পবিত্র কোরআনের আলো-আরব বেদুইনদের চারিত্রিক বৈশিষ্ট্যসহ ধর্মবোধের বিবরণ
৯৭. আলআ'রাবু আশাদ্দু কুফ্রাওঁ ওয়া নিফাক্বাওঁ ওয়াজ্দারু আল্লা ইয়া'লামূ হুদূদা মা আনযালাল্লাহু আ'লা রাছূলিহী; ওয়াল্লাহু আ'লীমুন হাকীম। ৯৮. ওয়া মিনাল আ'রাবি মাইঁ ইয়্যাত্তাখিযু মা- ইউনফিক্বু মাগ্রামাওঁ ওয়া ইয়াতারাব্বাসু বিকুমুদ্ দাওয়ায়ির; আ'লাইহিম দায়িরাতু-চ্ছাওয়ি; ওয়াল্লাহু ছামীউ'ন আ'লীম।
৯৯. ওয়া মিনাল আ'রাবি মাইঁ ইয়্যুমিনু বিল্লাহি ওয়াল ইয়াওমিল আখিরি ওয়া ইয়াত্তাখিযু মা- ইউনফিক্বু ক্বুরুবাতিন ই'নদাল্লাহি ওয়া সালাওয়াতির্ রাছূল; আলা ইন্নাহা ক্বুরবাতুল্লাহুম; ছাইউদ্খিলু হুমুল্লাহু ফী রাহ্মাতিহী; ইন্নাল্লাহা গাফূরুর রাহীম। [সুরা : আত্ তাওবা, আয়াত : ৯৭-৯৯]
অনুবাদ : ৯৭. আরব বেদুইন ও গ্রাম্য লোকেরা অবাধ্যতা ও সুবিধাবাদে কঠোর। আর আল্লাহ তাঁর রাসুলের ওপর যে ধর্মীয় সীমারেখা ও বিধানাবলি অবতীর্ণ করেছেন, সে ব্যাপারে অজ্ঞতায় তারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি বদ্ধমূল তথা অন্ধ। আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও কুশলী।
৯৮. এসব বেদুইনের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহর নামে ব্যয়কে (অর্থাৎ জাকাত ইত্যাদি) তাদের ওপর এক ধরনের জরিমানা মনে করে এবং তোমাদের ওপর পরাজয় নেমে এলে তোমাদের যুগের অবসান হোক এটা চায়। অথচ তারাই কিন্তু কালের মন্দচক্রে পড়ে আছে। আল্লাহ সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন।
৯৯. ওই বেদুইনদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ইমান রাখে। তারা যা কিছু আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাকে আল্লাহর নৈকট্য ও রাসুলের দোয়া লাভের মাধ্যম মনে করে। নিশ্চয়ই এটা তাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। আল্লাহ তাদের নিজ রহমতের ভেতর প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোতে আরব বেদুইনদের চৈতন্যের মান ও চরিত্র বিশ্লেষণ করে তাদের প্রবণতাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। ৯৭ নম্বর আয়াতে বিশেষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তাদের চৈতন্যের মান ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বেদুইনরা প্রধানত একগুঁয়ে স্বভাবের। বেদুইনরা সাধারণত তাদের দৃশ্যমান স্বার্থগুলোই দেখে এবং নিজেদের চিরাচরিত অবস্থানে অনড় থাকে। তারা যে কুফরি ও মুনাফিকির মধ্যে অন্ধ হয়ে পড়েছে, সেটা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও বুঝতে সক্ষম হয় না বা বুঝতে চায় না। রাসুলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির প্রতি যেসব ধর্মীয় বিধিবিধান নাজিল করেছেন, সেগুলো তারা জানে না, বোঝে না এবং বুঝতেও চায় না। তারা পরিবর্তন পছন্দ করে না এবং কল্যাণকর নতুন যা কিছু আসে রাসুলের মাধ্যমে, তা গ্রহণ করতে চায় না। রাসুলের মাধ্যমে মদিনায় যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছে মানুষের জীবনধারায়, সে ব্যাপারে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তারা তাদের পুরনো জরাজীর্ণ মূল্যবোধ নিয়েই থাকতে চায়। সে জন্য তারা মুসলমানদের সঙ্গে নানা কপটতার আশ্রয় নেয়।
