ক্যানসার রোগীর পেলিয়েটিভ কেয়ার by পারভীন শাহিদা
অধ্যাপক, মেডিকেল অনকোলজি বিভাগ, জাতীয় ক্যানসার গবেষণা ইনস্টিটিউট ও হাসপাতাল, মহাখালী, ঢাকা
পেলিয়েটিভ কেয়ারের অপর নাম সাপোর্ট কেয়ার বা সহায়ক চিকিৎসা। কমফোর্ট কেয়ারও (আরাম করে দেওয়ার ব্যবস্থা) বলা যায়। ক্যানসার একটি ঝুঁকিপূর্ণ রোগ।
পেলিয়েটিভ কেয়ারের অপর নাম সাপোর্ট কেয়ার বা সহায়ক চিকিৎসা। কমফোর্ট কেয়ারও (আরাম করে দেওয়ার ব্যবস্থা) বলা যায়। ক্যানসার একটি ঝুঁকিপূর্ণ রোগ।
কারণ, এ রোগের যথাযথ চিকিৎসা না হলে যেকোনো সময় জীবন সংকটময় হয়ে উঠতে পারে। ক্যানসার শনাক্ত হওয়া মাত্রই প্রায় সব রোগী নিশ্চিত মৃত্যু ভেবে আতঙ্কিত হয়ে ওঠেন। অনেকেরই মানসিক সমস্যা দেখা দেয়। ঠিকমতো খাওয়াদাওয়া হয় না, বিশ্রাম হয় না। দুশ্চিন্তা-দুর্ভাবনায় নির্ঘুম রাতে কাটে। অল্প দিনেই শরীর ক্লান্তশ্রান্ত হয়ে যায়। ক্যানসার রোগের কারণে নানা ধরনের উপসর্গ তো থাকেই, ক্যানসার চিকিৎসার কারণেও নতুন করে উপসর্গ যোগ হয়। এতে রোগীর জীবন অনেক সময় দুর্বিষহ হয়ে ওঠে। অনেকে চিকিৎসা সম্পন্ন না করেই চলে যান। অনেক সময় রোগীর আত্মীয়স্বজনও এ রকম পরিস্থিতিতে চিকিৎসা করাতে চান না। প্রথমে নিরাময়যোগ্য রোগ হিসেবে শনাক্ত হয়েও অনিরাময়যোগ্য রোগে পরিণত হয়। অবর্ণনীয় দুঃখকষ্ট নিয়ে দিন কাটে। পেলিয়েটিভ কেয়ার হলো এমন সব ব্যবস্থা নেওয়া, যাতে রোগীদের শারীরিক ও মানসিক সুস্থতা বজায় থাকে এবং জীবনে প্রাণশক্তি ফিরে আসে। পেলিয়েটিভ কেয়ারের মূল লক্ষ্য হলো রোগীর বিভিন্ন উপসর্গের উপশম ঘটিয়ে, জীবনমান বাড়িয়ে জীবনকে অর্থবহ করে তোলা।
ক্যানসারে আক্রান্ত কোন রোগীর পেলিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন
পেলিয়েটিভ কেয়ার যেমন অনিরাময়যোগ্য রোগীদের জন্য প্রয়োজন, তেমনি নিরাময়যোগ্য রোগীর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ, ক্যানসার শারীরিক রোগ হলেও ব্যক্তিজীবনে বিভিন্নভাবে এর প্রভাব পড়ে। সহায়তা ছাড়া কারও পক্ষেই এই কঠিন সময় পার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব নয়।
হসপিস কেয়ার
হসপিস কেয়ারও একধরনের পেলিয়েটিভ কেয়ার। জীবনের শেষ মুহূর্তের (এন্ড অব লাইফ কেয়ার) চিকিৎসাসেবা। দীর্ঘদিন রোগে ভুগতে ভুগতে রোগী এমন পর্যায়ে এসে যান, শারীরিক অবস্থা তখন আর ক্যানসার চিকিৎসার অনুকূলে থাকে না। এ পর্যায়ে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছয় মাস বা তার চেয়েও কম। আরও নিবিড়ভাবে চিকিৎসা ও যত্ন-সেবার প্রয়োজন হয়; যাতে রোগীর ব্যথা ও অন্যান্য উপর্সগের উপশম ঘটে এবং দেহে আরাম বোধ হয়। মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। হসপিস কেয়ারের উদ্দেশ্য, জীবনের শেষ সময়টা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে কাটিয়ে যেতে পারেন এবং সাহসের সঙ্গে মৃত্যুকে বরণ করতে পারেন।
