সবজি আহার একটি স্বাস্থ্যকর পছন্দ by অধ্যাপক শুভাগত চৌধুরী
পরিচালক, ল্যাবরেটরি সার্ভিসেস, বারডেম হাসপাতাল সাম্মানিক অধ্যাপক ইব্রাহিম মেডিকেল কলেজ, ঢাকা।নিরামিষ আহার একটি স্বাস্থ্যকর জীবনরীতি। আমাদের এ অঞ্চলে সবজি খাওয়ার, নিরামিষ খাওয়ার চল ছিল, এখনো আছে। আমেরিকাতেও এখন ৪০ লাখ লোক নিরামিষাশী।
নিরামিষ আহারে বড়ই স্বাস্থ্যসুবিধা, কোলেস্টেরল কম, মোট চর্বি, স্যাচুরেটেড চর্বি ও কম; করোনারি হূদেরাগ ও টাইপ ২ ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমবে।
কীভাবে শুরু করা যাবে?
নিরামিষ খাবার আছে নানা রকমের। সংজ্ঞা অনুসারে সবজিভোজীরা মাংস, পোলট্রি বা মাছ গ্রহণ করেন না।
কোনো কোনো সবজিভোজী ডিম ও দুধ খান। কেউ খান দুধ, তবে ডিম খান না।
যাঁরা একান্ত সবজিভোজী তাঁরা কেবল উদ্ভিজ খাবার খান। প্রাণিজ কোনো খাবার খান না। এমনকি মধু, দুধ, ডিমও গ্রহণ করেন না। এঁরা কট্টর নিরামিষভোজী। তবে যে রকম সবজিভোজীই হন, প্রোটিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, দস্তা ও ভিটামিন বি১২ যাতে পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আমিষ বেছে নিন
মাংসের আমিষে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের এমিনো এসিডই আছে; কিন্তু সবজির আমিষে সব অত্যাবশ্যক এমিনো এসিড থাকে না। তাই নানা রকমের উদ্ভিজ্জ খাবার খেয়ে এমিনো এসিডগুলোর চাহিদা মিটাতে হয়। নানা রকমের এমিনো এসিড পেতে গেলে নিরামিষাশীদের খেতে হয় নানা রকম বাদাম, বীজ, শুঁটি, ডাল, শস্য, সয়াবিন। যেমন বিনসের মধ্যে আছে অনেক সিনোএসিড লাইসিন কিন্তু খুবই কম আছে সালফারসমৃদ্ধ এমিনো এসিড। আবার খাদ্যশস্যের ব্যাপারে ঠিক এর উল্টোটা। তাই ভাত ও মটরস্যুটি, শিম, ডাল—এসব দিয়ে খিচুড়ি খেলে আমিষের চাহিদা পূরণ হলো।
সোয়া দিয়ে পরিপূরণ করুন: সোয়া দ্রব্য হলো প্রোটিনের বিশাল উৎস। মাংসের পরিপূরক বটে। করতে পারেন টফু কাবাব। এ ছাড়া সোয়া দিয়ে নানা খাবার তৈরি করা যায়। ধোকাও তৈরি হয় সোয়া ও ডাল দিয়ে।
সবজি দিয়ে করা যায় নানা প্রিয় রেসিপি: নানা রকম রান্না। ভাপে সিদ্ধ সবজি। সরষে, পোস্ত, হলুদ কাঁচা লঙ্কা, জিরা, তেজপাতা দিয়ে নিরামিষ, ধোকার ডালনা, সয়াবিনের তরকারি। উচ্ছোভাজা, শাকভাজা, থোড়ের চচ্চড়ি, কত যে রেসিপি। খেতে স্বাদু বটে।
সবজির মধ্যে কাপসিকাম বা বড় মরিচের ভেতর বিনস ও অন্যান্য সবজি পুর দিয়ে রান্না। কাকরোলের পুর, কাঁচা জালি ফালি করে কেটে পুর চমৎকার।
হতে পারে ভেগি ওমলেট, যাঁরা ডিম খান তাঁদের জন্য। গাজর, মাশরুম, পালংশাক সঙ্গে।
টফুর সঙ্গে ঝাল মরিচ বেশ লাগে।
মাশরুম, টমেটো, পানির দিয়ে বার্গার।
সবজি বার্গার, সবজি চপ, সবজি শিঙাড়া, সবজি সামোসা চমৎকার তৈরি করে গরম গরম ভাজা।
নানা রকমের সবজি, খাদ্যশস্য, সোয়া দিয়ে তৈরি সবজি বার্গার।
