‘আচ্ছা বাবা মানুষ খুন করলে বুঝি বিচার করা হবে না’- হত্যাকারী রক্ষার হরতালে নতুন প্রজন্মের প্রশ্ন

সভ্য জগতে হত্যাকারীদের রক্ষার ‘হরতাল’ দেখতে হচ্ছে বর্তমান প্রজন্মকে। দেশে যখন ১৫ লাখ কিশোর-কিশোরী জীবনের প্রথম পাবলিক পরীক্ষায় অংশ নিচ্ছে তখন জামায়াত কী প্রমাণ করতে চায় তারা একাডেমিক শিক্ষা চায় না।
এই কচি মেধার কিশোররা জানছে ’৭১-এর মানবতাবিরোধী অপরাধী তথা হত্যাকারীদের বিচার করা যাবে না। কোন কিশোর-কিশোরী যদি তাঁর মা-বাবাকে প্রশ্ন করে ‘আচ্ছা বাবা মানুষ খুন করলে বুঝি বিচার করা হবে না।’ অভিভাবকের উত্তর দিতে দেরি হলে ফের যদি কোন শিশু প্রশ্ন ছুড়ে দেয় ‘যাদের বিচার হচ্ছে, টিভিতে যাদের দেখায় তাঁরা মাথায় টুপি পরা। তারা নামাজী খুব ভাল মানুষ(!)। তারাই কি মুক্তিযুদ্ধের সময় মানুষ হত্যা করেছিল!’ এর প্রকৃত উত্তর পাওয়ার পর ওই কিশোর-কিশোরীরা যখন দেখে হত্যাকারীদের বাঁচাতেই হরতাল ডাকা হয়েছে তখন কচি মনে কী প্রভাব পড়ে তা কি বলে দিতে হয়! গেল ক’দিনের হরতালে সাধারণ লোক কতটা ত্যক্ত বিরক্ত তা রাজনীতিকরা কী ভাবেন! একজন বললেন “জামায়াত শিবির কতটা ভয়ঙ্কর তা বুঝি আমাদের করিৎকর্মা (!) পুলিশ টের পায় না। রজনীগন্ধা ফুলের স্টিক পুলিশের হাতে দিয়ে যখন গজার কাঠের স্টিক (লাঠি) দিয়ে সেই পুলিশের পিঠেই আঘাত করে তখন কি বলতে হবে জামায়াত-শিবিরের ভালবাসার দান কত মধুর! পুলিশ কমিশনার সাহেব কি তখন প্রেস ব্রিফিং করে বলবেন ‘বিদেশে পরীক্ষিত কেমিক্যাল উইপেন পিপার স্প্রে টিয়ার শেলের চেয়ে ভাল!’ মিডিয়ার প্রসারের এই যুগে সাধারণ মানুষ কি দেখছে জামায়াত-শিবিরের হাতে পুলিশ মার খাওয়ার পর সেই জামায়াত শিবিরদের কাছ থেকেই রজনীগন্ধা নিচ্ছে। আলেকজান্ডার ও তাঁর সেনাপতি সেলুকাস এই সময়ে বাংলাদেশে এই অবস্থা দেখে আর বলত না ‘সত্যই সেলুকাস কী বিচিত্র এই দেশ! ভয়ে এই দেশ ছেড়ে পালিয়ে যেত। যে দেশে মানবতা বিরোধী অপরাধীদের বিচার বন্ধ ও হত্যাকারীদের বাঁচানোর দাবিতে মাধ্যমিক পরীক্ষা বন্ধ করে হরতালের ডাক দেয়া হয় সেই জামায়াত-শিবির যে কতটা হিংস্র তা দেখে বিশ্বের সকল দেশের মানুষ বিস্মিত হয়ে যায়। প্রায় ১৮ বছর আগে ব্রিটেনে তৈরি ডকুমেন্টারি ছবি ‘ওয়ার ক্রাইমস ফাইল’ এর পরিচালক ও ব্রিটিশ পার্লামেন্টারি ওয়ার ক্রাইমস গ্রুপের ভাইস চেয়ারম্যান লর্ড আর্চার বলেছেন ‘যদি কেউ যুদ্ধ অপরাধ করে থাকে তাহলে পৃথিবীর হেন জায়গা নেই যেখানে তারা পালাতে পারে। তাদের আশ্রয় হবে না। বরং যেখানেই তাদের পাওয়া যাক সেখানেই বিচার করা হবে।’ আর বাংলাদেশে আন্তর্জাতিক ট্রাইব্যুনালে স্বচ্ছতার সঙ্গে বিচার করার পর অপরাধীদের বাঁচাতে মরিয়া জামায়াত-শিবির। একজন শিক্ষক বললেন “হরতালের সময় পুলিশের নির্লিপ্ততা দেখে মনে হয় মধ্যপ্রাচ্যের কত টাকা ছড়ানো হয়েছে পুলিশের মধ্যে। তা না হলে পুলিশ এভাবে মার খাওয়ার পর কিভাবে রজনীগন্ধা হাতে নেয় এবং পুলিশের সামনেই লাঠি ও দেশীয় অস্ত্র নিয়ে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডাররা জঙ্গী মিছিল করে। পুলিশের গাড়ির ওপর বোমা ছুড়ে মারে। আবার বাংলাদেশের এই পুলিশই পিস কিপিং মিশনে বিদেশের মাটিতে গিয়ে ভয়াবহ দাঙ্গা দমন করে সুনাম কুড়িয়ে আনে। যা তারা বিদেশের মাটিতে পারে তা এই দেশের মাটিতে কেন পারে না! তাহলে কী ধরে নিতে হবে জামায়াত-শিবিরের ক্যাডারের চেয়ে পুলিশ দুর্বল!” সম্মানিত পুলিশ কমিশনার সাহেব আপনি তো মঝ্যে মধ্যেই টিভিতে ব্রিফিং করেন। আপনার কথা শুনে এটা বুঝে নিতে অসুবিধা হয় না আপনি সজ্জন ও শিক্ষিত মানুষ। তাহলে অনুগ্রহ করে একজন শিক্ষকের ওই প্রশ্নের উত্তরটা কী আপনি দেবেন।

No comments

Powered by Blogger.