বন্যায় মাটি উর্বর হয়, ভীতি না ছড়ানোর অনুরোধ প্রধানমন্ত্রীর-জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ উদ্বোধন

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা মৎস্য প্রজননের প্রাকৃতিক উৎস রক্ষায় ব্যাপক জনসচেতনতা সৃষ্টির ওপর গুরুত্বারোপ করে এগুলো রক্ষায় দেশবাসীকে এগিয়ে আসার আহ্বান জানিয়েছেন। তিনি শনিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে জাতীয় মৎস্য সপ্তাহ-২০১২-এর উদ্বোধনী অনুষ্ঠানে ভাষণদানকালে এ আহ্বান জানান।


শেখ হাসিনা মৎস্য নিরাপত্তা ও সহজ প্রজনন নিশ্চিত করতে রাসায়নিক সার, কীটনাশক এবং শিল্প ও নগর বর্জ্য থেকে প্রাকৃতিক মৎস্য প্রজনন উৎস দূষণমুক্ত রাখতে সংশ্লিষ্ট মন্ত্রণালয়গুলোর মধ্যে সমন্বয় সাধনের নির্দেশ দেন। ক্ষয়ক্ষতির পাশাপাশি বন্যার উপকারী দিকও তিনি এ সময় তুলে ধরেন। খবর বাসসর ও বিডি নিউজের।
মাটির পানি ধারণ এবং উর্বরতা শক্তি বাড়াতে বন্যার প্রয়োজনীয়তা তুলে ধরার পাশাপাশি ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সরকার যে সচেতন রয়েছে, তাও জানিয়েছেন প্রধানমন্ত্রী। বর্ষা মৌসুমের শুরুতে অতিবর্ষণে উত্তরাঞ্চল ও সিলেট বিভাগের কয়েকটি জেলার নিচু এলাকা প্লাবিত হওয়ার মধ্যে শনিবার ওসমানী স্মৃতি মিলনায়তনে মৎস্য পক্ষের অনুষ্ঠানে বন্যা নিয়ে কথা বলেন প্রধানমন্ত্রী। তিনি বলেন, আমি মনে করি, বন্যার প্রয়োজন রয়েছে। বন্যা এখনও ভয়াবহ রূপ নেয়নি। যাঁরা লেখালেখি করেন, তাঁদের বলব, দয়া করে ভীতির সৃষ্টি করবেন না। আমাদের মাটির নিচে পানির পরিমাণ ঠিকমতো রাখতে হবে। বন্যা হলে তা রিচার্জ হয়। ফসল উৎপাদনে মাটির উর্বরতা কমে যায়। বন্যা হলে মাটিতে পলি পড়ে। মাটি রিচার্জ হতে বন্যার প্রয়োজন। তাই সীমিত বন্যার প্রয়োজন রয়েছে।
পাশাপাশি বন্যার ক্ষয়ক্ষতি এড়াতে সরকারের নজর রয়েছে জানিয়ে প্রধানমন্ত্রী বলেন, আমাদের খেয়াল রাখতে হবে, বন্যা যেন ক্ষতিকর না হয়। মৎস্য ও পশুসম্পদমন্ত্রী আব্দুল লতিফ বিশ্বাসের সভাপতিত্বে অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি ছিলেন কৃষিমন্ত্রী মতিয়া চৌধুরী এবং খাদ্য ও দুর্যোগ ব্যবস্থাপনা মন্ত্রী ড. আব্দুর রাজ্জাক। অনুষ্ঠানে বক্তব্য রাখেন মৎস্য ও পশুসম্পদ মন্ত্রণালয়ের সচিব উজ্জল কান্তি বিশ্বাস এবং মৎস্য বিভাগের মহাপরিচালক আরিফ আজাদ।
এ বছরের জাতীয় মৎস্য সপ্তাহের সেøাগান হচ্ছে ‘রূপালী মৎস্য দিচ্ছে ডাক, দরিদ্রতা ঘুচে যাক’। অনুষ্ঠানে প্রধানমন্ত্রী দেশের মৎস্য খাতের উন্নয়নে ব্যাপক অবদান রাখায় ২০ ব্যক্তি ও সংগঠনকে জাতীয় মৎস্য পদক প্রদান করেন। এঁদের মধ্যে পাঁজনকে স্বর্ণপদক এবং ১৫ ব্যক্তি ও সংগঠনকে রৌপ্যপদক দেয়া হয়। তিনি বলেন, জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমান দেশের সাধারণ জনগোষ্ঠীর প্রোটিন চাহিদা পূরণের পাশাপাশি বৈদেশিক মুদ্রা অর্জনের দ্বিতীয় বৃহত্তম খাত হিসেবে মাছের গুরুত্ব অনুধাবন করেছিলেন। তিনি মৎস্য উৎপাদন বৃদ্ধিতে সামাজিক আন্দোলনের ডাক দিয়েছিলেন। ১৯৭৩ সালে দেশে প্রথম মৎস্য সপ্তাহ উদযাপন শেষে তিনি জাতীয় সংসদ এলাকার লেকে মাছের পোনা অবমুক্ত করে এ আন্দোলনের সূচনা করেছিলেন বলে প্রধানমন্ত্রী উল্লেখ করেন।