প্রসঙ্গ ইসলাম-খ্রিস্টীয় নববর্ষ ও আমরা by অধ্যাপক হাসান আবদুল কাইয়ূম
আমরা যাকে ইংরেজী সন বলি আসলে এটা গ্রেগরিয়ান সন বা ক্যালেন্ডার। ১৭৫৭ খৃস্টাব্দের ২৩ জুন পলাশীর প্রান্তরে আমাদের স্বাধীনতার সূর্য লুট করে নেয় ব্রিটিশ বেনিয়া চক্র মীরজাফর আর জগৎ শেঠদের সহযোগিতায়।
ব্রিটিশ ইস্ট ইন্ডিয়া কোম্পানি নামক সেই বেনিয়া চক্র আমাদের দেশে ইংরেজ নামে পরিচিত হয়। স্বভাবতই তারা যে ক্যালেন্ডার এখানে আনল তা ইংরেজী ক্যালেন্ডার নামেই পরিচিত হলো।
একটি জাতির সংস্কৃতি সেই জাতির নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, ধ্যান-ধারণা, রুচিজ্ঞান, শিা-দীা, আশা-আকাঙ্া, ভাষা ইত্যাদির সামগ্রিক পরিচয় বহন করে এবং তা বিশ্বদরবারে সেই জাতির আত্মপরিচয়কে বুলন্দ করে। মূলত সংস্কৃতি হচ্ছে একটা জাতির দর্পণ। সংস্কৃতির বহুবিধ উপাদানের মধ্যে নববর্ষ অন্যতম। আমাদের দেশে তিনটে নববর্ষের প্রতি বছর আবির্ভাব ঘটে।
পহেলা বৈশাখ বা ১৪ এপ্রিল আবিভর্ূত হয় বাংলা নববর্ষ। ১ মুহররম আবিভর্ূত হয় হিজরী নববর্ষ এবং ইংরেজী নববর্ষ আসে ১ জানুয়ারি। আমাদের দেশে বাংলা নববর্ষের যে আনন্দ বৈভব কি গ্রামে কি নগরে-গঞ্জে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে, খুশির আমেজে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মানুষ; ইংরেজী নববর্ষ কিন্তু শহরের বিশেষ মহল ছাড়া তা ব্যাপকতার আদলে কোথাও আলোড়ন সৃষ্টি করে না। তবুও আমরা ইংরেজী নববর্ষকে আসতে দেখি নিছক গতানুগতিক অনুভবে। তবুও ইংরেজী নববর্ষ আসে। ৩১ ডিসেম্বর রাত বারোটার ঘণ্টা বেজে ওঠার সাথে সাথে নববর্ষের সূচনা-ধ্বনি অনুরণিত হয়। ঘোষিত হয় ইংরেজী নববর্ষের আগমন বারতা। মধ্যরাতের সেই মুহূর্তটা আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে কোনোরূপ আনন্দ আবেগ সৃষ্টি না করলেও অতিউৎসাহী কিছু তরুণ-তরুণী এবং খৃস্টান জগত ঐ মুহূর্তে হ্যাপি নিউ ইয়ার উচ্চারণের মধ্য দিয়ে এক হই-হুল্লোড় উল্লাস ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। ঘটে যায় কতই না অঘটন; ঘটে যায় কতই না পৈশাচিক কর্মকাণ্ড, মদ্যপানের নামে বহু স্থানে জীবন পানের মহড়াও চলে। ইংরেজী নববর্ষ আসে পৌষের রাতের গভীরে নিকষ অন্ধকারে প্রচণ্ড শীতের প্রবাহ মেখে।
ইংরেজী ক্যালেন্ডার যেহেতু আমাদের কাজকর্মের তারিখ নির্ধারণে, হিসেব-নিকেশ সংরণে, আন্তর্জাতিক আদান-প্রদান ও সম্পর্ক স্থাপনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তাই এতে যতই ঔপনিবেশিক গন্ধ থাকুক না কেন, যতই বিজাতীয় হোক না কেন, এতে যতই ১৯০ বছরের গোলামির জোয়ালের চিহ্ন থাকুক না কেন আমরা, এর থেকে মুক্ত হতে পারছি না এই কারণে বোধ করি যে, আমরা স্বকীয় সত্তা সজাগ হওয়ার চেতনার কথা বললেও, আমরা নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমুন্নত করার কথা বললেও তা যেন অবস্থার দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করলে মনে হয় ওটা যেন বাতকা বাত তথা কথার কথা।
