় এসব খবর গত বছরে চোখে পড়েনি। না প্রিন্ট মিডিয়ায়, না নন প্রিন্ট মিডিয়ায়। বিএনপি-জামায়াত মিটিং মিছিল করতে পারে না এমন খবরও নেই। এসব বিবেচনাম নিয়ে কী বলা চলে না যে আওয়ামী লীগ সরকারের সবচেয়ে বড় পারফরমেন্স হচ্ছে সহনশীল ও গণতান্ত্রিক পরিবেশ। এ সরকারের পারফরমেন্স হচ্ছে বিরোধী দলের ওপর কোন নির্যাতন নেই। বিরোধী দলের কমর্ী সমর্থকরা বাড়িছাড়া নয়, দেশ ছাড়া নয়। রাজনৈতিক সহনশীলতার এর চেয়ে বড় প্রমাণ আর কী হতে পারে? আমি মনে করি এটি বর্তমান সরকারের সবচেয়ে বড় পারফরমেন্স। বিএনপি- জামায়াতের কমর্ী-সমর্থকরা বলতে পারবে না যে তারা আওয়ামী লীগের কমর্ী-সমর্থকদের নির্যাতনের শিকার। অথচ এটি হওয়ার কথা ছিল। শত হোক মানুষ মানুষই। প্রতিহিংসা মানুষের থাকে। যে লোক মার খেয়েছে সে লোক সুযোগ পেলে মার দেয় না এ নজির কম। বর্তমান সরকারের কমর্ী-সমর্থকরা এ সহনশীলতার নজিরটা স্থাপন করেছে। সরকারপ্রধান জননেত্রী শেখ হাসিনা তাঁর কমর্ীদের আত্মসংযমে উদ্বুদ্ধ করতে পেরেছেন। এটি কী বড় পারফরমেন্স নয়? এর জন্য সরকারকে ও সরকারপ্রধানকে ধন্যবাদ জানাচ্ছি।
রাজনৈতিক েেত্রর পাশাপাশি আমি আজকের নিবন্ধে আরেকটি বিষয় উল্লেখ করব যে েেত্র বর্তমান সরকারের পারফরমেন্স দিনের আলোর মতো পরিষ্কার। পারফরমেন্সের এ ত্রেটি হচ্ছে কৃষি খাত। বিএনপি-জামায়াত জোট সরকারের আমলে জিনিসপত্রের দাম আকাশচুম্বী হয়। অবৈধ কেয়ারটেকার সরকারের আমলে দ্রব্যমূল্য এমন এক পর্যায়ে উন্নীত হয় যখন মানুষ বাঁচাও বাঁচাও বলতে শুরু করে। চালের দাম ওঠে কেজিপ্রতি ৪০-৪৫ টাকায়। মধ্যবিত্ত, নিম্নমধ্যবিত্ত, গরিব মানুষ, খেটে খাওয়া মানুষ, দিন মজুর ত্রাহি ত্রাহি শুরু করে। আজকের অবস্থা কী ? আজকের অবস্থা নিশ্চিতভাবেই স্বস্তির। চালের দাম সহনীয় পর্যায়ে রয়েছে। গরিব মানুষ, শ্রমিক শ্রেণীর মানুষ খেয়ে পরে আছে। কৃষকরা সার পাচ্ছে অর্ধেক দামে, বীজ, পানি পাচ্ছে অর্ধেক দামে। বিদু্যৎ পাচ্ছে ভতর্ুকিতে। এক কথায় বলা যায় কৃষি খাত এক অভূতপূর্ব সাফল্য দেখাচ্ছে। কৃষিতে বিনিয়োগ বাড়ছে। রেকর্ড পরিমাণ খাদ্যশস্য উৎপন্ন হয়েছে গত দুই মৌসুমে। বোরো হয়েছে বাম্পার। চলমান আমনের ফলনও হবে বাম্পার। সামনে আছে বোরো উৎপাদন। তার প্রস্তুতিও ভাল। খেটে খাওয়া মানুষ এখন চালের দামের ব্যাপারে