সবজি ভোজন করলে হূদেরাগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। কমে ক্যানসারেরও ঝুঁকি। নিরামিষ ভোজনে আহার করা হয় প্রচুর ফাইটোকেমিক্যালস। রঙিন ফলও সবজিতে আছে বেশ ফাইটোকেমিক্যালস: যেমন ব্রকোলিতে ল্যুটিন, টমেটোতে লাইকোপ্যান। ফাইটোক্যামিকেল হলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যানসার সুরক্ষায় অনন্য।
নিরামিষ ভোজনে সমস্যাও আছে। কিছু ভিটামিন ও খনিজ দ্রব্য ঘাটতি হতে পারে। যেমন— লৌহ, ভিটামিন বি১২, দস্তা, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি। নিরামিষাশীদের ঝুঁকি বেশি। তাই এর পরিপূরণ দরকার হয়।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি
যদি পর্যাপ্ত দুধ, দধি, পনির খাওয়া যায়, তাহলে ক্যালসিয়াম বেশ পাওয়া যায়, হাড় ও মজবুত থাকে। কিন্তু কট্টর নিরামিষভোজী হলে সমস্যা। পেতে হবে ক্যালসিয়ামের বিকল্প উৎস।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সোয়া রস, কমলার রস, বীজ, বাদাম, সবুজ সবজি। ভিটামিন ডি ত্বকে তৈরি হয় রৌদ্রালোকে, যাঁরা বেশি অন্তঃপুরবাসিনী এদের জন্য সাপ্লিমেন্ট।
দস্তা: অনেক সবজিতে দস্তা থাকলেও মাংসের দস্তা যেমন দেহে শোষিত হয়, সবজির দস্তা তত ভালো শোষিত হবে না। তাই খেতে হবে প্রচুর দস্তাসমৃদ্ধ সবজি। দুধ, পনির, আটার রুটি, বাদাম, সোয়া খাবার, শুঁটি।
লৌহ: লাল মাংস হলো লৌহের ভালো উৎস। এর লৌহ প্রচুর আছে সবুজ শাকসবজিতে, রান্না করা শুষ্ক বিনস, লৌহসমৃদ্ধ খাদ্যশস্যে। উদ্ভিজ্জ লৌহ শোষণ হয় কম। তাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্যসহকারে খেলে ভালো শোষণ হয়।
ওমেগা ৩ মেদ অম্ল: এগুলো হলো ভালো চর্বি, কমায় রক্তচাপ, হূদিহতকর চর্বি। পাওয়া যায় তৈলাক্ত মাছ ও ডিমে। এসব না খেলে খেতে হবে মিষ্টি কুমড়ার বীচি, তিসি, আখরোট, সয়াবিন।
হতে পারে ভিটামিন বি১২ ঘাটতি।
ভিটামিন বি১২ ঘাটতি হলে হতে পারে পেশি দুর্বলতা ও ক্লান্তি। ভিটামিন বি১২ কেবল পাওয়া যায় প্রাণিজ খাদ্যে এবং ফরটিফাইভ খাদ্য যেমন—মাংস, ডিম ও দুধজাত দ্রব্য। তাই কট্টর নিরামিষ ভোজীদের ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট।
সবজিভোজী শিশু ও বাচ্চা
অনেক মা-বাবা ভাবেন তাঁদের বাচ্চা বা টিনএজার ছেলেমেয়েদের জন্য নিরামিষ আহার নিরাপদ কি না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তা কেবল নিরাপদই নয়, হিতকরও বটে।
নিরামিষ খাবার আমিষ চর্বি খাবারের চেয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর। কেবল দেখতে হবে বাচ্চারা যেন পর্যাপ্ত চর্বি পায় চাহিদা মতো—বাদাম, পিনাট, মাখন, এডোকেডা, দুধজাত দ্রব্য, ডিম যেন পায়।
খণ্ডকালীন নিরামিষভোজী
সবজি ভোজনের হিত পেতে হলে সপ্তাহের সাত দিনই নিরামিষ খেতে হবে, তা নয়। সপ্তাহে একইদিন বা দুদিন মাংস খাওয়া বাদ দিলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম খাওয়া। ইতিমধ্যে শরীরে এল উদ্ভিজ্জ পুষ্টি উপকরণ। তৃপ্তি হয় বেশ মাংসহীন খাবার খেতে মাঝে মধ্যে।
অনেক রেস্তোরাঁয় ভালো নিরামিষ ও সবজি পাওয়া যায়। নিরামিষ রেস্তোরাঁও আছে।
কীভাবে শুরু করা যাবে?
