পদ্মা সেতু নিয়ে সরকার নতুন কনসোর্টিয়াম গঠনের চেষ্টা চালাচ্ছে- ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি দাতাদের সঙ্গে বৈঠক by হামিদ-উজ-জামান মামুন

পদ্মা সেতু প্রকল্পে বিশ্বব্যাংকের বাইরে অন্য দাতাদের অর্থায়ন চায় বাংলাদেশ। এ লক্ষ্যে নতুন কনসোর্টিয়াম গঠনে ব্যাপক তৎপরতা চালানো হচ্ছে। তা ছাড়া দাতাদের ভুল ভাঙ্গাতে আগামী ৯ ও ১০ ফেব্রুয়ারি জরুরী বৈঠক ডাকার প্রস্তুতি নিয়েছে অর্থ মন্ত্রণালয়।
আজ (বুধবার) এডিবি, জাইকা ও আইডিবিসহ অন্য দাতাদের কাছে বৈঠকে অংশ নেয়ার আমন্ত্রণ পাঠানো হতে পারে। পাশাপাশি বিশ্বব্যাংককেও এসব বৈঠকে অংশ নিতে অনুরোধ জানানো হবে বলে জানা গেছে। তবে বিশ্বব্যাংক বৈঠকে অংশ নিতে আসবে কিনা তা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করা হয়েছে। রাজধানীর শেরেবাংলানগরের এনইসি সম্মেলন কক্ষে দু’দিনের এ বৈঠক করার কথা ।
অর্থ মন্ত্রণালয় সূত্র জানায়, বৈঠকের বিষয়ে দাতাদের কাছে যে চিঠি পাঠানো হবে তার খসড়া মঙ্গলবার তৈরি করা হয়েছে। এতে বলা হয়েছে বাংলাদেশ ক্ষোভ বা দুঃখ থেকে বিশ্বব্যাংকের অর্থ না নেয়ার কথা বলেনি। নির্বাচনী অঙ্গীকার পরিপূরণের জন্য সরকার সিদ্ধান্ত নেয় যে, বিশ্বব্যাংকের সহায়তা ছাড়াই এই প্রকল্পের কাজ শুরু করা হবে। কেননা বিশ্বব্যাংক যে সময়সীমার মধ্যে তদন্ত কাজ শেষ করে সিদ্ধান্ত দিতে চায়, তার সঙ্গে জনগণকে দেয়া সরকারের প্রতিশ্রুতির মিল হচ্ছে না। সুতরাং পদ্মা সেতুর অর্থায়ন নিয়ে দাতাদের সঙ্গে ভুল বোঝাবুঝির কোন অবকাশ নেই।
এ ছাড়া ওই চিঠিতে আরও লেখা হয়েছে যে, সরকার অবগত আছে, বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন বাতিল হলে সহযোগী অন্য দাতাদের ঋণ চুক্তিও বাতিল হয়ে যাবে। কিন্তু তার পরও এটি করতে বাধ্য হয়েছে। এখন দাতাদের অর্থায়ন চায় বাংলাদেশ।
সূত্র জানায়, সোমবার জাতীয় সংসদে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত যে বিবৃতি দিয়েছিলেন সেটির ইংরেজী ভার্সনের কাজ শেষ করা হয়েছে। মঙ্গলবার বিকেলে অর্থমন্ত্রী আবুল মাল আবদুল মুহিত অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগে (ইআরডি) তাঁর কার্যালয়ে ইআরডির সচিব আবুল কালাম আজাদের সঙ্গে বৈঠক করেছেন। জাতীয় অর্থনৈতিক পরিষদের নির্বাহী কমিটির সভা শেষে তিনি তাঁর কার্যালয়ে যান। পূর্বনির্ধারিত না হলেও বৈঠক করেন তিনি। বৈঠকে কী আলোচনা হয়েছে তা পুরোপুরি জানা না গেলেও বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, পদ্মা সেতুতে নতুন কনসোর্টিয়াম গঠনের খুঁটিনাটি বিষয় নিয়ে আলোচনা করেছেন। এ ছাড়া দাতাদের সঙ্গে বৈঠকের আমন্ত্রণপত্রের খসড়া এবং সংসদে দেয়া তাঁর বক্তব্যের ইংরেজী ভার্সনের কপি চূড়ান্ত করা হয়েছে।
