এবিসি রেডিও-প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’-ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিংয়ে দক্ষ জনবল প্রয়োজন

এবিসি রেডিওর স্টুডিওতে প্রথম আলো জবস ‘হতে চাই পেতে চাই’ অনুষ্ঠানে ৩ এপ্রিল এসেছিলেন কিংস্টোন স্মিথ (বাংলাদেশ) লিমিটেডের জ্যেষ্ঠ আঞ্চলিক ব্যবস্থাপক মারুফ হাসান। তিনি কথা বলেছেন কথাবন্ধু ব্রতীর সঙ্গে। ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং (Foreignsic Accounting) বিষয়ে পড়াশোনা এবং এ পেশার নানা দিক নিয়ে আলোচনা করেছেন তিনি।


কথাবন্ধু: বাংলাদেশে ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং বিষয়টি একেবারেই নতুন। এ বিষয়টিকে কেন ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং বলা হয়?
মারুফ হাসান: ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং বাংলাদেশে নতুন নয়। এর আগে অনেকেই এ বিষয়ে পড়াশোনা করেছেন। ধারণা আগেই ছিল, কাজের ক্ষেত্র কিছুটা নতুন। এ বিষয়টি আদালতের সঙ্গে সম্পর্কিত বলেই একে ফরেনসিক বলা হচ্ছে। যখন কোনো অপরাধ সংঘটিত হয়, তখন আদালতকে তা জানাতে হয়। করপোরেট খাতসহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে আর্থিক অপরাধ আগেও সংঘটিত হতো এবং এখনো হচ্ছে। সঠিক তদন্তের মাধ্যমে অপরাধের ওপর একটি প্রতিবেদন তৈরি করতেই ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিংয়ের প্রয়োজনীয়তা রয়েছে। কী ধরনের আর্থিক অপরাধ হয়েছে, কীভাবে হয়েছে অথবা মানি লন্ডারিং হয়েছে কি না ইত্যাদি তথ্য এর মাধ্যমে বের করা সম্ভব। সে ক্ষেত্রে একজন ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্টকে আদালতের কাছে সঠিক তথ্য তুলে দেওয়ার জন্য একটি প্রতিবেদন তৈরি করতে হয়।
এ জন্য ফরেনসিক নাম দিয়ে যুক্তরাজ্য, যুক্তরাষ্ট্র ও কানাডা এ বিষয়টিকে নতুন একটি ক্ষেত্র হিসেবে উন্নয়নের চেষ্টা করছে।
কথাবন্ধু: কোন কোন ক্ষেত্রে ও কীভাবে একটি প্রতিষ্ঠান এটা ব্যবহার করতে পারে?
মারুফ হাসান: বর্তমানে সরকারি, বেসরকারি ও করপোরেট প্রতিষ্ঠানগুলো ফিন্যানসিয়াল বা আর্থিক অপরাধের ক্ষেত্রে দক্ষ ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্টদের খোঁজ করে। এ ছাড়া রাজস্ব আদায়ের ক্ষেত্রে কোনো অনিয়ম হয়েছে কি না, তা উদ্ঘাটনেও ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্টদের প্রয়োজন রয়েছে। এ জন্য যুক্তরাজ্য ও যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিটি ভালো সিএ ফার্মে আলাদা ফরেনসিক বিভাগ রয়েছে। যেকোনো ক্ষেত্রেই সেটা ল ফার্ম হোক আর গভর্নমেন্ট রেগুলেটরি এজেন্সিই হোক না কেন, প্রতিষ্ঠান যদি মনে করে যে এখানে আর্থিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে, হচ্ছে বা হতে পারে, তাহলে তারা ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্ট নিতে পারে।
কথাবন্ধু: বাংলাদেশে এ ক্ষেত্রে কাজের সুযোগ বা পরিধি কতটুকু?
মারুফ হাসান: করপোরেট খাতের বিকাশের ফলে দেশে এ কাজের ক্ষেত্র দিন দিন বাড়ছে। কোনো প্রতিষ্ঠান যদি হঠাৎ বন্ধ হয়ে যায়, সে ক্ষেত্রে সরকার হয়তো ওই প্রতিষ্ঠানের যাবতীয় তথ্য তদন্ত করে দেখতে চায়। জানতে চায়, প্রতিষ্ঠানটিতে মানি লন্ডারিং বা আর্থিক অপরাধ সংঘটিত হয়েছে কিনা। এই কাজটি করতেই দরকার ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্টের। দেশে দক্ষ ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্টের প্রয়োজন রয়েছে।
কথাবন্ধু: যদি কেউ এটাকে পেশা হিসেবে নিতে চান, তাহলে নিজেকে কীভাবে প্রস্তুত করবেন?
