নিজামীর বিরুদ্ধে সূচনা বক্তব্যের মাধ্যমে আজ সাক্ষ্য শুরু-যুদ্ধাপরাধী বিচার

একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে গ্রেফতারকৃত বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে প্রসিকিউশন পক্ষের ওপেনিং স্টেটমেন্টের (সূচনা বক্তব্য) মাধ্যমে আজ তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণ প্রক্রিয়া শুরুর কথা রয়েছে।


অন্যদিকে জামায়াতে ইসলামীর সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে সাক্ষ্য গ্রহণও শুরু হবে। দ্বিতীয় সাক্ষীর জবানবন্দী শুরু হবার কথা রয়েছে আজ। অপর তিনটি মামলার মধ্যে রয়েছে মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাঈদীর ও ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাজী মোবারক হোসেনের ও মীর কাশেম আলীর। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনাল-১-এ এই মামলাগুলো রয়েছে। জামায়াতের বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামীর বিরুদ্ধে ২৮ মে বুদ্ধিজীবী হত্যাসহ ১৬ অভিযোগ গঠন করা হয়। তাঁর বিরুদ্ধে একাত্তরে মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে ইসলামী ছাত্রসংঘের প্রেসিডেন্ট ও আলবদরের প্রধান হিসেবে বুদ্ধিজীবী হত্যায় জড়িত থাকার অভিযোগ আনা হয়েছে। অন্য ১৫টি অভিযোগে তাঁর বিরুদ্ধে গণহত্যা, হত্যা, লুণ্ঠন, অগ্নিসংযোগসহ এ ধরনের অপরাধে সহযোগিতা করা, ষড়যন্ত্র করা ও উর্ধতন নেতা হিসেবে নেতৃত্ব দেয়ার অভিযোগ আনা হয়েছে। আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন ১৯৭৩-এর ৩ (২) (এ), সি.জি.এইচ. এবং ৪ (১) ও) ২) ধারায় এসব অভিযোগ গঠন করা হয়। অন্যদিকে ১৩ মে একাত্তরের মুক্তিযুদ্ধের সময় মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে রবিবার ৫ ধরনের অপরাধের ৬১ অভিযোগে অভিযুক্ত করে অভিযোগ গঠন করা হয়েছে। এর মধ্য দিয়ে তাঁর বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিক বিচার শুরু হয়। মুক্তিযুদ্ধ চলাকালে মানবতাবিরোধী অপরাধের পরিকল্পনা, উস্কানি, সম্পৃক্ততা, ষড়যন্ত্র ও হত্যা-নির্যাতনের অভিযোগে তাঁকে আন্তর্জাতিক অপরাধ আইন, ১৯৭৩-এর ৩ (২), ৪ (১) ও ৪ (২) ধারায় অভিযুক্ত করা হয়েছে।
জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযমের বিরুদ্ধে ইতোমধ্যে বিশিষ্ট শিক্ষাবিদ গবেষক ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন জবানবন্দী ও সাক্ষ্য প্রদান করেছেন। চতুর্থ দিনে জেরায় অধ্যাপক মুনতাসীর মামুন বলেছেন, শান্তি কমিটির কার্যনির্বাহী বৈঠকে কারা কারা উপস্থিত ছিলেন সুনির্দিষ্টভাবে সবার নাম বলতে পারব না। তবে, গোলাম আযম উপস্থিত ছিলেন। একাত্তর সালে অধিকাংশ শান্তি কমিটির তৎকালীন ইউনিয়ন চেয়ারম্যান যাঁরা ছিলেন তাদেরকেই শান্তি কমিটির চেয়ারম্যান করা হয়েছিল কিনা তার উত্তরে মুনতাসীর মামুন বলেন, প্রায় ক্ষেত্রেই করা হয়েছিল।
আজ গোলাম আযমের বিরুদ্ধে অপর সাক্ষী জবানবন্দী প্রদান করবেন। তবে মুনতাসীর মামুনের অসমাপ্ত জেরা তার সময় অনুযায়ী করা হবে। ১০ জুন গোলাম আযমের বিরুদ্ধে প্রসিকিউশনপক্ষের সূচনা বক্তব্য উপস্থাপন শেষ করে প্রসিকিউশন। পরে ট্রাইব্যুনাল তার বিরুদ্ধে সাক্ষ্যগ্রহণের জন্য ২৪ জুন দিন ঠিক করে। একই দিনের মধ্যে এ বিষয়ে আসামিপক্ষের ডকুমেন্ট এবং তাদের সাক্ষীদের নামের তালিকা দেয়ার নির্দেশ দেয় ট্রাইব্যুনাল। ১১ জানুয়ারি ট্রাইব্যুনালে হাজির হওয়ার পর গোলাম আযমকে কারাগারে পাঠায় আদালত। পরে চিকিৎসকদের পরামর্শে তাকে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিব মেডিক্যাল বিশ্ববিদ্যালয় হাসপাতালের প্রিজনসেলে রাখা হয়।
একাত্তরের মানবতাবিরোধী অপরাধের অভিযোগে যাদের গ্রেফতার করে বিচারের মুখোমুখি করা হয়েছে তাদের মধ্যে রয়েছেন জামায়াতের সাবেক আমির গোলাম আযম, বর্তমান আমির মাওলানা মতিউর রহমান নিজামী, সেক্রেটারি জেনারেল আলী মোহাম্মদ মুজাহিদ, সহকারী সেক্রেটারি জেনারেল আব্দুল কাদের মোল্লা, কামারুজ্জামান, নায়েবে আমির মাওলানা দেলাওয়ার হোসাইন সাইদী, জামায়াতের মজলিসে শূরার সদস্য মীর কাশেম আলী ও পলাতক বাচ্চু রাজাকার নামে পরিচিত মাওলানা আবুল কালাম আজাদ। বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য সাংসদ সালাউদ্দিন কাদের চৌধুরী ও জিয়াউর রহমান সরকারের প্রভাবশালী মন্ত্রী আব্দুল আলীম।
ব্রাহ্মণবাড়িয়ার হাজী মোবারক আলীকে যুদ্ধাপরাধের অভিযোগে বিচারিক আদালতে মামলা হয়। বিচারিক আদালত তাকে জামিন না দিয়ে কারাগারে পাঠিয়ে দেয়। বিচারক বলেন, বিষয়টি এখন আন্তজার্তিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের এখতিযারে। জামিন দেবে কি দেবে না তা ট্রাইব্যুনাল দেখবে। বিষয়টি ট্রাইব্যুনালকে অবহিত করা হয়। আন্তর্জাতিক অপরাধ ট্রাইব্যুনালের-১-এর চেয়ারম্যান বিচারপতি মোঃ নিজামুল হক নাসিম বিষয়টি প্রসিকিউটরদের বলেন, তদন্ত করতে। এ বিষয়টিও আজ ট্রাইব্যুনালে তোলা হবে।

No comments

Powered by Blogger.