ইংরেজী নববর্ষ আমাদের স্কন্ধে সিন্দবাদের সেই নাছোড় দৈত্যটির মতো এমনভাবে চেপে বসে আছে যে, শত চেষ্টা করেও আমরা একে ছাড়তে পারছি না। ইংরেজী নববর্ষ আমাদের নতুন দিনের স্বপ্ন দেখায়। ইংরেজী ক্যালেন্ডারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা বিভিন্ন যুগে এর পরিমার্জনের তথ্য লাভ করি। ইংরেজী সনটি একটা সৌর সন।
জানা যায় মিসরীয় প্রাচীন সভ্যতা পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সৌর সনের উদ্ভব ঘটায়। মিসরীয় ক্যালেন্ডার পরীা নিরীা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, খৃস্টপূর্ব ৪২৩৬ অব্দ থেকে ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকার ব্যবহার শুরু হয়। মিসরীয়দের থেকে গ্রীকরা ক্যালেন্ডার ব্যবহারের সূত্রপাত ঘটায়। রোমানরা তাদের প্রথম ক্যালেন্ডার লাভ করে গ্রীকদের কাছ থেকে।্ রোমানদের প্রাচীন ক্যালেন্ডারে মাস ছিল ১০টি এবং তারা বর্ষ গণনা করত ৩০৪ দিনে। মধ্য শীত মৌসুমের ৬০ দিন তারা গণনায় আনত না। রোমানদের বর্ষ গণনার প্রথম মাস ছিল মার্চ। মার্চের ১ তারিখে তারা নববর্ষ উৎসব পালন করত।
শীতকালের ৬০ দিন বর্ষ গণনায় না আনার কারণে যে দুটো মাসের ঘাটতি হতো তা পূরণ করার জন্য তাদের অনির্দিষ্ট দিন ও মাসের দ্বারস্থ হতে হতো। সে কারণে তখন জনসাধারণের মধ্যে ক্যালেন্ডারের ব্যবহার ছিলনা বললেই চলে। রোমের উপাখ্যানখ্যাত প্রথম সম্রাট রমুলাস একটা নিজস্ব ক্যালেন্ডার চালু করার চেষ্টা করেছিলেন ৭৩৮ খৃস্টপূর্বাব্দে। পরবর্তীকালে রোমান সম্রাট নুমা ১০ মাসের সঙ্গে আরও দুটো মাস যুক্ত করেন। সে মাস দুটোই হচ্ছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। তিনি জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে এবং ফেব্রুয়ারিকে বছরের শেষ মাস হিসেবে যুক্ত করেন। তখন থেকে ১ জানুয়ারি নববর্ষ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। জানুয়ারি মাস ধার্য করা হয় ২৯ দিনে। ফেব্রুয়ারি মাস ধার্য করা হয় ২৮ দিনে।
রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিসরীয় ক্যালেন্ডার চালু করেন রোমে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পরামর্শে খৃস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সেই বছরের নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যিখানে ৬৭ দিন এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে ২৩ দিন এই মোট ৯০ দিন যুক্ত করে সংস্কারকৃত নতুন ক্যালেন্ডার চালু করেন। তাতে মার্চ, কুইন্টিলিস ও অক্টোবর মাসের দিন সংখ্যা করা হয় ৩১ দিন। অপরদিকে ২ দিন যুক্ত করে জানুয়ারি ও সেকসটিনিস মাসকে ৩১ দিন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনেই থাকে। তবে প্রতি চার বছর অন্তর এর সঙ্গে ১ দিন যুক্ত করা হয়। জুলিয়াস সিজারের