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার মৎস্য সম্পদের গবেষণা ও টেকসই ব্যবস্থাপনার জন্য ১২৮ কোটি টাকা ব্যয়ে ‘বাংলাদেশ মেরিন ফিশারিজ ক্যাপাসিটি বিল্ডিং প্রজেক্ট’ গ্রহণ করেছে। তিনি বলেন, এই প্রকল্পের আওতায় ২০১৩ সাল নাগাদ একটি সমুদ্র গবেষণা ও জরিপ জাহাজ ক্রয় করা হবে।
প্রধানমন্ত্রী পরিবারের আমিষের চাহিদা মেটাতে আধুনিক প্রযুক্তি ব্যবহার করে প্রতিটি বাড়ির পুকুর মৎস্য চাষের কাজে লাগানোর ওপর গুরুতা¡রোপ করেন। তিনি বলেন, বর্তমান সরকার সারাদেশের ৫৮০টি মৎস্য প্রজনন ক্ষেত্র সংরক্ষণের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। তাছাড়া জলবায়ু পরিবর্তনের ক্ষতিকর প্রভাব থেকে জলাশয় রক্ষার জন্য ১৩০টি প্রকল্প গ্রহণ করা হয়েছে। শেখ হাসিনা বলেন, ১৯৯৬ সালে তাঁর বিগত সরকার গঠনের পর গৃহীত বিভিন্ন পদক্ষেপের ফলে মৎস্য উৎপাদন ১২ লাখ টন বৃদ্ধি পায় এবং মাথাপিছু মাছ গ্রহণের পরিমাণ ২৪ গ্রাম থেকে বেড়ে ৩৩ গ্রামে পৌঁছে। এই সাফল্যের স্বীকৃতি জাতিসংঘ থেকেও পাওয়া গেছে।
তিনি বলেন, জেলেদের সচেতন করতে গত বছর সরকার ৫৬ হাজার ৫৬২ টন খাদ্য সহায়তা দিয়েছে। অথচ পূর্ববর্তী সরকারের গোটা সময়ে কেবল ৬ হাজার ৪৩০ টন খাদ্য সহায়তা দেয়া হয়। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ইলিশ শিকারের ওপর নির্ভরশীল প্রতি পরিবারকে ১০ কেজির স্থলে ৩০ কেজি চাল দিয়ে আমরা তার সুফল পেয়েছি। তিনি আরও বলেন, গত তিন বছরে এই মাছের উৎপাদন এক লাখ টন বৃদ্ধি পেয়েছে।
শেখ হাসিনা বলেন, মৎস্য অধিদফতরে আট শতাধিক নতুন কর্মকর্তা ও কর্মচারী নিয়োগ দেয়া হয়েছে এবং আরও নতুন পদ সৃষ্টি ও নিয়োগদানের প্রক্রিয়া চলছে। প্রধানমন্ত্রী দেশের সুনাম অক্ষুণœ রাখতে মাছ রফতানিকালে কোন ধরনের জালিয়াতি না করতে এবং আন্তর্জাতিক মান বজায় রাখতে রফতানিকারকদের প্রতি আহ্বান জানান। তিনি কাঁকড়া, ঝিনুক ও এল মাছের উৎপাদন ও রফতানি বৃদ্ধিরও আহ্বান জানান।
গণমাধ্যমে চলতি বর্ষা মৌসুমে কম পরিমাণ ইলিশ ধরা পড়া নিয়ে প্রকাশিত প্রতিবেদন ও কোন কোন মহলের উদ্বেগ প্রকাশের জবাবে শেখ হাসিনা বলেন, ইলিশ ধরার ভরা মৌসুম হলো শ্রাবণের শুরু“ থেকে ভাদ্রের শেষ পর্যন্ত। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ‘ফলে ইলিশ ধরা পড়া নিয়ে এখনই উদ্বিগ্ন হওয়ার কিছু নেই।’ তিনি আশা প্রকাশ করে বলেন, ‘এ বছর সুস্বাদু ইলিশের স্বাদ পেতে শ্রাবণের অবিরাম বর্ষণের জন্য অপেক্ষা করুন। এ সময় বাজারে প্রচুর মাছ আসবে।’ মৎস্য সপ্তাহ-২০১২ উদ্বোধনের পর প্রধানমন্ত্রী তাঁর সরকারী বাসভবন গণভবনের লেকে মিঠা পানির মাছের পোনা অবমুক্ত করেন।

No comments

Powered by Blogger.