মেধাবী মুখ-স্বপ্নের সোপানে সোহেলী by শারমিন নাহার

পড়েছি বিজ্ঞান বিভাগে, তাই ছোটবেলা থেকেই স্বভাবতই বুকের ভেতর স্বপ্নটা দানা বেঁধে ছিল ডাক্তার হব। এইচএসসির পরে প্রস্তুতিও ছিল মেডিকেলে ভর্তি হওয়ার। তবে মেডিকেলে সুযোগ না মেলায় ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ঘ ইউনিটে পরীক্ষা দিই। শেষতক ভর্তি হই বাংলা বিভাগে।


ভাবলাম গল্প আর উপন্যাস পড়েই হয়তো চার বছরের স্নাতক শেষ হয়ে যাবে। তবে পড়তে এসে ভাবনার পরিবর্তন হলো। বাংলায় পড়ার অনেক বৈচিত্র্য আছে। আর পেছনে ফিরে তাকাতে হয়নি। মেডিকেলের ভূত তত দিনে চলে গেছে। বাংলাকে ভালোবাসতেই শুরু করলাম।’ এক দমেই কথাগুলো বলে শেষ করলেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে ৪৬তম সমাবর্তনে কলা অনুষদ থেকে ২০০৮-০৯ শিক্ষাবর্ষে মাস্টার্সে স্বর্ণপদক পাওয়া শিক্ষার্থী জান্নাত আরা সোহেলী।
পরিবারের সবার আদরের সোহেলীর কাছে পরিবারের প্রত্যাশার মাপটাও ছিল বেশি। সোহেলী বলেন, আমি আশাবাদী মানুষ। আমার স্বপ্ন ছিল আর ছিল নিজের ওপর আস্থা। রবীন্দ্রনাথের কথাকে পুনরাবৃত্তি করলেন সাহিত্যের শিক্ষার্থী ‘মানুষের ওপরে বিশ্বাস হারানো পাপ। আমি নিজের ওপরে বিশ্বাস হারাইনি। আর পরিবারকে ভালো কিছু উপহার দিতে হবে এই প্রত্যয় ছিল।’
তবে এত ভালো ফল হবে তা শুরুতে ভাবেননি সোহেলী। তিনি জানান, প্রথম শ্রেণী পেতে প্রথম বর্ষে কিছু নম্বর কম ছিল। তবে দ্বিতীয় বর্ষে পুরো নম্বরটা পুষিয়ে নিয়েছেন। আর স্নাতক শেষে দেখা গেছে প্রথম শ্রেণী থেকেও আরও অনেক বেশি নম্বর তাঁর প্রাপ্তির থলিতে জমেছে।
বাংলা সাহিত্য বিষয়কে অনেকেই ভাবে খুব সহজ। গল্প আর উপন্যাস পড়া থাকলেই হয়। অনেকে আবার ভাবে খুবই কঠিন। তাদের উদ্দেশেই বললেন, বাংলা খুব সহজ কোনো বিষয় নয়। এখানে তত্ত্ব আছে, আছে বিশ্লেষণ। তাই মন দিয়ে পড়লে সফলকামী হওয়া সম্ভব। আর নিজের সমস্যা কীভাবে মোকাবিলা করেছেন সোহেলী? সোহেলীর ঝটপট উত্তর, শিক্ষকদের সহযোগিতা আর অনুপ্রেরণা সব সময়ই ছিল।
সোহেলী বর্তমানে এমফিল করছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ে বাংলা বিভাগে, অধ্যাপক বেগম আখতার কামালের তত্ত্বাবধানে। সোহেলী বললেন, আমি আমার স্বপ্নের তরী বেয়ে চলছি। রাষ্ট্রপতির কাছ থেকে পাওয়া পদক আমার জীবনের সবচেয়ে বড় ঘটনা। তবে আর একটা স্বপ্ন আছে। এবার মুচকি হাসি, হ্যাঁ নিজের বিভাগে যোগদানের স্বপ্ন আছে সোহেলীর। নাহ্, গন্তব্য খুব দূরে নয়। সোহেলী তাঁর স্বপ্নের সোপানেই আছেন।

No comments

Powered by Blogger.