নিরামিষ খাবার আছে নানা রকমের। সংজ্ঞা অনুসারে সবজিভোজীরা মাংস, পোলট্রি বা মাছ গ্রহণ করেন না।
কোনো কোনো সবজিভোজী ডিম ও দুধ খান। কেউ খান দুধ, তবে ডিম খান না।
যাঁরা একান্ত সবজিভোজী তাঁরা কেবল উদ্ভিজ খাবার খান। প্রাণিজ কোনো খাবার খান না। এমনকি মধু, দুধ, ডিমও গ্রহণ করেন না। এঁরা কট্টর নিরামিষভোজী। তবে যে রকম সবজিভোজীই হন, প্রোটিন, লৌহ, ক্যালসিয়াম, দস্তা ও ভিটামিন বি১২ যাতে পাওয়া যায়, এ ব্যাপারে অগ্রাধিকার দিতে হবে।
আমিষ বেছে নিন
মাংসের আমিষে দেহের জন্য প্রয়োজনীয় সব রকমের এমিনো এসিডই আছে; কিন্তু সবজির আমিষে সব অত্যাবশ্যক এমিনো এসিড থাকে না। তাই নানা রকমের উদ্ভিজ্জ খাবার খেয়ে এমিনো এসিডগুলোর চাহিদা মিটাতে হয়। নানা রকমের এমিনো এসিড পেতে গেলে নিরামিষাশীদের খেতে হয় নানা রকম বাদাম, বীজ, শুঁটি, ডাল, শস্য, সয়াবিন। যেমন বিনসের মধ্যে আছে অনেক সিনোএসিড লাইসিন কিন্তু খুবই কম আছে সালফারসমৃদ্ধ এমিনো এসিড। আবার খাদ্যশস্যের ব্যাপারে ঠিক এর উল্টোটা। তাই ভাত ও মটরস্যুটি, শিম, ডাল—এসব দিয়ে খিচুড়ি খেলে আমিষের চাহিদা পূরণ হলো।
সোয়া দিয়ে পরিপূরণ করুন: সোয়া দ্রব্য হলো প্রোটিনের বিশাল উৎস। মাংসের পরিপূরক বটে। করতে পারেন টফু কাবাব। এ ছাড়া সোয়া দিয়ে নানা খাবার তৈরি করা যায়। ধোকাও তৈরি হয় সোয়া ও ডাল দিয়ে।
সবজি দিয়ে করা যায় নানা প্রিয় রেসিপি: নানা রকম রান্না। ভাপে সিদ্ধ সবজি। সরষে, পোস্ত, হলুদ কাঁচা লঙ্কা, জিরা, তেজপাতা দিয়ে নিরামিষ, ধোকার ডালনা, সয়াবিনের তরকারি। উচ্ছোভাজা, শাকভাজা, থোড়ের চচ্চড়ি, কত যে রেসিপি। খেতে স্বাদু বটে।
সবজির মধ্যে কাপসিকাম বা বড় মরিচের ভেতর বিনস ও অন্যান্য সবজি পুর দিয়ে রান্না। কাকরোলের পুর, কাঁচা জালি ফালি করে কেটে পুর চমৎকার।
হতে পারে ভেগি ওমলেট, যাঁরা ডিম খান তাঁদের জন্য। গাজর, মাশরুম, পালংশাক সঙ্গে।
টফুর সঙ্গে ঝাল মরিচ বেশ লাগে।
মাশরুম, টমেটো, পানির দিয়ে বার্গার।
সবজি বার্গার, সবজি চপ, সবজি শিঙাড়া, সবজি সামোসা চমৎকার তৈরি করে গরম গরম ভাজা।
নানা রকমের সবজি, খাদ্যশস্য, সোয়া দিয়ে তৈরি সবজি বার্গার।
সবজি ভোজন করলে হূদেরাগ ও ডায়াবেটিসের ঝুঁকি কমে। কমে ক্যানসারেরও ঝুঁকি। নিরামিষ ভোজনে আহার করা হয় প্রচুর ফাইটোকেমিক্যালস। রঙিন ফলও সবজিতে আছে বেশ ফাইটোকেমিক্যালস: যেমন ব্রকোলিতে ল্যুটিন, টমেটোতে লাইকোপ্যান। ফাইটোক্যামিকেল হলো শক্তিশালী অ্যান্টিঅক্সিডেন্ট, ক্যানসার সুরক্ষায় অনন্য।
