চরাচর-পার্বতীদের দারিদ্র্যজয় by অনিকেত

পার্বতী রানী, রংপুর সদর উপজেলার অধিবাসী এক নারী, যার জীবন কিছুদিন আগেও ছিল দারিদ্র্যক্লিষ্ট। পার্বতীর সে অধ্যায় এখন অতীত। ইতিমধ্যে পার্বতী সংবাদ শিরোনামও হয়েছেন। বাঙ্ েমৌমাছির চাষ করে পার্বতী বদলে দিয়েছেন তাঁর দারিদ্র্যক্লিষ্ট জীবনচিত্র। সুখ আর সচ্ছলতায় পার্বতীর পরিবারে এখন কত আনন্দ।


এ রকম পার্বতী সেখানে আরো আছেন, যাঁরা মৌমাছির চাষ করে দারিদ্র্যকে পরাভূত করেছেন। তাঁদের অনুসরণ করে এখন অনেকেই সেখানে আত্মকর্মসংস্থানের পথে পা বাড়িয়েছেন। যখন পত্রপত্রিকায় দুঃখ, দারিদ্র্য, বঞ্চনা, হতাশা-নৈরাশ্যের খবর আমাদের মনটাকে খুব ভারী করে তোলে তখন পার্বতীদের জীবনযুদ্ধ জয়ের কাহিনী আবার সব কিছু নিমিষে মুছেও ফেলে। জীবনজয়ের এমন অতুল সম্ভাবনার বাস্তব ঘটনা এই অস্থির অস্থিতিশীল, বৈষম্যপীড়িত সমাজে ইতিবাচক প্রভাবও ফেলে তাতে কোনো সন্দেহ নেই। খুব গুরুত্বের সঙ্গে লক্ষণীয়, দারিদ্র্য ও বেকারত্বের সমস্যার জাল ছিন্ন করতে সরকারি এবং সামাজিক বিভিন্ন সংগঠন ও কিছু এনজিওর ঐকান্তিক প্রচেষ্টার সুফল দৃষ্টান্তযোগ্য হয়ে দাঁড়াচ্ছে। জনসংখ্যার চক্রবৃদ্ধি হার আর কর্মক্ষম কর্মহীনদের দীর্ঘ তালিকা সমাজের নানা ক্ষেত্রে অস্থিরতা জিইয়ে রেখেছে। এর পাশাপাশি যখন দেখা যায়, গ্রাম-বাংলার অসংখ্য তরুণ-তরুণী নিজের পায়ে দাঁড়ানোর প্রচেষ্টায় নিজেরাই পথ বাতলানোর চিন্তায় মগ্ন তখন ব্যাপক আশাও জাগে। সরকারি কিংবা বেসরকারি চাকরি নামক সোনার হরিণের পেছনে ধাওয়া না করে কিংবা সময় নষ্ট না করে নিজের পায়ে দাঁড়ানোই শ্রেয় মনে করছেন অনেকে। সমাজের উদ্যমী শ্রেণীর নবভাবনার সুফলও মিলেছে অনেক ক্ষেত্রেই। তাঁদের যদি যথাযথ পৃষ্ঠপোষকতা দেওয়া যায়, সঠিক পথে হাত ধরে নিয়ে নেওয়া যায়, তাহলে এই সমাজে বৈপ্লবিক পরিবর্তন ঘটানো কোনো দুরূহ বিষয় নয়। পরিশ্রম সৌভাগ্যের প্রসূতি। আর এ প্রজন্মের সদস্যরা কঠোর পরিশ্রমে ভীত নয় এটাই আশার কথা। শ্রম-সাধনা, চেষ্টা আর বিনিয়োগের যথাযথ ক্ষেত্র বাছাইয়ে ফল কখনো যে ব্যর্থ হতে পারে না এর অজস্র দৃষ্টান্ত আমাদের সামনেই আছে। আরো আশার কথা এই, বিশ্ববিদ্যালয়ের গণ্ডি পার হয়ে এখন অনেকেই আত্মকর্মসংস্থানের লক্ষ্যে ফিরে যাচ্ছেন শিকড়ের দিকে অর্থাৎ গ্রামে নিজের জন্মস্থানে আর সেখানেই খুঁজে নিচ্ছেন স্বনির্ভর হওয়ার পথ। একজন শিক্ষিত ছেলে কিংবা মেয়ে যখন সংকীর্ণতার সব প্রাচীর ডিঙিয়ে যেকোনো কাজকেই বড় মনে করেন এবং দ্বিধাহীনভাবে যেকোনো কাজে নিজেকে যুক্ত করতে সমর্থ হন তাঁদের ক্ষেত্রে সফলতার সম্ভাবনা তো আরো ব্যাপক। ক্ষুদ্রই সুন্দর আর সেই সুন্দরেরই প্রতীক পার্বতীরা। দেশে প্রত্যাশিত মাত্রায় শিল্পের প্রসার ঘটেনি। কর্মসংস্থানের ক্ষেত্র সংকুচিত। এই রূঢ় বাস্তবতায় কর্মক্ষম মানুষকে উৎপাদনশীল কাজে যুক্ত করার পথ প্রশস্ত করে দিলে এর সার্বিক সুফল পরিবারে-সমাজে আলো ছড়াবে। ছোট ছোট উদ্যোগ, ছোট পরিসরে চাষবাস, ব্যবসা-বাণিজ্য, পণ্য উৎপাদনের কাজে যুক্ত হতে হবে সময় নষ্ট না করে। পার্বতীরা আমাদের সামনে দৃষ্টান্ত হয়ে আছেন। এই পার্বতীদের দারিদ্র্যজয়ের উজ্জ্বল চিত্র আরো বড় স্বপ্ন দেখায়, আমাদের আলো ছড়ায়।
অনিকেত

No comments

Powered by Blogger.