রাজশাহীতে পুলিশের সঙ্গে সংঘর্ষ, সাতক্ষীরায় পুলিশ ভ্যানে আগুন

কাদের মোল্লার বিরুদ্ধে রায় ঘোষণার পর রাজশাহী মহানগরীতে মঙ্গলবার হরতাল চলাকালে প্রকাশ্যে অস্ত্র হাতে জামায়াত-শিবিরের সশস্ত্র ক্যাডাররা ব্যাপক সন্ত্রাস চালিয়েছে।
এ সময় তারা ট্রেনে হামলা এবং রেললাইনে অগ্নিসংযোগের অপচেষ্টা চালায়। এছাড়া, ককটেল বিস্ফোরণ ঘটিয়ে ও গাড়িতে আগুন দিয়ে আতঙ্ক সৃষ্টি করে। সাতক্ষীরায় পুলিশভ্যানে আগুন দিয়ে এবং পুলিশের অস্ত্র কেড়ে নিয়ে ভেঙ্গে পুড়িয়ে দেয় জামায়াত শিবির ক্যাডাররা। এতে ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়। অন্যদিকে, আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের অফিসে হামলা চালিয়ে আগুন ধরিয়ে দেয়।
কুমিল্লায় একটি বেসরকারী ব্যাংকের এটিএম বুথে এবং জামায়াত নিয়ন্ত্রিত কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানে হামলা চালিয়ে ভাংচুর করেছে ছাত্রলীগের নেতাকর্মীরা। খবর স্টাফ রিপোর্টার ও নিজস্ব সংবাদদাতার।
মঙ্গলবার রায় ঘোষণার পর মুহূর্তে বদলে যায় রাজশাহীর দৃশ্যপট। শিবির কর্মীরা ব্যাপক নাশকতার চেষ্টা চালায়। এ সময় বাধা দিলে পুলিশের সঙ্গে ব্যাপক সংঘর্ষের ঘটনা ঘটে। এ সময় ৪০-৫০টি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটায় শিবির কর্মীরা। পুলিশ ঘটনাস্থল থেকে ২৪ জনকে আটক করেছে। বেলা দেড়টার দিকে কাজলা গেটের সামনে কাদের মোল্লাকে কারাদণ্ডের প্রতিবাদ জানিয়ে শিবির কর্মীরা যাত্রীসহ একটি অটোরিক্সা উল্টে দিয়ে ব্যাপক ভাংচুর চালায়। পরে মিছিলটি রুয়েটের সামনে গিয়ে আরও একটি মাইক্রোবাস ভাংচুর করে। এছাড়া পুঠিয়ার বেলপুকুরে বরেন্দ্র এক্সপ্রেস ট্রেনে হামলা ও রেললাইনে অগ্নিসংযোগের চেষ্টা চালানো হয়।
পুলিশ বাধা দিলে তারা বেশ কয়েকটি ককটেলের বিস্ফোরণ ঘটিয়ে পুলিশকে লক্ষ্য করে ইটপাটকেল নিক্ষেপ করে। এ সময় এক পুলিশ কনস্টেবল আহত হন। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ প্রায় ১০ রাউন্ড টিয়ারশেল, রাবার বুলেট ও সাউন্ড গ্রেনেড নিক্ষেপ করে সবাইকে ছত্রভঙ্গ করে দেয়। এর আগে সকালে রাজশাহীতে হরতালের শুরুতেই অস্ত্রহাতে মহড়া দিয়েছে জামায়াত-শিবির ক্যাডাররা।
সাতক্ষীরা ॥ জামায়াত-শিবিরের হামলায় সাতক্ষীরা সদর থানার সেকেন্ড অফিসার এসআই আব্দুল হান্নানসহ ৪ পুলিশ সদস্য আহত হয়েছে। টায়ারে আগুন ধরিয়ে রাস্তায় দেযা ব্যারিকেড পুলিশ সরিয়ে ফেলার সময় পুলিশের ওপর এই হামলার ঘটনা ঘটে। এ সময় হরতালকারীরা পুলিশভ্যানে ও একটি মালবাহী পিকআপে আগুন ধরিয়ে দেয়। জামায়াত শিবির কর্মীরা এ সময় পুলিশের কাছ থেকে একটি শটগান কেড়ে নিয়ে তা ভেঙ্গে গুঁড়িয়ে দেয় । নিরাপত্তার জন্য পুলিশ এসময় কমপক্ষে ২০ রাউন্ড ফাঁকা গুলি ছোড়ে। আহত পুলিশ কনস্টেবল বদরউদ্দিন ও আমিনুর রহমানসহ দারোগা হান্নানকে সাতক্ষীরা সদর হাসপাতালে ভর্তি করা হয়েছে।
এদিকে, সাতক্ষীরার দেবহাটা উপজেলা জামায়াতের অফিস ভাংচুর করে অগ্নিসংযোগ করেছে আওয়ামী লীগ নেতাকর্মীরা। মঙ্গলবার দুপুর ১২ টার দিকে উপজেলা যুবলীগ ও ছাত্রীগের নেতাকর্মীরা হরতালবিরোধী মিছিল বের করলে এই মিছিলকে লক্ষ্য করে জামায়াত কার্যালয় থেকে ইটপাটকেল ছোড়ে হরতাল সমর্থকরা। একপর্যায়ে সেখানে সংঘর্ষ শুরু হয়। পরে বিক্ষুব্ধ জনতা দেবহাটা উপজেলা জামায়াত অফিস ভাংচুর ও অগ্নিসংযোগ করে।
কুমিল্লা কুমিল্লায় হরতাল চলাকালে জামায়াত-শিবির-ছাত্রলীগ নগরীতে পক্ষে-বিপক্ষে মিছিল করেছে। এসময় ছাত্রলীগের একটি গ্রুপের কর্মীরা নগরীতে জামায়াত নিয়ন্ত্রিত বেশ কয়েকটি ব্যবসা প্রতিষ্ঠানসহ বেসরকারী একটি ব্যাংক ও অপর একটি ব্যাংকের এটিএম বুথ ভাংচুর করে। শিবিরকর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কে ১৫-২০টি গাড়ি ভাংচুরসহ একটি ট্রাক আগুন দিয়ে জ্বালিয়ে দেয়। পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আনতে পুলিশ জেলার বুড়িচং ও চৌদ্দগ্রামে ১৫ রাউন্ড গুলিবর্ষণ করে। এ সময় এক পুলিশসহ ১০ জন আহত হয়েছে।
এদিকে জেলার সদর দক্ষিণ উপজেলায় ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের পদুয়ার বাজার এলাকায় শিবিরকর্মীরা হরতাল চলাকালে একটি ট্রাকে আগুন ধরিয়ে দেয় এবং বেশ কয়েকটি যানবাহন ভাংচুর করে। এসময় পুলিশ ২ পিকেটারকে আটক করে। এছাড়া জামায়াত-শিবির কর্মীরা ঢাকা-চট্টগ্রাম মহাসড়কের চান্দিনা, কালাকচুয়া, সৈয়দপুর, বেলতলী, মিয়াবাজার, ধর্মপুর এলাকায় ১৫-২০টি যানবাহন ভাংচুর করে।

No comments

Powered by Blogger.