হসপিস কেয়ার মৃত্যুপথযাত্রীর পরিবারকেও সাপোর্ট দিয়ে থাকে।
পেলিয়েটিভ কেয়ার কখন শুরু করতে হয় এবং কত দিন চালিয়ে যেতে হয়
রোগনির্ণয়ের শুরু থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা এবং চিকিৎসা-পরবর্তী ফলোআপ। প্রতিটি ধাপে কত না সমস্যার মুখে পড়তে হয়। একেকজনের সমস্যা আবার একেক রকম। চিকিৎসার আগে, চিকিৎসাকালীন ও চিকিৎসা-পরবর্তী সময়ে রোগীর শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রস্তুতি থাকতে হয়। তাই পুরো সময়টাতেই সহায়তার প্রয়োজন হয়।
পেলিয়েটিভ কেয়ারের সদস্য কারা
পেলিয়েটিভ কেয়ার একটি টিম বা দল। এ কাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশার ব্যক্তির সহায়তার প্রয়োজন হয়। এই দলের উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলেন— চিকিৎসক: পেলিয়েটিভ কেয়ারে বিশেষভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহায়তার প্রয়োজন হয়। যেমন—মেডিকেল, রেডিয়েশন, সার্জিক্যাল, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিস্ট, নিউরোলজি, নিউরোসার্জন, অর্থোপেডিক, মানসিক রোগ, হূদেরাগ, ফিজিক্যাল মেডিসিন, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হয়।
মনোবিজ্ঞানী
কাউন্সিলর
নার্স (পেলিয়েটিভ কেয়ারে বিশেষভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত) এবং অন্যান্য বিষয়ের ট্রেনিংপ্রাপ্ত নার্স।
স্বাস্থ্য সহায়তাকারী
সোশ্যাল ওয়ার্কার
স্বেচ্ছাসেবক
রোগীর পরিচর্যাকারী পরিবারের সদস্য
রোগী নিজে এবং অন্য আরও অনেকে।
পেলিয়েটিভ কেয়ার কোথায় প্রদান করা যায়
বড় বড় হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা থাকে। পেলিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট গঠন করলে সহজেই এ ধরনের সহায়তা দেওয়া যায়। পেলিয়েটিভ কেয়ারের জন্য সব সময় যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তা নয়। রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও বহির্বিভাগে এ ধরনের সেবা নেওয়া যেতে পারে। ক্যানসার হাসপাতাল, ক্যানসার সেন্টার বা ক্যানসার ক্লিনিক; এমনকি বাড়িতেও পেলিয়েটিভ কেয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।
পেলিয়েটিভ কেয়ারে প্রধানত কী কী ধরনের সহায়তা করা হয়
পেলিয়েটিভ কেয়ার একটি ব্যাপক কার্যক্রম। তবে পেলিয়েটিভ কেয়ারে প্রধান প্রধান কার্যক্রম হলো:
উপসর্গের উপশম করা বা উপসর্গের তীব্রতা কমানো