নামে কুইন্টিলিস মাসের নাম হয় জুলাই। পরবর্তীকালে সম্রাট অগাস্টাসের নামে সেক্সটিনিস মাসের নামকরণ হয় আগস্ট। জুলিয়াস সিজার প্রবর্তিত ক্যালেন্ডার জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত হয়। মিসরীয় ক্যালেন্ডারে সৌর বর্ষ ছিল ৩৬৫ দিনে। কিন্তু জুলিয়াস সিজারের সংস্কারের ফলে তা তিন শ' সাড়ে পঁয়ষটি দিনে এসে দাঁড়ায়। যীশু খৃস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইও নিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামের এক খৃস্টান পাদরি ক্রিস্টিয়ান এরা বা খৃস্টাব্দের প্রবর্তন করেন ৫৩২ অব্দে।
১৫৮২ খৃস্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পরামর্শে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। তাঁর নির্দেশে ১৫৮২ খৃস্টাব্দের অক্টোবর মাসের ৫ তারিখকে ১৫ তারিখ করে ১০ দিন বাদ দেয়া হয়। ঘোষণা করা হয়, যেসব শতবষর্ীয় সাল ৪০০ দ্বারা বিভক্ত হবে তা লিপইয়ার বলে গণ্য হবে। এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই আমাদের দেশে ইংরেজী ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। এই ক্যালেন্ডারের সনের শেষে সংেেপ যে 'এডি' লেখা হয় তার পুরোটা হচ্ছে 'এনো ডোমিনি' অর্থাৎ আমাদের প্রভুর বছর। এই ক্যালেন্ডার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার উচ্ছিষ্ট হিসেবে আমাদের দেশে রয়ে গেছে।
সে যা হোক, ইসলাম ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জি গণনার ওপর খাস গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন: আমি রাত ও দিনকে করেছি দুটো নিদর্শন। রাতের নিদর্শনকে অপসারিত করেছি এবং দিবসের নিদর্শনকে করেছি আলোকপ্রদ যাতে তোমরা তোমাদের রব-এর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষ সংখ্যা (সন) ও হিসেব জানতে পার। (সূরা বনী ইসরাইল: আয়াত ১২)।
নববর্ষ ঘটে যাওয়া ইতিহাস বুকে ধারণ করে নতুন ইতিহাস গড়তে আবিভর্ূত হয়। শুভ হোক, সুখের হোক, শান্তির হোক, সমৃদ্ধির হোক নববর্ষ।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আঞ্জুমানে তোয়াজিয়া, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.)
একটি জাতির সংস্কৃতি সেই জাতির নিজস্ব ইতিহাস-ঐতিহ্য, বিশ্বাস, আচার-অনুষ্ঠান, ধ্যান-ধারণা, রুচিজ্ঞান, শিা-দীা, আশা-আকাঙ্া, ভাষা ইত্যাদির সামগ্রিক পরিচয় বহন করে এবং তা বিশ্বদরবারে সেই জাতির আত্মপরিচয়কে বুলন্দ করে। মূলত সংস্কৃতি হচ্ছে একটা জাতির দর্পণ। সংস্কৃতির বহুবিধ উপাদানের মধ্যে নববর্ষ অন্যতম। আমাদের দেশে তিনটে নববর্ষের প্রতি বছর আবির্ভাব ঘটে।
