অর্পিত সম্পত্তির তালিকা চূড়ান্ত by মোশতাক আহমেদ
ইজারা দেওয়া সম্পত্তির তালিকা চূড়ান্ত করার পর ইজারা না দেওয়া অর্পিত সম্পত্তির তালিকাও চূড়ান্ত করেছে সরকার। তালিকা অনুযায়ী, ইজারা না দেওয়া সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় পৌনে পাঁচ লাখ একর। আর ইজারা দেওয়া সম্পত্তির পরিমাণ প্রায় এক লাখ ৯০ হাজার একর।
ভূমিসচিব মোখলেছুর রহমান প্রথম আলোকে জানান, ওই তালিকা এখন গেজেট আকারে ছাপা হচ্ছে। গেজেট হওয়ার পরপরই ট্রাইব্যুনালের কাজ শুরু হবে।
তালিকাভুক্ত অর্পিত সম্পত্তি নিয়ে সৃষ্ট বিরোধ নিষ্পত্তি করে প্রত্যর্পণযোগ্য ব্যক্তিদের কাছে তা ফিরিয়ে দেওয়ার উদ্দেশ্যে সমপ্রতি প্রতিটি জেলায় একটি করে ট্রাইব্যুনাল গঠন করেছে আইন মন্ত্রণালয়। জেলা ও দায়রা জজ নিজ দায়িত্বের পাশাপাশি এসব ট্রাইব্যুনালের প্রধান হিসেবে অতিরিক্ত দায়িত্ব পালন করবেন।
ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা জানান, কিছুদিন আগে ‘ক’ তফসিলভুক্ত ইজারা দেওয়া অর্পিত সম্পত্তির তালিকা জেলা থেকে পাওয়ার পর তা গেজেট আকারে ছাপতে বিজি প্রেসে পাঠানো হয়। সেগুলো এখন মৌজাওয়ারি ছাপা হচ্ছে। শিগগিরই গেজেট আসতে শুরু হবে।
মন্ত্রণালয়ে খোঁজ নিয়ে জানা যায়, ‘খ’ তফসিলভুক্ত ইজারা না দেওয়া অর্পিত সম্পত্তির তালিকাও চলে এসেছে। ভূমি মন্ত্রণালয়ের সংশ্লিষ্ট একজন কর্মকর্তা বলেন, সিলেট বাদে বাকি সব জেলার ইজারা না দেওয়া অর্পিত সম্পত্তির তথ্য পাওয়া গেছে।
তালিকা অনুযায়ী, ইজারা না দেওয়া অর্পিত সম্পত্তি চার লাখ ৭০ হাজার ৫৫৮ দশমিক ৪৫ একর। এর মধ্যে ঢাকা বিভাগে এক লাখ ৫০ হাজার ৯৪৫ দশমিক ০৬১১ একর; চট্টগ্রাম বিভাগে ৬৭ হাজার ৩২০ দশমিক ০৭৭২৮ একর; রাজশাহীতে (রংপুর বিভাগসহ) ৬৭ হাজার ২৮৩ দশমিক ৭৮৭ একর; খুলনায় ৮৮ হাজার ৯৭৯ দশমিক ৩০ একর; বরিশালে ৪৫ হাজার ৬২ দশমিক ৭৫৭৮ একর এবং সিলেটে আছে ৫০ হাজার ৯৬৭ দশমিক ৪৭৫৯ একর। ট্রাইব্যুনালের মাধ্যমে বিরোধ নিষ্পত্তি করে অর্পিত সম্পত্তি প্রত্যর্পণযোগ্য ব্যক্তির কাছে ফিরিয়ে দেওয়া হবে।
অর্পিত সম্পত্তি ফিরিয়ে দিতে গত বছরের ১১ ডিসেম্বর সংসদে আইন পাস করা হয়। আইন অনুযায়ী, ১৫০ দিনের মধ্যে অর্পিত সম্পত্তির জেলাভিত্তিক তালিকা করে গেজেট আকারে প্রকাশের বাধ্যবাধকতা রয়েছে। তারই আলোকে ভূমি মন্ত্রণালয়ের নির্দেশে জেলা প্রশাসকেরা মাঠপর্যায়ের ভূমি কর্মকর্তাদের মাধ্যমে এ ধরনের সম্পত্তির তথ্য পাঠান। এর মধ্যে ‘ক’ তফসিল মোতাবেক ইজারা দেওয়া সম্পত্তির তালিকা এবং ‘খ’ তফসিল অনুযায়ী ইজারা না দেওয়া সম্পত্তির তালিকা পাঠানো হয়।
১৯৬৫ সালে পাকিস্তান-ভারত যুদ্ধের প্রেক্ষাপটে ’৬৫ থেকে ’৬৯ সালের ১৬ ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত যেসব নাগরিক এ দেশ থেকে ভারতে চলে যান, তাঁদের স্থাবর সম্পত্তি তৎকালীন পাকিস্তান সরকার শত্রু সম্পত্তি হিসেবে চিহ্নিত করে। বাংলাদেশ স্বাধীন হওয়ার পর ১৯৭৪ সালে নাম পরিবর্তন করে অর্পিত সম্পত্তি করা হয়।
এই সম্পত্তি নিয়ে দখলসহ নানাভাবে বিরোধের ঘটনা ঘটে। হাজার হাজার মামলা-মোকদ্দমাও হয়েছে। বিগত আওয়ামী লীগ সরকারের সময় অর্পিত সম্পত্তি মূল মালিক বা তাঁদের উত্তরাধিকারদের কাছে ফিরিয়ে দিতে একটি আইন করা হয়েছিল। কিন্তু ক্ষমতা বদলের পর তা আর কার্যকর হয়নি। এবার ক্ষমতায় আসার পর আগের আইনটি সংশোধন করা হয়।
No comments