ক্যানসার রোগীর বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ বা সমস্যা থাকে। যেমন—ব্যথা, বমি, বমির ভাব, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, অরুচি, গিলতে কষ্ট, মুখে ঘা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, রক্তক্ষরণ, শরীর জ্বালাপোড়া করা, দুর্বলতা, শরীর চুলকানো, ঘুম না হওয়া ইত্যাদি সমস্যা, যা লিখে শেষ করা যায় না। বিভিন্ন রোগে বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়। এসব উপসর্গের উপশমের জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা-পদ্ধতি আছে। তবে প্রত্যেকের চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন। প্রচলিত ক্যানসার চিকিৎসা, যথা—রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি ও অস্ত্রোপচার করে অনেক উপসর্গের উপশম করা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যবস্থা, যেমন—সম্পূরক (কমপ্লিমেন্টারি) মেডিটেশন, বিকল্প (অল্টারনেটিভ) হোমিওপ্যাথ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দিয়ে অনেক সময় উপকার পাওয়া যায়। সব সময় যেসব উপসর্গের উপশম ঘটে, তা নয়। তবে পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলে সব উপসর্গের উপশম করা না গেলেও উপসর্গের তীব্রতা কমিয়ে আনা যায়। জীবন সহনীয় হয় এবং জীবনমান বাড়ে।
ক্যানসারে আক্রান্ত কোন রোগীর পেলিয়েটিভ কেয়ার প্রয়োজন
পেলিয়েটিভ কেয়ার যেমন অনিরাময়যোগ্য রোগীদের জন্য প্রয়োজন, তেমনি নিরাময়যোগ্য রোগীর জন্য সমানভাবে প্রযোজ্য। কারণ, ক্যানসার শারীরিক রোগ হলেও ব্যক্তিজীবনে বিভিন্নভাবে এর প্রভাব পড়ে। সহায়তা ছাড়া কারও পক্ষেই এই কঠিন সময় পার করে স্বাভাবিক জীবনে ফিরে আসা সম্ভব নয়।
হসপিস কেয়ার
হসপিস কেয়ারও একধরনের পেলিয়েটিভ কেয়ার। জীবনের শেষ মুহূর্তের (এন্ড অব লাইফ কেয়ার) চিকিৎসাসেবা। দীর্ঘদিন রোগে ভুগতে ভুগতে রোগী এমন পর্যায়ে এসে যান, শারীরিক অবস্থা তখন আর ক্যানসার চিকিৎসার অনুকূলে থাকে না। এ পর্যায়ে রোগীর বেঁচে থাকার সম্ভাবনা ছয় মাস বা তার চেয়েও কম। আরও নিবিড়ভাবে চিকিৎসা ও যত্ন-সেবার প্রয়োজন হয়; যাতে রোগীর ব্যথা ও অন্যান্য উপর্সগের উপশম ঘটে এবং দেহে আরাম বোধ হয়। মানসিক প্রশান্তি লাভ করতে পারেন। হসপিস কেয়ারের উদ্দেশ্য, জীবনের শেষ সময়টা যাতে শান্তিপূর্ণভাবে কাটিয়ে যেতে পারেন এবং সাহসের সঙ্গে মৃত্যুকে বরণ করতে পারেন।
হসপিস কেয়ার মৃত্যুপথযাত্রীর পরিবারকেও সাপোর্ট দিয়ে থাকে।
পেলিয়েটিভ কেয়ার কখন শুরু করতে হয় এবং কত দিন চালিয়ে যেতে হয়
রোগনির্ণয়ের শুরু থেকে বিভিন্ন পরীক্ষা-নিরীক্ষা, চিকিৎসা এবং চিকিৎসা-পরবর্তী ফলোআপ। প্রতিটি ধাপে কত না সমস্যার মুখে পড়তে হয়। একেকজনের সমস্যা আবার একেক রকম। চিকিৎসার আগে, চিকিৎসাকালীন ও চিকিৎসা-পরবর্তী সময়ে রোগীর শারীরিক এবং মানসিকভাবে প্রস্তুতি থাকতে হয়। তাই পুরো সময়টাতেই সহায়তার প্রয়োজন হয়।
পেলিয়েটিভ কেয়ারের সদস্য কারা