সূত্র জানায়, এর আগে পদ্মা সেতুতে বিশ্বব্যাংকের অর্থায়ন না নেয়ার সিদ্ধান্ত সংস্থাটিকে জানানোর পর দিন গত ১ ফেব্রুয়ারি সন্ধ্যায় সরকারী একটি বিবৃতি দেয়া হয় সরকারের পক্ষ থেকে। ওই বিবৃতিতে বলা হয় বিশ্বব্যাংককের অর্থ না নেয়ার বিষয়টি একইসঙ্গে অন্যান্য উন্নয়ন সহযোগীকেও এই তথ্য সরবরাহ করে তাদের সহযোগিতা অব্যাহত রাখার আহ্বান জানানো হয়। এই প্রকল্প বাস্তবায়নের সময়সূচী এবং পদক্ষেপ নিয়ে সকল উন্নয়ন সহযোগীর সঙ্গে আলোচনার জন্য সত্বর তাদের ঢাকায় বৈঠক আহ্বান করার সিদ্ধান্ত নেয়া হয়েছে।
সূত্র জানায়, গত ১ ফেব্রুয়ারি সরকারী সিদ্ধান্ত সমর্থন দিয়ে বিশ্বব্যাংক বিবৃতি দেয়ার পর ওই রাতেই পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়ন না করার সিদ্ধান্ত জানায়, প্রকল্পটির অন্যতম দাতা সংস্থা এশীয় উন্নয়ন ব্যাংক (এডিবি)। সংস্থাটির বাংলাদেশ কার্যালয় থেকে পাঠানো বিবৃতিতে বলা হয়, বিশ্বব্যাংক পদ্মা সেতু প্রকল্পের মূল দাতা সংস্থা। প্রকল্পটিতে জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থা (জাইকা), ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) সঙ্গে এডিবি সহ-অর্থায়নকারী। এজন্য বিশ্বব্যাংক না থাকায় এডিবির পক্ষে অর্থায়ন করা সম্ভব হচ্ছে না।
বিশ্বব্যাংক ও এডিবির পর ২ ফেব্রুয়ারি অপর অর্থায়নকারী জাপান আন্তর্জাতিক সহযোগিতা সংস্থাও (জাইকা) সরে দাঁড়িয়েছে বলে সংস্থাটির বাংলাদেশ অফিসের এক বিবৃতিতে জানায়। তবে পদ্মা সেতু প্রকল্পে দুর্নীতির অভিযোগ বিষয়ে দুর্নীতি দমন কমিশন (দুদক) তাদের পূর্ণাঙ্গ ও স্বচ্ছ তদন্ত অব্যাহত রাখবে বলে আশা প্রকাশ করেছে সংস্থাটি। বিবৃতিতে জাইকা বলেছে, বিশ্বব্যাংকের পদ্মা সেতু প্রকল্পে অর্থায়নের অনুরোধ প্রত্যাহারের সিদ্ধান্ত জাইকাকে জানিয়েছে বাংলাদেশ সরকার। এটা খুবই দুঃখজনক যে, বর্তমান অর্থনৈতিক কাঠামোর অধীনে তারা অগ্রসর হতে পারেনি এবং সঙ্কট সমাধানে আমাদের পদক্ষেপ কাজে আসেনি। যদিও গত জুনে বিশ্বব্যাংক কর্তৃক ঋণ বাতিলের পর আমরা বাংলাদেশ সরকার ও অন্যান্য সহ-অর্থায়নকারীদের সঙ্গে এ ব্যাপারে ঘনিষ্ঠভাবে আলোচনা করেছি। একটি সহ-অর্থায়নকারী হিসেবে বর্তমান কাঠামোয় আমাদের প্রতিশ্রুতি অব্যাহত রাখা সম্ভব নয়। আমাদের নীতিতে নৈতিকতার সর্বোচ্চ মানের দরকার হয়।
ইসলামী উন্নয়ন ব্যাংক (আইডিবি) তাদের সিদ্ধান্তের কথা না জানালেও এ বিষয়ে ইআরডির সচিব আবুল কালাম আজাদ পরদিন সাংবাদিকদের জানান, এ প্রকল্পে প্রধান অর্থদাতা ও দাতাদের সমন¦য়ক বিশ্বব্যাংকের সাথে চুক্তি বাতিল হওয়ার প্রেক্ষিতে অন্যান্য সংস্থার পাশাপাশি আইডিবির চুক্তিও বাতিল হয়ে গেছে।
ইআরডির একটি সূত্র জানায়, নতুন কনসোর্টিয়াম গঠন করতে হলে আগের কনসোর্টিয়াম ভেঙ্গে দিতে হয়। তাই স্বাভাবিক প্রক্রিয়ায় অন্য দাতারা পদ্মা সেতুতে অর্থায়ন না করার ঘোষণা দিয়েছে। এটাতে আতঙ্কিত হওয়ার কোন কারণ নেই।

No comments

Powered by Blogger.