৯৮ নম্বর আয়াতে বেদুইনদের সেই অংশটির কথা বলা হয়েছে, যারা কুফরি ও মুনাফিকির মধ্যে বদ্ধমূলভাবে লিপ্ত। তাদের কয়েকটি নিকৃষ্ট প্রবণতার কথা এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। বেদুইনরা আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা, বিশেষ করে জাকাত প্রদানের বিষয়টাকে তারা তাদের ওপর জরিমানা হিসেবে দেখতে শুরু করে। তা ছাড়া তাবুকের যুদ্ধের জন্য যে অর্থ সংগ্রহ অভিযান চালানো হয়েছিল, সেটাকেও তারা চাঁদাবাজি বা জরিমানা হিসেবে দেখেছিল। এভাবেই রাসুল (সা.)-এর নতুন ধর্ম ও নতুন মুসলিম সমাজের উত্থানকে তাদের অনেকেই বৈরী দৃষ্টিতেই দেখতে শুরু করেছিল। এ কারণেই তারা উদীয়মান মুসলিম সমাজের পতন কামনা করতে লাগল। তারা মনে করত, মুসলমানদের পতন ঘটে গেলে শরিয়তের যেসব বিধিবিধান তাদের দৃষ্টিতে কঠিন মনে হয়, সেগুলো আর তাদের পালন করতে হবে না এবং এর ফলে তারা আরো স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। বিশেষ করে তাবুকের যুদ্ধকালে তারা মনে করেছিল, এবার যেহেতু বিশাল রোমান শক্তির সঙ্গে মুসলমানদের মোকাবিলা হতে যাচ্ছে, তাই হয়তো রোমানদের হাতে তাদের পরাজয় ঘটবে_এটাই তারা আশা করেছিল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলছেন, এসব কাফির ও মুনাফিক তাদের ভ্রান্তি ও মুনাফিকির চক্রে নিপতিত হয়ে অন্ধ হয়ে আছে। পরিণতিতে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছিতই হতে থাকবে। ৯৯ নম্বর আয়াতে বেদুইনদের সেই অংশটির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যারা প্রকৃত ইমানদার।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
অনুবাদ : ৯৭. আরব বেদুইন ও গ্রাম্য লোকেরা অবাধ্যতা ও সুবিধাবাদে কঠোর। আর আল্লাহ তাঁর রাসুলের ওপর যে ধর্মীয় সীমারেখা ও বিধানাবলি অবতীর্ণ করেছেন, সে ব্যাপারে অজ্ঞতায় তারা অন্যদের তুলনায় অনেক বেশি বদ্ধমূল তথা অন্ধ। আল্লাহ তায়ালা সর্বজ্ঞ ও কুশলী।
৯৮. এসব বেদুইনের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহর নামে ব্যয়কে (অর্থাৎ জাকাত ইত্যাদি) তাদের ওপর এক ধরনের জরিমানা মনে করে এবং তোমাদের ওপর পরাজয় নেমে এলে তোমাদের যুগের অবসান হোক এটা চায়। অথচ তারাই কিন্তু কালের মন্দচক্রে পড়ে আছে। আল্লাহ সব কিছু শোনেন এবং সব কিছু জানেন।
