ডিসিসি নির্বাচন-ইসি ও সরকারের চ্যালেঞ্জ
নির্বাচন কমিশন বহুল প্রতীক্ষিত রাজধানী ঢাকার দুটি সিটি করপোরেশন বা ডিসিসি উত্তর ও দক্ষিণের মেয়র, কাউন্সিলর ও সংরক্ষিত কাউন্সিলর পদে নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করেছে। এটা বিস্ময়কর যে, ঠিক ১০ বছর পর দেশের সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ স্থানীয় সরকারের সংস্থা হিসেবে বিবেচিত রাজধানী ঢাকায় এ নির্বাচনের উদ্যোগ নেওয়া
হলো। ফেব্রুয়ারির মাঝামাঝি কাজী রকিবউদ্দিন আহমদের নেতৃত্বে নতুন নির্বাচন কমিশন দায়িত্ব গ্রহণের মাত্র দুই মাসেরও কম সময়ের মধ্যে এ নির্বাচন আয়োজনের উদ্যোগের জন্য তারা সাধুবাদ পাবেনই। তবে তাদের সামনে রয়েছে বিশাল কর্মযজ্ঞ এবং বিপুল চ্যালেঞ্জ। এ জন্য সরকার, প্রশাসন ও আইন-শৃঙ্খলা বাহিনীর পাশাপাশি সব রাজনৈতিক দল ও নাগরিক সমাজের সর্বাত্মক সহযোগিতা অপরিহার্য। প্রধান নির্বাচন কমিশনার সোমবার তফসিল ঘোষণা করতে গিয়ে অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন অনুষ্ঠানে এ সহযোগিতার প্রত্যাশা ব্যক্ত করেছেন। স্থানীয় সরকারের নির্বাচন রাজনৈতিক দলীয় ব্যানারে অনুষ্ঠিত হয় না_ এটা হচ্ছে আইনি ভাষ্য। বাস্তবে বিভিন্ন সিটি করপোরেশন, উপজেলা ও পৌরসভা তো বটেই, এমনকি প্রত্যন্ত গ্রামের ইউনিয়ন পরিষদ নির্বাচনেও দলীয় বৈঠকে প্রার্থী পদের বিষয়ে সিদ্ধান্ত গ্রহণ করা হয়। ১৯৯৪ সালে সরাসরি ভোটে মেয়র নির্বাচন চালুর পর থেকে ঢাকা সিটি করপোরেশনেও আমরা এটাই লক্ষ্য করছি। এ প্রেক্ষাপট বিবেচনায় রেখেই সম্ভবত প্রধান নির্বাচন কমিশনার রাজনৈতিক দলগুলোর সহযোগিতা চেয়েছেন। ঢাকা উত্তর-দক্ষিণের নির্বাচন কীভাবে অনুষ্ঠিত হয় তার প্রতি দেশবাসীর শুধুু নয়, উন্নয়ন সহযোগী দেশ ও সংস্থাগুলোরও তীক্ষষ্ট নজর থাকবে। সংবিধান সংশোধন করে সাধারণ নির্বাচনের জন্য তত্ত্বাবধায়ক সরকারের বিধান বাতিল করায় বিএনপিসহ কয়েকটি বিরোধী দল তার তীব্র বিরোধিতা করছে। অন্যদিকে সরকার পক্ষ বলছে, শক্তিশালী ও স্বাধীন নির্বাচন কমিশন থাকলে রাজনৈতিক দলের অধীনেও অবাধ ও সুষ্ঠু নির্বাচন আয়োজন সম্ভব। রাজধানীতে আগামী দেড়টি মাস ক্ষণে ক্ষণে তাদের এ পরীক্ষা দিয়ে যেতে হবে। এতে সফলভাবে উত্তীর্ণ হলে নির্বাচনকালীন সরকার গঠনের বিষয়ে একটি সমাধান সূত্র হয়তো মিলতে পারে। আশার কথা, প্রধান বিরোধী দল বিএনপি নির্বাচন বয়কট বা প্রতিহত নয়, বরং তাতে অংশগ্রহণ করার পক্ষেই অভিমত ব্যক্ত করেছে। সরকারি দলের একাধিক নেতাও ইতিমধ্যে প্রার্থী হওয়ার ঘোষণা দিয়েছেন। সবার অংশগ্রহণে অবাধ ও শান্তিপূর্ণ নির্বাচন অনুষ্ঠান সম্পন্ন হলে সেটা নির্বাচন কমিশনের কৃতিত্ব হিসেবে গণ্য হবে এবং এর ফলে পরবর্তী সাধারণ নির্বাচন অনুষ্ঠানে তাদের সক্ষমতার বিষয়ে সব মহলের আস্থা বাড়বে। কমিশন প্রচলিত আচরণবিধির ধারাবাহিকতায় কিছু নিয়মকানুন ইতিমধ্যে ঘোষণা করেছে। আচরণবিধি কঠোরভাবে প্রতিপালনের ক্ষেত্রে পূর্ববর্তী নির্বাচন কমিশন দৃঢ় মনোভাব দেখাতে পেরেছিল এবং এ কারণে তারা প্রশংসা পেয়েছে। নতুন কমিশন কি সেটা করতে সক্ষম হবে, নাকি ক্ষমতাসীনদের প্রতি থাকবে বিশেষ আনুকূল্য, সেটা গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন। নাগরিক জীবনে এখন অনেক সমস্যা এবং এ কারণে ক্ষমতাসীনদের প্রতি মানুষের ক্ষোভ প্রকাশ্য। এ অবস্থায় নির্বাচনের ফল নিজেদের অনুকূলে রাখার জন্য তারা কি প্রভাব বিস্তারের চেষ্টা করে কি-না সেটাও দেখার বিষয়। এ কারণে শুধু নির্বাচন কমিশন নয় সরকারও এখন কঠিন পরীক্ষার সম্মুখীন। আশা করব যে, তারা এতে উত্তীর্ণ হবে। অন্যথায় রাজনৈতিক অঙ্গনে জটিলতা ও অস্থিরতা বাড়বে, সেটা বুঝতে সমস্যা হয় না।
No comments