নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা বলেছেন, ‘আমরা বিশ্বমন্দার মধ্যেও অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ধরে রেখেছি; নিজস্ব অর্থায়নে অবশ্যই পদ্মা সেতু নির্মাণ করতে পারব।’ প্রধানমন্ত্রী বুধবার জাতীয় সংসদে নির্ধারিত প্রশ্নোত্তর পর্বে বক্তব্য রাখার সময় এ কথা বলেন। তাঁর এ বক্তব্যে নিঃসন্দেহে একটি আত্মমর্যাদাসম্পন্ন জাতির অন্তরের কথাই প্রকাশিত হয়েছে।


বিশ্বব্যাংক শুধু পদ্মা সেতু প্রকল্পের ঋণচুক্তিই বাতিল করেননি। সেই সঙ্গে তারা দুর্নীতির অপবাদও দিয়েছে।
এভাবে বিশ্বব্যাংক সরকার ও জনগণকে অপমান করেছে। প্রধানমন্ত্রী বিশ্বব্যাংকের প্রতি পাল্টা প্রশ্ন ছুড়ে দিয়ে বলেন, ‘তারা যেখানে সেতু নির্মাণের লক্ষ্যে এখন পর্যন্ত একটি টাকাও বরাদ্দ করেনি; সেখানে দুর্নীতি হলো কিভাবে?’ আসলে গুরুত্বপূর্ণ পদ্মা সেতু প্রকল্প থেকে বিশ্বব্যাংকের সাম্প্রতিক ‘পিঠটানের ঘটনাটি’ সরকার ও জনগণকে একটি কঠিন বাস্তবতার দ্বারপ্রান্তে নিয়ে গেছে। সেই বাস্তবতাটি হলো, দেশের উন্নয়নের যে কোন পর্যায়ে ‘স্বনির্ভর অর্থনীতির’ কোন বিকল্প নেই। পরনির্ভর অর্থনীতি কখনই কল্যাণ বয়ে আনে না। বিদেশী সাহায্য নির্ভর প্রকল্প বাস্তবায়নের ক্ষেত্রে অনেকাংশে দাতাদেশ কিংবা সংস্থার ইচ্ছা-অনিচ্ছার ওপর নির্ভরশীল হতে হয়। এটা খুব বিব্রতকর অবস্থা। এক্ষেত্রে বেশির ভাগ দাতাদেশ কিংবা সংস্থাসমূহ নিজেদের স্বার্থকেই প্রাধান্য দেয়; তাদের কাছে বাংলাদেশের সরকার ও জনগণের প্রয়োজন অনেক কম গুরুত্বপূর্ণ। বিষয়টি সম্প্রতি বিশ্বব্যাংক কর্তৃক পদ্মা সেতুর ঋণচুক্তি বাতিলের ঘটনায় আরও একবার প্রমাণিত হলো।
সুতরাং প্রধানমন্ত্রী নিজস্ব অর্থায়নে পদ্মা সেতু প্রকল্প বাস্তবায়নের যে অঙ্গীকার ব্যক্ত করেছেন তা জাতিকে আত্মবিশ্বাসী ও আত্মনির্ভরশীল হওয়ার পথে অনেকটাই এগিয়ে নিয়ে যাবে। আর কতকাল নিজের দেশের উন্নয়নের জন্য এমন পরনির্ভরতা? বিদেশী সংস্থার কাছ থেকে ঋণ নিয়ে আর কতকাল পথ হাঁটতে হবে আমাদের? অথচ অর্থনৈতিক দিক দিয়ে আমরা অনেক এগিয়ে গেছি। সারাবিশ্বে যখন মন্দা; ঠিক তখনও বাংলাদেশের অর্থনীতিতে স্থিতিশীলতা বজায় রয়েছে। অনেক প্রতিকূলতার বিরুদ্ধে সংগ্রাম করে বাংলাদেশ এগিয়ে চলেছে। বাংলাদেশের উন্নয়নের পথে সবচেয়ে বড় সমস্যা হলো প্রতিবছর বিপুল জনসংখ্যা বৃদ্ধি। দেশের দরিদ্র জনগোষ্ঠীর মধ্যে জনসংখ্যা বৃদ্ধির হার খুবই বেশি।
অনেক দাতা সংস্থা চায়, বাংলাদেশের মতো কিছু উন্নয়নশীল দেশ যেন চিরকালই পরনির্ভরশীল থাকে। এর ফলে মূলত উন্নয়নমূলক দেশগুলোর ওপর চাপ সৃষ্টি করাও শিল্পোন্নত দেশগুলোর স্বার্থরক্ষা তাদের পক্ষে সম্ভব হয়। অথচ বাংলাদেশ এখন সম্ভাবনাময়। জানা গেছে, বাংলাদেশের ১৭টি জীবন বীমা কোম্পানি এখন পদ্মা সেতু নির্মাণে ১৪ হাজার কোটি টাকা বিনিয়োগে আগ্রহী। এ খবরটি খুবই উৎসাহব্যঞ্জক। বর্তমানে বিদেশে কর্মরত আছেন প্রায় ৮০ লাখ বাঙালী। তারা প্রতি মাসে হাজার হাজার কোটি টাকা পাঠাচ্ছেন। সুতরাং শুধু পদ্মা সেতু না; নিজস্ব অর্থায়নে বাংলাদেশে প্রতিটি উন্নয়নমূলক প্রকল্পের বাস্তবায়ন সম্ভব। সরকারকে কেবল স্বনির্ভর ও জনকল্যাণকর অর্থনৈতিক পরিকল্পনা বাস্তবায়নের নীতিকে প্রাধান্য দিতে হবে। একই সঙ্গে আমরা চাই সর্বস্তরে দুর্নীতিমুক্ত অর্থনীতিও। উন্নয়নের ক্ষেত্রে পরনির্ভরতা কাম্য নয়। নিজের যা আছে তাই নিয়ে এগিয়ে যেতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.