পহেলা বৈশাখ বা ১৪ এপ্রিল আবিভর্ূত হয় বাংলা নববর্ষ। ১ মুহররম আবিভর্ূত হয় হিজরী নববর্ষ এবং ইংরেজী নববর্ষ আসে ১ জানুয়ারি। আমাদের দেশে বাংলা নববর্ষের যে আনন্দ বৈভব কি গ্রামে কি নগরে-গঞ্জে উজ্জীবিত হয়ে ওঠে, খুশির আমেজে প্রাণবন্ত হয়ে ওঠে বাংলাদেশের মানুষ; ইংরেজী নববর্ষ কিন্তু শহরের বিশেষ মহল ছাড়া তা ব্যাপকতার আদলে কোথাও আলোড়ন সৃষ্টি করে না। তবুও আমরা ইংরেজী নববর্ষকে আসতে দেখি নিছক গতানুগতিক অনুভবে। তবুও ইংরেজী নববর্ষ আসে। ৩১ ডিসেম্বর রাত বারোটার ঘণ্টা বেজে ওঠার সাথে সাথে নববর্ষের সূচনা-ধ্বনি অনুরণিত হয়। ঘোষিত হয় ইংরেজী নববর্ষের আগমন বারতা। মধ্যরাতের সেই মুহূর্তটা আমাদের বৃহত্তর জনগোষ্ঠীর কাছে কোনোরূপ আনন্দ আবেগ সৃষ্টি না করলেও অতিউৎসাহী কিছু তরুণ-তরুণী এবং খৃস্টান জগত ঐ মুহূর্তে হ্যাপি নিউ ইয়ার উচ্চারণের মধ্য দিয়ে এক হই-হুল্লোড় উল্লাস ধ্বনিতে মুখরিত হয়ে ওঠে। ঘটে যায় কতই না অঘটন; ঘটে যায় কতই না পৈশাচিক কর্মকাণ্ড, মদ্যপানের নামে বহু স্থানে জীবন পানের মহড়াও চলে। ইংরেজী নববর্ষ আসে পৌষের রাতের গভীরে নিকষ অন্ধকারে প্রচণ্ড শীতের প্রবাহ মেখে।
ইংরেজী ক্যালেন্ডার যেহেতু আমাদের কাজকর্মের তারিখ নির্ধারণে, হিসেব-নিকেশ সংরণে, আন্তর্জাতিক আদান-প্রদান ও সম্পর্ক স্থাপনে ব্যবহৃত হয়ে আসছে, তাই এতে যতই ঔপনিবেশিক গন্ধ থাকুক না কেন, যতই বিজাতীয় হোক না কেন, এতে যতই ১৯০ বছরের গোলামির জোয়ালের চিহ্ন থাকুক না কেন আমরা, এর থেকে মুক্ত হতে পারছি না এই কারণে বোধ করি যে, আমরা স্বকীয় সত্তা সজাগ হওয়ার চেতনার কথা বললেও, আমরা নিজস্ব সংস্কৃতিকে সমুন্নত করার কথা বললেও তা যেন অবস্থার দৃষ্টিতে বিশ্লেষণ করলে মনে হয় ওটা যেন বাতকা বাত তথা কথার কথা।
ইংরেজী নববর্ষ আমাদের স্কন্ধে সিন্দবাদের সেই নাছোড় দৈত্যটির মতো এমনভাবে চেপে বসে আছে যে, শত চেষ্টা করেও আমরা একে ছাড়তে পারছি না। ইংরেজী নববর্ষ আমাদের নতুন দিনের স্বপ্ন দেখায়। ইংরেজী ক্যালেন্ডারের ইতিহাস পর্যালোচনা করলে আমরা বিভিন্ন যুগে এর পরিমার্জনের তথ্য লাভ করি। ইংরেজী সনটি একটা সৌর সন।
জানা যায় মিসরীয় প্রাচীন সভ্যতা পৃথিবীতে সর্বপ্রথম সৌর সনের উদ্ভব ঘটায়। মিসরীয় ক্যালেন্ডার পরীা নিরীা করে জ্যোতির্বিজ্ঞানীরা মনে করেন যে, খৃস্টপূর্ব ৪২৩৬ অব্দ থেকে ক্যালেন্ডার বা পঞ্জিকার ব্যবহার শুরু হয়। মিসরীয়দের থেকে গ্রীকরা ক্যালেন্ডার ব্যবহারের সূত্রপাত ঘটায়। রোমানরা তাদের প্রথম ক্যালেন্ডার লাভ করে গ্রীকদের কাছ থেকে।্ রোমানদের প্রাচীন ক্যালেন্ডারে মাস ছিল ১০টি এবং তারা বর্ষ গণনা করত ৩০৪ দিনে। মধ্য শীত মৌসুমের ৬০ দিন তারা গণনায় আনত না। রোমানদের বর্ষ গণনার প্রথম মাস ছিল মার্চ। মার্চের ১ তারিখে তারা নববর্ষ উৎসব পালন করত।
শীতকালের ৬০ দিন বর্ষ গণনায় না আনার কারণে যে দুটো মাসের ঘাটতি হতো তা পূরণ করার জন্য তাদের অনির্দিষ্ট দিন ও মাসের দ্বারস্থ হতে হতো। সে কারণে তখন জনসাধারণের মধ্যে ক্যালেন্ডারের ব্যবহার ছিলনা বললেই চলে। রোমের উপাখ্যানখ্যাত প্রথম সম্রাট রমুলাস একটা নিজস্ব ক্যালেন্ডার চালু করার চেষ্টা করেছিলেন ৭৩৮ খৃস্টপূর্বাব্দে। পরবর্তীকালে রোমান সম্রাট নুমা ১০ মাসের সঙ্গে আরও দুটো মাস যুক্ত করেন। সে মাস দুটোই হচ্ছে জানুয়ারি ও ফেব্রুয়ারি। তিনি জানুয়ারিকে বছরের প্রথম মাস হিসেবে এবং ফেব্রুয়ারিকে বছরের শেষ মাস হিসেবে যুক্ত করেন। তখন থেকে ১ জানুয়ারি নববর্ষ হিসেবে গণ্য হয়ে আসছে। জানুয়ারি মাস ধার্য করা হয় ২৯ দিনে। ফেব্রুয়ারি মাস ধার্য করা হয় ২৮ দিনে।
