বীর মুক্তিযোদ্ধা-তোমাদের এ ঋণ শোধ হবে না
৩৬৫ স্বাধীনতার চার দশক উপলক্ষে খেতাবপ্রাপ্ত মুক্তিযোদ্ধাদের নিয়ে ধারাবাহিক এই আয়োজন। জাকির হোসেন, বীর প্রতীক সাহসী এক যোদ্ধার কথা মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতিচারণা করতে গিয়ে জাকির হোসেন বলেন, ‘আমার দিনক্ষণ মনে নেই। আমাদের ক্যাম্পে সিদ্ধান্ত হলো পাকিস্তানিদের ক্যাম্প আক্রমণের।
সেই ক্যাম্প ছিল যশোর বা পাশের মাগুরা জেলার মধ্যে। জায়গাটার সঠিক নাম আমার এখন মনে নেই। একদিন আমরা ৮০ জন মুক্তিযোদ্ধা রাতে রওনা হলাম সেই ক্যাম্পের উদ্দেশে। শেষ রাতে ক্যাম্প ঘেরাও করে আক্রমণ করলাম। প্রচণ্ড যুদ্ধ হলো দুই পক্ষে। ওদের বেশ কিছু সেনা মারা গেল। আমাদের পক্ষেও কয়েকজন শহীদ ও আহত হলেন।
‘ঘণ্টা খানেক বা তারও বেশি সময় যুদ্ধ করার পর সকাল হয়ে গেল। আমরা পিছু হটে একটা আমবাগানে আশ্রয় নিই। রাতে সেই বাগানে পাকিস্তানিদের একজন এল একটা পত্র নিয়ে। সে এসেছে আমার কাছেই। পত্র পাঠিয়েছে পাকিস্তানিদের ওলদাত খান নামের একজন হাবিলদার। সে আমার প্রশিক্ষক ছিল। লিখেছে, “তুমি আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছ, আমি তোমার ওস্তাদ। তুমি আমাদের ওপর আকস্মিক আক্রমণ করে আমাদের কয়েকজন সৈন্য মেরে ফেলেছ। তুমি গাদ্দার। তোমার হিম্মত থাকলে কাল আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে এসো।”
‘এই চিঠি পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল দুই-তিন পর পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে আবার আক্রমণ চালানোর। চিঠি পাওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আমরা পরদিন সকালেই আবার সেখানে আক্রমণ করি। আমাদের আক্রমণে পাকিস্তানিদের কয়েকজন নিহত হয়। দুজন পাকিস্তানিকে আমরা জীবিত আটক করি। তাদের পরে হত্যা করা হয়। যুদ্ধ চলতে থাকে। এরপর তাদের বিমান এসে আমাদের ওপর প্রচণ্ড হামলা চালায়। তখন আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। বিমান হামলায় এবং পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে আমার ৩০ জন সহযোদ্ধা শহীদ হন। কয়েকজন আহত হন।
‘যুদ্ধের পর আমরা যারা বেঁচে যাই, তারা ভারতে চলে যাই। কিছুদিন পর আমি জানতে পারি, পাকিস্তানিরা ওই স্থান থেকে ক্যাম্প গুটিয়ে নিয়েছে।’
জাকির হোসেন চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা উইংয়ের (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন) অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মনিরুজ্জামানের (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেন। পরে ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন। চৌগাছা, ছুটিপুর হিজলি, বেনাপোলসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য জাকির হোসেনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ২২২।
