নির্মাণে স্বচ্ছতা ও গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে-পদ্মা সেতু

পদ্মা নদীর ওপর দেশের বৃহত্তম সেতু নির্মাণের জন্য বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে বাংলাদেশ সরকারের ঋণচুক্তি স্বাক্ষরিত হলো। আগামী অক্টোবর মাসে নির্মাণের দায়িত্বপ্রাপ্ত ঠিকাদারি প্রতিষ্ঠানকে কার্যাদেশ দেওয়া হবে—অর্থমন্ত্রীর বরাতে প্রকাশিত এই খবর থেকে প্রত্যাশা জাগছে, বহু প্রত্যাশিত সেতুটির নির্মাণকাজ অচিরেই শুরু হতে যাচ্ছে।


মোট ২০ হাজার ৫০০ কোটি টাকা ব্যয়ে নির্মিত হবে ৬ দশমিক ১৫ কিলোমিটার দীর্ঘ এই সেতু। ২৫ মিটার চওড়া দ্বিতল এই সেতুর ওপরের অংশে চলবে মোটরযান, নিচ দিয়ে চলবে ট্রেন। বাংলাদেশের ইতিহাসে এটিই এযাবৎকালের সবচেয়ে বড় সেতু নির্মাণ প্রকল্প; যেমন অবকাঠামোগত দিক থেকে, তেমনি অর্থনৈতিক বিবেচনায়।
গত বুধবার বিশ্বব্যাংকের সঙ্গে ঋণচুক্তি স্বাক্ষর অনুষ্ঠানে বিশ্বব্যাংকের ব্যবস্থাপনা পরিচালক নগোজি এন ওকোনজো-আইওয়েলা সেতু প্রকল্পে তাঁদের সাড়ে আট হাজার কোটি টাকার ঋণ-সহায়তার দুটো ‘প্রধান শর্ত’ উল্লেখ করেছেন। এক: সেতু নির্মাণ প্রকল্পটি বাস্তবায়ন করতে হবে দুর্নীতিমুক্তভাবে। দুই: নির্মাণকাজে সর্বোচ্চ গুণগত মান নিশ্চিত করতে হবে। প্রথম আলোয় বৃহস্পতিবার প্রকাশিত এ-সম্পর্কিত এক প্রতিবেদনের তথ্য অনুযায়ী, বাংলাদেশ সরকারের পক্ষ থেকে বিশ্বব্যাংকের এই দুটো শর্ত পূরণের নিশ্চয়তা দেওয়া হয়েছে। ওই অনুষ্ঠানে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত বলেন, এই প্রকল্পে দুর্নীতির ক্ষেত্রে ‘জিরো টলারেন্স’ দেখানো হবে। যোগাযোগমন্ত্রী সৈয়দ আবুল হোসেন ‘জিরো টলারেন্স’ ও সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করার কথা বলেছেন।
ঋণদাতা বিশ্বব্যাংক শর্ত দিয়েছে বলে নয়, পদ্মা সেতু নির্মাণে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা, অনিয়ম-দুর্নীতির কোনো সুযোগ না রাখা এবং অনিয়ম-দুর্নীতির আভাস-ইঙ্গিত পাওয়ামাত্র ত্বরিত গতিতে যথাযথ পদক্ষেপ নেওয়া, সেতু নির্মাণে গুণগত মান নিশ্চিত করা—এসব করতে হবে বাংলাদেশের জনগণের প্রতি দায়বদ্ধতার উপলব্ধি থেকে। বিশ্বব্যাংক সাড়ে আট হাজার কোটি টাকা ঋণ দেবে। শূন্য দশমিক ৭৫ শতাংশ হারে সুদসহ এই বিপুল পরিমাণ ঋণ পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশের জনগণকে। বিশ্বব্যাংক ছাড়াও এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক, জাইকা এবং ইসলামিক উন্নয়ন ব্যাংক থেকে নেওয়া হবে আরও প্রায় আট হাজার কোটি টাকা। এই অর্থও পরিশোধ করতে হবে বাংলাদেশের দরিদ্র জনগণের কষ্টার্জিত করের টাকা থেকে। সুতরাং এই বহুমূল্যের জাতীয় অবকাঠামোটি নির্মাণ করতে হবে সর্বোচ্চ স্বচ্ছতা ও জবাবদিহির সঙ্গে, নিশ্চিত করতে হবে সর্বোচ্চ গুণগত মান, যেন তা সুদীর্ঘ সময় ধরে জনসাধারণের উপকারে ব্যবহূত হয়।
পদ্মা সেতু নির্মাণ প্রকল্প পর্যবেক্ষণের জন্য প্রধানমন্ত্রীর দপ্তরে একটি উচ্চপর্যায়ের মূল্যায়ন কমিটি গঠন করা হয়েছে বলে অর্থমন্ত্রী জানিয়েছেন। এটি নিশ্চয়ই একটি ভালো খবর। এ ধরনের যেকোনো কমিটি যথাযথভাবে পর্যবেক্ষণের দায়িত্ব পালন করলে নির্মাণ-প্রক্রিয়ায় প্রত্যক্ষ নজরদারি সৃষ্টি হতে পারে, যা সম্ভাব্য অনিয়ম-দুর্নীতি রোধে সহায়ক হয়।

No comments

Powered by Blogger.