সম্ভাবনার পথে বাধা দূর হোক

দেশের উন্নয়নে আয় বৃদ্ধির বিকল্প নেই। জাতীয় ও মাথাপিছু আয় বাড়াতে হবে। দেশের মানুষের কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে হবে। আয় বৃদ্ধিমূলক কর্মকাণ্ড হাতে নিতে হবে। কিন্তু সাম্প্রতিক বিশ্ব পরিস্থিতি দেশের অর্থনীতির জন্য বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিতে পারে-এমন আশঙ্কাও উড়িয়ে দেওয়া যায় না।


একদিকে পরিবর্তিত বিশ্ব পরিস্থিতি, অন্যদিকে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব দেশে পড়তে শুরু করেছে। জলবায়ু পরিবর্তনজনিত কারণে বাংলাদেশ সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। বিশ্ব উষ্ণায়ন বৃদ্ধির ফলে দেশের ২০ শতাংশ জমি এবং ৩০ শতাংশ জনগণ ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। অদূর ভবিষ্যতে জলবায়ু উদ্বাস্তু বাংলাদেশের জন্য একটি বড় সমস্যা হয়ে দেখা দেবে। দেশের অর্থনীতিতে সেটা বড় ধরনের প্রভাব ফেলবে। অন্যদিকে বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানিতে বড় ধরনের ধস নামার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। জনশক্তি রপ্তানির প্রধান বাজার মধ্যপ্রাচ্য। সেখানকার বাজার এমনিতেই দিন দিন সংকুচিত হয়ে আসছে। রাজনৈতিক অস্থিরতা ও যুদ্ধ পরিস্থিতির কারণেই এ অবস্থার সৃষ্টি হয়েছে। এরই মধ্যে লিবিয়া থেকে প্রায় ৩৪ হাজার কর্মী দেশে ফিরেছে। আরো অনেক কর্মী ফিরে আসার প্রতীক্ষায়। রাজনৈতিক উত্তেজনা বিরাজ করছে বাহরাইন, মিসর, ইয়েমেন, সিরিয়া প্রভৃতি দেশে। মধ্যপ্রাচ্যজুড়ে রাজনৈতিক এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জনশক্তি রপ্তানির ক্ষেত্রে বড় ধরনের হুমকি হয়ে দেখা দিয়েছে। ফলে সরকারের রেমিট্যান্স আয়েও বিরূপ প্রভাব পড়তে শুরু করেছে। বিশেষজ্ঞরা মনে করছেন, এ পরিস্থিতিতে বড় ধরনের ধস নামার আগেই সরকারকে দ্রুত নতুন শ্রমবাজার সৃষ্টি করতে হবে। সেই সঙ্গে যেসব কর্মী ফিরে আসছে তাদের পুনর্বাসন, চাকরি বা নতুন দেশে জরুরি ভিত্তিতে চাকরির ব্যবস্থা করার উদ্যোগ নিতে হবে। মধ্যপ্রাচ্য থেকে ফিরে আসা জনশক্তির কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টির জন্য সর্বাগ্রে প্রয়োজন বড় অঙ্কের বিনিয়োগ। এ অবস্থায় কর্মসংস্থান ও আয় বৃদ্ধির নতুন নতুন পথ খুঁজে বের করতে হবে। নতুন কর্মসংস্থানের জন্য শিল্পায়ন করতে হবে। বাড়াতে হবে বিনিয়োগ। শিল্পায়ন ও কর্মসংস্থান সৃষ্টির জন্য বিদেশি বিনিয়োগকারীদের খুঁজে বের করতে হবে, বিনিয়োগের জন্য তাঁদের আকৃষ্ট করতে হবে। বাংলাদেশের মানবসম্পদের অপার সম্ভাবনাকে কাজে লাগাতে হবে।
গত সপ্তাহে ফ্রান্স সফরে গেছেন অর্থমন্ত্রী। তাঁর এবং তাঁর সফরসঙ্গী ব্যবসায়ীদের সঙ্গে আলোচনায় ফ্রান্সের বিনিয়োগকারীরা বাংলাদেশে বিনিয়োগের ব্যাপারে আগ্রহ প্রকাশ করেছেন। অর্থমন্ত্রীর সঙ্গে আলোচনায় অবকাঠামো, ওষুধ, প্রযুক্তি ও টেলিকম খাতে বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ প্রকাশ করেছেন তাঁরা। তবে বাংলাদেশে বিনিয়োগে বিদ্যুৎ সমস্যাকে প্রধান বাধা হিসেবে উল্লেখ করে ব্যবসা পরিচালনার ক্ষেত্রে আমলাতান্ত্রিক কিছু জটিলতার কথা তুলে ধরেন তাঁরা।
দেশের ক্রমবর্ধমান জনসংখ্যাকে দেশের উন্নতির অন্যতম বাধা হিসেবে উল্লেখ করেছেন অর্থমন্ত্রী। তবে এই বাধা অতিক্রমের সুযোগ আছে। সমস্যাকে সম্ভাবনায় উন্নীত করতে পারলে আর কোনো সমস্যা থাকবে না। বিশ্ব মন্দা থেকে শুরু করে নানা বাধা পেরিয়ে চলতি বছরের ফেব্রুয়ারি পর্যন্ত তৈরি পোশাক রপ্তানিতে প্রায় ৪০ শতাংশ প্রবৃদ্ধি হয়েছে। ফ্রান্সে সে দেশের বিনিয়োগকারীদের বাংলাদেশের মানবসম্পদের সম্ভাবনাকে কাজে লাগিয়ে বিনিয়োগের আহ্বান জানিয়েছেন অর্থমন্ত্রী।
ফ্রান্সের ব্যবসায়ীদের বাংলাদেশে বিনিয়োগের আগ্রহ সম্ভাবনার এক নতুন দিগন্ত উন্মোচিত করতে যাচ্ছে বলে আমাদের বিশ্বাস। বর্তমান পরিস্থিতিতে দেশে বিনিয়োগ বৃদ্ধির বিকল্প নেই। শুধু দেশের নয়, বিদেশি বিনিয়োগও ব্যাপকভাবে বাড়াতে হবে। সম্ভাবনা কাজে লাগাতে হবে। সম্ভাবনার পথে বাধা দূর করতে হবে।

No comments

Powered by Blogger.