৯৯. ওই বেদুইনদের মধ্যে এমন লোকও আছে, যারা আল্লাহ ও আখিরাতের প্রতি ইমান রাখে। তারা যা কিছু আল্লাহর পথে ব্যয় করে, তাকে আল্লাহর নৈকট্য ও রাসুলের দোয়া লাভের মাধ্যম মনে করে। নিশ্চয়ই এটা তাদের জন্য আল্লাহর নৈকট্য লাভের মাধ্যম। আল্লাহ তাদের নিজ রহমতের ভেতর প্রবেশ করাবেন। নিশ্চয়ই আল্লাহ ক্ষমাশীল ও দয়ালু।
ব্যাখ্যা : এই আয়াতগুলোতে আরব বেদুইনদের চৈতন্যের মান ও চরিত্র বিশ্লেষণ করে তাদের প্রবণতাগুলো বর্ণনা করা হয়েছে। ৯৭ নম্বর আয়াতে বিশেষভাবে বর্ণনা করা হয়েছে তাদের চৈতন্যের মান ও চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য। বেদুইনরা প্রধানত একগুঁয়ে স্বভাবের। বেদুইনরা সাধারণত তাদের দৃশ্যমান স্বার্থগুলোই দেখে এবং নিজেদের চিরাচরিত অবস্থানে অনড় থাকে। তারা যে কুফরি ও মুনাফিকির মধ্যে অন্ধ হয়ে পড়েছে, সেটা তাদের বোঝানোর চেষ্টা করা হলেও বুঝতে সক্ষম হয় না বা বুঝতে চায় না। রাসুলের মাধ্যমে আল্লাহ তায়ালা মানবজাতির প্রতি যেসব ধর্মীয় বিধিবিধান নাজিল করেছেন, সেগুলো তারা জানে না, বোঝে না এবং বুঝতেও চায় না। তারা পরিবর্তন পছন্দ করে না এবং কল্যাণকর নতুন যা কিছু আসে রাসুলের মাধ্যমে, তা গ্রহণ করতে চায় না। রাসুলের মাধ্যমে মদিনায় যে বিপ্লবের সূচনা হয়েছে মানুষের জীবনধারায়, সে ব্যাপারে তাদের তেমন কোনো আগ্রহ নেই। তারা তাদের পুরনো জরাজীর্ণ মূল্যবোধ নিয়েই থাকতে চায়। সে জন্য তারা মুসলমানদের সঙ্গে নানা কপটতার আশ্রয় নেয়।
৯৮ নম্বর আয়াতে বেদুইনদের সেই অংশটির কথা বলা হয়েছে, যারা কুফরি ও মুনাফিকির মধ্যে বদ্ধমূলভাবে লিপ্ত। তাদের কয়েকটি নিকৃষ্ট প্রবণতার কথা এ আয়াতে উল্লেখ করা হয়েছে। বেদুইনরা আল্লাহর পথে অর্থ ব্যয় করা, বিশেষ করে জাকাত প্রদানের বিষয়টাকে তারা তাদের ওপর জরিমানা হিসেবে দেখতে শুরু করে। তা ছাড়া তাবুকের যুদ্ধের জন্য যে অর্থ সংগ্রহ অভিযান চালানো হয়েছিল, সেটাকেও তারা চাঁদাবাজি বা জরিমানা হিসেবে দেখেছিল। এভাবেই রাসুল (সা.)-এর নতুন ধর্ম ও নতুন মুসলিম সমাজের উত্থানকে তাদের অনেকেই বৈরী দৃষ্টিতেই দেখতে শুরু করেছিল। এ কারণেই তারা উদীয়মান মুসলিম সমাজের পতন কামনা করতে লাগল। তারা মনে করত, মুসলমানদের পতন ঘটে গেলে শরিয়তের যেসব বিধিবিধান তাদের দৃষ্টিতে কঠিন মনে হয়, সেগুলো আর তাদের পালন করতে হবে না এবং এর ফলে তারা আরো স্বাধীনতা ভোগ করতে পারবে। বিশেষ করে তাবুকের যুদ্ধকালে তারা মনে করেছিল, এবার যেহেতু বিশাল রোমান শক্তির সঙ্গে মুসলমানদের মোকাবিলা হতে যাচ্ছে, তাই হয়তো রোমানদের হাতে তাদের পরাজয় ঘটবে_এটাই তারা আশা করেছিল। কিন্তু আল্লাহ তায়ালা বলছেন, এসব কাফির ও মুনাফিক তাদের ভ্রান্তি ও মুনাফিকির চক্রে নিপতিত হয়ে অন্ধ হয়ে আছে। পরিণতিতে তারা দুনিয়া ও আখিরাতে লাঞ্ছিতই হতে থাকবে। ৯৯ নম্বর আয়াতে বেদুইনদের সেই অংশটির কথাও উল্লেখ করা হয়েছে, যারা প্রকৃত ইমানদার।
গ্রন্থনা : মাওলানা হোসেন আলী
No comments