ডিসিসি নির্বাচনের তফসিল-নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিত্বে উন্নত হোক নগরী

অবশেষে বিভাজিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনের তফসিল ঘোষণা করা হয়েছে। যে নির্বাচন নিয়ে নগরবাসীর পাশাপাশি নগরনেতৃত্বেরও দিন কেটেছে উৎকণ্ঠায়, কাঙ্ক্ষিত সেই নির্বাচন অনুষ্ঠিত হতে যাচ্ছে মে মাসের ২৪ তারিখে। ঘোষিত তফসিল অনুযায়ী, মনোনয়নপত্র জমা দেওয়ার শেষ তারিখ ১৯ এপ্রিল।


২২ ও ২৩ তারিখে মনোনয়নপত্র বাছাই করা হবে। মনোনয়নপত্র প্রত্যাহারের শেষ তারিখ ২ মে। ঢাকা সিটি করপোরেশনের এটা তৃতীয় নির্বাচন হলেও বিভাজিত সিটি করপোরেশনের প্রথম নির্বাচন।
ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচন নিয়ে বেশ কিছুদিন আগে থেকেই সম্ভাব্য প্রার্থীদের কাজ করতে দেখা গেছে। বিভাজিত সিটি করপোরেশনের উত্তর ও দক্ষিণের মেয়রপ্রার্থীদের বিলবোর্ড-ফেস্টুন-পোস্টার শোভা পাচ্ছে নগরীর বিভিন্ন স্থানে। কোনো কোনো প্রার্থী নির্বাচনী অফিস খুলে ফেলেছেন। সেখানে কর্মীদের আনাগোনা চলছে। চলছে গণসংযোগ। সব মিলিয়ে রাজধানীতে সিটি করপোরেশন নির্বাচনের হাওয়া লেগেছে বেশ আগেই। অনেকে দেরি করে নিজেদের প্রার্থিতা জানান দিলেও ভেতরে ভেতরে কাজ করেছেন।
রাজধানী হিসেবে ঢাকা সিটি করপোরেশন অত্যন্ত গুরুত্ব বহন করে। এর আগে নির্বাচিত দুই মেয়র কাজ করেছেন। সিটি করপোরেশন এলাকায় বসবাসকারী নাগরিকদের সেবা নিশ্চিত করার কথা বলেই ঢাকা সিটি করপোরেশনকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়। কিন্তু এই নাগরিক সেবা কেবলই সিটি করপোরেশনের ওপর নির্ভর করে না। ঢাকার নাগরিক সেবা নির্ভর করে ডেসা-ডেসকো, ওয়াসা, বিটিসিএল, পুলিশ ইত্যাদি আরো অনেক সেবা সংস্থার ওপর। কিন্তু লক্ষ করা যায়, এসব প্রতিষ্ঠানের মধ্যে কোনো সমন্বয় নেই। পাশাপাশি এসব সংস্থার কাজের তদারকি বা সমন্বয়ের কোনো দায়িত্ব সিটি করপোরেশনের ওপর বর্তায় না। সিটি করপোরেশনকে নিজ কাজের জন্য মন্ত্রণালয়ের মুখাপেক্ষী হয়ে থাকতে হয়। বাজেটের জন্য তাকিয়ে থাকতে হয়। অনেক ক্ষেত্রে সিটি করপোরেশন নাগরিক সেবা নিশ্চিত করতে পারে না। অন্যদিকে, অবিভক্ত সিটি করপোরেশনে বিভিন্ন গ্রুপের রাজত্বের কথাও শোনা গেছে। সিটি করপোরেশনের নির্বাচন অনুষ্ঠান শুধু সম্পন্ন করলেই হবে না, এসব গ্রুপের প্রভাব থেকে করপোরেশনকে মুক্তও করতে হবে।
সিটি করপোরেশন নির্বাচন স্থানীয় সরকার নির্বাচন। এখানে রাজনৈতিক দলগুলোর অংশগ্রহণের সুযোগ নেই। কিন্তু তার পরও রাজনৈতিক দলের আশীর্বাদপুষ্ট প্রার্থীরাই নির্বাচনে অংশ নিয়ে থাকেন। বিভাজিত ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনেও এর ব্যতিক্রম হবে না। তবে সরকারকে মনে রাখতে হবে, এই মহানগরীতে প্রায় ২২ লাখ ভোটার। মহানগরীর মানুষের সুবিধা-অসুবিধার কথা মনে রেখেই সিটি করপোরেশনকে ভাগ করা হয়েছে। ব্যাপারটি নিছকই রাজনৈতিক সিদ্ধান্ত না হয়ে নাগরিক সেবার বিষয়টি যেন নিশ্চিত করা যায়। সব সেবা সংস্থার কাজের সমন্বয়ের দায়িত্ব সিটি করপোরেশনকে দিতে হবে। এই সমন্বয় এখন বেশি জরুরি হবে উত্তর ও দক্ষিণের। উত্তর যেভাবে কাজ করছে বা করবে, দক্ষিণ সেভাবে না-ও করতে পারে। এটা করা না গেলে সমস্যা হবে। নাগরিক সেবা নিশ্চিত করা যাবে না। আবার, এর উল্টোটিও সত্য।
ঘোষিত নির্বাচনী তফসিলে আচরণবিধি স্পষ্ট করে বলা আছে। নির্বাচনী প্রচারের ব্যাপারেও নিয়ম-কানুন বলে দেওয়া হয়েছে। প্রার্থীরা এই নিয়ম মেনে চলতে বাধ্য। এখানে কোনো রাজনৈতিক প্রভাব যেন কোনো প্রার্থীর পক্ষে না যায়, সেদিকে খেয়াল রাখতে হবে। একই সঙ্গে দৃষ্টি দিতে হবে আইনশৃঙ্খলা পরিস্থিতির দিকে। সিটি করপোরেশন নির্বাচনকে সামনে রেখে সন্ত্রাসীরা আবার রাজধানীতে ফিরতে শুরু করেছে বলে পত্রপত্রিকায় খবর প্রকাশিত হয়েছে। এদিকে আইনশৃঙ্খলা রক্ষাকারী বাহিনীকে দৃষ্টি দিতে হবে। ঢাকা সিটি করপোরেশন নির্বাচনে জনরায়ের প্রতিফলন ঘটুক। নির্বাচিত জনপ্রতিনিধিদের মাধ্যমে সিটি করপোরেশনের উন্নয়ন কার্যক্রম পরিচালিত হোক।

No comments

Powered by Blogger.