প্রশ্ন করে না। শাকসবজি, তরিতরকারি, মাছ-মাংসের দামও মোটামুটি সহনশীল। খাদ্যের মওজুদ বর্তমান সবের্াচ্চ। সরকারের হাতে রয়েছে আটলাখ টন চাল মজুদ। কৃষি খাতের এই পারফরমেন্স বর্তমান সরকারের প্রধানতম পারফরমেন্স। এ জন্য সরকারপ্রধান এবং কৃষিমন্ত্রী দুজনই ধন্যবাদের পাত্র। অতীতে কোন সরকার কৃষিকে এত গুরুত্ব দেয়নি। তথ্যে দেখা যাচ্ছে, আওয়ামী লীগ সরকার যখনই মতায় এসেছে তখনই কৃষি খাত অগ্রাধিকার পেয়েছে। এ খাতে বিনিয়োগ বেড়েছে। ফলে কৃষিতে প্রবৃদ্ধির হার বেড়েছে। কৃষির প্রতি বর্তমান সরকারের অগ্রাধিকারের বিষয়টি আরও কয়েকটি কারণে সুস্পষ্ট। দেখা যাচ্ছে, ২০০৯-১০ অর্থবছরে সবচেয়ে বড় কৃষি ঋণের বাজেট নিয়ে সরকার এগোচ্ছে। এেেত্রও সরকারের পারফরমেন্স আমি বলব আউট স্ট্যান্ডিং।
এক বছর সরকারের জন্য খুব বেশি সময় নয়। মাস ছয়েক তো থাকে সরকারের মধুচন্দ্রিমা পিরিয়ড হিসাবে। এরপর মাত্র ছয় মাস গিয়েছে। পূর্ববতর্ী অর্থবছরের শেষ ছয়মাস বর্তমান সরকারের আমলে পড়েছে। ২০০৯-১০ অর্থবছরের বারো মাসের মধ্যে মাত্র ছয়মাস অতিবাহিত হয়েছে। যদিও সরকারের বয়স এক বছর তবু অর্থ বছরের মাত্র ছয়মাস তারা পেয়েছে। আগামী জুন মাসে তাদের পূর্ণ এক অর্থবছর শেষ হবে। গত অর্থবছরে তাদের প্রবৃদ্ধির হার ছিল ৫ দশমিক ৯ শতাংশ। বিশ্বমন্দার প্রেেিত ঐ পারফরমেন্স মন্দা ছিল তা কোনভাবেই বলা যাবে না। ২০০৯-১০ অর্থবছরের প্রবৃদ্ধির টার্গেট ছয় শতাংশ। এ ল্যমাত্রা নিয়ে সরকার এগিয়ে যাচ্ছে। কৃষি খাত সেবা খাত ভালই করছে। শিল্প খাতে কিছু সমস্যা চলছে। এখাতে স্থবিরতার কারণ হচ্ছে বিদু্যত ও গ্যাসের সঙ্কট। যদি এ দুটো সমস্যার সমাধান আগামী ছয় মাসে আংশিকভাবেও হয় তাহলে সরকারের অনেক সমস্যার সমাধান হবে। তাহলে ছয় শতাংশ প্রবৃদ্ধি অর্জন মোটেই কষ্টকর হবে না। অতএব অর্থনৈতিকভাবেও বলা যায় সরকারের পারফরমেন্স ভাল। রেমিটেন্স প্রবাহ আশাতিরিক্ত। রফতানি প্রবৃদ্ধি অব্যাহত। আমদানি কিছুটা কম। মূল্যস্ফীতি নিয়ন্ত্রণের মধ্যে। বৈদেশিক মুদ্রা রিজার্ভ রেকর্ড পরিমাণ। সবদিক বিবেচনা করে বলা যায় সরকারের ইকোনমিক পারফরমেন্স সার্বিকভাবে ভাল। আজকের আলোচনায় অন্য বিষয়ে আর গেলাম না। আমার বিবেচনায় আলোচ্য দুটো সূচকেই আওয়ামী লীগ সরকার পাস। পাস বলব কেন, কৃতিত্বের সঙ্গেই পাস।
No comments