জাকির হোসেন ১৯৭৯ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে পৈতৃক ঠিকানাতেই বসবাস করছেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার চর পদ্মা গ্রামে। বাবার নাম মৃত আক্কেল আলী। মা হাসেন বানু। স্ত্রী জাহানারা হোসেন। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর শরীয়তপুর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৮।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
‘ঘণ্টা খানেক বা তারও বেশি সময় যুদ্ধ করার পর সকাল হয়ে গেল। আমরা পিছু হটে একটা আমবাগানে আশ্রয় নিই। রাতে সেই বাগানে পাকিস্তানিদের একজন এল একটা পত্র নিয়ে। সে এসেছে আমার কাছেই। পত্র পাঠিয়েছে পাকিস্তানিদের ওলদাত খান নামের একজন হাবিলদার। সে আমার প্রশিক্ষক ছিল। লিখেছে, “তুমি আমার কাছে প্রশিক্ষণ নিয়েছ, আমি তোমার ওস্তাদ। তুমি আমাদের ওপর আকস্মিক আক্রমণ করে আমাদের কয়েকজন সৈন্য মেরে ফেলেছ। তুমি গাদ্দার। তোমার হিম্মত থাকলে কাল আমাদের সাথে যুদ্ধ করতে এসো।”
‘এই চিঠি পেয়ে মুক্তিযোদ্ধারা বেশ উত্তেজিত হয়ে পড়েন। আমাদের সিদ্ধান্ত ছিল দুই-তিন পর পাকিস্তানিদের ক্যাম্পে আবার আক্রমণ চালানোর। চিঠি পাওয়ার পর সেই সিদ্ধান্ত পরিবর্তন করে আমরা পরদিন সকালেই আবার সেখানে আক্রমণ করি। আমাদের আক্রমণে পাকিস্তানিদের কয়েকজন নিহত হয়। দুজন পাকিস্তানিকে আমরা জীবিত আটক করি। তাদের পরে হত্যা করা হয়। যুদ্ধ চলতে থাকে। এরপর তাদের বিমান এসে আমাদের ওপর প্রচণ্ড হামলা চালায়। তখন আমরা দুর্বল হয়ে পড়ি। বিমান হামলায় এবং পাকিস্তানিদের পাল্টা আক্রমণে আমার ৩০ জন সহযোদ্ধা শহীদ হন। কয়েকজন আহত হন।
‘যুদ্ধের পর আমরা যারা বেঁচে যাই, তারা ভারতে চলে যাই। কিছুদিন পর আমি জানতে পারি, পাকিস্তানিরা ওই স্থান থেকে ক্যাম্প গুটিয়ে নিয়েছে।’
জাকির হোসেন চাকরি করতেন ইপিআরে। ১৯৭১ সালে কর্মরত ছিলেন চুয়াডাঙ্গা উইংয়ের (বর্তমানে ব্যাটালিয়ন) অধীনে। মুক্তিযুদ্ধ শুরু হলে মনিরুজ্জামানের (বীর বিক্রম) নেতৃত্বে যুদ্ধে ঝাঁপিয়ে পড়েন। কুষ্টিয়া ও ঝিনাইদহে প্রতিরোধ যুদ্ধে অংশ নেওয়ার পর ভারতে আশ্রয় নেন। পরে ৮ নম্বর সেক্টরের বয়রা সাব-সেক্টরে যুদ্ধ করেন। চৌগাছা, ছুটিপুর হিজলি, বেনাপোলসহ আরও কয়েক স্থানে সাহসিকতার সঙ্গে যুদ্ধ করেন।
মুক্তিযুদ্ধে সাহস ও বীরত্বের জন্য জাকির হোসেনকে বীর প্রতীক খেতাবে ভূষিত করা হয়। ১৯৭৩ সালের সরকারি গেজেট অনুযায়ী তাঁর বীরত্বভূষণ সনদ নম্বর ২২২।
জাকির হোসেন ১৯৭৯ সালে চাকরি থেকে অবসর নিয়েছেন। বর্তমানে পৈতৃক ঠিকানাতেই বসবাস করছেন। তাঁর পৈতৃক বাড়ি বরিশাল জেলার মুলাদী উপজেলার চর পদ্মা গ্রামে। বাবার নাম মৃত আক্কেল আলী। মা হাসেন বানু। স্ত্রী জাহানারা হোসেন। তাঁদের দুই ছেলে ও এক মেয়ে।
সূত্র: প্রথম আলোর শরীয়তপুর প্রতিনিধি সত্যজিৎ ঘোষ ও বাংলাদেশের স্বাধীনতাযুদ্ধ সেক্টরভিত্তিক ইতিহাস, সেক্টর ৮।
গ্রন্থনা: রাশেদুর রহমান
trrashed@gmail.com
No comments