নিরামিষ ভোজনে সমস্যাও আছে। কিছু ভিটামিন ও খনিজ দ্রব্য ঘাটতি হতে পারে। যেমন— লৌহ, ভিটামিন বি১২, দস্তা, ক্যালসিয়াম, ভিটামিন ডি। নিরামিষাশীদের ঝুঁকি বেশি। তাই এর পরিপূরণ দরকার হয়।
ক্যালসিয়াম ও ভিটামিন ডি
যদি পর্যাপ্ত দুধ, দধি, পনির খাওয়া যায়, তাহলে ক্যালসিয়াম বেশ পাওয়া যায়, হাড় ও মজবুত থাকে। কিন্তু কট্টর নিরামিষভোজী হলে সমস্যা। পেতে হবে ক্যালসিয়ামের বিকল্প উৎস।
ক্যালসিয়াম সমৃদ্ধ সোয়া রস, কমলার রস, বীজ, বাদাম, সবুজ সবজি। ভিটামিন ডি ত্বকে তৈরি হয় রৌদ্রালোকে, যাঁরা বেশি অন্তঃপুরবাসিনী এদের জন্য সাপ্লিমেন্ট।
দস্তা: অনেক সবজিতে দস্তা থাকলেও মাংসের দস্তা যেমন দেহে শোষিত হয়, সবজির দস্তা তত ভালো শোষিত হবে না। তাই খেতে হবে প্রচুর দস্তাসমৃদ্ধ সবজি। দুধ, পনির, আটার রুটি, বাদাম, সোয়া খাবার, শুঁটি।
লৌহ: লাল মাংস হলো লৌহের ভালো উৎস। এর লৌহ প্রচুর আছে সবুজ শাকসবজিতে, রান্না করা শুষ্ক বিনস, লৌহসমৃদ্ধ খাদ্যশস্যে। উদ্ভিজ্জ লৌহ শোষণ হয় কম। তাই ভিটামিন সি সমৃদ্ধ খাদ্যসহকারে খেলে ভালো শোষণ হয়।
ওমেগা ৩ মেদ অম্ল: এগুলো হলো ভালো চর্বি, কমায় রক্তচাপ, হূদিহতকর চর্বি। পাওয়া যায় তৈলাক্ত মাছ ও ডিমে। এসব না খেলে খেতে হবে মিষ্টি কুমড়ার বীচি, তিসি, আখরোট, সয়াবিন।
হতে পারে ভিটামিন বি১২ ঘাটতি।
ভিটামিন বি১২ ঘাটতি হলে হতে পারে পেশি দুর্বলতা ও ক্লান্তি। ভিটামিন বি১২ কেবল পাওয়া যায় প্রাণিজ খাদ্যে এবং ফরটিফাইভ খাদ্য যেমন—মাংস, ডিম ও দুধজাত দ্রব্য। তাই কট্টর নিরামিষ ভোজীদের ভিটামিন বি১২ সমৃদ্ধ খাদ্য বা সাপ্লিমেন্ট।
সবজিভোজী শিশু ও বাচ্চা
অনেক মা-বাবা ভাবেন তাঁদের বাচ্চা বা টিনএজার ছেলেমেয়েদের জন্য নিরামিষ আহার নিরাপদ কি না। বিশেষজ্ঞরা বলেন, তা কেবল নিরাপদই নয়, হিতকরও বটে।
নিরামিষ খাবার আমিষ চর্বি খাবারের চেয়ে অনেক স্বাস্থ্যকর। কেবল দেখতে হবে বাচ্চারা যেন পর্যাপ্ত চর্বি পায় চাহিদা মতো—বাদাম, পিনাট, মাখন, এডোকেডা, দুধজাত দ্রব্য, ডিম যেন পায়।
খণ্ডকালীন নিরামিষভোজী
সবজি ভোজনের হিত পেতে হলে সপ্তাহের সাত দিনই নিরামিষ খেতে হবে, তা নয়। সপ্তাহে একইদিন বা দুদিন মাংস খাওয়া বাদ দিলে স্যাচুরেটেড ফ্যাট ও কোলেস্টেরল কম খাওয়া। ইতিমধ্যে শরীরে এল উদ্ভিজ্জ পুষ্টি উপকরণ। তৃপ্তি হয় বেশ মাংসহীন খাবার খেতে মাঝে মধ্যে।
অনেক রেস্তোরাঁয় ভালো নিরামিষ ও সবজি পাওয়া যায়। নিরামিষ রেস্তোরাঁও আছে।
No comments