মারুফ হাসান: ফরেনসিক অ্যাকাউন্ট্যান্টদের একটি প্রধান কাজের ক্ষেত্র হচ্ছে অডিট। যোগ্যতাসম্পন্ন অ্যাকাউন্ট্যান্ট হলে কীভাবে অডিট করতে হয় তা তিনি জানেন।কারণ তাঁর তিন বছরের হাতেকলমে (প্রাকটিক্যাল) কাজের অভিজ্ঞতা রয়েছে। এ বিষয়ে নিজেকে যোগ্য করে তুলতে হলে দেশে অ্যাকাউন্ট্যান্সি বিষয়ে পড়াশোনার জন্য যে কয়েকটি প্রতিষ্ঠান আছে, সেখান থেকে ডিগ্রি নেওয়া যেতে পারে। বিশ্বের অনেক বিশ্ববিদ্যালয়ে বিএসসিতে ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিং নামে কোর্স রয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার একটি বিশ্ববিদ্যালয়ে স্নাতকোত্তর ডিগ্রি আছে। মূলত পেশাদারি যোগ্যতাসম্পন্ন অ্যাকাউন্ট্যান্টরাই এখানে বেশি প্রাধান্য পাচ্ছেন। সে ক্ষেত্রে আইন নিয়ে পড়াশোনা করতে পারেন। যাঁদের আগ্রহ আছে, তাঁরাই মূলত ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিংয়ের দিকে আসতে পারেন।
কথাবন্ধু: এ বিষয়ে বাংলাদেশে কোনো প্রাতিষ্ঠানিক শিক্ষার সুযোগ আছে কি?
মারুফ হাসান: এ মুহূর্তে বাংলাদেশে প্রাতিষ্ঠানিক কোনো একাডেমি নেই। তবে পার্শ্ববর্তী দেশ ভারতে আছে। এ ছাড়া ইউরোপে, ইউএসএ ও ইউকেতে যেসব বিশ্ববিদ্যালয়ে অ্যাকাউন্টিং বিভাগ আছে, সেখানে ফরেনসিকের ওপরও আলাদা বিভাগ রয়েছে। আমাদের দেশে প্রফেশনাল ইনস্টিটিউট বা পেশাদারি কিছু প্রতিষ্ঠান আছে। যেমন, ইনস্টিটিউট অব চার্টার্ড অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএবি) ও ইনস্টিটিউট অব কস্ট অ্যান্ড ম্যানেজমেন্ট অ্যাকাউন্ট্যান্টস অব বাংলাদেশ (আইসিএমএ)। যেকোনো বিভাগ থেকেই স্নাতক পাস করে এ ডিগ্রি নিতে পারেন।
কথাবন্ধু: ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিংয়ে সাধারণত কোন বিষয়গুলো অন্তর্ভুক্ত থাকে?
মারুফ হাসান: ফরেনসিক অ্যাকাউন্টিংয়ে অবশ্যই অ্যাকাউন্টিং থাকে। এরপর ফিন্যানসিয়াল সার্ভিসেস অ্যান্ড প্ল্যানিং, লিগ্যাল, পরিসংখ্যান ইত্যাদি। এ জন্য আইন ও আদালত সম্পর্কিত জ্ঞান অর্জন করতে হয়। এরপর হচ্ছে ইনভেস্টিগেশন বা তদন্ত। কারণ, ক্রাইম বা অপরাধের সঙ্গে সম্পর্কিত কোনো কাজ করতে হলে তদন্ত করতে হবে। এ জন্য দক্ষতা অর্জন করতে হয়।
মেরাজ (স্রোতাবন্ধু): কোন কোন দেশে এ বিষয়ে পড়তে যাওয়া যেতে পারে? এ জন্য কি কোনো বৃত্তি পাওয়ার সুযোগ আছে?
মারুফ হাসান: কানাডা, যুক্তরাষ্ট্র, যুক্তরাজ্য, অস্ট্রেলিয়া, নিউজিল্যান্ড ইত্যাদি দেশে পড়তে যাওয়া যায়। এসব দেশের প্রতিটি ভালো বিশ্ববিদ্যালয়ে ফরেনসিক নিয়ে আলাদা বিভাগ রয়েছে। এ ছাড়া কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয়ে বৃত্তির ব্যবস্থাও রয়েছে। এ ব্যাপারে যাবতীয় তথ্য পেতে চাইলে ইন্টারনেট সার্চ করতে হবে। এ ছাড়া সরাসরি বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর ওয়েবসাইট সার্চ করলেও সব ধরনের তথ্য পাওয়া যাবে।
কথাবন্ধু: নতুনদের জন্য আপনার দিকনির্দেশনা কী হবে?
মারুফ হাসান: এই কাজের জন্য আপনাকে অবশ্যই সঠিক লক্ষ্য ও আগ্রহ নিয়ে এগিয়ে আসতে হবে। ব্যবসা-সম্পর্কিত নানা ধরনের সংবাদ জানতে হবে। প্রতিবেদনের কারণ সম্পর্কে ধারণা নিতে হবে। অডিট ও আর্থিক অপরাধের প্রতিবেদনগুলো কী ধরনের হয়, সে সম্পর্কে জ্ঞান অর্জন করতে হবে। ইন্টারনেট থেকে যাবতীয় তথ্য সংগ্রহ করতে হবে। এ জন্য ফরেনসিক ফোকাস নামে একটি ওয়েবসাইট আছে। বাংলাদেশে কয়েক বছরের মধ্যে এ বিভাগটি অনেক দূর এগিয়ে যাবে বলে আশা করি।
গ্রন্থনা: সুদীপ দে

No comments

Powered by Blogger.