পেলিয়েটিভ কেয়ার একটি টিম বা দল। এ কাজে বিভিন্ন সময় বিভিন্ন পেশার ব্যক্তির সহায়তার প্রয়োজন হয়। এই দলের উল্লেখযোগ্য সদস্যরা হলেন— চিকিৎসক: পেলিয়েটিভ কেয়ারে বিশেষভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত চিকিৎসক এবং চিকিৎসাবিজ্ঞানের সব বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসকের সহায়তার প্রয়োজন হয়। যেমন—মেডিকেল, রেডিয়েশন, সার্জিক্যাল, গাইনোকোলজিক্যাল অনকোলজিস্ট, নিউরোলজি, নিউরোসার্জন, অর্থোপেডিক, মানসিক রোগ, হূদেরাগ, ফিজিক্যাল মেডিসিন, নেফ্রোলজি, ইউরোলজি, চক্ষু বিশেষজ্ঞ এবং বিষয়ের বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক। বিভিন্ন ধরনের পরীক্ষা-নিরীক্ষারও প্রয়োজন হয়।
মনোবিজ্ঞানী
কাউন্সিলর
নার্স (পেলিয়েটিভ কেয়ারে বিশেষভাবে ট্রেনিংপ্রাপ্ত) এবং অন্যান্য বিষয়ের ট্রেনিংপ্রাপ্ত নার্স।
স্বাস্থ্য সহায়তাকারী
সোশ্যাল ওয়ার্কার
স্বেচ্ছাসেবক
রোগীর পরিচর্যাকারী পরিবারের সদস্য
রোগী নিজে এবং অন্য আরও অনেকে।
পেলিয়েটিভ কেয়ার কোথায় প্রদান করা যায়
বড় বড় হাসপাতালে সব ধরনের চিকিৎসাব্যবস্থা থাকে। পেলিয়েটিভ কেয়ার ইউনিট গঠন করলে সহজেই এ ধরনের সহায়তা দেওয়া যায়। পেলিয়েটিভ কেয়ারের জন্য সব সময় যে হাসপাতালে ভর্তি হতে হয়, তা নয়। রোগী হাসপাতালে ভর্তি না হয়েও বহির্বিভাগে এ ধরনের সেবা নেওয়া যেতে পারে। ক্যানসার হাসপাতাল, ক্যানসার সেন্টার বা ক্যানসার ক্লিনিক; এমনকি বাড়িতেও পেলিয়েটিভ কেয়ার দেওয়ার ব্যবস্থা করা যায়।
পেলিয়েটিভ কেয়ারে প্রধানত কী কী ধরনের সহায়তা করা হয়
পেলিয়েটিভ কেয়ার একটি ব্যাপক কার্যক্রম। তবে পেলিয়েটিভ কেয়ারে প্রধান প্রধান কার্যক্রম হলো:
উপসর্গের উপশম করা বা উপসর্গের তীব্রতা কমানো
ক্যানসার রোগীর বিভিন্ন ধরনের উপসর্গ বা সমস্যা থাকে। যেমন—ব্যথা, বমি, বমির ভাব, মুখ শুকিয়ে যাওয়া, অরুচি, গিলতে কষ্ট, মুখে ঘা, কোষ্ঠকাঠিন্য, পাতলা পায়খানা, শ্বাসকষ্ট, কাশি, রক্তক্ষরণ, শরীর জ্বালাপোড়া করা, দুর্বলতা, শরীর চুলকানো, ঘুম না হওয়া ইত্যাদি সমস্যা, যা লিখে শেষ করা যায় না। বিভিন্ন রোগে বিভিন্ন রকম সমস্যা হয়। এসব উপসর্গের উপশমের জন্য নির্ধারিত বিভিন্ন ধরনের চিকিৎসা-পদ্ধতি আছে। তবে প্রত্যেকের চিকিৎসা ভিন্ন ভিন্ন। প্রচলিত ক্যানসার চিকিৎসা, যথা—রেডিওথেরাপি, কেমোথেরাপি ও অস্ত্রোপচার করে অনেক উপসর্গের উপশম করা যায়। এ ছাড়া অন্যান্য ব্যবস্থা, যেমন—সম্পূরক (কমপ্লিমেন্টারি) মেডিটেশন, বিকল্প (অল্টারনেটিভ) হোমিওপ্যাথ, আয়ুর্বেদিক চিকিৎসা দিয়ে অনেক সময় উপকার পাওয়া যায়। সব সময় যেসব উপসর্গের উপশম ঘটে, তা নয়। তবে পরিকল্পিতভাবে চেষ্টা চালিয়ে গেলে সব উপসর্গের উপশম করা না গেলেও উপসর্গের তীব্রতা কমিয়ে আনা যায়। জীবন সহনীয় হয় এবং জীবনমান বাড়ে।
No comments