রোমান সম্রাট জুলিয়াস সিজার মিসরীয় ক্যালেন্ডার চালু করেন রোমে। জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পরামর্শে খৃস্টপূর্ব ৪৬ অব্দে সেই বছরের নবেম্বর ও ডিসেম্বর মাসের মধ্যিখানে ৬৭ দিন এবং ফেব্রুয়ারি মাসের শেষে ২৩ দিন এই মোট ৯০ দিন যুক্ত করে সংস্কারকৃত নতুন ক্যালেন্ডার চালু করেন। তাতে মার্চ, কুইন্টিলিস ও অক্টোবর মাসের দিন সংখ্যা করা হয় ৩১ দিন। অপরদিকে ২ দিন যুক্ত করে জানুয়ারি ও সেকসটিনিস মাসকে ৩১ দিন করা হয়। ফেব্রুয়ারি মাস ২৮ দিনেই থাকে। তবে প্রতি চার বছর অন্তর এর সঙ্গে ১ দিন যুক্ত করা হয়। জুলিয়াস সিজারের নামে কুইন্টিলিস মাসের নাম হয় জুলাই। পরবর্তীকালে সম্রাট অগাস্টাসের নামে সেক্সটিনিস মাসের নামকরণ হয় আগস্ট। জুলিয়াস সিজার প্রবর্তিত ক্যালেন্ডার জুলিয়ান ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত হয়। মিসরীয় ক্যালেন্ডারে সৌর বর্ষ ছিল ৩৬৫ দিনে। কিন্তু জুলিয়াস সিজারের সংস্কারের ফলে তা তিন শ' সাড়ে পঁয়ষটি দিনে এসে দাঁড়ায়। যীশু খৃস্টের জন্ম বছর থেকে গণনা করে ডাইও নিসিয়াম এক্সিগুয়াস নামের এক খৃস্টান পাদরি ক্রিস্টিয়ান এরা বা খৃস্টাব্দের প্রবর্তন করেন ৫৩২ অব্দে।
১৫৮২ খৃস্টাব্দে রোমের পোপ ত্রয়োদশ গ্রেগরি জ্যোতির্বিজ্ঞানীদের পরামর্শে জুলিয়ান ক্যালেন্ডার সংশোধন করেন। তাঁর নির্দেশে ১৫৮২ খৃস্টাব্দের অক্টোবর মাসের ৫ তারিখকে ১৫ তারিখ করে ১০ দিন বাদ দেয়া হয়। ঘোষণা করা হয়, যেসব শতবষর্ীয় সাল ৪০০ দ্বারা বিভক্ত হবে তা লিপইয়ার বলে গণ্য হবে। এই গ্রেগরিয়ান ক্যালেন্ডারই আমাদের দেশে ইংরেজী ক্যালেন্ডার নামে পরিচিত। এই ক্যালেন্ডারের সনের শেষে সংেেপ যে 'এডি' লেখা হয় তার পুরোটা হচ্ছে 'এনো ডোমিনি' অর্থাৎ আমাদের প্রভুর বছর। এই ক্যালেন্ডার ব্রিটিশ ঔপনিবেশিকতার উচ্ছিষ্ট হিসেবে আমাদের দেশে রয়ে গেছে।
সে যা হোক, ইসলাম ক্যালেন্ডার বা বর্ষপঞ্জি গণনার ওপর খাস গুরুত্ব দিয়েছে। আল্লাহ জাল্লা শানুহু ইরশাদ করেন: আমি রাত ও দিনকে করেছি দুটো নিদর্শন। রাতের নিদর্শনকে অপসারিত করেছি এবং দিবসের নিদর্শনকে করেছি আলোকপ্রদ যাতে তোমরা তোমাদের রব-এর অনুগ্রহ সন্ধান করতে পার এবং যাতে তোমরা বর্ষ সংখ্যা (সন) ও হিসেব জানতে পার। (সূরা বনী ইসরাইল: আয়াত ১২)।
নববর্ষ ঘটে যাওয়া ইতিহাস বুকে ধারণ করে নতুন ইতিহাস গড়তে আবিভর্ূত হয়। শুভ হোক, সুখের হোক, শান্তির হোক, সমৃদ্ধির হোক নববর্ষ।
লেখক: প্রতিষ্ঠাতা সভাপতি আঞ্জুমানে তোয়াজিয়া, উপদেষ্টা ইনস্টিটিউট অব হযরত মুহম্মদ (সা.)
No comments