যুদ্ধাপরাধী রক্ষার নামে অরাজকতা সৃষ্টিকারীরাও অনুরূপ অপরাধ করছে- প্রধানমন্ত্রীর হুঁশিয়ারি

প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা যুদ্ধাপরাধীদের রক্ষার আন্দোলনের নামে অরাজকতা সৃষ্টিকারীদের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেয়ার ব্যাপারে হুঁশিয়ার করে দিয়েছেন। প্রধানমন্ত্রী বলেন, ১৯৭১ সালে মানবতাবিরোধী অপরাধের সঙ্গে জড়িত ব্যক্তিদের রক্ষার আন্দোলনের নামে ধ্বংসাত্মক কর্মকা-ের সঙ্গে জড়িতরাও অনুরূপ অপরাধ করছে।
তিনি সোমবার তাঁর কার্যালয়ে রংপুর সিটি করপোরেশনের নবনির্বাচিত মেয়র ও কাউন্সিলরদের শপথ অনুষ্ঠানে এ কথা বলেন। খবর বাসসর।
শেখ হাসিনা বলেন, সরকার ওইসব লোকের বিরুদ্ধে কঠোর ব্যবস্থা নেবে। তিনি যুদ্ধাপরাধীদের মদদদাতাদের ধ্বংসাত্মক কর্মকা- বন্ধের আহ্বান জানিয়ে বলেন, অন্যথায় তাদের জন্য ভয়াবহ পরিণতি অপেক্ষা করছে।
তিনি মানবতাবিরোধী অপরাধের মামলাগুলোর বিচার সম্পর্কে বলেন, আমরা এক মামলার রায় পেয়েছি এবং অপর মামলাগুলোর রায়ও পাব। ইনশা আল্লাহ সব রায়ই তার নিজস্ব গতিতে কার্যকর হবে।
এলজিআরডি ও সমবায়মন্ত্রী সৈয়দ আশরাফুল ইসলাম নবনির্বাচিত মেয়র শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু ও ৪৪ জন কাউন্সিলরের শপথ পরিচালনা করেন।
মন্ত্রিবর্গ, প্রধানমন্ত্রীর উপদেষ্টাবৃন্দ ও উর্ধতন কর্মকর্তাগণ অনুষ্ঠানে উপস্থিত ছিলেন।
প্রধানমন্ত্রী পুলিশের ওপর হামলাকারী, জীবন্ত মানুষ পোড়ানো ও সম্পদ ধ্বংসের জন্য দায়ী অশুভ শক্তিকে মোকাবেলা করতে স্বাধীনতা পক্ষের মানুষের প্রতি আহ্বান জানান।
তিনি বলেন, নতুন প্রজন্ম নিয়ে জামায়াতে ইসলামীর ছাত্রফ্রন্ট ছাত্রশিবির গঠিত হয়েছে। তারা জানে না মুক্তিযুদ্ধকালে এ দেশে কি ধরনের ধ্বংসযজ্ঞের ঘটনা ঘটেছিল। এ জন্য তিনি তাদের মুক্তিযুদ্ধের প্রকৃত ইতিহাস জানার আহ্বান জানান।
আওয়ামী লীগ সমর্থিত প্রার্থী শরফুদ্দিন আহমেদ ঝন্টু ২০ ডিসেম্বর অনুষ্ঠিত রংপুর সিটি করপোরেশন নির্বাচনে প্রথম মেয়র নির্বাচিত হন। এ নির্বাচনে সাধারণ আসনে ৩৩ জন ও সংরক্ষিত মহিলা আসনে ১১ জন কাউন্সিলর নির্বাচত হন।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীরা ১৯৭১ সালে গণহত্যা চালিয়েছে এবং আমাদের মা-বোনদের দখলদার বাহিনীর হাতে তুলে দিয়েছে। কিন্তু এখন কিছু মানুষ তাদের পাশে দাঁড়িয়েছে। তিনি জানতে চান, এ ধরনের গণহত্যা বা জীবন্ত মানুষ পোড়ানোর ঘটনা আমাদের ধর্মের কোথায়ও সমর্থন করে কি?
শেখ হাসিনা বলেন, যেসব যুবক এখন রাস্তায় যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আন্দোলন করছে, তারা ১৯৭১ সালে জন্মগ্রহণ করেনি। তাদের অধিকাংশই জানে না, তারা যাদের সমর্থন করছে সেসব ব্যক্তি ১৯৭১ সালে কি জঘন্য অপরাধ করেছে। যদি তারা ১৯৭১ সালের এসব ঘটনা দেখত, আমি মনে করি তারা অবশ্যই লজ্জা পেত।
প্রধানমন্ত্রী বলেন, যুদ্ধাপরাধীদের পক্ষে আন্দোলন কোন জনগণের সমর্থন পাবে না এবং জনসমর্থন ছাড়া কোন রাজনৈতিক আন্দোলন গড়ে ওঠে না।
শেখ হাসিনা বলেন, বঙ্গবন্ধু স্বাধীনতার পরপরই যুদ্ধাপরাধীদের বিচারের উদ্যোগ নিয়েছিলেন। কিন্তু জিয়াউর রহমান ১৯৭৫ সালে রাষ্ট্রীয় ক্ষমতা দখলের পর সামরিক আদেশের মাধ্যমে এই প্রক্রিয়া স্থগিত করে দেন।
তিনি বলেন, স্বাধীনতার পর যেসব যুদ্ধাপরাধী পাকিস্তানে আশ্রয় নিয়েছিল তারা জিয়াউর রহমানের আমলে বাংলাদেশে ফিরে আসে। জিয়া ও তার সহধর্মিণী মুক্তিযুদ্ধের চেতনা ধ্বংস করতে যুদ্ধাপরাধীদের মন্ত্রিসভায় অন্তর্ভুক্ত করে তাদের এ দেশের রাজনীতিতে পুনর্বাসিত করেছে।
প্রধানমন্ত্রী নবনির্বাচিত মেয়রকে এই কর্পোরেশনের উন্নয়নে সব ধরনের সহায়তার আশ্বাস দিয়ে একটি পরিকল্পিত নগর গড়ে তুলতে দীর্ঘমেয়াদী উন্নয়ন পরিকল্পনা প্রণয়নের নির্দেশ দেন।
উত্তরাঞ্চলে গ্যাস সরবরাহ সম্পর্কে তিনি বলেন, বর্তমান সরকার এ অঞ্চলের মানুষের দীর্ঘদিনের স্বপ্ন পূরণে গ্যাসের উৎপাদন বাড়াতে নতুন গ্যাসক্ষেত্র আবিষ্কারে নিরলসভাবে কাজ করে যাচ্ছে।

No comments

Powered by Blogger.